Spread the love

কবিতা দিবস উপলক্ষে কবিতা সম্বন্ধে দু’একটি কথা

আমার বেশ মনে আছে – আমি তখন কালনা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। সেটা নাইন্টিন সিক্সটি এইট। আমাদের কলেজে কবি সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে শ্রদ্ধেয় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় মহাশয়কে প্রধান অতিথি হিসেবে আনা হয়েছিল। কবি সম্মেলনে আমাদের কলেজ পত্রিকার সম্পাদক গোবিন্দ (খুব সাহসী ছেলে) মাননীয় কবি কে প্রশ্ন করেছিলো, স্যার, কবিতা কি? মাননীয় কবি উত্তর দিয়েছিলেন, দেখো, আকাশে যখন অল্প অল্প মেঘ ভাসে সেটাকে যদি তোমাকে বলি তাকিয়ে দেখো; যদি প্রশ্ন করি, কি দেখতে পাও? তখন দেখবে কেউ বলবে, রবীনাথের মাথা দেখতে পাচ্ছে। কেউ সিংহ দেখতে পাচ্ছে। কেউ প্রেমিকার মুখ দেখতে পাচ্ছে। এই যে কল্পনাটা – এই যে কোন কিছু দেখার পর মনের ভিতরে যে আবেগটা, কল্পনার মাধ্যমে বেরিয়ে আসে – সেটাই কবিতা। একেক জনের একেক রকম আবেগ; একই জিনিস দেখে ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন কল্পনা করতে পারেন –  সেটাই কবিতা।
গোবিন্দ প্রশ্ন করেছিলো, তাহলে পদ্য কি  sir? মাননীয় কবি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন – দেখো, কবিতা আর পদ্য তুমি নিজেই বুঝতে পারবে কোনটা কি। সন্ধ্যাবেলা সূর্যাস্ত হচ্ছে – সেই সূর্যাস্তের সময় তার গেরুয়া বর্ণের ছটায় যে  আবহ তৈরি হয়, অল্প অল্প আলো, আলো-আঁধারি – একেক জনের একেক রকম কল্পনা, ভাব, আবেগ তৈরি হয়। সেটা যেমন কবিতা আবার কেউ যদি বলে যে সূর্য পশ্চিম দিকে অস্ত গেল। একটু পরে অন্ধকার নামবে। সূর্য ডুবে গেলে একটু পরই অন্ধকার নামে।
এটাই হচ্ছে পদ্য। সূর্য পূর্ব দিকে উদয় হয়, পশ্চিম দিকে অস্ত যায় সূর্য অস্ত গেলে দিনের আলো নিভে যায়। পৃথিবীতে অন্ধকার নেমে আসে – এর মধ্যে কল্পনা কিছু নেই, সত্য ঘটনার বর্ণনা সঠিকভাবে দিয়ে বলেই পদ্য।
মাননীয় কবির সেই কথাগুলো আজও আমার মনে আছে। আমারও দৃঢ় বিশ্বাস-  উনি যে কথাগুলি সেদিন বলেছিলেন আমি তার সাথে একমত। কল্পনায় কবিতা আর বাস।
উনি যে কথাগুলি সেদিন বলেছিলেন আমি তার সাথে একমত। কল্পনায় কবিতা আর বাস্তবতায় পদ্য রচিত হয়।

অবশ্য ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতেই পারে। কারন এগুলি স্বতঃসিদ্ধ নয়।

নীরেশ দেবনাথ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *