Spread the love

,

“আমি উপেন বলছি”
অরবিন্দ সরকার
****************

রবিঠাকুর আমি আজো বেঁচে আছি। যুগ যুগান্তরের মাঝেও থাকবো — আমি উপেন, তোমার দুই বিঘা জমিতে বানিয়েছি অট্টালিকা ও বাগান।চালাঘর এখন অতীত,সবার এখন দালান। তুমি জন্ম নিলে তারপর চলেও গেলে, আমি রয়েই গেলাম। তোমরা ভূস্বামী আর আমার ওইটুকু দুই বিঘা জমি। তোমাদের নজর ওইখানেই। আমি ওই জমিতেই সন্তুষ্ট কিন্তু তোমরা সেটাও কেড়ে নিতে চাও বাগান বাড়ীর লোভে।
তবুও তুমি ব্যতিক্রমী, ভূস্বামী হলেও লিখেছো আমাকে, লিখেছো সুখ দুঃখের গান,গল্প, উপন্যাস! পেয়েছো দেশ বিদেশের সম্মান। পেয়েছো নোবেল পুরস্কার। তোমার নোবেল চুরির সাক্ষীও আমি। নির্বোধের এ কাজ নয়,এ কাজ করেছে বুদ্ধিজীবীরা ! তুমি নেই তাই নোবেলও নেই। ওটাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেই পারতে? যেমন একে একে সবাই তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে। স্ত্রী, পুত্র কন্যা, বৌঠান সবাই! দিয়ে গেলে রাখালের হাতে শালগ্রাম ? গড়গড়াই এখন তামাক টানি আর ভূস্বামীদের গড়গড়া গড়াগড়ি খেয়ে শেষ। জমিদারি হারিয়ে এখন সবাই উপেনের বেশ। এক ছিলিম তামাক সেবনের ইচ্ছায় জমিদার আমার কাছে হাপিত্যেশ করে। হুঁকোর বিদায়ে গড়গড়া এখন আমার কাছে আমার ঘরে।
তুমি আজ কাকতাড়ুয়া রবি ঠাকুর, তুমি কাকতাড়ুয়া! শহরের ভালো ভালো স্থানে রয়েছো দাঁড়িয়ে। সারাবছরের নোংরা ধুলিকণা আজ নুড়ো দিয়ে ঘসে ঘসে হচ্ছে পরিস্কার। তারপর ঘটা করে ফুলের মালা, তুমি ঘরের বাইরে রয়েছো চত্ত্বরে। আর ভেতরে চলছে নাচ গান কবিতা তোমারই রচিত। তোমার গান হয়েছে আধুনিক, বাজনা সর্বস্ব। এখন তোমাকে সবাই চেনে না, তোমার তো পৈতা নেই? প্রবাদ বাক্যে আছে চেনা বামুনের পৈতে লাগেনা? তুমি আজ সত্যিই অচেনা, ভোলেনি শুধু উপেন,সেই করে তব বন্দনা! সন্ধ্যাবেলায় প্রদীপ, দিনে স্নানের পরে পায়ে ফুল,গলায় মালা দিয়ে হাতজোড়ে তার ভূস্বামী কবিগুরুকে করে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *