গল্পের নাম – অন্যরকম ভালোবাসা
✍️মহাদেব হেঁস✍️
আরো হাতটা জোরে চেপে ধরলো অর্ক,প্রত্যেকটা সিগন্যাল এভাবেই পের করে যাচ্ছে ইশাকে।যেমন বাসের ভিড় আর তার চেয়েও লোকজনের কোলাহল,আর একটু দুরে যেতে না যেতেই সিগন্যাল এর পর সিগন্যাল,ঠিকই বলে কোলকাতা সিগন্যালেরই শহর।এবার ইশা বললো-হাতটা তো ছাড়ো পাগল!এরম আগলে রাখলেই শুধু হবে,খিদেও তো পাই নাকি?অর্ক থতমত হয়ে হাতটা ছেড়ে দিলো,দুজনেই মুচকি হেসে এগিয়ে যাচ্ছিলো।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সামনেই একজন ফুচকা বিক্রি করছিলো,ফেভারিট ফুড বলে কথা ইশা টেনে নিয়ে গেলো যাবেনা বললেও কোনো ছাড়ান নেই অর্কের।ব্যস!একের পর এক ফুচকা টপাটপ খেয়েই যাচ্ছে আর হা করে তাকিয়ে দেখছে ছেলেটা,ফুচকা প্রেমী গুলো এরমই হয়- চোখমুখ লাল হয়ে গিয়েও বলে যাবে দাদা!আরো ঝাল দিন।শেষে ফাও দেয়নি বলে রীতিমত ঝগড়া করার উপক্রম দেখে কোনমতে টেনে নিয়ে এলো মেয়েটাকে।কিছুটা পথ এগিয়ে যাবার পর একটু রেগেই বললো – তুই একা যা,আমি যাবো না তোর সাথে।রাগ হওয়াটাই স্বাভাবিক খুব পছন্দের ফুচকা যে, তাই শেষমেশ ক্যাটবেরি দিয়ে রাগ ভাঙাতে হলো মহারানীর।
তবে তাদের প্রেমের জীবনভঙ্গীটা আলাদা সবার চেয়ে।ইশা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো যে আমাদের ভালোবাসা পার্কের চারকোণা গণ্ডির মধ্যে কখনও ঢুকবে না,শুধু পথ অতিক্রম করবে রাস্তার এপ্রান্ত্র থেকে অন্যপ্রান্তে।আর অর্কের ভালোবাসা জন্মদিনে কোনো বড়ো রেষ্টুরেন্ট এ বিলাসিতা নয়।একটা ছোট্ট টিফিনে পায়েস,দুটি চামচ – কোনো এক নদীর নির্জন ধারে মনের মানুষের সাথে কথা বলা,তারারা থাকবে তাদের বন্ধু,মেঘেরা অভিমান,এলোমেলো একটু বাতাস বইবে,একটু গায়ে গা ঠেকা,হাতের আলতো ছোঁয়া – বেশ রোমাঞ্চকর এক মিষ্টি ভালোবাসার অনুভূতি,সাথে তো পাগলীর কথার সমাবেশ আছেই।
ইশা টা বরাবরই এরকমই ছটফটে আর কথাবার্তার ভান্ডারী।কতো কথা যে তার মুখ দিয়ে বের হয় সে নিজেও জানে না।তবে অর্ককে এসব সব সহ্য করতে হয়,সে খুব শান্ত আর তার কথা শুনেই যায়।তিন বছরের রিলেশনশিপে এসব রোজকারের রুটিন হয়ে গেছে।
কলেজের গেটের সামনে অর্ক যেদিন প্রথম ইশাকে দেখে সেইদিনই মনে গেঁথে গিয়েছিলো যে জীবনের বাকিটা পথ এই আধপাগলীর সাথে অনায়াসে এগোনো যাবে।আস্তে আস্তে দুজন দুজনকে ভালোভাবে জেনেছে,খুব কাছ থেকে চিনেছে,তারা একে অপরের জন্য সময় নিয়েছে।আর দূর দূরান্ত শুধু হেঁটে বেরিয়েছে – কখনও সন্ধ্যার কোলকাতার রাস্তায়,কখনও বা ট্রাম লাইন বরাবর এগিয়ে গিয়েছে বিশ্বস্ত চারটে হাত।তাদের এই একসাথে হাত ধরে হেঁটে যাওয়া কোনো অজানা ঠিকানায়,রাস্তার ধারে চা-এ চুমুক,সাথে একটু ঝগড়া অনেক গল্প-অন্যরকম ভালোবাসা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বিষয় – পরিবার
দু চার কথায় আজ লিখি,লিখতে ভীষণ ভালোবাসি।আমাদের মানতেই হয় যে যেখানে সূর্যের রশ্মি ঠিকমতো পৌঁছাতে পারে না সেখানে লেখকের লেখা ঠিকই পৌঁছে যায়।এই ধরুন রাত্রির পর যদি ভোরের দেখা না পান,তাহলে সেদিন সব বাঁধন ছিন্ন করে ওপারে চলে যেতে হবে।প্রিয়জনদের সীমিত কান্নাকাটি সুরে সুরে ভেসে উঠবে,আমাকে স্পর্শ করে হাত ধুয়ে সবাই বাড়ি ফিরে যাবে।হয়তো কারো মুখ থেকে উঠে আসবেই -যে জীবন টা তো শুধু উপভোগ করেই কাটিয়ে দিয়েছে।
একটু আগে বাঁধন ছিন্ন করার কথা বললাম সেই বাঁধন নিয়েই বলতে শুরু করি।শব্দটা তিন অক্ষরের হলেও আমাদের জীবনে এই তিন টুকরো শব্দের গুরুত্ব অপরিসীম।
এই জগতে আগমন হওয়ার পর দৃষ্টি মেলে চারিপাশে তাকালাম পাশেই বসে মা।জন্মসূত্রে এটাই সবার কাছে একমাত্র পরিচিত মুখ।প্রথম ভাষা পেলাম মা,একদিন আধো গলায় ডেকেই উঠলাম মা।ছাতার মতো আগলে রেখে বাবা মায়ের স্নেহ মায়া মমতা ও ভালোবাসায় এক পা এক পা করে আমাদের বড়ো হতে শেখা।
মায়ের হাতে হাত ধরেই আমাদের এ বি সি ডি থেকে শুরু করে অ আ ক খ শেখা।বাবাদের ভালোবাসা এতটাই নিখাদ ও আন্তরিক হয় যে শিশুর সাথে খেলতে গিয়ে নিজেই শিশু হয়ে ওঠেন।মায়ের স্নেহের গাঁথুনি আর বাবার নিপুণ ঘামে এক কাঠামো বিন্যাসে বড়ো হয়ে ওঠা তার নাম পরিবার।
কর্মসূত্রে আমদের সবাইকে পরিবার থেকে দূরে গিয়ে থাকতে হয়।সময়ের স্রোতে নিজেকে স্বাবলম্বি করতে না পারলে পিছিয়ে পরতে হয় প্রতিটি পদক্ষেপে।ক্যালেন্ডারের দাগে দিন পেরোয় প্রতিটি মুহূর্ত পরিণত হয় অভ্যাসে।অভ্যাস বলতে প্রতিদিন সকালে উঠে কোনো কাজে যাওয়া,সেখান থেকে এসে নিজের ক্লান্ত শরীর টা বিছানাতে মিলিয়ে দেওয়া। এই রোজকারের রুটিন গুলোই অভ্যাসে পরিনত করেছে ক্লান্ত শহরের ব্যস্ত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা প্রতিটি মানুষের মনে।
ফিরে দেখা,পরিবার থেকে কতো তফাৎ জীবন আমাদের।যোগাযোগ আছে ঠিকই আত্মীয় স্বজনের সাথে তবে সময়ের শেকড়ে নিঃস্ব মনে পরিস্থিতির এই মঞ্চে শুধুই বিয়োগ।জীবন তো চারাগাছের মতো আর জলের ন্যয় স্নেহ মায়া মমতা ভালোবাসা দিয়েই শুধু তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়,নাহলে শুকনো জীবনে একাকীত্বের শিকার হতে হয়।জীবন কে স্বাবলম্বী করতে গিয়ে নিভৃত নিরালায় মনের ব্যবধান বেড়েই চলে।আমরা সকলেই ঘরে ফিরতে চায়,পরিবারকে ভালোবাসতে চায় কারণ সত্যি করের সুখ এখানেই পাওয়া যায়।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});