মানুষ(অণুগল্প)
রাজকুমার সরকার
( ঝাড়খন্ড)
একটু ভালোভাবে মানুষের মত থাকতে পারো না?
” সেটা কেমন বৌদি?”
কেন যেমন তোমার দাদা থাকে।দাড়ি কেটে; টাই পরে ফিটফাট থাকবে তবেই তো সুন্দরী মেয়েরা তোমায় পছন্দ করবে।তোমার এবার বিয়ে দিতে হবে তো?
বউদির কথা শুনে মুচকি হাসলো সজল।
কি হোলো?
হাসলে হবে না ক্যাবলা’র মত।
— বউদি একটা কথা বলবো?
একটা কেন, হাজারটা বলো ….
তুমি কি জানো দাদার চাকরিটা আমি করে দিয়েছি।
চাকরি ও তোমার মত সুন্দরী বৌ পেয়ে দাদা সবাইকে ভুলতে বসেছে।তোমার ইশারায় দাদা বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল।
আমি জানতে পেরে সোজা জামনগর থেকে ছুটে বাড়ি এসেছি।
বউদি জেনে রাখো শুধু ফিটফাট থাকলে হয় না।মানুষ হতে হয়।সত্যিকারের মানুষ।
বউদির মুখটি বিবর্ণ হয়ে গেল।
গলি বদল(অণুগল্প)
রাজকুমার সরকার /ঝাড়খন্ড
একটি কুকুর সাতটি বাচ্চা দিয়েছে।ফুটফুটে বাচ্চাগুলি খুব সুন্দর।
শিশু মানেই সুন্দর তা কুকুর হোক না কেন …..
পাড়ার সব ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা খেলা করে কুকুরের বাচ্চাগুলোকে নিয়ে সকাল সন্ধ্যা । ওরা খুব যত্ন করে ।খেতে দেয় প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা।নাম রেখেছে ওদের …
একদিন হঠাৎ দেখে কুকুরগুলো উধাও ……
খোঁজ করতে শুরু করে সবাই।কুকুরগুলোই ওদের জীবন ।কোথায় গেল?
একদিন খুঁজতে খুঁজতে পাশের গলিতে ডাক্তারের বাড়ির সামনেই খোঁজ মেলে।
কুকুরের প্রভুভক্তি তো রয়েছেই;সাথে জ্ঞানও বেড়েছে।ওরা বুঝে গেছে শুধু খাবার খেলে হবে না যদি শরীর খারাপ হয় তখন ওদের কে দেখবে ?
তাই ওরা ভিন্ন পথ অবলম্বন করেছে।ডাক্তারের বাড়ির খাবার তো পাবেই তাছাড়া শরীর খারাপ হলে চিন্তা নেই এই ভেবে ওরা ঘাঁটি গেড়েছে ডাক্তারের চেম্বারের ঠিক পাশেই ।ডাক্তারের মনটিও শিশুসুলভ ও কুকুরগুলোকে খেতে দিচ্ছে । আদর করছে।কুকুরগুলো গলিবদল করে দিব্যি আছে।
মায়ার বন্ধন (অণুগল্প)
রাজকুমার সরকার/ঝাড়খন্ড
গতকাল রাত্রে মায়ের স্বপ্ন দেখলাম কি যেন বলতে চাইছে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে; কাছে এল না।
আজ একটু জ্বর জ্বর লাগছে ….মা কি আমায় নিতে এল…?
মল্লিকা রায়- এর কথাগুলি শুনে রাজ জানালো- মা আপনাকে দেখতে এসেছিলেন।কোনো চিন্তা করবেন না।ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন জ্বর থাকলে।ঘাবড়াবেন না দিদি; সব ঠিক হয়ে যাবে।
রাজের কথাটি প্রণতিদিও সমর্থন করলেন।
রাজ মল্লিকাদি’কে জানালো- দিদি, আরেকটি কথা জানাচ্ছি আপনাকে; আমাদের প্রিয় মানুষ যখন মারা যান তখন খুব কষ্ট করেই মারা যান। তাঁরা এই সংসারের মায়া ত্যাগ করতে পারেন না।মারা যাওয়ার পর আমরা মৃতদেহকে দাহ সংস্কার করি।শ্রাদ্ধ করি।সব কিছু করে থাকি।তারপর ভাবি সব শেষ।
আমাদের ভুল ধারনা। আত্মা অবিনশ্বর। আত্মা ঘুরে আসে আমরা কেমন আছি দেখতে।
হয়তো আপনি আমাকে পাগল ভাবছেন; তাই না দিদি?
আমার বাড়ি সদর দরজায় ঠিক রাত এগারোটার সময় একটি আওয়াজ হয়।আমি পর পর বেশ কয়েকদিন লক্ষ্য করেছিলাম। আমি ভাবলাম কেউ হয়তো ভয় খাওয়াচ্ছ আমাকে …..
আমি সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই।আমি যখনই আওয়াজ পেয়েছি তখনই একটি লাঠি হাতে নিয়ে সদরদরজায় হাজির হয়েছি। খুলেছি এবং কাউকে দেখতে পাইনি।
পরে জানতে পেরেছি মানুষ মারা গেলেও তাঁরা আমাদের দেখতে আসেন আমরা কেমন আছি।
পরলোক ও প্রেততত্ব পড়ে জেনেছি আত্মারা এখনও আসে মায়ার বন্ধনে…..
বুধন সিং (অণুগল্প)
রাজকুমার সরকার/ ঝাড়খন্ড
বুধন সিং এলাকার ত্রাস। এক নামে সবাই চেনে।যখন রাস্তা দিয়ে চেলা চামুণ্ডা নিয়ে বের হয় তখন এলাকাবাসী জড়সড় হয়ে থাকে।কেউ মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পায় না।সমানে চলছে গুণ্ডারাজ যশপুরে।বাড়ির বাচ্চারা রাত্রে না ঘুমোলে মায়েরা বলে ঘুমিয়ে পড়; বুধন আসছে।বাচ্চারা ভয়েই ঘুমিয়ে পড়ে।
এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো মাসখানেক আগে।রাস্তা দিয়ে দলবল নিয়ে মিছিল করে যাচ্ছিল বুধন সিং।মাঝপথে গাড়ি খারাপ।থমকে যায় ব্যস্ত নগরী,জনবহুল পথ।গাড়ি চলাচল বন্ধ।কার সাধ্য এই পথ দিয়ে পেরোবার?
তাপসবাবু সাংবাদিক।’বাঙালিবাবু’ বলে পরিচিত। জলে-জঙ্গলে, ঝোপে -ঝাড়ে যেখানে সেখানে তাঁর অবাধ বিচরণ।গুনগুন করে একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে গাইতে চলেছেন বাইক নিয়ে। যেতে যেতে দেখলেন, বুধন সিং রাস্তা জ্যাম করে দাঁড়িয়ে।বাইক থেকে নেমে তাপসবাবু একটু মাথা ঝুঁকিয়ে
বললেন, বড়ে ভাই নমস্কার।ক্যায়া হুয়া?
বাঙালিবাবুর একটি নমস্কারেই ঘায়েল এলাকার ত্রাস।পিঠ থাপড়ে বললো, কাঁহা যা রহে হো বাঙালিদাদা?
—- “প্রেস”
ঠিক হ্যায় দাদা।যাইয়ে।কুছ জরুরত পড়নে পর এগো কল কর দিজিয়েগা।
[17/10, 11:05 pm] রাজকুমার সরকার:
(অনুগল্প)
যুগটা বেইমানদের (অনুগল্প)
ছেলেটার মা – বাবা ছোটতেই মারা গেছিল।মানুষ করেছিল কমলাখুড়ি।
কমলাখুড়ির এখন অনেক বয়স।নিরানব্বই। অদ্ভুত। এখনও যষ্টি হাতে চলা ফেরা করে।
যে ছেলেটিকে কোলে পিঠে মানুষ করেছিল সে ছেলেটি মস্ত বড় হয়েছে।বিরাটনগর ব্লকের ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার।
কমলাখুড়ির জীর্ণ বাড়ি।খড়ের।জল পড়ে বর্ষায় …..
গ্রামের সকলের পাকা বাড়ি হয়েছে সরকারী স্কীমে।
নজরে পড়েনি অফিসারের….
কমলাখুড়িকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি নাকি একটি ছেলেকে কোলে পিঠে মানুষ করেছিলে সে ছেলেটিকে বলো, একটা তোমার ঘর করে দিতে ….
কমলাখুড়ির কাঁপা কাঁপা গলায় বলে — মানুষ করেছি ও বড় হয়েছে।আমি মানুষ না করলে ছেলেটা যে মারা যেত।তা তো আর চোখে দেখা যায় না তাই মানুষ করেছি মানুষ হয়ে।সে তো আমাকে ভুলে যাবেই।জানতাম। আসলে যুগটা যে বেইমানদের …….
উত্তম-মধ্যম (অণুগল্প)
আসানসোল থেকে বাসটা মাতাল কাঁড়ার মত ছুটে এলো ভগবান সিং মোড়ে।সোহম ছুটে এসে বাসটা ধরলো।খুব ভীড় নেই তবে বসতে জায়গা পেল না সোহম।সোহমের অবশ্য সব অভ্যেস আছে।
দাঁড়িয়েই থাকলো ব্যাগ কাঁধে নিয়েই।সিট আছে, ফাঁকা গাড়ি বলেই কন্টাক্টর হাঁক দিয়েছিল ।
সোহম লক্ষ্য করলো চারটি ছেলে পাশাপাশি দুটি সিট দখল করেই আসছিল আসানসোলের দিকে থেকেই।তাদের লক্ষ্য অন্য একটি সিটে বসে থাকা দুটি মেয়ের দিকেই।রূপবতী যুবতী …।
তারা কেমন যেন অন্য ভাষায় কি যেন কথা বলছিল আর হাসছিল।সোহম ওদের ভাষার মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছিল না!
একটি ছেলে মাকুড়ি পরে ছিল কানে! বেশভূষাও বিচিত্র ধরনের! বাস ছুটে চলেছে আপনবেগে …..।
বার-বার ঐ চারটি ছেলে যুবতী দুটিকে দেখছিল আর হাসছিল। আর কি যেন বলছিল ওদের ভাষায় …..।
সোহম তাদের গতিবিধি ভালো বুঝছিল না।ক্রমশ: রক্ত গরম হয়ে আসছিল সোহমের। এসব ঘটনা ও বরদাস্ত করতে পারে না।ও কুলটি নিউ রোডে নামার সময় মাকুড়ি পরা ছেলেটিকে এক চড় কষিয়ে দিল।ছেলেটি এবার হিন্দিতে বুলি জানতে লাগলো — ক্যায়া কসুর জনাব; আপনে হামকো …..
সোহম বলে উঠলো —– তোর উত্তম মধ্যমের প্রয়োজন ছিল তাই দিলাম। ‘উত্তম’ দিয়ে আমি নামছি এবার তোরা ‘মধ্যম’ সামলা…..
এই বলাতেই সকল যাত্রী ঝাঁপিয়ে পড়লো চারটি ছেলের উপর।সকল যাত্রীই ওদের ক্রিয়াকলাপ দেখেই আসছিল।সোহমের চড় মারাতে তারাও এবার সাহস পেয়ে গেল ও বেধড়ক মারতে শুরু করলো ওদের …….
সোহম নিউ রোডে নেমে প্রভাতদা’র বাড়ির দিকে পা মাড়ালো।
মেয়ে দেখা (অণুগল্প)
একদল কুটুম্ব এসেছে মোহনপুরের বৈদ্যপাড়ায়।বরেনবাবুর বাড়িতে।মেয়ে দেখতে।স্টেশনে নেমে তাঁরা গাড়ি না পেয়ে হেঁটে হেঁটেই চলে এসেছেন গল্প করতে করতে।
বরেন সরকারের ছোট মেয়েকে দেখতে এসেছেন।
সুন্দরী মেয়েটি।বেশ ফুটফুটে।বয়স আঠারো পেরিয়ে ঊনিশের ঘরে।উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছে।চারটি মেয়ের মধ্যে ঝুমাই ছোট।ঝুমা’র বিয়ে দিলেই বরেনবাবু হাত পা ঝাড়া …
কুটুম্ব ঢুকতে দেখেই গ্রামে জটলা।বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে….
মহিলাগুলি সম্বন্ধ ভাঙতে ওস্তাদ।তাদের কাজ হলো যেভাবেই হোক সম্বন্ধটি ভেঙে দেওয়া।অদ্ভুত বুদ্ধিমতির দল।
কুটুম্বরা মেয়ে দেখে বের হোলো বরেনবাবুর বাড়ি থেকে।দূর থেকে দেখে নিয়েছে বুদ্ধিমতির দল।তারা পেছনে পেছনে চলতে থাকে।গ্রাম পেরিয়ে তারা হাঁক দেয় — ও ডাক্তারবাবু ও ডাক্তারবাবু কেমন দেখলেন আমাদের ঝুমিকে?
ডাক্তারবাবু, ঝুমি ভালো আছে?
—- আপনারা কি আমাদের কিছু বলছেন?
হ্যাঁ, বলি কেমন দেখলেন ঝুমিকে?
— কে ঝুমি?
আপনারা যে মেয়েটিকে দেখতে এসেছিলেন…..?
কার কথা বলছেন আপনারা?
বরেনবাবুর মেয়ে ঝুমি’র কথা বলছি।
আপনারা তো ডাক্তার; তাই না?
দেখে কি বুঝলেন?
কেন? মেয়ে তো ভালোই দেখলাম।
তারা একে অপরের মুখের দিকে চাইলো…..
মুচকি হাসলো।
গতকালই বাপের সাথে ঝগড়া করে ঝুমি কুয়োতে ঝাঁপ দিয়েছিল।বাবা মা চান না, মেয়েটিকে বেজাতে তুলে দিতে …..
বুঝলাম না।
বুঝলেন না?
মেয়েটি ভালোবাসে এক নীচু জাতের ছেলেকে।মেয়েটির চরিত্র ভালো নয়।
ও আচ্ছা, বলেই কুটুম্বরা বিদায় নিলেও এবং সবটায় বুঝলেন তারা।
এক সপ্তাহ পরে চিঠি এলো বরেনবাবুর বাড়িতে।
মান্যবর, নমস্কার।
আপনার মেয়েকে আমার ছেলের খুব পছন্দ। এমাসের মধ্যেই আসুন, বিয়ের দিন ঠিক করতে।সাক্ষাতে সব কথা হবে।
ভবদীয়
নারায়ণ সেনগুপ্ত
জঙ্গলপুর, পশ্চিমবঙ্গ
বরেনবাবু চিঠি পড়ে খুশিতে টগবগ। স্ত্রী বললেন কি হয়েছে?
বরেনবাবু চিঠিটি স্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন সময় নেই।জামাইদের খবর দিতে হবে। এত সুন্দর হীরের টুকরোর মত ছেলে।
আমার ঝুমা’র কি ভাগ্য।যাক এবার গ্রামের মহিলা দল কিছু করতে পারেনি মনে হচ্ছে।
একদিন আলো সানাই – এ
বরেনবাবুর ঘর সেজে উঠলো, সেই মহিলার দল নিমন্ত্রণ পেয়েও এ মুখো হতে পারলো না।
[12/11, 2:02 pm] রাজকুমার সরকার: স্বপ্ন
স্বপ্ন(অণুগল্প)
আমি জানতাম শেখরের সাথে আজ ঝগড়া হবেই ….
শালার দেমাক দিন দিন বেড়েই চলেছে।শুধু গ্রামে বসে বসে ফোঁপরদালালি, হামবড়াইয়া ভাব, নিজেকে খুব হনু ভাবে শুয়োরটা।
বিড়বিড় করে কথাগুলো বলতে বলতে বিড়ি ধরালো মানস।কেউ কিছু প্রশ্ন করে না মানসকে।আজকের দিনে আসলে কেউ কারও ব্যপারে মাথা বেশি ঘামায় না।যুগটাই এখন এমনই …..
তবুও সমাজে কিছু মানুষ আছেন যাঁরা সবকিছুই লক্ষ্য রাখেন।
মানসকে হঠাৎ দেবেশ প্রশ্ন করলো, কি বিড়বিড় করছিস্ রে মানস?
কি হোলো?
কার সাথে তোর আবার ঝগড়া হোলো?
কখনই বা ঝগড়া হোলো?
একটু খোলসা করে বলবি তো?
মানস বললো – ঝগড়া হয়েছে আজ ভোরবেলায় – স্বপ্নে