…………..কাঠ ঠোকরা………….
(কাহিনী কবিতা)
*ডঃ অরুণ চক্রবর্তী*
অনেক দিন পর, পৌঁছলাম ডুয়ার্সের জঙ্গলে। কাছেই ন্যাওড়া ভ্যালির জঙ্গল।
কত প্রাচীন জঙ্গল, কেউ রাখেনা, কখনো লেখাজোখা; খোলে না হিসেবের খাতা কখনো; জায়গাটা আদিম ও বন্য, আমি বোহেমিয়ান, ছুটে যাই বারে বারে তাই, শেষ নাই, খুঁজে নিতে প্রকৃতির আনন্দ! গভীর, গহন নৈশব্দের এক উপলব্ধির জগত! প্রাগৈতিহাসিক ধরিত্রীর, শুনি শ্বাস প্রশ্বাস! খুনিয়ার বুকে দাঁড়িয়ে প্রশান্তিতে; এক হাতির দঙ্গল, শাবকদের মাঝে রেখে, থর থর করে চারিদিক, হুংকারে জানান দেয়, আর কেউ নয়, রয়্যাল বেঙ্গল বেরিয়েছে; দিতে লম্বা টহল! হরিণ ভারি সাবধানি! নিরাপদে সবার আগে। পিছু নেয় বরাহ ভারি! মর্কট, গাছের ডালে ডালে দোলে; দেয় যত লাফ ঝাঁপ, দুরন্ত এই খুনিয়া আর চাপড়ামারী, মুগ্ধতায় চুপ করায়, মৌনতার অরণ্য! প্রায় আকাশ ছোঁয়া, শাল আর অশ্বথের, ঢেকে আছে অহমিকায়; সময় নিশ্চল হয়ে হাত মেলায়! কভু নাহি হয় নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ। একটু আগেই নিয়ম মেনে, আসতে আসতে চলে গেল, গৌহাটি-দিল্লী রাজধানী….চকিত চমকে পশুকূল! আবার ফিরে পায় শাশ্বত অরণ্য! দীর্ঘ অপেক্ষায়, পড়ল চোখে, বিশাল চুঁচের বিরল পক্ষী; ধনেশ, দেখে ঘাড় ঘুরিয়ে পলকহীন চোখে! প্রকৃতির ছবি, মনে হয় সে নিজেও হয়েছে কবি! অদ্ভুত ঈশারায় উড়ে গেল, বিশাল হলুদ ঠোঁটের টেরোডেক্টাইলের বংশধর, ধনেশ, উড়িয়ে ডানা অক্লেশ! দৃষ্টি আমাকে দেখায়, বটবৃক্ষের শাখে, হেরে যাওয়া রাজা রবার্ট ব্রুস কে, লাল ঝুঁটির হলুদরঙা, অপূর্ব কাঠঠোকরা! নিরলস প্রচেষ্টায় কাজ করে যায়, পারিতোযিক বা কোন বাহবা ছাড়াই। আশ্চর্য হই, প্রকাণ্ড গাছ জুড়েই প্রজেক্ট তার, সে নিজেই প্রজেক্ট প্ল্যানার ও ম্যানেজার! খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, এ শাখায় ও প্রশাখায়; খোঁজে নরম কাঠের চিহ্ন! ঐ টুকু ঠোঁটে, গভীর মনোযোগে, করে অন্য মাত্রার প্রযত্ন! অন্ধকারের চাদরে ঢাকে; নিজেকে অরণ্য, ছোট রঙীন Woodpecker, টানা ১২ ঘন্টায় গৃহপ্রবেশ তার পাশে; উড়ে এসে বসা সহধর্মিনীকে পাশে নিয়ে! আবেগে আত্মহারা, কাঠ ঠোকরানি চঞ্চুর চুম্বনে আকর্ষে কাঠ ঠোকরারে। শেখাতে চায়; অকৃত্রিম, অধ্যবসায়, অগ্নিসুদ্ধ, আনত আকূলতায়, ভগবানেরও হয় দেখা …..কর্মযজ্ঞে এর প্রতিপাদ্য করে দেখায় কাঠ ঠোকরা্।।
(REGISTERED UNDER COPYRIGHT ACT)