Spread the love
গল্পের নাম : স্বপ্ন
লেখক : কবিরুল
              ” শোন সরমা , তোমার এই মেয়ে বংশের কলঙ্ক । ও আর পাঁচটা মেয়ের মতন স্বাভাবিক নয়। গুরুজী ঠিকই বলেছিলেন তোমার ছেলে না হয়ে মেয়েই হবে। তখন তোমার এই অলুক্ষণে মেয়েকে আমাদের  গর্ভেই বিনাশ করা উচিৎ ছিল। “
              একুশ বছর আগে শ্বাশুড়ির ঝাঁঝালো বাক্যবাণ গুলো আজও সরমার মনে আছে। সেদিন থেকেই ঠিক করেছিল নিজের কন্যা সন্তানকে এমনভাবে তৈরী করবে যাতে সে  আর পাঁচটা পুরুষের সাথে টেক্কা দিতে পারে।
            সরমার জেদের কাছে ওর   স্বামী প্রলয় অবশেষে হার মেনেছিল। অত্যাচারও কম করেনি সরমার উপর। সরমাকে প্রতিদিন রাতে মারধোর করত। গালাগাল দিত। সরমা মেয়ের ক্যারিয়ার তার  লেখাপড়ার কথা ভেবে মুখ বুজে সব সহ্য করেছে।
           যদিও স্বামী অন্য মেয়ের সাথে পরে ঘর সংসার পেতেছিল। সরমা তখন রিম্পাকে নিয়ে অথৈ জলে। একবারে জীবনযুদ্ধে হেরে না গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই শুরূ করেছিল। মেয়েকে জুগিয়েছিল স্বাধীনভাবে বাঁচার সাহস।
             শ্বাশুড়ি বেঁচে নেই। স্বামী অনেক দূরে সরে গেছে। তবে শরীরের কালো দাগগুলো সরমার লড়াইকে আজও কুর্নিশকে করে। মেয়ের ইচ্ছে ছিল বড় আইপিএস অফিসার হবে। সমস্ত অপরাধের মোকাবিলা করবে। উইম্যান ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করবে।  কিরণ বেদী ওর আদর্শ। কিন্তু সরমা সব সময় চাইত মেয়ে ডাক্তার হয়ে রুগীদের সেবা করূক। বিনা পয়সাতে গরীব মানুষদের চিকিৎসা করুক।
           রিম্পা মায়ের কথা রেখেছে। মেডিসিন নিয়ে পড়াশোনার পরে আইপিএস পরীক্ষায় পাশ করেছে।বিশাল বড় পুলিশ অফিসার হয়ে  অনেক নির্যাতিতার পাশে দাঁড়িয়েছে। মেয়েদের নিয়ে কন্যা ভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে লড়াই করেছে।
           এ বছর ওর কাজে খুশী হয়ে  নারী দিবসের দিনে কেন্দ্রীয় সরকার রিম্পা ও তার  টিম মেম্বারদের পুরষ্কৃত করেছে। সরমা পুরো অনুষ্ঠানটাই টিভিতে দেখেছে। আবেগে চোখ ছলছল করে উঠেছিল। শ্বাশুড়ির কথা মনে পড়ছিল সেদিন। উনি ঐ ভাবে সেদিন তিরষ্কার  না করলে রিম্পা এতটা এগোতে পারত না।
           করোনা ভাইরাসের তাণ্ডব বাড়তেই রিম্পার বিভিন্ন হসপিটালে দায়িত্ব পড়েছে। ও তো  নিজেই একজন ভাক্তার।
            একদিন ওর হসপিটালেই এক রোগী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হল। ভদ্রলোককে খুব যত্ন সহকারে সেবা করেছে রিম্পা ও তার সকল স্টাফ আর  নার্সরা। উনি সুস্থ হতেই রিম্পার নাম ঠিকানা , বাবার নাম জানতে চাইলেন। সব শুনে উনার চোখে জল।
           প্রলয়বাবু ভাবতেই পারেনি সেদিনের ছোট্ট রিম্পার এত নামডাক হবে।
            সামনে বছর হয়ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডাকে বিদেশ যাবে। সেমিনারে যোগ দিতে।
              একটা লড়াই , একটা কন্যা , একটা নারীর স্বপ্ন যেন পূর্ণতা পেল।
               সরমা যেন দেখতে পাচ্ছে একটা প্লেন স্বপ্নের ডানায় ভেসে নীল মেঘের দিকে ছুটে চলেছে।
Adddress : Dum Dum , Kolkata – 28

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *