Spread the love

স্কুলে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন বাধ্যতামূলক করা হোক

বটু কৃষ্ণ হালদার

পশ্চিমবাংলা  হলো বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালীদের পীঠস্থান। আর বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি বর্তমানে বিশ্বের দরবারে জয়জয়কার। খোদ লন্ডনের মাটিতেও বাংলা ভাষা তাঁর জায়গা করে নিয়েছে।কিন্তু বর্তমান সময়ে বাঙালি নিজের ভাষা, সংস্কৃতির,সভ্যতা থেকে শত যোজন দূরে সরে যাচ্ছে।বাঙালি দিনে দিনে অন্যভাষা,সংস্কৃতির দাস হয়ে যাচ্ছে। বাংলা মিডিয়াম স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে,বাঙালিরা বাংলা সিনেমা দেখতে ভুল যাচ্ছে, খোদ বাংলার বুকে ইংরেজিতে নেমপ্লেট,প্ল্যাকার্ড লিখছে,নবজাগরণের অন্যতম পুরোধা স্বামী বিবেকানন্দ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরদের ভুলে যাচ্ছে, দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে সবথকে বেশি বাঙালি শহীদ হয়েছেন,ক্ষুদিরাম বসু,মাতঙ্গিনী হাজরা,চিত্তরঞ্জন দাস,বিনয়,বাদল,দীনেশ,নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুদের মত বিপ্লবীদের ইতিহাস ভুলে যাচ্ছে, বিশ্বের দরবারে বাঙালি এমন একটি জাত,একসঙ্গে নোবেল থেকে অস্কার বহু পুরস্কার লাভ করেছেন, সেই বাঙালি পশ্চিম বাংলার বুকে ভিখারি ও করুণার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে,এমনকি স্কুলে বাংলায় শিক্ষক নিয়োগ চেয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে বাঙ্গালীদের খুন হতে হচ্ছে,তবুও বৈশাখ মাসের সঙ্গে বাঙ্গালীদের আত্মার সম্পর্ক। আর বৈশাখ মাস মানে বাঙ্গালীদের প্রাণের উৎসব ২৫ শে বৈশাখ। অর্থাৎ বাঙালি নোবেল জয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম দিবস পালন। বাঙালি এই দিনটি মহা আড়ম্বরে পালন করেন। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ এর মধ্যে ২৫ শে বৈশাখ এক অন্যতম পার্বণ। বছরেরএই দিনটার জন্য আপামর বাঙালি অপেক্ষা করে থাকে। কারণ বাঙালির আত্মার আত্মীয় কে বরণ করে নেওয়ার দিন। এই দিন কাক ভোর থেকে শুরু হয়ে যায় মহড়া,ফুলে ফুলে সাজিয়ে তোলা হয় বিভিন্ন আঙিনা, গুরুদেবের মূর্তিতে মাল্যদান থেকে শুরু করে, কবিতা গান নাচে ভরে ওঠে বাংলার আকাশ বাতাস। তবে বিশেষভাবে এই দিনটি শান্তিনিকেতনের জন্য এক মহা উৎসব। এই উৎসবের টানে বিদেশ থেকে বহু পর্যটক আগত হন। আমরা যে যেমন ভাবে পারি এই দিনে সবটুকু উজাড় করে দিয়ে তাঁকে বরণ করে নেওয়ার চেষ্টা করি।তাঁকে স্মরণ করার চেষ্টা করি এবং তাঁর অসীম সমুদ্রের মতো গুণাবলিকে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি নবীন সমাজের মধ্যে।

বিশ্বকবি রবি ঠাকুর নিজেই ছিলেন একক অস্তিত্ব ইতিহাস এবং মহাবিশ্ববিদ্যালয় বললে ও ভুল হবে না। তিনি বাঙালির গর্ব।জাগতিক সমাজ যতদিন থাকবে তাকে নিয়ে গবেষণা চলতেই থাকবে।তাঁকে নিয়ে চলবে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু বিগত দুই বছর যাবত সমগ্র বিশ্ব এক ভয়ঙ্কর নিস্তব্ধতায় দিন কাটিয়েছে।অতি মারি করণা সভ্য সমাজের বুকে তাথৈ তাথৈ করে নৃত্য করে গেছে। মৃত্যুবাণ শিয়রে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে। চোখের সামনে অনেকেই তার প্রিয়জনকে হারিয়েছেন।সেই ক্ষত এখনো পূরণ হয়নি।লকডাউন হয়ে যাওয়ার ফলে, বাঙালির প্রাণের আত্মীয়কে বিগত দুই বছর ঠিকমতো স্বর্ণ বরণ করার সময় পায়নি। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ার ফলে এবছর ২৫ শে বৈশাখ উৎসবের কোন খামতি রাখবেনা বাঙালি এমনটাই আশা করা যাচ্ছে। চারিদিকে সাজসাজ রব।কিন্তু তার মাঝে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হল,দাবদাহ গ্রীষ্মের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যপশ্চিম বাংলার স্কুল গুলো ছুটি ঘোষণা করে দেন রাজ্য সরকার। যা অত্যন্ত নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। তবে সমাজের একাংশ বুদ্ধিজীবী অশিক্ষিত ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে তা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।কারণ প্রতি বছরের ন্যায় এ বছর স্কুল গুলোতে ২৫ শে বৈশাখ উৎসব পালন থেকে বঞ্চিত হবে ছাত্র ছাত্রীরা। সমাজের ছাত্র-যুবসমাজের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের চিন্তা ভাবনা ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। তা থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হবেন ছাত্র-ছাত্রীরা, ঘটনা নিশ্চয়ই আমাদের হৃদয়কে ব্যথিত করে তোলে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে যদি আমাদের মধ্যে উন্মাদনা,আবেগ যদি না থাকে তাহলে বাঙ্গালী জাতি সত্তার লজ্জার বিষয় বড় প্রকট হচ্ছে তা বললে নেহাত ভুল হবেনা।যাঁকে নিয়ে সমগ্র বিশ্বে উন্মাদনার ঢেউ সৃষ্টি হয়,তাকে নিয়ে বাঙালি ভাববে না এটা বাঙালি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। তাই স্কুল বন্ধ থাকলেও ২৫ শে বৈশাখের দিন কবিগুরুর জন্মদিনের উৎসব পালন বাধ্যতামূলক করুক সরকার।পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার কিভাব ভুলে গেলেন গুরুদেবের জন্মদিনের কথা? নাকি শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে মহামনীষীদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত তৈরি হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যাচ্ছে। তবে এই ধারণা যদি সত্যি হয় তাহলে আগামী দিনে পশ্চিম বাংলার বুক থেকে বাঙালি জাতিসত্তা চিরতরে মুছে যাবে সেটা নিশ্চিত হবে বোঝা যাচ্ছে। তবে পরিশেষে বলা যায়,বর্তমানে পশ্চিমবাংলায় বামপন্থী চিন্তাধারার সরকার নেই। আর বামপন্থী মানে যারা দেশের পতাকা কে অস্বীকার করেন, যাদের চোখে দেশের বিপ্লবীরা শুধু সন্ত্রাসবাদি।যাঁদের চোখে দেশের মহান মনীষীদের থেকে ও চে গুয়েভারা,লেলিন, মাও সেতুং রা বেশি আদর্শবাদী।কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকারের কার্যকলাপ বামপন্থী চিন্তাধারার মতো হয়ে যাচ্ছে,একই পথে হাঁটতে শুরু করেছে।তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে সাধারণ জনগণ বামপন্থীদের এই সমস্ত চিন্তা ধারা গুলো মনেপ্রাণে কখনোই মেনে নিতে পারেনি, বাংলার মনীষী বিপ্লবীদের সঙ্গে সাধারণ জনগণের নাড়ির সম্পর্ক তাদের এই অপমান কিভাবে মেনে নেবে জনগণ? যার ফলে বামপন্থীদের কথা চিরতরে মুছে ফেলেছে হৃদয় থেকে।

বটু কৃষ্ণ হালদার,কবর ডাঙ্গা,কল১০৪,ফোন৮৬১৭২৫৫৯৫৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *