Spread the love
অহং
👌👌
শচীদুলাল পাল।
সিদ্ধ  বা যোগী ব্যতিত সমস্ত মানবজাতির মধ্যে অহং ভাব বিরাজমান। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন , আমার আমিত্ব বলে কিছু নেই। আমি তার দাস। এইরূপ কল্পনা করতে হবে।
কিন্তু সেটা কতজন পারে!
প্রতিটি মানুষের মধ্যে রয়েছে অহংভাব। কারোর কম কারোর বেশি।
অহঙ্কার , মনোবিশ্লেষণমূলক তত্ত্ব অনুসারে, মানুষের ব্যক্তিত্বের সেই অংশটি যা “স্ব” বা “আমি” হিসাবে অভিজ্ঞ এবং উপলব্ধির মাধ্যমে বাহ্যিক বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করে । এটি সেই অংশ হিসাবে বলা হয় যা স্মরণ করে, মূল্যায়ন করে, পরিকল্পনা করে এবং অন্যান্য উপায়ে আশেপাশের শারীরিক ও সামাজিক বিশ্বে প্রতিক্রিয়াশীল এবং কাজ করে।
ফ্রয়েডের মতে, মানুষের মন  গতিশীল এবং এই ‘মন’ নামক মানবিক উপাদানটি সহজাত প্রবৃত্তির, তাড়না, বিরোধ, গূঢ়ৈষা, অবদমন ইত্যাদির মতো কিছু ইচ্ছামূলক ক্রিয়া দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমরা আমাদের সমাজব্যবস্থায় অবস্থান করি বিভিন্ন বিরোধ আর বাধাকে গ্রাহ্য করে এবং এর ফলে আমরা কখনোই সম্পূর্ণ স্বাধীন নই। আমাদের চিন্তারও নেই কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহ। যে কামনা, বাসনা আর যৌন-তাড়না একটি মানুষ বিভিন্ন সামাজিক নিয়মকানুনের জন্য তৃপ্ত করতে পারে না, সেই অতৃপ্তি-জাত ইচ্ছেগুলোকেই অবদমিত হয়ে স্থান করে নেয় মানুষের মনের অচেতন স্তরে। এই অচেতন স্তরেই অবদমনকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় এক ধরনের বিপরীতমুখী বিরোধ ও বাধার, যা লজ্জা, ভয়, দুঃখ ইত্যাদিসহ বিভিন্ন মানসিক/মনস্তাত্ত্বিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করে থাকে। মানুষের যে ইচ্ছে পূর্ণ হয়নি, যার জন্য সে অতৃপ্ত, সেই অবদমিত অতৃপ্তি ও ইচ্ছাগুলোই অচেতন স্তর থেকে স্বপ্ন হয়ে বেরিয়ে আসে। ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী মনের চেতনও অবচেতন স্তরের সমন্বয়ে তৈরি হয় একজন ব্যক্তিমানুষের অহং। সামাজিক অহং সবসময বাস্তবতায় নিয়মকানুন মেনে চলে এবং অচেতনে বন্দি কামজ ইচ্ছা/বাসনাকে সমাজ-বাস্তবতায় আসতে দেয় না। ফ্রয়েডের সংশোধিত মতবাদে অহং আংশিক চেতন ও আংশিক অচেতন রূপকে গ্রাহ্য করা হয়েছে। ফ্রয়েড কথিত আংশিক চেতন অহংকে আমরা শুধু অহং হিসেবেই চিহ্নিত করব এবং অচেতন অহংকে বলব অদ। অদ সবসময় সুখসূত্র মেনে চলে; জৈবিক সুখ, কামনা, বাসনা ইত্যাদির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চায় অদ। অদ-এর জৈবিক কামনা, বাসনা ও তাড়না যেহেতু সবসময় সমাজের নিয়মকানুন মানে না, সেহেতু অহং, অদ-এর সব ইচ্ছে পূরণ হতে দেয় না বাস্তবতার সূত্র গ্রাহ্য করে। অদ-এর যে কামনা, বাসনা বা ইচ্ছা সমাজের নৈতিক আদর্শের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়, তা অপূর্ণ থেকেই অবদমিত হয়ে অচেতন মনে জমা হতে থাকে। যে অহং বাস্তবতার সূত্র মানে, তাকে ফ্রয়েড অতি-অহং বা অধিসত্তা হিসেবেও চিহ্নিত করেছেন। ফ্রয়েড তাঁর মনঃসমীক্ষণ তত্ত্বে মানুষের যৌন-আকাঙ্ক্ষা, অবদমন এবং শৈশবকালীন যৌনতার বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁর মতে, মানুষের আত্মরক্ষামূলক কাজ হলো অহং।
      অহংকার মানুষকে অবচেতন করে।চেতনা আর অহংকার একসাথে থাকতে পারে না।
   মানুষ যখন বিচক্ষণ হয় তখন অহংকার জানালা দিয়ে বেরিয়ে যায়।
অহংকারী মানুষ সবসময় অন্যকে ছোট করে দেখে।একটা মুখোশের আবরণে থাকে সে সব সময় অন্যের প্রশংসার উপর নির্ভর করে।সে সব সময় নিজেকে শক্তিশালী ভাবে কারণ পরাজয়ের ভয় করে।
তাই প্রতিভাকে খুন করায় হলো অহংকারের সবচেয়ে বড় শক্তি।
অন্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা অহংকারের এক বিরাট এক অস্ত্র।
মানুষের দুঃখ,বিষাদ, বিবাদ আর ব্যর্থতার জন্য দায়ী হলো অহংকার।
যারা নিজেকে ভাবে যে তারা বেশি জানে তারা সত্যিকারের জ্ঞানীদের
কাছে বিরক্তিকর।
সেজন্য অহং ভাঙ্গার মুহুর্তের চেয়ে ভালো মুহূর্ত আর নেই। দুর্যোধনাদি ব্যক্তি,
রাবনের মত বাহুবলী’ ব্যক্তি অহংকারে হিতাহিত জ্ঞান শুন্য হয়ে নিজের পতন ডেকে আনে।
অহংকার কবলে বহু প্রতিভা অকালে বিনষ্ট হয়।
  আত্মতুষ্টির কবলে পড়ে অহংকারী মানুষ নিজেরই পরাজয় ডেকে আনে।তার প্রতিভা সমুলে বিনষ্ট হয়।
পারিবারিক  জীবনে  অশান্তির মূলে ওই অহংকার। আমিই সেরা আমি যা বলছি সেটাই ঠিক এই মনোভাবই যত সংঘাত সৃষ্টি করে।
অহংকারী মানুষ অন্যের মতামত কে পাত্তাই দিতে চায়না।
দাম্পত্য জীবনে অহংকারই বিবাহবিচ্ছেদের মূল কারন।
অহংকার থেকে আসে অসহিষ্ণুতা।
কেউ কাউকে সহ্য করতে পারেনা।
পিটুইটারি গ্ল্যান্ড এক গ্রাম পরিমাণ। এটি যদি সরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে একদিকে অহং ত দূরিভূত হবে।কিন্তু সে মানসিক বিকলনে ভুগবে।
অহং আছে বলেই সে কিছু একটা করে নিজেকে জগতের মাঝে কিছু অবদান রেখে যেতে চাই।
এটি অল্পবিস্তর থাকার প্রয়োজন আছে।
তা নাহলে একটা,জাতি একটা দেশ উন্নতিতে বাধাপ্রাপ্ত হবে।আমার দেশ আমার পরিবার আমার সমাজ আমি তাদের জন্য কিছু একটা করব এইরূপ মানসিকতার প্রয়োজন আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *