ইন্ডিয়া গেটে মহারাজার আসন সম্পূর্ণরূপে পরিপূর্ণতা লাভ করল
বটু কৃষ্ণ হালদার
নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস ছিলেন এক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী। ভারতবর্ষের পূর্ব পশ্চিম উত্তর দক্ষিণ চারিধারে তার অস্তিত্ব বিরাজমান। এমনকি ভারতবর্ষের বাইরে তিনি স্বতন্ত্র ভূমিকায় উজ্জ্বল ছিলেন। তিনি একমাত্র প্রথম এবং শেষ সেই ব্যাক্তি ছিলেন যিনি জাতপাত ধর্মনির্বিশেষে অখণ্ড ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। দেশের প্রত্যেক মানুষকে আহ্বান জানিয়েছিলেন “দিল্লি চলো”।বলেছিলেন”তোমরা আমায় রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। দেশের মানুষ,ভরসা বিশ্বাস করেছিলেন, যে তিনি আমাদের একমাত্র স্বাধীনতা এনে দিতে পারবেন। এর কারণে নিঃস্বার্থভাবে অর্থ,সোনা,দানা থেকে শুরু করে নিজেদের সন্তান, স্বামীদের তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন আজাদ হিন্দ বাহিনী গঠন করতে।স্বাধীনতার পরে তিনি চেয়েছিলেন এই দেশে পাঁচ বছর মিলিটারি শাসন চালু করতে।কিন্তু দেশ স্বাধীনতা লাভ করলেও তার স্বপ্ন আজও অধরা।
স্বাধীনতার পর ভারত পথ হেঁটেছে গান্ধীর দেখানো পথে।তাই দিনে দিনে ভারত হয়ে উঠেছে দুর্নীতির আঁতুর ঘর। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষের আধিপত্য বিরাজমান। ব্রিটিশরা চলে গেছে তার পরিবর্তে মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়েছে।
গান্ধীর দেখানো পথে হেঁটে সাধারণ মানুষ হয়ে উঠেছে প্রতিবাদ বিমুখ,আর নেতাজির আদর্শ রয়ে গেছে খাতা কলমের মধ্যে আটকে। এক গালে চড় খেয়ে অন্য গাল পেতে দিতে দিতে মানুষ হারিয়ে ফেলেছে তাঁর শিরদাঁড়া।হয়ে উঠেছে পর নির্ভর শীল।তবে মনে রাখতে হবে নেতাজী রহস্যের সমাধান শুধু সুভাষ চন্দ্র বোস কে তার প্রাপ্য অধিকার ফিরিয়ে দেবে না,সূচনা করবে এক নতুন ভারতের। পরিবর্তন হবে চলার পথের পরিবর্তন ঘটবে দৃষ্টিভঙ্গির। মানুষ শিখবে প্রতিবাদের ভাষা।
তাই সুভাষের অধিকারের লড়াই প্রতিটি মানুষের লড়াই। তাদের নিজেদের অধিকার ফিরে পাওয়ার লড়াই। তাই যত দিন না পর্যন্ত সুভাষ তার প্রাপ্য অধিকার ফিরে পাচ্ছে, তাঁর রহস্যের সঠিক সমাধান হচ্ছে তত এই লড়াই চলবে।নেতাজী রহস্যের সমাধান চাই। এ প্রতিজ্ঞা আমাদের যুগের পর যুগ অপেক্ষা করিয়েছে।কিন্তু সমস্যা সমাধান হয় নি।শুধু হতাশার অন্ধকারে ডুবে রয়েছি।
তবে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজির প্রাপ্য সম্মান কিছুটা হলে ও ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নিরন্তর।তবে তিনি বাঙালির আবেগ টাকে খুব অন্তর দৃষ্টি দিয়ে উপলব্ধি করেছেন।তাই বার বার নেতাজি কে নিয়ে বারবার উন্মাদনা সৃষ্টি করে বাঙালির হৃদয় জিতে নেবার প্রয়াস করছেন।কিন্তু কি অদ্ভুত সমাপতন দেখুন,আজকেই পরাধীন ভারতের শেষ অধিশ্বরী রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ মারা গেলেন,আর সেই দিনেই বাঙালির প্রাণের ঠাকুর,আত্মার পরম বন্ধু নেতাজির মূর্তি উন্মোচন করা হলো ইন্ডিয়া গেটে।এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন জাগতে পারে, ইংল্যান্ডে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এর মৃত্যুর সঙ্গে নেতাজির মূর্তি উন্মোচনের সম্পর্ক কি?এক্ষেত্রে জেনে রাখা দরকার যে,এই এলিজাবেথ হচ্ছেন যিনি নেতাজি র মত মহান দেশ প্রেমিককে ওয়ার ক্রিমিনাল ঘোষণার পিছনে অন্যতম প্রধান কান্ডারী ছিলেন।যিনি গান্ধী কে পছন্দ করতেন, গান্ধীকে নিজের বিয়েতে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। নেহেরু এঁদের পরিবারের নামেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।তাই ওনার মৃত্যু তে এক মহান নেতার মাথা থেকে কলঙ্করকালি মুছে গেলো।এক ইতিহাসই মহা সন্ধিক্ষণের মাঝে নেতাজি সন্মানিত হলেন।এ গৌরব বাঙালির কাছে অত্যন্ত উচ্ছাসের।
এই দিনটিকে মহা সন্ধিক্ষণ বলার অন্যতম কারণ হলো রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর দিনেই কিন্তু নেতাজির মূর্তি উন্মোচন করা হলো। আগে বা পরে কেন হল না?বলতে গেলে এই দিনটি ইতিহাসের পাতায় অবশ্যই লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করি।তিনি স্ব_মহিমায় উজ্জ্বল হলেন সমগ্র বিশ্ব বাসির কাছে।তবে যে ব্যক্তি এই দিনটাকেই বেছে নিয়েছেন তিনি অবশ্যই একজন মহামানব। এই উপলব্ধি একজন মহামানবের কিংবা সিদ্ধিদাতার দ্বারাই সম্ভব।তবে দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে বহু শহীদের আত্মার শান্তি হল,সেটা নিশ্চিত ভাবে উপলব্ধি করা যায়।
রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ শুধুমাত্র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ভাবনার সঙ্গে খেলা করেননি, বহু বিপ্লবীদের মৃত্যুর কারণ ছিলেন তিনি।শুধু তাই নয় বর্তমান ভারতবর্ষের গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস।
আর বিপ্লবীদের জন্যেই দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছিল। যাঁরা বিপ্লবী শত্রু, তারা অবশ্যই আমাদের ভারতীয়দের শত্রু। অথচ এই মুহূর্তে রানী এলিজাবেথের মৃত্যুর পর বহু ভারতবাসীর হৃদয় ব্যথিত হচ্ছে,আবার বাংলাদেশেতিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন হচ্ছে। সেই বাংলাদেশকে নিয়ে ভারতবর্ষ তথা পশ্চিমবাংলার জনগণের উচ্ছ্বাসের শেষ নেই। তবে মনে রাখতে হবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের প্রতি বিরূপ মনোভাবাপন্ন মানুষ ও দেশগুলোকে বয়কট করলেই তবেই তার প্রতি আরো বেশি সম্মান জানানো হবে।তিনি এই মুহূর্তে যেখানেই যে অবস্থায় থাকুন না কেন,সেই দিন তিনি আরো বেশি খুশি হবেন।সেই দিন তার নিঃস্বার্থ পরিশ্রম সফলতা লাভ করবেই করবে। নেতাজি সুভাষ বোসের আদর্শ হীন মনোভাবাপন্ন মানুষগুলোকে চিহ্নিতকরণের দায়িত্ব কিন্তু আমাদের। আর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস রাষ্ট্রবাদী মানুষদের অন্তরে ছিলেন,আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন।
****************
বটু কৃষ্ণ হালদার