Spread the love



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব‍্য:–

* কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন *

——– কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন–৩
( পূর্ব প্রকাশিতের পর )



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

: যুধিষ্ঠিরের শিষ্টাচার – কর্ণ – যুযুৎসু :

হেরিলেন যুধিষ্ঠির দুই সেনা দল,
সাগরতূল‍্য সমুদ‍্যত যুদ্ধ চঞ্চল।।
খুলি বর্ম ত‍্যজি অস্ত্র রথ অবতরি,
ভীষ্ম সকাশে তিনি গমিলেন ত্বরি।।
কৃতাঞ্জলিপুটে চলেন ভীষ্ম অভিমুখে,
পাণ্ডব পক্ষ চঞ্চল তাঁর কীর্তি দেখে।।
ব‍্যাকুল পাণ্ডব, কৃষ্ণ আর রাজাগণ।
সবে তাঁরা তাঁর পিছে করেন গমন।।
শুধাইলেন তাঁরে তাঁর কি অভিপ্রায়,
কি কারণে চলেন তিনি শত্রু সেনায়।।
চলেন যুধিষ্ঠির নাহি মুখে উত্তর।
ভীষ্ম সকাশে তিনি আইলেন সত্ত্বর।।
কহেন কৃষ্ণ আমি বুঝিলাম এক্ষণে,
সম্মানিবেন ইনি ভীষ্মাদি গুরুজনে।।
করিয়া সম্মান যুদ্ধ করিবেন তিনি ।
লভিয়া আশীষ যুদ্ধ লইবেন জিনি।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
করিলে যুদ্ধ সম্মানিত ক’রে গুরুজনে,
যুদ্ধ জয় হবে নিশ্চয় শাস্ত্র বচনে।
হেরি হেন শত্রুকুল করে বলাবলি,
” ভীষ্ম শরণে আইল পাণ্ডব সকলি।।
ভয়ে ভীত হইলেন দেখি যুধিষ্ঠির,
ক্ষত্রিয় কুলে নহে জন্ম নিশ্চয় স্থির”।।
যুধিষ্ঠির কন প্রণমি ভীষ্ম চরণে,
এ যুদ্ধ ধর্মযুদ্ধ অধর্মের কারণে।।
অনুমতি দিন মোরে আমি অভাজন,
হইলেন শত্রু তাঁরা যাঁরা প্রিয়জন।।
করি শ্রবণ ভীষ্ম কন, “শোন ধর্মরাজ,
নাহি হইলে হেথা তব আগমন আজ,
পাপী হইতে তুমি গুরুতর পাপে,
অভিশপ্ত হইতে তুমি মোর অভিশাপে।।
তব আগমনে আমি হইলাম প্রীত।
কর যুদ্ধ জয়ী হও করি কামনা হিত।।
অর্থের দাস জেনো সকল মানুষজন।
অর্থ কারো দাস নয় জানে সর্বজন।।
নিমক খাইলাম আমি এ কৌরবের।
মোর কাছে নহে ইহা কোন গৌরবের।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
যুঝিব কৌরবে মনে লইয়া যাতনা।
চাহি লও যাহা চাও পূরিব প্রার্থনা।।
কহিলেন যুধিষ্ঠির, আমি ভাগ্য হীন।
হে মহাপ্রাজ্ঞ, মম হীতে মন্ত্রণা দিন।।
অমর অজেয় আপনি ত্রিলোক জ্ঞাত।
আপনায় জিনিবারে কেহ নাহি জাত।।
কি উপায়ে আপনার হয় পরাজয়,
সে কৌশলই প্রার্থনা অন‍্য কিছু নয়।।
হয়নি সময় তাহা জ্ঞাত করিবার।
কহেন ভীষ্ম, তুমি আসিও পুনর্বার।।
প্রণমি ভীষ্মে কৌন্তেয় লইয়া বিদায়,
আগত হইলেন দ্রোণাচার্য যেথায়।।
করিয়া প্রণাম কহেন, হে ভগবন,
অনুমতি চাহি আমি করিবারে রণ।।
আর চাহি লভিতে অজ্ঞাত সে কৌশল,
আপনার বিপক্ষে হইবারে সফল।।
দ্রোণাচার্য কহেন সেই ভীষ্ম কথন।
অর্থ দিয়া জিনিয়াছে কৌরবগণ।।
অর্থের দাস জেনো সব মানুষ জন।
অর্থ কারো দাস নয় জানে সর্বজন।।
যাও তুমি যুদ্ধ কর নাহি কোন ভয়।
‘যথা ধর্ম তথা জয়’, তাই জয় নিশ্চয়।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
কহ মোরে আজি তব কিবা প্রার্থনা,
পূরণ করিব আমি তব সে কামনা।।
এত শুনি যুধিষ্ঠির কহিলেন দ্রোণে,
প্রশ্ন এক নাহি কিছু করিবেন মনে।।
দ্বিজশ্রেষ্ঠ অজেয় আপনি এ মহারণে।
আপনায় জিনি জয়ী হইব কেমনে।।
দ্রোণ কন শোন তবে শোন দিয়া মন।
সে কথা তোমারে আজ করিব বর্ণন।।
আমি যবে নিয়োজিত অস্ত্র বরিষণে,
নাহি কেহ বধিতে মোরে এই ভুবনে।।
যদি অস্ত্র ত‍্যজি আমি কভু রণাঙ্গনে,
হত্যা মোরে শক্ত নয় রেখ ইহা মনে।।
সমরে ত‍্যজিলে অস্ত্র অপ্রিয় খবরে,
করিতে পারিবে বধ সহজেই মোরে।।
তোমারে কহিলাম আমি সত‍্য কথন।
মিথ্যা নহে সত্য জেনো গুরুর বচন।।
অতঃপর যুধিষ্ঠির হইয়া প্রস্থিত,
কৃপাচার্য সকাশে হলেন উপস্থিত।।
ভীষ্ম ও দ্রোণ কন যুধিষ্ঠিরে যেমতি,
কৃপাচার্য তাঁহারে কহিলেন সমতি।।
জ্ঞাত তুমি আজ আমি কৌরব অধীন।
কৌরবের নিমকে হইলাম পরাধীন।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মঙ্গল কামনা তব করি অহর্নিশ।
যুদ্ধ কর জয়ী হও রইল আশীষ।।
লইয়া আশীষ তিনি হলেন বিদায়,
রণাঙ্গনে রথে মাতুল শল্য যেথায়।।
অভিবাদন করেন হইয়া বিনীত।
কহেন শল্য, বৎস হইলাম প্রীত।।
কৌরবের বশীভূত আমি হীনমতি।
কর্তব্য কিবা মম আছে তব প্রতি।।
কি সাহায্য করিতে পারি কহ এক্ষণে।
সাধ‍্য যদি হয় জেনো সাধিব যতনে।।
এই শুনি যুধিষ্ঠির কহেন তখন,
আপনা কথা আপনি করুন স্মরণ।।
দিয়াছিলেন বর আপনি এক কালে,
কর্ণ তেজ বিনষ্ট হইবে যুদ্ধ কালে।।
এই বর চাহিলাম আজিকে আবার,
দিন তবে সেই বরই কাম‍্য আমার।।
কহেন শল্য এই যদি হয় তব কামনা,
পূর্ণ হইবে জেনো তবে তব বাসনা।।
যাও তুমি কর যুদ্ধ না করিয়া ভয়,
যুদ্ধ জয় জেনো তব হইবে নিশ্চয়।।
কৌরব সেনা দল ত‍্যজি যুধিষ্ঠির,
নিজ দলে আইলেন যুদ্ধ মনস্থির।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
অতঃপর পার্থ সারথী কৃষ্ণ তখন,
কর্ণ সকাশে ত্বরায় করেন গমন।।
কৌরব শিবিরে কৃষ্ণ আসিয়া তথা,
ব‍্যক্ত করেন তিনি তাঁর মনোকথা।।
করিনু শ্রবণ, তুমি করিয়াছ পণ,
যুদ্ধে ক্ষান্ত তুমি যদ‍্যপি ভীষ্ম জীবন।।
কহি শোন,যোগ দাও পাণ্ডব দলে,
স্বদলে আসিও পুনঃ ভীষ্ম হত হলে।।
কর্ণ কহেন কেশবে, শোন হে অচ‍্যুত,
তব মুখে শুনি কথা একি অদ্ভুত।।
দুর্যোধনের সখা আমি তার হিতৈষী,
বিপক্ষে কভু নহে যুদ্ধ হয়ে বিদ্বেষী।।
অতঃপর কৃষ্ণ পুনঃ পাণ্ডব দলে,
কৃষ্ণমুখে কর্ণ-কথা শুনিল সকলে।।
অনন্তর যুধিষ্ঠির কহেন উচ্চ রবে,
কহি আমি শোন আজি কুরুসেনা সবে।।
যদি কেহ চাহ তবে এস মোর দলে।
বরণ করি লইব আমরা সকলে।।
আমন্ত্রণ যুযুৎসু করেন গ্রহণ,
পাণ্ডব সকলে তাঁরে করেন বরণ।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
যুধিষ্ঠির করেন পুনঃ বর্ম ধারণ।
ধনুর্বাণ লয়ে তিনি রথারূঢ় হন।।
রণ বাদ‍্য উঠিল বাজি ঘোর নিনাদে।
আকাশ বাতাস কাঁপে সেনাসিংহনাদে।।
মান‍্যজনে পাণ্ডবগণে করি সম্মানিত,
সর্বজন কর্তৃক ভূয়সী প্রশংসিত।।
(ক্রমশঃ)



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *