**রাজকুমার সরকারের দশটি অণুগল্প**
মিথ্যাবাদী
********
রসময়বাবু কারও সাথেই কথা বলেন না। শুধু চেয়ে থাকেন। কী এমন কাজ করেন?
শুধু চিন্তামগ্ন। তাঁর পেশা কী?
তবে যাই বলুন লোকটি খুবই অহংকারী বলেই মনে হয়। কথা বলতেই চায় না। মুখগুমড়োই দেখি সবসময়। একবার অবশ্য আমার সাথে কথা বলেছেন।
সুখময়ের মুখে সব শুনে প্রদীপ বলে উঠলো- খুব উঁচু দরের মানুষ রসময়বাবু। একজন বিখ্যাত শিল্পী। এই এলাকার সবাই সম্মানের চোখে দেখেন তাঁকে।
আপনি ভাগ্যবান সুখময়বাবু; উনি আপনার সাথে কথা বলেছেন।
সুখময়-তাই?
প্রদীপ-হ্যাঁ।
আসলে উনি জন্ম থেকেই কথা বলতে পারেন না!
খুঁত
***
মা-বাবা-বৌ-ছেলের সাথে সন্দীপ প্রতিদিন খাবার খায়।একসাথে খেতে খেতে গল্পও হয় বেশ।সন্দীপের পরিবারে সবাই খুব আনন্দেই দিন কাটায়।কোনো সমস্যা নেই। কয়েকদিন ধরে খুব ঠাণ্ডা পড়েছে।বাপ জনমেও এমন ঠাণ্ডা দেখিনি বাবা; সন্দীপের মায়ের কথা।বয়স্ক বাবাও কয়েকদিন ধরে ঠাণ্ডায় কাহিল।বয়স পঁচাশি পেরিয়েছে। সন্দীপের বাবা ছাদের (ছাতের) উপরে বসেই এখন খাবার খান।
সন্দীপের মা হঠাৎই বলে উঠলো; আজ সব রান্না ভালো হয়েছে শুধু মাছটিই সুবিধের হয়নি,বড্ড কাঁটা।এর থেকে মাংস অনেক- অনেক ভালো ….
সন্দীপ চিৎকার করে বৌ- এর উদ্দেশ্যে বলে — হ্যাঁ গো কেমন করেছো রান্না, মাছটাতে যে বড্ড কাঁটা।
বাটুল
*****
পাড়ার বাটুলের মত ছেলে হয় না। ত্রিশ বছর ধরে দেখে আসছি। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে তাকায় না। খুবই ভদ্র ছেলে। সাগরিকা কাকীমার মুখে কথাটি শুনে রাকেশ বলে উঠলো- ‘কাকীমা, বাটুলের বাবা-মাকে একটু বলবেন; যেন ওকে একবার ডাক্তার দেখায় …..
কান্না
*****
দুর্গাপুরে থাকতেন সুদেষ্ণা কাকিমার দাদা। দাদার শরীর বেশ কয়েকদিন থেকেই খারাপ। ডাক্তার জবাব দিয়েছেন। সকালবেলায় সুর করে কাঁদছেন সুদেষ্ণা কাকিমা। কেউ শুনেছে। কেউ শোনেন’নি। আজ গাবলুদা’র মুখে শুনলাম গতকাল বিকেল পাঁচটায় মারা গেছেন সুদেষ্ণা কাকিমার দাদা। কাকিমা নাকি সকাল থেকেই কান্না শুরু করেছিলেন। গাবলুদা’কে প্রশ্ন করলাম- বিকেলে মারা গেছেন বলছো; তাহলে সকাল থেকে কাকিমা কাঁদছিলেন কেন?
গাবলুদা’র উত্তর- অ্যাডভান্স কেঁদে রাখছিল। বিকেলে টি.ভি.-তে বাংলা সিরিয়্যাল কাকিমার দেখা যে চাই-ই…
নেতা
*****
করালীপ্রসাদ রায়। বাড়ি রামপুর, জেলা ধানবাদ। বললেন একদিন- ‘রাজবাবু, আপনি এবারে ভোটে দাঁড়ান। আপনার পরিচিতি একটা হয়েছে। একটা ছাপ ছেড়েছেন সমাজে আপনি। অনেক মানুষ আপনাকে ভালোবাসেন।’
রাজবাবুর উত্তর- ‘করালীবাবু আমি মিথ্যা বলতে শিখিনি।’
সুগার
*****
চঞ্চল বোকারো’র একটি শো’রুমে একটি চারচাকা কিনে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছে। ওরা সবাই নতুন গাড়িতে ঘুরতে বের হয়েছে। পোস্ট দেখে ধানবাদ থেকে সনাতন লেখে; ভাই চঞ্চল, খুব খুশি হলাম। এবার মিষ্টি নিয়ে একদিন বাড়ি এসো।
চঞ্চল উত্তরে জানাল- দাদা ভাই, আমি তো সেদিন তোমার বাড়িই যেতাম। কিন্তু, বৌদি বলল তোমার নাকি সুগার আছে…
সিনেমা
*******
আজকাল যা যুগ পড়েছে, এখন পরিবারের সাথে সিনেমা দেখাও চলে না। নবনীবাবু’র মুখে কথাটি শুনে সুধাকর বলে উঠল, কেন?
আর বলবেন না ন্যাংটোমির সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। আজেবাজে দৃশ্য; গান। অশ্লীল; ছ্যা ছ্যা… তার থেকে একেলা দেখেই আনন্দ।
– তাহলে আপনি পরিবারকে ভালোবাসেন না?
সবাই একসাথে আনন্দ করা দরকার। আমি তাই করি। যখন উল্টোপাল্টা দৃশ্যপট ভেসে উঠে পর্দায়; আমি তখন চোখ বুজে দিই।
চুক্তি
***
দাদা,লেখাটি পাঠালাম। ভালো করে দেখে নিয়ে জানাবেন।ভুল থাকলে অবশ্যই বলবেন।
—- হ্যাঁ।আমি বাসে আছি।ট্রেনে উঠে ভালো করে দেখে নিয়ে জানাবো।
তিন চারদিন পেরিয়ে গেল।বিমলবাবু জানালেন না।
সুবিমলবাবু রসিকতা করে জানতে চাইলেন; দাদা, ট্রেনে চেপেছেন?
না …..হা হা হা …..
—- না দাদা, ট্রেন ক্যানসেল ছিল সেদিন, আমি পা এ হেঁটে বাড়ি এসেছি সেদিন,তাই কথা রাখতে পারিনি।আসলে তো আপনার সাথে কথা হয়েছিল, ট্রেনে বসেই জানাবো ।
চুমু
***
গতকাল ছিল চুমু দিবস। কী যুগ পড়লো রে ভায়া!
চুমু খাওয়ার জন্য কোনো স্পেশাল দিবস থাকে নাকি…?
গা ঘিন ঘিন করে ওঠে এইসব দেখেশুনে…
কথাগুলো বলতে বলতে এক জায়গায় থমকে দাঁড়ালো মনীষ। দেখে, খুব ভিড়।
একটু এগিয়ে যায়। দেখতে পায়-এক যুবক ও এক যুবতী জড়াজড়ি অবস্থায়।
ছ্যা ছ্যা…কী সব হচ্ছে এখন; বলতেই যাচ্ছিলো, দ্যাখে, ক্যামেরা লাগানো। ভালো ভালো ভদ্র লোকজনও রয়েছেন।
কৌতূহল বেড়ে যায় মনীষের। একজনকে প্রশ্ন করে, কী হচ্ছে দাদা?
সিনেমার স্যুটিং
-সিনেমা??
হ্যাঁ।
সিনেমার নাম -চুমু ।
লড়াই
*****
ভবতোষের স্বভাবটি একদম লড়াকু গোছের। একটু ঝগড়াঝাঁটি না করলে তাঁর ফাঁকা ফাঁকা লাগে। মনে হয় দিনটিই বেকার হয়ে গেল। লড়াই মানে মুখে মুখে বাকযুদ্ধ তা নয়; একেবারেই হাতাহাতি, পাটসাপাটসি। যাকে বলে জবড়াজবড়ি; না হলে লড়াই এর মজা কোথায়?
সেদিন হঠাৎই রেগে ইঁড়কে এসেছিল মহিপালকে মারার জন্য…
মহিপাল উপস্থিত বুদ্ধি এপ্লাই করেছে সঙ্গে সঙ্গেই। সে ভবতোষকে বলে- আই ব্যাটা চলে আই… আই আই… আমি তো এখন করোনা পজিটিভ।
নিমেষেই ভবতোষের গরমী ফুস্…