Spread the love

একাংশ শিক্ষকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অমানবিক হয়ে উঠছে

বটু কৃষ্ণ হালদার

একটি শিশুর জন্মের পর তার জীবনে দুইটি পরিবেশের প্রভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।একটি হলো সামাজিক পরিবেশ অর্থাৎ জন্মের পর থেকে বাবা-মা, স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে সন্তানকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেন, একটু বড় হতেই বাবা-মায়ের হাত ধরেই শিশুটির স্কুল জীবন শুরু হয়। স্কুল জীবনের পরিবেশ শিশুটিকে আগামী ভবিষ্যতে একজন ন্যায়,সৎ,কর্তব্য পরায়ণ নাগরিকে পরিণত হতে সাহায্য করে।তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা এক কথায় অনস্বীকার্য। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার আজকে যে শিশু আগামী ভবিষ্যতে একজন দায়িত্ববান চালক।সেই চালককে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে প্রকৃত মানুষ করে তোলার দায়িত্বশিক্ষকের কাঁধের উপর থাকে।

শিক্ষক হল মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষাদান একটি জটিল ও কঠিন কাজ। একাজটি যিনি করে থাকেন তিনি শিক্ষক। শিক্ষককে জীবন্ত উপাদান নিয়ে কাজ করতে হয় বলে শিক্ষকতা একটি উচু দরের শিল্প। শিক্ষক শুধু খবরের উৎস বা ভাণ্ডার নন, কিংবা প্রয়ােজনীয় তথ্য সংগ্রহকারী নন। শিক্ষক শিশুর বন্ধু, পরিচালক ও যােগ্য উপদেষ্টা। শিক্ষার সর্বস্তরে শিক্ষকই হলেন শিক্ষাকর্মের মূল উৎস।

শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মাধ্যমে নয়,বাস্তবমুখী ও নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে একজন সুশৃঙ্খল, পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার শিক্ষাটা প্রদান করেন। তাদের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসা, আদর ও শাসন এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমেই একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে সৎ, সাহসী ও প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। সমাজ ও জাতি গঠন, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতির উন্নয়নে, দেশের সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে, বিশ্বের দরবারে নিজ দেশের গৌরবময় অবস্থান গড়ে তুলতে একজন আদর্শ শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য।শিক্ষকদের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে একটি শিক্ষিত জাতি। একজন ছাত্রই সৎ পরিশ্রমী শিক্ষক,উকিল, ডাক্তার,ব্যারিস্টার,উদ্ধতন অফিসার,আই এ এস, আই পি এস, গবেষক,খেলোয়াড় হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে চলেছে।এসবই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দান।শুধু তাই নয় একজন শিক্ষক কে বহু ক্ষেত্রে মানবদরদী বা সমাজসেবামূলক কাজ করতে বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে।স্কুলের বাইরে অসহায় মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ানো, হোস্টেলে বহিরাগত ছাত্রছাত্রীদের ভোরবেলা তুলে পড়ানো,প্রতিভাবান ছাত্র-ছাত্রীদের বই খাতা কলম জামা কাপড় সাহায্য করা, কিংবা হতদরিদ্র প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছাত্র-ছাত্রীকে পুষ্টিকর খাদ্য থেকে শুরু করে খেলার জিনিসপত্র কিনে সাহায্য করার মত মানবিক সেবামূলক কাজগুলো করে চলেছে বহু শিক্ষক শিক্ষিকা।এক্ষেত্রে কমন ওয়েলথ গেমসে সোনাজয়ী অচিন্ত্য শিউলী র শিক্ষক অষ্টম দাস, কিম্বা আসামের ধিং এক্সপ্রেস হিমা দাসের কোচ নিপন দাসের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।তবে এমন বহু মহানুভব শিক্ষক রা আমাদের সমাজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন যারা নিশব্দে বিপ্লব করে চলেছেন।ছাত্র ছাত্রী তৈরি করে চলেছেন।শিক্ষক দের মহান কাজ কে স্বকৃতি দিতে প্রতি বছর ৫ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয়।তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়, যা যুগের পর যুগ চলে আসছে

একজন আদর্শ শিক্ষকের পক্ষেই সম্ভব শিক্ষার কাজ ও শিক্ষা ব্যবস্থাকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা ।রবীন্দ্রনাথের মতে, উত্তম শিক্ষক হবেন উত্তম ছাত্র। শিক্ষকের ছাত্রত্ব গ্রহণে তার মনের তারুণ্য নষ্ট হতে পারে না, বরং তিনি সব সময়ই ছাত্রদের সুবিধা অসুবিধা ভালভাবে বুঝতে সক্ষম হবেন এবং এ কারণেই তিনি শিশুদের মনের একান্ত কাছাকাছি থাকবেন।শিক্ষক সম্পর্কে রুশাের একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য হলাে, একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ জীবনব্যাপী শিক্ষার ভার নেবেন। তাই শিক্ষক হবেন শিক্ষার্থীর বন্ধু, নির্দেশক, জীবনাদর্শের বাস্তব প্রতীক।শিক্ষককে অবশ্যই দায়িত্বশীল ও কর্তব্য বানাতে হবে।শিক্ষক রা সমাজের চোখে এতটাই সন্মানীয় যে তাদের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ৫ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করা হয়।আমাদের সমাজে এমন বহু শিক্ষক আছেন যারা শুধু স্কুলে কিংবা পাঠশালায় শিক্ষা দান করেন তা নয়,অনেক প্রতিভাবান অভাবী ছাত্র,ছাত্রীদের পড়াশোনার দায়,দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন।সেই রক্ষক শিক্ষক যখন কুমিরের কাছে শিয়ালের বাচ্চা মানুষ করার গল্প হয়ে ওঠে তখন সমাজের চরম লজ্জা ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।ভারতের কোণে কোণে স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে,পাঠশালা গুলোতে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনা সমাজের ভীতকে নাড়িয়ে দেয়।মুষ্টিমেয় কিছু কু _চরিত্রের শিক্ষকের এমন জঘন্য অভিসন্ধির জন্য সমাজের চোখে শিক্ষক নামক শব্দটি কলঙ্কিত হয়ে উঠছে বার বার।তাই এমন শিক্ষকদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। তার সঙ্গে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা দরকার। যাতে পরবর্তীকালে কোন শিক্ষক পবিত্র শিক্ষাঙ্গনকে এমনভাবে কলুষিত করতে ভয় পায়।

বন্যেরা বনে সুন্দর,শিশুরা মাতৃক্রোড়ে। আর ছাত্রছাত্রীদের অন্যতম ভরসা ও নিরাপদ স্থান হল বিদ্যালয়। বর্তমান সমাজে এই তিনটি বিশেষ জায়গায় আজ কেউ নিরাপদ নয়। অনেক সময় বহু সংবাদ মাধ্যমে আমরা দেখে থাকি কিছু মা নিজের স্বার্থে সন্তানকে হত্যা করছে।জঙ্গল কেটে ফেলা হচ্ছে, চোরা শিকারিদের উৎপাত, ও ভয়াবহ দাবানল এর জন্য জঙ্গলের পশুরা আজ অসহায় বোধ করছে। ঠিক তেমনই শিক্ষা স্থানে ছাত্রী নিগ্রহের ঘটনা ও বারবার প্রকট হয়ে উঠছে। তাই সমাজকল্যাণে তিনটি স্থানে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা খুবই জরুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *