Spread the love
* আবেদন *
* নিবেদন *

                ✍️কৃষ্ণপদ ঘোষ✍️
শোন শোন বন্ধুগণ শোন দিয়া মন।
‘কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন’ করিব বর্ণন।।
ধারাবাহিক ভাবে তা করিব প্রকাশ।
হইলে ত্রুটি তাহে না কর উপহাস।।
জানিবে ত্রুটি করে শুধু মানুষ জনে।
গ্রহণ করিও তাহা তব শুদ্ধ মনে।।
প্রকাশ কালে নমি ব‍্যাসদেব চরণে।
আর নমি রাজশেখর বসু মহাজনে।।
তাঁর লেখা বই আমি পড়িনু যতনে।
দোঁহাকার কাছে ঋণী এ কাব‍্য লিখনে।।

ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব‍্য:–

* কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন *
০ প্রাক যুদ্ধ কথন ০

ঃ যুদ্ধ প্রস্তুতি ঃ
ব‍্যর্থ হইল শেষে সকল আলাপন।
নিজ হিত বুঝিতে নারিল দুর্যোধন।।
মহামতি যদুপতির উপদেশ বাণী।
লুটাইল ধূলায় হেলায় অবজ্ঞা হানি।।
শুনাইল বার বার সেই এক কাহিনী।
বিনা যুদ্ধে নাহি দিব সূচাগ্র মেদিনী।।
সূচিত মহারণ কুরুক্ষেত্র মাঝারে।
সেনা হস্তী অশ্ব সব জুটিল কাতারে।।
যতেক নৃপতি রথী মহারথ সবে।
জুটিলেন কেহ পাণ্ডব কেহ কৌরবে।।
মৎস বিরাট দ্রুপদ পাঞ্চালরাজ।
সাত‍্যকী ধৃষ্টদ‍্যুম্ন মগধ কাশীরাজ।।
সকলেই তাঁরা অতীব সমর দক্ষ।
এঁরা সকলে লইলেন পাণ্ডব পক্ষ।।
ভীষ্ম দ্রোণ কৃপ কৃত কর্ণ এঁরা সবে।
করিতে মহারণ রহিলেন কৌরবে।।
আরম্ভিল যুদ্ধ সজ্জা মহা কলাহল।
শঙ্খ দুন্দুভি নিনাদ সৈন‍্যরা চঞ্চল।।
*
পঞ্চপাণ্ডব ভ্রাতা গণ ব‍্যস্ত অধীর।
হিরন্মতীর তীরে স্থাপেন শিবির।।
ধৃষ্টদ‍্যুম্ন হইলেন পাণ্ডব সেনাপতি।
অর্জুন মনোনীত সেনাপতির পতি।।
নাহি করিবেন যুদ্ধ কৃষ্ণ মহামতি।
নিযুক্ত হইলেন তিনি পার্থ সারথি।।
অন্য পক্ষ দুর্যোধন দিলেন আদেশ।
রণাঙ্গনে তৈরী কর সব সেনানিবেস।।
প্রস্তুত হোউক যত রথ অশ্ব হাতী।
অশ্বারোহী গজারোহী সেনা পদাতি।।
বিভক্তিয়া সেনা একাদশ অক্ষৌহিনী,
করিলেন সজ্জা তিনি তাঁর বাহিনী।।
ভীষ্মে সেনাপতি তিনি করি মনোনীত,
দুর্মোতি দুর্যোধন অতীব পুলকিত।।
ত্রিভুবনে ভীষ্ম অজেয় জ্ঞাত সর্বজন।
কেমনে করিবে পাণ্ডব কৌরব নিধন।।
ভীষ্ম পিতামহ হইলেন অতি দুঃখিত।
কেমনে বধিবেন পাণ্ডবে তাই চিন্তিত।।
পাণ্ডব কৌরব তাঁর অতি প্রিয়জন।
তাই নাহি করিবেন পাণ্ডব নিধন।।
তবে তিনি প্রতিদিন সেনা যত জন,
দশ সহস্র তার করিবেন হনন।।
ভীষ্মে সেনাপতি পদে করিয়া বরণ,
কুরুক্ষেত্রে দুর্যোধন করেন গমন।।
-: উলূকের দৌত‍্য :-
নিজ শিবিরে গিয়া বসিয়া দুর্যোধন,
পারিষদ সাথে তিনি করেন আলোচন।।
পাণ্ডব শিবিরে গিয়া শকুনি নন্দন,
উলূক শুনাইবা দুর্যোধন বচন।।
দুর্যোধন বচনে নানা কথা গর্বিত।
শুনাইলা উলূক তা হইয়া স্পর্ধিত।।
-: ভীষ্ম-কর্ণ বিবাদ :-

উভয় পক্ষে আছেন রথী মহারথ।
আর আছেন অনেকে যাঁরা অতিরথ।।
দুর্যোধন কহেন ভীষ্মে, হে পিতামহ,
তন্মধ্যে অর্ধরথী আছেন কেহ কেহ।।
গণনায় জ্ঞাত হোক ত়াঁহাদের নাম।
সেই সাথে জ্ঞাত হোক ত়াঁহাদের ধাম।।
ভনিলেন ভীষ্ম আছেন যত নৃপতি।
তবে তাঁর বিবেচনা কর্ণ অর্ধরথী।।
এতেক শুনি কর্ণ হইলা রাগান্বিত।
না রণিব রণ ভীষ্ম থাকিতে জীবিত।।
হস্তে লইব অস্ত্র ভীষ্ম হইলে নিধন।
অতঃপর পাণ্ডবে করিব হনন।।
কহেন ভীষ্ম যথাসাধ্য রণিব রণে।
কিন্তু অপারক আমি শিখণ্ডী নিধনে।।
থাকিলে সে অস্ত্র নাহি করিব ধারণ।
তাহাই হইবে মোর মৃত্যুর কারণ।।

-: যুদ্ধ যাত্রা :-

পরদিন প্রাতে স্নান করি রাজাগণ।
মাল‍্য আর শুভ্র বস্ত্র করেন ধারণ।।
অতঃপর করিয়া হোম স্বস্তি বাচন,
পাণ্ডব অভিমুখে করিলেন গমন।।
যুধিষ্ঠির বীরগণে দিলেন আদেশ,
ধারণ করহ সবে নিজ নিজ বেশ।।
নিজ নিজ বেশ ধারণ করি সকলে,
রণাঙ্গনে যাত্রা তারা করিল সকলে।।
সহস্র সহস্র সেনা করে তুর্যনাদ।
গগন ভেদি ওঠে ভেরী শঙ্খ নিনাদ।।
দিব‍্য শঙ্খ বাজালেন কৃষ্ণ ধনঞ্জয়।
শ্রবণে পাণ্ডবপক্ষ হইল নির্ভয়।।
কুরুপক্ষ হইল ভীত ভয়ে চঞ্চল।
তাহাদের মাঝে ওঠে তীব্র কলাহল।।
আকাশ বাতাস ভরে গভীর ধূলায়।
নামে আঁধি সূর্য যেন দীগন্তে লুকায়।।

-: ব‍্যাস ও ধৃতরাষ্ট্র :-

ধৃতরাষ্ট্র ভাবিত তিনি বসে নির্জনে।
পুত্রগণের কি গতি সেই চিন্তা মনে।।
হেন কালে আবির্ভূত ব‍্যাস ভগবান।
ধৃতরাষ্ট্রে করিবেন দিব‍্য দৃষ্টি দান।।
সুপ্ত রাখি নিজ মনে তাঁহার বেদন,
কুরুপতি ব‍্যাসদেবে করেন নিবেদন।।
না হেরিব জ্ঞাতি হত্যা এই মহারণ।
তব প্রসাদে শুনি যেন যুদ্ধ বিবরণ।।
তাহা শুনি কহিলেন ব‍্যাস ভগবান,
সঞ্জয়ে করিব আমি দিব‍্য চক্ষু দান।।
সঞ্জয়ের প্রত‍্যক্ষ হবে যুদ্ধ ঘটনা।
অতঃপর তোমা কাছে করিবে বর্ণনা।।
কুরুরাজে কহিলেন ব‍্যাস পুনর্বার।
এই যুদ্ধ হোক বন্ধ আদেশে তোমার।
সমর্থ তুমি এ যুদ্ধ করিতে নিবারণ।
তবে কেন যুদ্ধ হেন হত্যা অকারণ।।
এতেক শুনি তখন কন কুরুপতি,
হে পিত ! অধর্মে মম নাহি কোন মতি।।
কিন্তু তারা নহে বশ মম পুত্রগণ।
শুধু শুধু বৃথা হবে সকল বচন।।
ইহা শুনি কহিলেন ব‍্যাস ভগবন,
শুনিলাম কুরুপতি তোমারি বচন।।
সাম দান নীতিতে জয় অতি উত্তম।
ভেদের দ্বারা যে জয় জেনো সে মধ‍্যম।।
যুদ্ধ দ্বারা জয় কিছু করিবার নীতি,
শ্রদ্ধা নাহি কোন তায়, সে অধম অতি।।

-: সঞ্জয়ের ভূ-বৃত্তান্ত:-

এত কহি ব‍্যাস দেব হইলে প্রস্থিত,
বাচিলা কুরুপতি সঞ্জয়ে উপস্থিত।।
যে ভূমির লাগি যুদ্ধ করে রাজগণ,
সে ভূমির গুণাবলী করিব শ্রবণ।।
আজ্ঞা শুনি কুরুপতির জ্ঞানী সঞ্জয়,
ভূমি গুণাবলী কিবা কন জ্ঞানময়।।
মাংস খণ্ডে কুত্তাকুল করে ছেঁড়াছিঁড়ি।
রাজগণ ভূমি খণ্ড করে কাড়াকাড়ি।।
তথাপি না হইল পূর্ণ কারও সাধ।
আজও হেরি তাদের কামনা অগাধ।।
এ ভূমি ভারতবর্ষ আমাদের দেশ।
যতেক পূণ্য তথা হতে হ’ল উন্মেষ।।

-: কুরু পাণ্ডবের ব‍্যূহ রচনা :-

কুরু বাহিনীর অগ্রে রহিলেন ভীষ্ম।
রজতময় রথ তাঁর যুক্ত শ্বেতাশ্ব।।
শ্বেত ঊষ্ণীষ ও বর্ম করিয়া ধারণ,
রজতরথে তিনি করেন আরোহণ।।
হেরিয়া বোধ হইল সবাকার মনে,
উদিত হইল পূর্ণ শশী যেন গগনে।।
ভীষ্ম করি আহ্বান কহেন রাজগণে,
স্বর্গের মহৎ দ্বার উন্মুক্ত এক্ষণে।।
এই পথে তোমরা যাইবে ইন্দ্রলোক।
কিম্বা যাইতে পার কেহবা ব্রহ্মলোক।।
রোগ ভোগে মৃত্যু নয় ক্ষত্রিয় বচন।
যুদ্ধ-মৃত‍্যুতে লভিবে ধর্ম সনাতন।।
করি শ্রবণ রাজগণ ভীষ্ম বচন,
নিজ রথে সৈন্য সাথে করেন গমন।।
কর্ণ আর বন্ধু তাঁর রহেন নিবৃত্ত।
পূর্ব পণ করিতে পালন এই নিমিত্ত।।
দ্রোণ শল্য কৃপ আরও কত নৃপতি,
রচিলেন ব‍্যূহ এক তা দুর্ভেদ্য অতি।।
হেন হেরি যুধিষ্ঠির কহেন অর্জুনে,
রচিও ব‍্যূহ তুমি বৃহস্পতি বচনে।।
শুনি তা অর্জুন কহেন হে মহারাজ,
ইন্দ্রবিধানে রচিব দুই ব‍্যূহ আজ।।
‘অচল’ ও ‘বজ্র’ ব‍্যূহ করিব রচন।
দুর্ভেদ্য সে দুই ব‍্যূহ ইন্দ্রের বচন।।
হেরি কৌরব সেনার সেই অগ্রগতি,
পাণ্ডব বাহিনী চলে জাহ্নবী যেমতি।।
গদা হস্তে ভীমসেন সর্ব পুরভাগে।
নকুল সহদেব রহেন পৃষ্ঠ ভাগে।।
বিরাট রাজ রহিলেন অল্প তফাতে।
দ্রৌপদী-পঞ্চসূত চলেন সাথে সাথে।।
যুধিষ্ঠির রহিলেন সেনা মধ্য ভাগে।
বিরাট চলেন ধীরে দ্রুপদের আগে।।
রাজকুল রথধ্বজ করি মুহ‍্যমান,
অর্জুনের রথারূঢ় কপি হনুমান।।
হেরি বিশাল সেনা ভীষ্ম রচিত ব‍্যূহ,
তাই চিন্তিত ধর্মরাজ বিপদ সমূহ।।
কহিলেন যুধিষ্ঠির শোন ধনঞ্জয়,
কেমনে করিবে তুমি এ যুদ্ধ জয়।।
এতেক শুনি অর্জুন করেন অভয়।
নাহি ভয় হবে জয়, ধর্মের সদা জয়।।
যুধিষ্ঠির-মস্তকোপরি শ্বেত ছত্র ধৃত।
রহিলেন ধর্মরাজ মহর্ষি পরিবৃত।।
পুরোহিত ব্রহ্মর্ষি সকল সিদ্ধগণ,
করিলেন আশীর্বাদ করি স্বস্তয়ন।।
গো-পুষ্প-ফলাদি তিনি করিলেন দান।
অতঃপর ইন্দ্র তুল‍্য যুদ্ধ ক্ষেত্রে যান।।
কৃষ্ণ কহেন অর্জুনে শোন ধনঞ্জয়,
দুর্গা স্তোত্র কর পাঠ হইবেক জয়।।
ধনঞ্জয়-স্তবে দুর্গা হইলেন প্রীত।
আশীর্বাদ করি তিনি হন অন্তর্হিত।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *