মনের ভাবনা
কলমে,,,অনাদি মুখার্জি
আজ ৯ই ফেব্রুয়ারি আজ এই দিনটা দিয়া ক্যালেন্ডারের দাগ দিয়ে রেখেছে ! আজ তো চকলেট ডে সেই উপলক্ষে ফ্রিজ থেকে ডেয়ারী মিল্ক টা বের করে রাখলো ! আকাশ এখন অফিসে যাবে তার আগে তার হাতে এই ডেয়ারী মিল্ক টা দিয়ে হ্যাপি চকলেট ডে সেলিব্রেট করবে ! আকাশ সব কিছু গুছিয়ে অফিস যাবার জন্য বের হয় ,তখন দিয়া তার হাতে চকলেট দিতে যায় তা দেখে আকাশ বললো এখন আমার সময় নেই তোমার কথা শোনার এখন অফিস চললাম !
আকাশের এত ব্যাস্ততা দেখে দিয়া ভাবলো আকাশ এখন অনেক পাল্টে গেছে ,সব সময় কিছু বললেই কাজের অজুহাত দেখিয়ে চলে যায় ! কিন্তু একদিন এই আকাশ আগে তার পেছনের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় দিত ! সেই দিনের কথাগুলো মনে পড়লো দিয়া আর ভাবতে লাগলো ! কলেজ ছুটির পর দিয়া তখন বাড়ি ফেরার পথে দেখে আকাশ তার জন্যই দাঁড়িয়ে আছে ,দিয়াকে দেখে আকাশ বলতো ওফ তোমাকে দেখার জন্যই একঘন্টা ধরে ওয়েট করছি ! দিয়া হাসতে হাসতে বললো আমার সাথে প্রেম করতে গেলে তোমাকে তো সময় দিতে হবে ! সেই কথা শুনে আকাশ বললো তোমাকে পাবার জন্য যদি সারাদিন অপেক্ষা করতে হয় তো করবো তবু তোমাকে চাই ! দিয়া তখন বললো আচছা তবে চলো আমাকে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে ! আকাশ বললো ওকে ইয়ার তবে চলো ! ফুচকা খেতে খেতে আকাশ তাকে বললো কাল একটু পার্কে দেখা করো , দিয়া বললো কেনো ? আরে এসোই না এলে বুঝতে পারবে ! পরের দিন ঠিক কথা মতোন দিয়া দাঁড়িয়ে আছে ,কিছুক্ষণ পরে আকাশ এলো ,আকাশ কে দেখে দিয়া বললো আমার সাথে প্রেম করতে গেলে পাংচুয়াল হতে হবে বুঝলে ! আকাশ ঘাড় হেলিয়ে বলে ওকে , কিন্তু আজ একটু দেরি হলো কেনো জানো তোমাকে এই দিনটা মনে মধ্যেই রাখার জন্যই ,দিয়া বললো কেনো আজ কি বিশেষ দিন যে মনে রাখতে হবে ? আকাশ তার হাতে একটা বড়ো ক্যাডবেরি দিয়ে বললো আজ চকলেট ডে তাই তোমার মনের মতোন জিনিস দিয়ে তোমার মিষ্টি মুখে মিষ্টি হাসি টা দেখতে চাই ! দিয়া ভ্ৰু নাচিয়ে বলে ও দিয়ার ভিতরের তখন একটা সাধারণ দিন ও কেমন যেনো স্পেশাল হয়ে গেলো ! তখন দিয়া চকলেট ভেঙে নিজের মুখে একটু নিয়ে বাকি টা আকাশের মুখে পুরে দিয়ে তাকে থ্যাংকস জানালো ! তার পর থেকে এই চকলেট ডে তে আকাশ তার জন্যই বড়ো চকলেট এনে উপহার দেয় ! দিয়া খুব ভালো লাগে চকলেট খেতে তাই এই দিনটি সেই থেকে মনে রেখেছে !
আকাশের সাথে দিয়া বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর ,কিন্তু প্রতি বছর ধরে দিয়া ও আকাশ এই দিনটি পালন করে আসছে চকলেট ডে উপলক্ষে ! হঠাৎ তাদের তিন বছরের মেয়ে ঝিলিক এসে বললো মাম তুমি কি ভাবছো ? দিয়া তার মেয়েকে নিয়ে রান্নাঘরে পা বাড়ালো !
রাতে অফিস থেকে এসে সোজা আকাশ তার বেডরুমে চলে যায় ,তখন দিয়া এসে দেখে আকাশ তার ল্যাপটপে এর সামনে বসে প্রজেক্ট রিপোর্ট করছে ! দিয়ার হাতে চকলেট দেখে আকাশ বললো আজ কি তুমি আমাকে চকলেট দিচছো কেনো ? দিয়া তখন হাসতে হাসতে বললো হ্যাপি চকলেট ডে তাই তোমাকে দিতে এলাম ! আকাশ তখন বললো ও তাতে তুমি বাচ্চাদের মতোন চকলেট নিয়ে এলে ! উফ আমি এই সব খাবো না আর তোমাকে ও খেতে দেব না , তোমার বেবি হওয়ার পর তোমার কত ওয়েট বেড়েছে ! প্লিজ তুমি নিয়ম মেনে চলো আর এখন আমার কাজ আছে যাও ডিসটার্ব করো না ,দেখছো একটা কাজ করছি এখন ! এই কথা শুনে দিয়া চোখে জল এসে গেলো অভিমান করে মেয়েকে নিয়ে শুয়ে পড়লো ! কিছুক্ষণ পর আকাশ এসে দেখে দিয়া মেয়েকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ফেলছে ! আকাশ বললো আরে তোমার কি হয়েছে এমন করছো কেন ? দিয়া তখন আকাশ কে বললো যাও ল্যাপটপে গিয়ে পড়ে থাকো সব কিছুই ভুলে গেছো এখন আমাকে কেনো মনে করবে ! আকাশ তখন তার পাশে বসে বললো দেখো দিয়া আমি কিছু ভুলেনি সব মনে আছে ! বলে সেই দিয়ার হাত থেকে চকলেট নিয়ে বললো আমাদের মেয়ে ঝিলিক কে ঘুম থেকে তোলো ! দিয়া তখন তার মেয়ে ঝিলিক কে উঠিয়ে নিয়ে চলে যেতেই আকাশ তার হাতটা ধরে বললো শোনো একবার ! ঝিলিক উঠে বললো পাপা কিছু বলছো আকাশ তখন তার হাতের চকলেট টা নিয়ে বললো হ্যাপি চকলেট ডে সোনা নাও ! দিয়াকে কাছে টেনে আকাশ বললো জীবনের তোমার কাছে যা পেয়েছি তাই নিয়ে সুখে আছি আর কি কোনো চকলেট ডে আর রোজ ডে ভালো লাগে না ! আমি তুমি আর আমাদের মেয়ের মাঝে সব দিবস হার মানে ! কখনো যে দিয়া চকলেট ভেঙে আকাশে গালে লাগিয়ে দিয়ে বললো হ্যাপি চকলেট ডে বলে জড়িয়ে ধরলো !
ধন্যবাদআপনাকে