স্বাধীনতা সংগ্ৰামের বীর শহীদ ক্ষুদিরাম বসু
বিপ্লব গোস্বামী
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম বীর ক্ষুদিরাম বসু। তাঁর দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগ দেশবাসীর কাছে আজো অনুপ্রেরণা। যারা দেশের জন্য হাসতে হাসতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে সর্ব কনিষ্ট শহীদ বীর ক্ষুদিরাম বসু।
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্ৰামে জন্ম গ্ৰহণ করেন।তাঁর পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার এবং মাতা লক্ষ্মীদেবী ছিলেল গৃহবধু। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মা ও ছয় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে ছিলেন ক্ষুদিরাম। বড়ো হয়ে উঠেন অপরূপা দিদির কাছে। তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা তমলুকের হ্যামিলটন স্কুলে।তারপর ভর্তি হন মেদিনীপুরের কলেজিয়েট স্কুলে। এই স্কুলে পড়ার সময় সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। সত্যেন্দ্রনাথ বসু গুপ্ত সমিতির নেতা ছিলেন। তিনি ক্ষুদিরামের মধ্যে দেশাত্মবোধ দেখে তাঁকে গুপ্ত সমিতির সদস্য করেন। অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই লাঠি খেলা, তলোয়ার চালানোো ,কুস্তি করা, বন্দুক চালানো, ঘোড়ায় চড়া সব কিছুতেই পারদর্শী করে তুলেন ক্ষুদিরামকে।বৈপ্লবীক মন্ত্রে দীক্ষিত হন তিনি। দেশকে স্বাধীন করতে শপথ গ্ৰহণ করেন ক্ষুদিরাম।
মাত্র ১৫ বছর বয়সে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণ করার অপরাধে গ্ৰেপ্তার হন ক্ষুদিরাম। ১৬ বছর বয়সে থানার কাছে বোমা মজুত করে সরকারি অধিকারিকদের আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন। তখন থেকেই তাঁর মনে বিপ্লবী সত্তার বীজ বপণ হয়েছিল। ১৯০৮ সালের কথা, যখন তাঁর বয়স আঠারো বছর তখন বিপ্লবী সুশীল সেনকে চাবুক মারার নির্দেশ দিয়েছিলেন অত্যাচারী ম্যাজিস্টেট কিংসফোর্ড। এই নির্মমতার প্রতিশোধ নিতে ম্যাজিস্টেট কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন ক্ষুদিরাম। বিপ্লবী সঙ্গী প্রফুল্ল চাকীকে সঙ্গে নিয়ে ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল বিহারের মুজাফফরপুরে রাত সাড়ে আটটায় ইওরোপিয়ান ক্লাবের সামনে কিংসফোর্ডের গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা ছুড়েছিলেন ক্ষুদিরাম। কিন্তু এটা কিংসফোর্ডের গাড়ি ছিলো না। হুবহু দেখতে গাড়িটিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট কেনেডির স্ত্রী ও কন্যা। দুর্ভাগ্যবশত নিহত হলেন তারা।বেঁচে গেলেন কিংসফোর্ড।
বোমা নিক্ষেপ করে রেল পথ ধরে পালিয়ে যান ক্ষুদিরাম ও তাঁর বিপ্লবী সঙ্গী প্রফুল্ল চাকী। পরের দিন ভোর বেলা মুজাফফরপুর রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পরেন ক্ষুদিরাম। কয়েক দিন পর প্রফুল্ল চাকী ধরা পরলে নিজে নিজেকে গুলি করে আত্মঘাতী করেন।ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয় ১৯০৮ সালের ২১ মে। বিচারক ছিলেন ব্রিটিশ মি.কর্নডফ এবং ভারতীয় লাথুনিপ্রসাদ ও জানকি প্রসাদ। বিচারে ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়।
১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট কার্বকর হয় ক্ষুদিরামের ফাঁসি। ভোর চারটায় ক্ষুদিরাম নির্ভয়ে হাসতে হাসতে উঠে গেলেন ফাঁসির মঞ্চে। হাসতে হাসতে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন দেশ মাতৃকার বেদীমুলে। ভারত হারিয়ে ছিল এক নির্ভিক বীর সন্তানকে। তাঁর ফাঁসিতে বাল গঙ্গাধর তিলক তাঁর সংবাদ পত্র ‘কেশরী’-তে আওয়়়াজ তুলেছিলেন ‘অবিলম্বে স্বরাজ চাই’।
মাত্র আঠারো বছর বয়সে দেশকে স্বাধীন করতে হাসি মুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পরে ছিলেন ক্ষুদিরাম। তাঁর এই অত্মত্যাগ আজো অনুপ্রেরণা জাগায় দেশ ভক্তদের মনে। তাঁর বীরত্ব ও আত্মত্যাগ আজো ভুলতে পারেনি প্রতিজন ভারতবাসী। তিনি অমর হয়ে আছেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্ৰামের ইতিহাসে, তিনি অমর হয়ে আছেন ভারতীয়দের অন্তরে।