লেখক পরিচিতি :
কবি ও সাহিত্যিক- রিয়া সিং।
ছদ্মনাম : রাই
মূলত আধুনিক মনস্ক ও বাস্তবতার নিরিখে কবিতা ও গল্পের উপর কল্পনার কলম চলে ।গত একবছর ধরে একটী মুহূর্ত নামক সাহিত্য পত্রিকার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত। এছাড়া বিভিন্ন পত্রিকায় এবং ইবুকে লেখা প্রকাশিত।
ছোট গল্প : বসন্তবিলাস
কলমে : রাই
আজ প্রেমের দিন অর্থাৎ ভালোবাসায় ভালো আর খুশিতে থাকার দিবস।চারিদিকে ভালোবাসার রঙে রাঙা হয়ে সেজে উঠে, প্রকৃতিও জানো বসন্তকে আহবান জানাচ্ছে।
এইসবই ভাবছিলো আর্শিয়া বসে বসে নিজের রুমের ব্যালকনীতে। স্কুল আর কলেজের সময়গুলোতে দেখেছে ওর বয়সি ছেলেমেয়েরা এইসব নিয়ে কতো কি প্ল্যান করতো,ঘুরতে যেতো।তবে বয়সের পরিপ্রেক্ষীতে মনে বসন্তের দোলা লাগলেও সেই অর্থে এইসব নিয়ে মাতামাতি করেনি আর্শিয়া।বরাবরই ছেলেদের দূরত্ব বজায় রেখে চলতো আর্শিয়া, মেয়ে বন্ধু ও ছিল তবে হাতে গোনা কয়েকটা,তাও তাদের সাথে যোগাযোগ কবেই ছিন্ন হয়ে গেছে।এখন জগতটা এন.জিওর বাচ্ছারা আর মাকে ঘিরেই কাটে আর্শিয়ার। এমনিতে ছোট থেকেই আর্শিয়ার প্রিয়বন্ধু হলো ওর বাবা এবং বই ।এখন কাজের ফাঁকে যতটুকু সময় পায় বইকে সঙ্গী করেই কাটায়,মাও আগের থেকে অনেকটা সুস্হ ।তাই চিন্তাটা এখন একটু কমই আছে আর্শিয়ার, নাহলে কিছুদিন আগে পর্যন্ত ও আর্শিয়ার রাতজাগাটা একটা অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।তখন খালি মনে হতো একটাই কথা কবে মা আবার ভালো হবে?আগের মতো কবে মায়ের কোলে মাথা রাখবে?বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে হঠাৎ করেই জানো পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো অবস্হা হয়েছিলো ওদের। এমনিতেই মায়ের কোলটা বড্ড প্রিয় আর্শিয়ার, ওখানে মাথা দিলেই অদ্ভুত একটা শান্তি পাওয়া যায়,মায়ের ওই আঁচলের গন্ধটা যেটার ঘ্রানে সব ক্লান্তি গুলো ম্যাজিকের মতো হাওয়া হয়ে যায়।বাবার মারা যাওয়ার পর মাকে আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরেছিলো আর্শিয়া,বাবার পর ওই একটা মাত্র আপনজন আছে আর্শিয়ার ।যাকে ভালো রাখার জন্য সবকষ্ট হাসিমুখে মেনে নিতে রাজি আর্শিয়া।
ছোট থাকতেই এইদিনে বাবার সাথে নিজেদের ছোট এন.জিওতে গিয়ে সেখানের বাচ্ছাদের সাথে সময় কাটাত আর্শিয়া ।দুবছর হলো বাবা নেই,তারপর থেকে একাই নিজে দায়িত্ব নিয়ে সবকিছু আয়োজন করে বাচ্ছাগুলোর সাথে সারাটা দিন কাটায় আর্শিয়া।বাচ্ছাদের হাসি দেখে তখন মনে হয় বাবা হাসছে চলে যায়নি,পাশেই আছে একদম।সেই আগের মতো আর্শিয়ার মাথায় হাত রেখে বলছে,,
“তুই পারবি আমার স্বপ্ন পূরন করতে”,আমার বিশ্বাস আছে তোর উপর।
দিনের শেষে বাচ্ছাদের হাসিমুখগুলো দেখে সারাবছরের কষ্ট ,না পাওয়াগুলো ভুলে গিয়ে অদ্ভুত শক্তি পায় আর্শিয়া।এককথায় বাবার স্বপ্নের” আনন্দ নিকেতন” মানে ওদের এন.জিওটা সত্যিই আনন্দের নিকেতন এক অর্থে নামটা সার্থক।এখানে এলেই মনটা ভালো হয়ে যায় আর্শিয়ার।বাচ্ছাগুলো যখন ওদের ছোট ছোট হাতগুলো দিয়ে জড়িয়ে ধরে,জানো মনে হয় ভালোবাসার বন্যা বয়ে গেলো।”সত্যিই বাবা ঠিকই বলতো,বাচ্ছারা ভগবানের আরেক রূপ “
আর্শিয়া মনে মনে ভাবে।
এইদিনটা মানে চোদ্দোই ফ্রেব্রুয়ারী মন না চাইলেও ঘরে থাকে না আর্শিয়া, সারাটা দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এন.জিও তেই কাটায়।কারনটা হলো আর্শিয়ার মা,উনি এইদিনে ঘর থেকে বেরোন না,সারাক্ষন নিজেকে বন্দি করে রাখেন।আর্শিয়া জানে, মা বাবার সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো মনে করে কাঁদে,,তাই আর বিরক্ত করে না ।থাকুক নিজের মতো,মেয়ের সামনে হয়তো কিছু বলেন না পাছে মেয়ে কষ্ট পাবে ।এই ভেবে কিন্তু আর্শিয়া জানে ওর মতো মাও আড়ালে কাঁদে এখনো।
আর্শিয়া ছোট থেকেই দেখেছে ওর বাবামার সম্পর্কটা আর পাঁচটা বাবামার সম্পর্কের থেকে আলাদা,বেশ মজার সম্পর্ক ওদের মধ্যে,আর্শিয়ার বাবা খুবই মজার মানুষ,ও নিজে কোনোদিন রাগতে দেখেনি ওর বাবাকে।অবশ্য মায়ের মুখে শুনেছে বাবাও রাগ করে তবে এতোটাই কম যে আর্শিয়াও শুনে অবাক।যেখানে আর পাঁচজনের বাবা রাগী হয়, দুষ্টুমি করলে বকা দেয় সেখানে ওর বাবা ওকে বলছে আরো বেশি দুষ্টুমি করতে কিন্তু কারোর জানো ক্ষতি না হয় সেটা দেখে।
কমদিনের তো আর সম্পর্ক নয় দুজনের, পাঁচ বছরের প্রেম আর পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবন ওদের।নয় নয় করে তিরিশটা বছর কাটিয়েছেন দুজনে,স্বাভাবিক কষ্ট পাওয়া।সত্যি বলতে কি যখন বাবা ছিল তখন আর্শিয়ার মনে হতো ওয়ার্ল্ডের বেস্ট আর ইউনিক বাবা হলো ওর বাবা।অবশ্য এখনো মনে সেটাই মনে করে।
বরাবরই আর্শিয়ার মাকে রাগিয়ে অসম্ভব মজা পেতেন ওর বাবা,সকালটাই শুরু হতো ওদের মিষ্টি ঝগড়া দিয়ে।
মাঝে মাঝে আর্শিয়ার মা কপট রাগে বলেই ফেলতেন ওর বাবাকে,, “কি দেখে যে প্রেম করেছিলাম তোমায়??ভগবানই জানে,জীবনে যদি একবারো সিরিয়াস হয়।”
সেটা শুনে ওর বাবা মুচকি হেসে বলতেন,,”কে বলেছে তোমায়?? আমি সিরিয়াস হইনি ,স্পষ্ট মনে আছে আমার তোমাকে বিয়ে করার সময় আর তিয়া (আর্শিয়ার ডাক নাম )হওয়ার সময় কতটা সিরিয়াস ছিলাম বলোতো!!
সেটা শুনে আর্শিয়ার মা বলতো,”থাক ,বাবা কতটা সিরিয়াস ছিলে জানা আছে।”
“এইতো,না ।তুমি একদম আমায় ভালোবাসো না”- মুখটা কাঁচুমাচু করে আর্শিয়ার বাবা বলতেন।
এইসব গুলো বেশ উপভোগ করতো আর্শিয়া ।কি সুন্দর জীবন ছিলো তখন একটা ছোটো সুখী সচ্ছল পরিবার। বাবা প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করতো,মা বাড়ির নিচের তলায় গান শেখাতো বাচ্চাদের।
সবটা শেষ হয়ে গেল দুবছর আগে ,সেদিন ও একটা ভালোবাসার দিন ছিলো আর ওর বাবামার বিবাহবার্ষিকী।বাবাকে আগে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলো আর্শিয়া,”আচ্ছা বাবা তুমি বেছে বেছে এইদিনই বিয়ে কেন করেছিলে বলোতো??।
তখন ওর বাবা হেসে বলেছিলো,”আমি আসলে তোর মায়ের আর আমার বিয়েটা একটা ভালোদিনে করতে চেয়েছিলাম,আর প্রেমদিবসের দিনটা শুভ মনে হলো তাই করে নিলাম বিয়েটা।অ্যানিভারর্সারির আর ভ্যালেন্টটাইন ডের উপহার একটাতেই মিটে যাবে বুঝলি বলেই হা হা করে হেসে উঠেছিলেন।
যাইহোক অন্য বারের মতো সেদিন ওর মা সকালে ওদের তিনজনের জন্য পূজো দিয়ে এসে এন.জি ও যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিল দুজনেই ।ওদের প্ল্যান ছিলো, সারাটা দিন ওখানে কাটিয়ে রাতে বাইরে ডিনার করে ঘরে ফেরা।সেইমতোই সব ঠিকঠাক ছিলো,হঠাৎ একটা ফোন কল আসে ওর মার ফোনে,, তারপর ….সবটা শেষ।আর্শিয়ার বাবা বাচ্ছাগুলোর জন্য গিফট আনতে বাইরে গেছিলেন,রাস্তা পার হওয়ার পার সময় একটা বেপোরোয়া লড়ি ওনাকে পিষে দিয়ে চলে যায়,,,হসপিটালে যাওয়ার সময় টুকুও দেয়নি ওদের।আর্শিয়া শুধু ওর বাবার বডিটা দেখেছিল যেটা সাদা কাপড়ে ঢাকা,,কিছুক্ষন আগের হাসিখুশি মানুষটাই কেমন চুপ করে ঘুমাচ্ছে।
জানো মনে হচ্ছিলো ,বাবা বলে ডাকলেই সাড়া দেবে।আর্শিয়ার এটা ভেবেই কান্না পাচ্ছিলো কোনদিন আর কেউ কখনো তিয়া বলে ডাকবে না,রাত জেগে গল্প শোনাবে না,পড়া ধরবে না,কঠিন নোটসগুলো সহজ করে বুঝিয়ে দেবে না,মিষ্টি করে বকবে না,পরীক্ষার সময় কফি করে মুখের সামনে দিয়ে বলবে না,”তিয়া সোনা কফিটা খাও ফ্রেশ লাগবে”। আর কখনো সকালে উঠে শুনতে পাবে না,গুড মর্নিং প্রিন্সেস,গুড মর্নিং সুইটহার্ট,মাকে তো সামলানোই যাচ্ছিল না।বারে বারে জ্ঞান হারাচ্ছিল,বলতে গেলে পাথর হয়ে গেছিল মা,এই দুটো বছরে মাকে চিকিৎসা করার পাশাপাশি,নিজের পড়া সবটা টিউশন আর বাবার জমানো টাকায় চালিয়েছে।
এখন তো রেডিও জকির কাজটাও করছে,মাও ভালো আছে,আবার গান শেখানো শুরু করেছে।সব মিলিয়ে ভালোই দিন কাটছে আর্শিয়ার।
কিন্তু কদিন ধরেই আর্শিয়ার সাথে ওর মায়ের ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে ।আসলে আর্শিয়া বিয়ে না করে সারাটাজীবন মা আর এন.জিওর দেখভাল করবে ঠিক করেছে।ওর মা এটাতেই আপত্তি,উনি চান ওনার বান্ধবীর ছেলের সাথে বিয়ে দিতে,ছেলে হিসেবে খুবই ভালো আবার এত অল্প বয়সে ডাক্তার হিসেবে নাম করেছে।
ঘটনার সূত্রপাত দুদিন আগে,,বাড়িতে ফিরেই আর্শিয়া দেখে ওর মা হেসে হেসে একজনের সাথে গল্প করছে ।পরে ওর মা ওকে বলে ওটা ওনার বান্ধবী রিনা,যাইহোক ও আর ওতটা খেয়াল করেনি,সেদিন রাতে আর্শিয়াকে ওর মা বলে রিনা আন্টির মানে মায়ের ওই বান্ধবীর পছন্দ আর্শিয়াকে বউ করে নিয়ে যেতে চায়।
আর্শিয়ার মা ভালো করেই জানেন, মেয়ে পাত্রপক্ষের সামনে বসা তো দূর দাঁড়াবেও না।তাইসব ঠিকঠাক করে একেবারে মেয়েকে বলেছেন ছেলের সাথে দেখা করে নিতে,কোনদিন কবে কোথায় বলে ছেলের ছবিটা মেয়ের কাছে দিয়েছেন,রাজি হলেই বিয়েটা দেবেন।
এক তো চেনা জানার মধ্যে তার উপর নিজের বান্ধবীর ছেলে,যাক এবার শান্তি করে জীবন কাটাতে পারবেন অনিন্দিতা দেবী মানে আর্শিয়ার মা।ওনার এখন একটাই চিন্তা কিভাবে মেয়েকে রাজি করাবেন?
এদিকে তো আর্শিয়া জেদে অনড় শেষে অবস্হা বেগতিক দেখে অনিন্দিতা দেবী বললেন,” মা হলে বুঝতি কতটা চিন্তা হয়!আমি না থাকলে তোকে দেখবে কে?তোর এই আবদার মেটাবে কে? বিয়েটা করে নে মানু,আমার খুশির জন্য ।
মায়ের কান্না দেখে আর্শিয়াকে রাজি হতেই হলো।অনিন্দিতা দেবী জানেন এইরকম না করলে মেয়েকে মানানো যেতো না।আর মেয়ের খুশির সব কিছু করতে রাজি তিনি।
অনেক ইমোশনাল ব্ল্যাকমেলের পর আর্শিয়া দেখা করতে এসেছে পাত্রের সাথে,এসেই দেখল তার আগেই শ্রীমান পাত্র এসে উপস্হিত।ছবিটা দেখে যত সুপুরুষ মনে হয়েছিল,বাস্তবে তার বেশিই একটু হ্যান্ডসাম,বেশ ভদ্র সেজে বসে আছে,শুনেছে ডাক্তার।মা ভক্ত হনুমান একেবারে লাফাতে লাফাতে চলে এসেছে , এইসব মনে মনে ভাবতেই কফিশপের সিটটায় বসলো আর্শিয়া।
বসেই সোজাসুজি বললো,”দেখুন মিস্টার আমি রাজি না এই বিয়েতে,নেহাত মায়ের জন্য দেখা করতে এসেছি।”
সেটা শুনে পাত্র বলল,”প্রথমত আমার নাম অয়ন রায়,নামটা ধরে ডাকলেই ভালো হতো।”
“সে,চয়ন আর অয়ন যেইহোক না কেন,আমি রাজিনা বিয়েতে,কিন্তু আপনি গিয়ে বলবেন আপনি রাজি নন” বলে তারাহুড়ো করে উঠে পড়লো আর্শিয়া।
“বেশ,তা ম্যাম না বলার কারন কি জানতে পারি ?” অয়ন উঠতে উঠতে বললো।
“কোন কারন নেই বলে, “বেরিয়ে গেল আর্শিয়া।
“আরে দাড়ান একটু তাড়া কিসের এতো?”একটু বসুন দশ মিনিট বলে পিছনে ডাকলো আর্শিয়াকে।
“ওকে, বসছি” বলে আর্শিয়া বসলো।
“বলুন শুনি বন্ধু মনে করেই না হয় বলবেন বলে ওয়েটারকে ডেকে কফির অর্ডার দিলো অয়ন।
“অচেনা ,কারোর সাথে…”বলেই চুপ হয়ে গেলো আর্শিয়া।
“আচ্ছা,বন্ধু মনে করে আমায় বলুন” দেখি বললো অয়ন।
“আসলে,মাকে ছেড়ে থাকতে আমি রাজি নই তাছাড়া আমার বিয়ে হলে এন.জিও ,মাকে দেখবে কে?? “বলে মুখটা নিচু করলো আর্শিয়া।
“এই ব্যাপার বলে কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বললো অয়ন হম,ঠিক আছে আজ থেকে বন্ধু হলাম,কি হবেন তো বন্ধু? “একে অপরের মনের কথা বলে হালকা হবো আরকি,একদিন এন. জিওর বাচ্ছা দের কাছেও নিয়ে যেও।আমি কিন্তু বাচ্ছাদের ডাক্তার ,ওদের চেকআপ হয়ে যাবে একাসাথে ।
না মানে ,আপনি এইসব বলে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো আর্শিয়া।
আমাদের মায়েরা বন্ধু তাই, আর এক্ষুনি গিয়ে বাড়িতে বললে বিয়ে না করার কথা মা শুনলে কষ্ট পাবে,তাই পরে বলে দেবো বিয়েটা হচ্ছে না দশমিনিট বলে কুড়ি মিনিট হয়ে গেলো ,চলো উঠি তোমায় বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসি বলে উঠে পড়লো অয়ন।
বেরোতো বেরোতে বললো আর্শিয়া,না না ঠিক আছে আমি চলে যাবো।
আহ,এই ভাবে কি করে হয়! তারমানে আমাকে বন্ধু মনে করো না ,তাই বুঝেছি বলে মুখটা ঘুরিয়ে নিলো অয়ন।
আচ্ছা,বেশ চলো বলে হাসলো আর্শিয়া।
ওকে চলো,প্লিজ আপনি বলো না গুনে গুনে চারবছরের বড় আমি তোমার থেকে এতো তাড়াতাড়ি সিনিয়ার সিটিজেন হতে চাই না বলেই মুখ ফোলালো অয়ন।
সেটা দেখে আর্শিয়া খিলখিল করে হেসে ফেললো।
সেটা মুগ্ধ চোখে দেখলো অয়ন,অবশ্য তা নজর এড়ালো না আর্শিয়ার তবুও কিছু বললোনা সেদিনের মতো যে যার বাড়ি ফিরলো।
পরেরদিন অনিন্দিতা দেবী আর্শিয়াকে অয়নের ব্যাপারে কিছু জানতে চাইলে পাশ কাটিয়ে চলে যায় আর্শিয়া।
এইভাবে কথা হতে হতে একে অপরের ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়া দুজনের মধ্যে ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এখন সারাদিনের প্রতিটা কথা অয়নকে না বললে আর্শিয়া শান্তি পায়না।অন্যদিকে অয়নের ও ডিউটির ফাঁকে আর্শিয়াকে ফোন করা চাই।এর মধ্যে এন .জিও তে অনেকবার অয়ন গেছে,রীতিমতো বাচ্ছারা তো অয়নদার ফ্যান,তাদের যতো আবদার অয়নদার কাছে,অয়নদা এই অয়নদা ওই,এতো ভালো ভাবে মিশে গেছে ওদের সাথে,জানো কতো দিনের চেনা।
কিন্তু কাল থেকে অয়নের না কোনো এস এম এস না কোনো ফোন আসেনি আর্শিয়ার কাছে,তাতেই আর্শিয়া অস্হির হয়ে উঠেছে সকাল দিয়ে,রাতে ঘুমায়নি,মনটা আনচান করছে বিকেল হতে চললো এখনো পাত্তা নেই বাবুর,ফোন করুক দেবো ঝাড় নিজের মনেই বকবক করছিল আর্শিয়া।এমন সময় ওর মা হাসি হাসি মুখে বললো,জানিস বাবু অয়নের জন্য মেয়ে দেখছে ওর মা ,একটা তো মনে হয় পছন্দ হয়ে গেছে কাল গিয়ে একেবারে মেয়ের বাড়ি আংটি পড়িয়ে আসবে তারপর এখানে আসবে বিয়ের কার্ড দিতে ।
না মানে,কবে এইসব হলো??ওহ আমাকে জানোনোর প্রয়োজন মনে করলো না এই নাকি বন্ধু আসুক আমিও কথা বলবো না নিজের মনেই বকতে লাগলো আর্শিয়া।
কি রে মানু, কি ভাবছিস,আচ্ছা তোর অয়নকে পছন্দ না সেটা তো বললেই পারতিস ওই তো রিনা বললো তাই জানলাম ,সেসব ছাড় কাল বাড়িতে থাকিস ওরা আসবে একটু সাহায্য করিস কেমন! এই বলে বেড়িয়ে গেলেন অনিন্দিতা দেবী ঘর থেকে।এদিকে এখনো অবাক আর্শিয়া ,ও বিশ্বাসই করতে পারছে না যে অয়নের বিয়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে।এই চোখের জলগুলো বড্ড বেয়ারা ওই কথা গুলো ভাবলেই বেড়িয়ে আসছে, বুকটা চিনচিন করছে,চোখ বন্ধ করলেই অয়নের মুখটাই ভেসে উঠছে,বড্ড পাজি ছেলেটা না চাইতেও মনে পড়ছে।সারাটা রাত এইসব ভাবতে ভাবতে শেষে এই সিদ্ধান্তে এলো প্রেমে পড়েছে আর্শিয়া তাও আবার ওই বদমাশ ডাক্তারটার,আগে বুঝতে পারেনি ।যদিও জানতে পারলো ততক্ষনে তার বিয়ে ঠিক অন্য কারোর সাথে,সকাল হয়ে গেছে মা অনেকবার ডেকেছে তাও বিছানায় মুখ গুঁজে শুয়ে আর্শিয়া।এখন তো আর উপায় নেই,মা কে বললেও হাসবে যে ছেলেকে প্রথম দেখায় বাতিল করেছে,তার বিয়ের কথা শুনে দেবদাসী হয়ে গেছে আর্শিয়া ।
যথারীতি অয়ন আর ওর বাবামা এলো,বাইরে অয়নের গলা শুনেই বুঝেছে,তাই যতটা সম্ভব নিজেকে গুছিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আর্শিয়া দেখলো চোখ গুলো লাল,ফোলা মুখ রাত জাগা আর কাঁদার জন্য,ফের শুয়ে পড়লো আর্শিয়া।এইসব যে কেউ বুঝে যাবে আর্শিয়া কাঁদছিলো তার থেকে বিছানায় পড়ে থাকা ভালো।ভাবনার ছেদ ঘটল অয়নের গলার আওয়াজে,”আসতে পারি!
আর্শিয়ার কথার অপেক্ষা না করেই বিছানার পাশে বসে অয়ন বললো,কি ব্যাপার শুয়ে কেন? মনখারাপ নাকি ,শুনেছ নিশ্চয়ই আমার বিয়ে ।তোমায় থাকতেই হবে কিন্তু।
এদিকে কোনো সাড়া না পেয়ে অয়ন চাদর সরিয়ে দেখলো আর্শিয়া কাঁদছে ফুপিয়ে।
কি হলো কাঁদছো কেনো?আরে হলো টাকি বলবে তো বলে মুচকি হাসলো ।সেই দেখে আর্শিয়া এবার জোরেই কাঁদতে লাগলো তখন অয়ন ওর কানে কানে বললো আমি কিন্তু ছিঁচকাঁদুনে বউ বিয়ে করবো না ।
এটা শুনে আর্শিয়া বলল মানে?
এবার একটু কাছে এসে অয়ন বললো ভালোবাসো আমায়!
আমতা আমতা করতে আর্শিয়া বললো না.. মম.মানে।
থাক মানে করতে হবে না একবার বিয়ের কার্ড খুলে দেখো।
সেটা শুনে আর্শিয়া কার্ড দেখে অবাক হয়ে বললো এতে তোহহহ..
তোমার নাম লেখা তাইতো, যাকে বিয়ে করবো তার নামটাই তো থাকবে বলে অয়ন হাসি চাপতে না পেরে হো হো করে হাসতে থাকলো।
সবটা বুঝতে পেরে আর্শিয়া অয়নকে কিল ঘুসি মারতে মারতে বললো শয়তান ডাক্তার একটা যাও বিয়ে করবো না তোমায় ।
আর্শিয়ার হাত দুটো ধরে অয়ন বললো করবে না মানে তুলে নিয়ে যাবো,প্রথম দেখাতেই ভালোবেসেছি তার উপর এতো প্ল্যানিং সবটা এমনি এমনি ।
,অবশ্য তোমার মা আইডিয়া না দিলে হতোটা না সাকসেসফুল।
তার মানে মা সবটা জানে,সব টা অয়নের মুখ থেকে শুনে আর্শিয়া তো অবাক ,সেটা দেখে অয়ন বললো ,আজ্ঞে হ্যাঁ ।দেখো কাউকে ভালোবাসলে তাকে অন্য কারোর হতে দেখলে কষ্ট হয়। সেটাই আর কি দেখছিলাম,আমার বিয়ের কথা শুনে তোমার কষ্ট হয় কিনা।তবে বিয়ের একসপ্তাহ বাকি এখনো ,তার আগে জমিয়ে প্রেম করে নি কি বলো?
সেটা শুনে আর্শিয়া কিছু বলতে গেলে ততক্ষনে অয়ন নিজের প্রেয়সীর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিয়েছে,ধীরে ধীরে আর্শিয়ার যত রাগ ,অভিমান সবটা শুষে নিতে লাগলো অয়ন।সময়ের সাথে তা আরো গভীর হতে শুরু করলো।
এইভাবে শুরু করলো দুটো ভালোবাসার মানুষের পথচলা।সুখী হোক অয়ন আর্শিয়ারা।
সমাপ্ত।
– রাই
বসন্ত বিলাস — গল্পে লেখিকা রাই সংসার জীবনের গভীরে যাবার চেষ্টা করেছেন, এবং নারীর নিজস্ব ভাবনার বিরুদ্ধে গুরুজন নামক চিজ গুলো কী ভাবে নাটক করে ব্ল্যাকমেল করে সেটাও ছুঁয়ে গেছেন ! এবং আমাদের গাধা বোধের সমাজে একটি মেয়েকে শেখানো হয় যে সে কোনো একটা পুরুষের কাছে স্থায়ী দাসী হিসেবে নিয়োগ পত্র না পেলে তার জীবনের মূল্য নেই, এবং তার বাবা মায়েরও পারিবারিক কর্তব্য টা শেষ হয় না !
এই গল্পটাকে রাই অন্য মোচড় দিয়ে পুনরায় লিখতে পারেন ভারত ডিটেল সাহসী এক্সপ্রেশন দিয়ে ! তাহলে গল্পটা খুব ভালোভাবে নির্মিত হবে !
গল্পের ভিতর ডায়গগ চাই, না হলে কেবল লেখক নিজের মত কথা বলে গেলে হবে না !
তবে লেখিকার হাতে লেখা লুকিয়ে আছে, খোলা হাতে খোলা মনে লিখতে হবে, কোনো লজ্জা ভয় নিয়ে লিখলে হবে না !
সৃষ্টি ক্ষমতার সাথে প্র্যাক্টিস ও সাহস চাই, এই দুটো হলে সৃষ্টি ক্ষমতা পূর্নতা পায় !
লেখিকাকে ধন্যবাদ উনি থিম টা ভালো এনেছেন, এখন নির্মাণে কৌশল আয়ত্ব করতে হবে !
লেখিকার অবয়ব বলছে প্রাকটিস করলে অনিবার্য ভালো ফল পাবেন খুব তাড়াতাড়ি !
ঋদেনদিক মিত্রো
পেশা :- ইংরেজি ও বাংলা ভাষার কবি -ঔপন্যাসিক -গীতিকার