ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব্য
★কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন★
কাব্যরূপ:– কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন– ১৯
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১০। অর্জুনের স্বপ্ন ।
অর্জুন-শিবিরে কৃষ্ণ করিয়া গমন।
তার লাগি কুশ শয্যা করেন রচন।।
চতুর্দিকে তার মাল্য গন্ধ দ্রব্য লাজ।
আর তার চারিকোণে নানা অস্ত্র সাজ।।
কৃষ্ণ উপদেশে পার্থ বসেন পূজায়।
অভিমন্যুর আত্মার শান্তি কামনায়।।
★
বিনিদ্র যামিনী কাটে পাণ্ডব শিবিরে।
ভাবিত সবে দুরূহ পার্থ-অঙ্গীকারে।।
কৃষ্ণ কন হেন কার্য করিব সাধন।
সূর্যাস্তের পূর্বে হবে প্রতিজ্ঞা পালন।।
পার্থ হতে প্রিয় কেহ নহেক আমার।
তার লাগি কুরুকুল করিব সংহার।।
কৃষ্ণ কন মধ্যে রাতে সারথিরে তাঁর।
প্রভাতে রথ প্রস্তুত রাখিবে আমার।।
গদা দিব্যশক্তি চক্রে করিবে সজ্জিত।
আর তায় চারি অশ্ব করিবে যোজিত।।
পাঞ্চজন্য নাদ যবে করিবে শ্রবণ।
সেই কালে হয় যেন তব আগমন।।
কহিল সারথি তাঁরে কেন চিন্তিত।
প্রভাতের পূর্বে রথ হইবে সজ্জিত।।
★
শিবমন্ত্র জপি পার্থ হলেন নিদ্রিত।
দেখিলেন স্বপ্ন তিনি কেশব আগত।।
কৃষ্ণ কন কিবা তব বিষাদ কারণ।
নাহি কর চিন্তা কভু তুমি অকারণ।।
কহেন অর্জুন তাঁরে, করিলাম পণ।
সূর্যাস্ত পূর্বে জয়দ্রথে করিব হনন।।
কিন্তু বিপক্ষীয় যত মহারথগণ।
থাকিবে করিয়া সদা তাহারে বেষ্টন।।
তাহারে কিরূপে আমি হেরিব তখন।
অস্তাচলে সূর্যগামী আঁধারে তখন।।
হে কৃষ্ণ, নারিব তারে করিতে হনন।
অনলে প্রবেশি আমি নাশিব জীবন।।
কৃষ্ণ কন স্মিত হাস্যে অর্জুনে তখন।
কথা এক কহি আমি করহ শ্রবণ।
‘পাশুপাতে’ জ্ঞান তব থাকিলে চালনে।
জয়দ্রথে কাল তুমি সক্ষম হননে।।
আর যদি নাহি থাকে তব সেই জ্ঞান।
পশুপতি দয়াবান কর তাঁর ধ্যান।।
অর্জুন বসেন ভূমে করি আচমন।
উপবিষ্ট ধ্যানে তিনি করি শুচি মন।।
পার্থ-মাথে আশীর্বাদ করি বরষণ।
ব্রাহ্মমুহূর্তে কেশব দেন দরশন।।
দক্ষিণ হস্ত তাঁহার করেন ধারণ।
বায়ুবেগে শূন্যমার্গে করেন গমন।।
ছাড়িলেন নীলাকাশ আর মহাকাশ।
আইলেন কৃষ্ণার্জুন শঙ্কর সকাশ।।
কৃতাঞ্জলিপুটে তাঁরা করেন প্রার্থনা।
রাজি হন মহাদেব পূরণে প্রার্থনা।।
কৃষ্ণার্জুনে শস্ত্রপাণি করিয়া যতন।
শেখালেন পাশুপত আয়ুধ ক্ষেপণ।।
অতঃপর মহাদেবে করিয়া প্রণাম।
স্বর্গ ছাড়ি দেন পাড়ি এই মর্ত্যধাম।।
*
বিনিদ্র রজনী সাঙ্গ হলে অবশেষে,
স্নান করি যুধিষ্ঠির যান পূত বেশে।।
উষ্ণীষ মাল্য ও বস্ত্র করিয়া ধারণ,
হোমকুণ্ড পাশে তিনি করেন গমন।।
মহার্ঘ অলঙ্কারে হইয়া ভূষিত,
কৃষ্ণ সাত্যকির সনে হলেন মিলিত।।
কহিলেন যুধিষ্ঠির কেশবে তখন।
“রক্ষা কর এ পাণ্ডবে তুমি জনার্দন।।
পাণ্ডবগণ নিমগ্ন কৌরব সাগরে।
কর ত্রাণ আজ তুমি মিনতি তোমারে।।
শঙ্খ-চক্র-গদাধর পুরুষোত্তম তুমি।
পার্থ-পণ রক্ষা কর তোমারে প্রণমি”।।
কৃষ্ণ কন চিন্তা কেন তব মহারাজ।
পার্থ তুল্য কোন বীর কেহ নাই আজ।।
যদি করে রক্ষা তারে সব দেবগণ,
পার্থ জয়দ্রথে আজ করিবে হনন।।
হেন কালে কহিলেন পার্থ যুধিষ্ঠিরে।
মহারাজ স্বপ্ন এক দেখিনু রাত্তিরে।।
শুনিয়া অর্জুন মুখে স্বপন বৃত্তান্ত,
ভূতলে রাখিয়া মাথা সকলে প্রণত।
মহাদেব দরশন এ শুভ লক্ষণ।
সাধু সাধু বলি সবে বিগলিত মন।।
পার্থ কন সুলক্ষণ দেখি চারিদিকে।
জয়ী ঠিক হবো আমি নিশ্চিত আজিকে।।
অতঃপর কহিলেন তিনি সাত্যকিরে।
রক্ষা তুমি করো আজ রাজা যুধিষ্ঠিরে।।
★★★
(চলবে)