Spread the love

      ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব‍্য

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

★কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন★
কাব‍্যরূপ:–কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন– ৩১
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

৯। কর্ণ শল‍্যের যুদ্ধযাত্রা

যে আখ‍্যান শুনাইলে তুমি মোরে আজ,
বহুত শ্রুত আমার কন মদ্ররাজ।।
যদি বধ করে কর্ণ ধনঞ্জয়ে তবে,
ভাবিও না রহিবেন কেশব নীরবে।।
বজ্রের পতন রোধ যদিবা সম্ভবে,
ত্রিলোক ক্ষমতা হীন রোধিতে কেশবে।।
কর্ণ নহে অনিপুন অবজ্ঞার জন।
মদ্ররাজ শল‍্যে তাহা কন দুর্যোধন।।
ভয়ঙ্কর জ‍্যা-নির্ঘোষ করিলে শ্রবণ,
শত্রুসেনা দশদিকে করে পলায়ন।।
অস্ত্রজ্ঞানে জ্ঞানী কর্ণ অতীব ভীষণ।
তার তুল‍্য জ্ঞানী নাহি ভুবনে এখন।।
ঘটোৎকচে কর্ণ যবে করিল হনন,
কর্ণ সনে পার্থ রণে ত‍্যাজিল মনন।।
হয়েছিল ভীত পার্থ কর্ণ-শরজালে।
মৃত্যুভয় ছিল তার সেই নিশাকালে।।
মাদ্রীপুত্রে জিনি তারে করেনি হনন।
বীরশ্রেষ্ঠ সাত‍্যকিরে করিল মথন।।
ক্রুদ্ধ কর্ণ কভু অস্ত্র যদি তুলে হাতে,
বজ্রপাণি ইন্দ্রেও সে পারিবে নাশিতে।।
বাহুবলে তুল‍্য নহে কেহ আপনার।
হে বীর শল‍্য আপনি জ্ঞানেতে অপার।।
যেমতি কৃষ্ণ আছেন রক্ষিতে পাণ্ডবে,
আপনিও রক্ষিবেন সেমতি কৌরবে।।
হইলাম প্রীত আমি তোমার বচনে।
রাজি আমি আছি এই সারথ‍্য গ্রহণে।।
কিন্তু তব হিতে নানা কহিব কথন।
হোক প্রিয় বা অপ্রিয় করিবে শ্রবণ।।
কহিলেন মদ্ররাজ রাজা দুর্যোধনে।
বাহুপাশে বেঁধে তাঁরে উষ্ণ আলিঙ্গনে।।
আত্মনিন্দা, গুণগান, পরনিন্দা, স্তুতি।
এই চারিবিধ কার্য অকর্তব‍্য অতি।।
তথাপি করিলে হেন প্রশংসা মম।
করিব সারথ‍্য রণে ইন্দ্রসারথি সম।।
প্রস্তুত প্রভাতে রথ নানা অস্ত্র রাজে।
রথোপরি বসি কর্ণ রণসাজ সাজে।।
ব‍্যর্থ ভীষ্ম দ্রোণ যাহা করিতে সাধন,
সম্পন্ন করহ কর্ণ কন দুর্যোধন।।
শৃঙ্খলিত যুধিষ্ঠিরে কর আনয়ন।
নতুবা পাণ্ডবে তুমি করহ হনন।।
শত শত তূরী ভেরী করিল গর্জন।
কম্পিত হইল তাহে ভুবন গগন।।
চালনা করুন রথ কর্ণ শল‍্যে কন।
আজিকে পাণ্ডবে আমি করিব নিধন।।
অর্জুন হেরিবে আজি মোর বাহুবল।
অচিরে সকলে তারা লুটিবে ভূতল।।
নিপুন পাণ্ডবগণ রণেতে ভীষণ।
কহেন সারথি শল‍্য হয়ে উচাটন।।
নম্র তারা তুচ্ছ নয় ভয়ঙ্কর রণে।
করিও না অবহেলা তুমি এই ক্ষণে।।
করিলে শ্রবণ তুমি গাণ্ডীব-টঙ্কার,
হেন কথা নাহি কবে মুখে পুনর্বার।।
অর্জুনের শরজালে হইলে আঁধার,
বাক‍্যহারা হবে তুমি চোখে অন্ধকার।।
শল‍্যের বচনে কর্ণ ক্ষুব্ধ মনে মনে।
নির্দেশ দিলেন শল‍্যে গমিবারে রণে।।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


১০। কর্ণ-শল‍্যের কলহ ।

চলিলেন কর্ণ রণে হৃষ্ট কুরুগণ।
হেনকালে দিল দেখা নানা দুর্লক্ষণ।।
অগ্রাহ্য করিয়া তাহা মোহগ্রস্ত কুরু।
কর্ণ লাগি জয়ধ্বনি করিলেন শুরু।।
অভিমানে দর্পে ক্রোধে কর্ণের বড়াই,
“বজ্রপাণি ইন্দ্রে আমি নাহিক ডরাই।।
দর্শিনু ভীষ্মাদি যত বীরের পতন।
তবুও অটুট মম সদাই চেতন।।
কর্ম অনিত‍্য সদাই রাখি আমি মনে।
চিরস্থায়ী নহে কিছু তাহার কারণে।।
জীবন সে জানি আমি পদ্মপত্রে নীর।
টলমল করে সদা নহে কভু স্থির।।
মদ্ররাজ, কহি আমি করুন শ্রবণ।
পাণ্ডব সমীপে ত্বরা করুন গমন।।
পাণ্ডবে নিশ্চিত আমি করিব হনন।
নতুবা যমের দ্বারে করিব গমন।।
পরশুরাম প্রদত্ত মোর এই রথ।
শব্দহীন চক্র তার গমিলেও পথ।।
আছে মোর নানা অস্ত্র অতি ভয়ঙ্কর।
আর আছে শুভ্র শঙ্খ নিনাদ প্রখর।।
নিশ্চিত আমি অর্জুনে করিব হনন।
নচেৎ মরণে আজি করিব বরণ”।।
“থাম কর্ণ, আত্মশ্লাঘা নাহি কর আর।
হেন অযোগ্য বচন নাহি কহ আর।।
অর্জুন পুরুষশ্রেষ্ঠ জানে সর্বজন।
পুরুষাধম তুমি তো তাই হীন মন।।
পার্থ ছাড়া আর কেহ নাহিক ভুবনে।
দ্বারকাপতি-ভগিনী সুভদ্রা হরণে।।
স্মরণে কি আসে তব করহ স্মরণ,
ঘোষযাত্রা কালে যবে সে গন্ধর্বগণ,
মহারাজ দুর্যোধনে করিল হরণ,
পার্থই তাঁরে উদ্ধার করিল তখন।।
রণে ভঙ্গ দিয়ে তুমি কর পলায়ন।
তব মুখে নাহি সাজে এ হেন বচন।।
মনে পড়ে বিরাটের গো-হরণ কালে,
পার্থহস্তে পরাজিত হইলে সকলে।।
সূতপুত্র ঘোর যুদ্ধ আসন্ন এখন।
মরণ নিশ্চিত তাই কর পলায়ন”।।
অতি ক্রোধে কর্ণ শল‍্যে কহেন তখন,
“অর্জুনের প্রশংসা কেন অকারণ।।
এ প্রশংসা সার্থক যেন নাহি হয়।
অর্জুন মোরে করিতে পারিবেনা জয়।।
পাণ্ডব সকাশে রথ করুন চালন।
অর্জুনে নিশ্চিত আমি করিব নিধন”।।
হাস‍্য মুখে শল‍্য কর্ণে কহেন তখন,
“সূতপুত্র মোর কথা করহ শ্রবণ।।
ধনঞ্জয়ে বধ তব সাধ‍্য কভু নয়।
শিবা কি করিতে পারে ব‍্যাঘ্রে কভু জয় ?
প্রস্তর বাঁধিয়া গলে সাগরে সাঁতার,
কিম্বা পর্বত হইতে ভূমে লম্ফ যার,
উভয় কর্মই সাধে সখে মৃত্যু তার,
সেই সাধ হেরি আমি হয়েছে তোমার।।
চাহ যদি নিজ হিত করহ শ্রবণ,
ব‍্যূহবদ্ধ হয়ে তুমি করহ গমন।।
করহ বিশ্বাস মোর এই সুবচন।
নচেৎ জানিবে তব শিয়রে শমন”।।
কর্ণ কহেন, “শুনুন তবে মদ্ররাজ,
একাই করিব যুদ্ধ পার্থ সনে আজ।।
মিত্ররূপী শত্রু বলে তাই প্রতিক্ষণে,
আপনি সদাই দেন ভীতি মোর মনে”।।
করিয়া শ্রবণ শল‍্য কর্ণে তিনি কন,
“অনলে প্রবেশ কেন কর অকারণ।।
বিদ্ধ হবে তুমি যবে অর্জুনের বাণে,
অনুতপ্ত হবে তবে তুমি মনে মনে।।
মাতৃক্রোড়ে শুয়ে শিশু চাহে চন্দ্র যথা।
মোহগ্রস্ত তুমি চাহ পার্থে জয় তথা।।
ভেক তুমি ধরাতলে করিয়া শয়ন,
মহামেঘরূপী পার্থে করিছ গর্জন।।
পালিত কুকুর গৃহে থাকিয়া যেমতি,
মাঝেমধ্যে চিৎকারে বন‍্য ব‍্যাঘ্র প্রতি,
মন দিয়া শোন তুমি হে কর্ণ দুর্মতি,
নরব‍্যাঘ্র পার্থ প্রতি তুমিও সেমতি।।
মূঢ় তুমি ! রাখ মনে তুমি শিবা তুল।
মহাবলী অর্জুনের তুলনা শার্দুল”।।
বাকশল‍্য আছে ব’লে শল‍্য নাম তাই।
শল‍্য তুল বাকপটু কেহ আর নাই।।
এ হেন বোধ কর্ণের হলো মনে মনে।
তারপর শল‍্যে কর্ণ বিন্ধে বাক‍্যবাণে।।
“বাকসিদ্ধ নন তবু কেন বাক‍্যবাণ ?
সর্বগুণ রসাতলে গিয়ে হলো ম্লান।।
কৃষ্ণার্জুন সব গুণ আছে মোর জানা।
একাকী রণিতে তাই নাই কোন মানা।
আছে মোর সর্পতুল‍্য বিষমুখ বাণ।
সেই বাণে দোঁহাকার যাইবেক প্রাণ।।
তারপরে আপনাকে করিব নিধন।
কুদেশ জাত আপনি জানে সর্বজন।।
হীনমতি দীন অতি, অতি কুলাঙ্গার।
মিত্র তবু ভীতি দান কেন বারবার।।
চুপ ক’রে রন ব’সে কোন কথা নয়।
শত কৃষ্ণার্জুনে মোর নাহি কোন ভয়।।
অতি সহজে তাদের করিব হনন।
তারপরে আপনার হইবে মরণ।।
দুরাত্মা মদ্রবাসীর আছে নানা গাথা।
সেই গাথা গেয়ে চলে আবাল বনিতা।।
সেই গাথা গাহি আমি করুন শ্রবণ।
মিথ্যা নহেক তাহা সত্য সে কথন।।
মিথ‍্যাবাদী নরাধম মদ্রক সকলে।
কুটিল জটিল তারা মৃত্যুরও কালে।।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});


গুরুজন নাহি মানে স্ত্রী-পুরুষগণ।
একত্রে মদ গো-মাস সহজে ভক্ষণ।।
একসাথে করে তারা অশ্লীল নাচন।
মিলনের পাত্রে নাই বাচ-বিবেচন।।
মিত্রতা উচিত নয় মদ্রকের সনে।
শত্রুতাও অনুচিত অভদ্রের সনে।।
মদ্রক সকলে তারা অতি কলুষিত।
গমিলে তাদের পাশে হইব দূষিত।।
বেদ-দ্বেষী তারা সবে পতিত নরকে।
নরকেতে হয় গতি স্পর্শিলে মদ্রকে।।
বস্ত্র ত‍্যাজি করে নৃত্য মদ্রক স্ত্রীলোকে।
স্বেচ্ছাচার করে তারা জ্ঞাত সর্বলোকে।।
কম্বল পরিয়া ঘুরে মদ্র-নারীগণ।
রুচিহীন ঘৃণ্য তারা পেট পরায়ণ।।
পাপী দেশ তিন দেশ মদ্র অন‍্যতম।
লোক তার লাজহীন সারমেয় সম।।
কৌরব মাঝারে সৃষ্টি করিতে ভেদন,
যুধিষ্ঠির আপনারে করিল প্রেরণ।।
দুর্যোধনের আপনি হন গুরুজন ।
হইবে নিন্দা আমার করিলে হনন।।
ক্ষমাগুণ আছে তাই আপনি জীবিত।
নচেৎ আজি আপনি হইতেন মৃত।।
অথর্বোক্ত মন্ত্রে করি শান্তি স্বস্ত‍্যয়ন।
নষ্ট সব আপনার বিষের বচন।।
শুনি যদি আর কভু এহেন বচন,
গদাঘাতে মাথা তব করিব চূর্ণন।।

( চলবে )


কাব্যরূপ : কৃষ্ণপদ ঘোষ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *