Spread the love

ছড়া নিয়ে কিছু কথা

বিধান চন্দ্র হালদার

একাদশ শ্রেণিতে ছড়ার বৈশিষ্ট্য শেখানো হয়–
তার মধ্যে অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো,– ছড়া অর্থপূর্ণ হতেই হবে এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেমন ভাবে রবীন্দ্রনাথের অনেক ছড়া অর্থহীন। অনেক কবির ছড়া অর্থহীন।আজ হয়তো‌ কিছু ছড়া কারোর কারোর খারাপ লাগছে কিন্তু ভবিষ্যতে আগামী প্রজন্মের হয়তো খুবই ভালো লাগতে পারে । যেমন ভাবে জীবনানন্দ দাশকে সেই সময় জটিল ও দুর্বোধ্যের কবি বলা হতো। বর্তমানে রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশ। রবীন্দ্রনাথের অনেক ছড়ার মধ্যে একটি ছড়ার উদাহরণ দিলাম—
“আতা গাছের তোতা পাখি
ডালিম গাছের মৌ
হিরে দাদার মড়মড়ে থান
ঠাকুর দাদার বউ”–
–এর কি অর্থ আছে একজন শিশু শ্রেণির শিক্ষার্থীর কাছে?

আরো কিছু জনপ্রিয় ছড়ার উদাহরণ দিলাম এর কি অর্থ আছে আমার জানা নেই। কার লেখা তাও জানা নেই। কিন্তু ছড়া গুলি খুবই জনপ্রিয়। তবে অবশ্যই অর্থহীন বলে মনে হয় আমার কাছে–

১, ঘুমপাড়ানি মাসি পিসি
মোদের বাড়ি এসো

২, সোনা সোনা ডাক ছাড়ি
সোনা নেইকো বাড়ি

৩, আইগম বাইগন তাড়াতুড়ি
যদু মাস্টার শ্বশুরবাড়ি

৪ আড়ি আড়ি আড়ি
কাল যাব বাড়ি

৫, এলাটিং বেলাটিং সইলো
একটি খবর আইলো।

৬, আম পাতা জোড়া জোড়া
মারবো চাবুক চড়বো ঘোড়া।

অধিকাংশ ছড়ারই মূল উদ্দেশ্য শিশুর মনোরঞ্জন। অর্থ থাক বা না থাক শিশুর মনের আনন্দ টাই বড় কথা। ছড়ার মধ্যে বড়রা অর্থ খুঁজতে গেলে খুবই মুশকিল। ছড়ার বৈশিষ্ট্য গুলি সবার ভালো করে পড়ার খুবই প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়। সাথে সাথে নিদেন পক্ষে 100 জন কবির ছড়াগুলি পড়তে থাকুন তাহলে বুঝতে পারবেন। পৃথিবীর প্রতিটি ছড়া লেখা হয়েছে শিশুর মনোরঞ্জনের জন্য। কিছু কিছু ছড়ার অর্থ আছে, কিছু কিছু ছড়ার অর্থ নেই। যুগে যুগে এইরকম নতুন ছড়া নতুন কবির হাত দিয়ে তৈরি হতে থাকবে। সময় বিচার করবে কোনটি কালোত্তীর্ণ।

ছড়ার আরো কিছু বৈশিষ্ট্য সূত্রাকারে নিম্নে তুলে দেওয়া গেল—
১, ছড়ায় আপাতত অসংলগ্নতা ও অসঙ্গতি তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য।

২, ছড়ার লক্ষ্য সুর ও তাল।

৩, ছড়া ছন্দ আশ্রিত বাগ্ ভক্তি, সংগীত ধর্মী ও আবৃত্তি সুখকর।

৪, ছড়ায় আছে চিত্রময়তা ও স্বপ্ন ময়তা।

৫, সংস্কৃত ‘ছটা’ শব্দ থেকে ‘ছড়া’ শব্দের উৎপত্তি। কারো কারো মতে ‘ছন্দ’ এর অপভ্রংশ থেকে ‘ছড়া’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।

৬, ছড়া মানুষের আদিমতম সাহিত্য প্রয়াস।

৭, ছড়া লোকসাহিত্যের প্রাচীনতম উপ-বর্গ

৮, ছন্দোবদ্ধ সুরেলা মন্ত্র যুগ যুগ ধরে বিবর্তিত হয়ে রূপ ধারণ করে ছড়ায়।

৯, বেশ কিছু প্রচলিত ছড়া ব্যক্তিবিশেষের নয়, বহু জনের সৃজন।

১০, ছড়ার মধ্যে আঞ্চলিক উপভাষার প্রভাব স্পষ্ট লক্ষ্য করতে পারা যায়।

—এছাড়াও আরও অনেক বৈশিষ্ট্য আছে। তাই আমার মনে হয় ছড়াতে অর্থ থাকতেই হবে এরকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। শিশুর মনোরঞ্জনই হলো আসল উদ্দেশ্য।

বিধান চন্দ্র হালদার
বাংলা শিক্ষক
M.A(J.U) , B ED (R.K.MISSION, RAHARA)

প্রাক্তন শিক্ষক –পীরপুর জয়নগর উদয়চাঁদ ইনস্টিটিউশন (উচ্চ মাধ্যমিক)
উলুবেড়িয়া ,হাওড়া

বর্তমানে কর্মরত –মদনমোহনপুর আর সি এস বিদ্যামন্দির ( উচ্চ মাধ্যমিক )
কুল্পি ব্লক। দক্ষিণ 24 পরগনা
14/05/2022
9051711080
bchalder1978@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *