Spread the love

স্মৃতি
সৈয়দ খুকুরানী
কিছু মানুষ হারিয়ে যাওয়ার পর ও, তাঁর স্মৃতি অন্তর জুড়ে
অনেক খানি জায়গা দখল করে থাকে। নিজ সৃষ্টির সাধনায় মানুষের মনে বসবাস করে।
তেমনই এক মানুষ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। যিনি আমাদের মনকে বিহবল করে রেখেছিলেন।
তিনি যেন আকাশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
সেবার হঠাৎ করে, বাগডোগরা এয়ারপোর্টে উনার সাথে দেখা হয়েছিল। আমায় বললেন তুই? কোথায় যাবি? বললাম, কোথাও না। খোকা দের জাহাজ ওড়া, দেখাতে নিয়ে এসেছি। বললেন, সে কোথায়? এখানেই ভেতরে আছে ডিউটিতে। শিলিগুড়ি পোস্টিং। বললেন দেখে মনে হচ্ছে তুই রেগে আছিস। আমি বলি, কোনো দিন ও নিয়ে আসে না, আজ আমি নিজেই চলে এসেছি।
বললেন চল কফি খায়।
সঙ্গে ছিলেন, রবি ঘোষ, আর চিন্ময় রায়।
সে সব কবে কার কথা। ১৯৯২ এর।
রবিদা এমন সুন্দর হেসে হেসে বললেন আমি কিন্তু আমার গৃহিণী কে খুব ভালো বাসি। আর আমার গৃহিণী ভালো বাসে রান্না ঘর । তায় খুব সুন্দর করে রান্না ঘরটা বানিয়ে দিয়েছি।
আমি বলি দাদা, এতো আপনার সিনেমার কথা। উনি বললেন, না না, যে যা ভালোবাসে তাকে তো তায় দিতে হয়।
হো হো করে হেসে উঠলেন সৌমিত্র দা। আমাদের সবার প্রিয় শিল্পী, সৌমিত্র দা।
চিন্ময় দা আমার বাচ্চাদের বললেন এই তোরা শোন, তোদের মা বকলে, কানের কাছে একটা বাশি বাজিয়ে দিবি।


উনাদের ফেরার সময় হয়ে এসেছিল। আমি প্রনাম করতেই বললেন, আশীর্বাদ করি, অনেক সম্মান পাবি একদিন। তবে লেখা টা ছাড়িস না। দুখখ, অভিমান এগুলো পিছনে ফেলে এগিয়ে যাস।
আমার স্বামী কে ডেকে বললেন, ভাইয়া বড়ো অভিমান জমে আছে বুকে, এক আধটু সময় দিও।
কোলকাতা র কিছু জায়গা জুড়ে উনার স্মৃতি, কখনো ফিকে হবার নয়।
কফি হাউস, নন্দন, রবীন্দ্রসদন।
কতো মায়াময় স্মৃতি মানুষের মন জুড়ে।
একবার কফি হাউসে দেখা হয়।
সামনে থেকে ঐ অসামান্য মানুষের কাছে আসতে পারায় আজ নিজেকে বড়ো ভাগ্যবান মনে হয়।
কফি হাউসে যাওয়া, সে আমার বাবার অনুরোধে। বাবা বলেছিলেন যেখানে চিনতে পারবে না, সাইনবোর্ড দেখে নিও হারাবে না। গায়ের মেয়ে, তেমন করে কোথাও বেরোনো হয়নি। ভাবতাম যদি পথ হারায়।
সৌমিত্র দা বললেন, কি রে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিস যে। আমার মা বাবা আপনার ব ই দেখতে খুব ভালো বাসেন। বললেন আর তুই? আপনি তো আমার সামনেই।
ভাবতে অবাক লাগছে, আপনি সেই সিনেমার অপু।
বললেন, আজ এখানে অনেকেই এসেছেন সম্মানীয় ব্যক্তি। তুই লিখছিস তো। লিখি।
লিখিস বলেই তো দেখা হয়ে যায়। জানিস পথ কিন্তু একটাই।
আচ্ছা, খুকু তুই মানিকদা কে কখনো দেখেছিস?
উরি বাবা, তিনি তো সম্রাট।
মাননীয় সত্যজিৎ রায়।
হ্যাঁ একবার মাত্র, ভাগ্যক্রমে দেখেছি। শিলিগুড়ি তেই। শাখাপ্রশাখা র শুটিং এর সময়। উনার সাথে দেখা করতে গেলে উনি আমায় বলেছিলেন, তোমার কাজের জন্য, পৃথিবী তোমায় একদিন চিনবে। কখনো থেমে যেওনা। উনার কলমের আচড় আজ ও আমার খাতায় সোনার আখরে লেখা আছে।
২৮ বছর ধরে, কতো কি বদলে গেছে, হারিয়ে গেছে।
হারায়নি, এই সব সম্মানীয় মানুষের হাতের আচড়।
সৌমিত্র দা র নিজের হাতে লেখা।
আমি হয়তো নিজেকে দাড় করাতে পারিনি। কিন্তু এই সব নামি দামি, অমায়িক বড়ো মানুষ গুলোর কাছে দাড়াতে পারায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
বয়ে বেড়াবো চিরদিন এই মধূর স্মৃতি। যা কখনো হারায় না। হারাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *