(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
প্রবন্ধ/ ভ্রমণ কাহিনী
***************
(ইছামতীতে দুই বাংলার প্রতিমা নিরঞ্জন)
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
লেখক: কবিরুল ( রঞ্জিত মল্লিক)
**************************
আশ্বিন মাস পড়ে গেছে। সবুজের মখমলে কাশের বেদুইন শিহরণ। আকাশে বাতাসে পূজো পূজো গন্ধ। ঢাকের ধামসা মাদলে মন মাতাল করা পরিবেশ।
সপ্তমী , অষ্টমী নিজের শহরে পূজো দেখে নবমীর দিন রাতে বেরিয়ে পড়লাম এক ভিন্ন স্বাদের পুজোর মাদকীয়তায় ডুবতে – গন্তব্য টাকী, বসিরহাটের কোলে সযত্নে লালিত ছোট একটি শহর। শুনেছি টাকীর পাদপদ্ম ছুঁয়ে যাওয়া ইছামতী নদীতে দুই বাংলার দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন হয়।তাই লালসার জিহ্বাকে আরো প্রলম্বিত করে এক ছুটে চলে আসা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দমদম থেকে দশমীর দিন যখন হাসনাবাদ লোকাল ট্রেনটা ধরলাম তখন শিশু রবি সবে কমলা আবীর ছড়াতে শুরু করেছে। মা উমা আজ চলে যাবে, ঢাকের বেদনা ভেজা কান্না তারই শোক বার্তা বহন করছে। ডিজেল ইঞ্জিনের কৌলিন্য লেগে আছে রেলের মানচিত্রে। বেশ কিছু স্টেশন পেরনোর পর ভিড়টা টের পেলাম।সেই সাথে ভাষা, পোষাক, কৃষ্টির এক অপূর্ব মেলবন্ধন।রবি ঠাকুর ঠিকই বলেছেন ” Unity in Divetsity “।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
জলযোগটা লোকাল ট্রেনেই সেরে ফেললাম। লেখালেখির সুবাদে মানুষ জনের সাথে একটা নিবিড় সখ্যতা তৈরী হয়েছে। ফলে তথ্য আদান প্রদান বা ভাব বিনিময়ে কোন অসুবিধা হয়নি। ট্রেনের হকার ভাইরা ইছামতীর এই বিসর্জন , বসিরহাট ও টাকী শহর সম্বন্ধে অনেক মূল্যবান তথ্য আমাকে দিলেন যা আমার লেখাকে সমৃদ্ধ করল। আর সেগুলি আজ ও আমার কাছে মৃল্যবান সম্পদ হয়ে রয়ে গেছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
হিন্দু মুসুলমান দুই সম্প্রদায়ের মানুষের উপচে পড়া ভিড় আমার চোখে আনল বিন্দু বিন্দু সিন্ধু। উৎসবকে ঘিরে মানুষের এই প্রাণঢালা আবেগ আগে কখনো দেখিনি। সবার বাদামী ঠোঁটে একটা নিষ্পাপ হাসি শরতের রোদের মতন যেন সব সময় লেগে আছে। সবাই ছুটছে। কারুর হাতে ব্যাগ তো কারুর হাতে খবরের কাগজ , ক্যামেরা। পোষাক , শাড়ি পড়ার ধরণ , আর মুখের ভাষার উচ্চারণ শুনেই বোঝা যাচ্ছে বিভিন্ন জেলা থেকে এসেছেন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
দুপুরের একটু আগেই ইছামতীর চরণ স্পর্শ করলাম। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য।নদীর ঐ পাড়ে বাংলাদেশ – সোনার বাংলার অহংকার ঝরে ঝরে পড়ছে। ঐ পাড়ে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলা। এপাড় থেকেই ওপাড়ের মানুষদের দেখা যাচ্ছে। দুই দেশ যদিও একটা সময়ে একটাই দেশ ছিল ; অথচ মানুষের মননে চিন্তনে কি অদ্ভুত মিল! মাঝে একটা জল সীমানা। মনে হচ্ছে যেন বিভিজন তৈরী করছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বেশ কিছুক্ষণ পরে শুরু হল দুই দেশ অর্থাৎ দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগে প্রতিমা নিরঞ্জন।
সে এক সুচারু দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ।বাংলাদেশের নৌকা সমেত প্রতিমা এদেশের জল বিভাজীকা ক্রস করতেই ভীষণ আবেগের বিস্ফোরণ দেখা গেল। হৃদয়ের গোপন অলিন্দে বাজতে শুরু করল খুশীর মাদল। দুই বাংলার মানুষ আজ প্রাণের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। বেশ কিছু ছবি তুললাম যা আজও হিমগ্লোবিনকে সতেজ রাখে। ও দেশের এক মহিলা সাংবাদিকের সাথে পরিচয় হয়েছিল। যে এখনও যোগাযোগ রেখে চলেছে সমান তালে। উনি আমাকে বাংলাদেশের এক কবির লেখা একটি কবিতার বই উপহার দিয়েছিলেন। যা আজ ও আমার শো কেসকে অলংকৃত করে চলেছে।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
বাংলারেশের এক বয়স্কা মহিলার সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনাকে ” মা ” বলে ডাকতেই উনি চোখের জলে পাঞ্জাবীটা ভিজিয়ে দিলেন। সেদিন বুঝেছিলাম , সেদিন কেন আজ ও বুঝি ” মা ” এর কোন নির্দিষ্ট দেশ হয়না। বাউণ্ডারী হয় না। একমাত্র এক অক্ষরের ঐ শব্দটাই পারে সমস্ত সীমানা তুলে দিতে।
” আমার সোনার বাংলা “! সত্যিই তাই।
সন্ধ্যের বেশ পরে যখন টাকী ছাড়লাম , তখন চোখের কোণে জমা শিশির আমার দৃষ্টিকে ঝাপসা করে তুলল।
দুপুরের অনেক পরে একটি দড়মার বেড়ার হোটেলে ইলিশ মাছ সহযোগে ভাত খেয়েছিলাম। বহুদিনের কথা , মনে আছে আমার সাথে অনেক গল্প অনেক কথা শোনার পরে হোটেল মালিক আমার কাছ থেকে কোন পয়সা নেন নি।
ইলিশের স্বাদটাও বেশ পবিত্র। দুই বাংলার মানুষের খাঁটি ভালবাসার মতন।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
অনেক্ষণ পরে ট্রেন ছাড়ল। ট্রেন থেকে ঢাকের বিসর্জনের আশাবরী রাগ শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে নিজের ই খেয়াল নেই।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});