Spread the love

    "ফুচকা, বিরিয়ানি"
                
  অরবিন্দ সরকার
 বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।

বহরমপুর শহরে অজস্র দুর্গাপূজা। অনেক বনেদি পরিবারের পূজা আছে। বড়ো বড়ো পূজোর প্যান্ডেল ঘেঁসে এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে খাবারের দোকান। শহরে সারাবছরই ফুচকা আর বিরিয়ানীর দোকানে ভীড় লেগেই থাকে।আর পূজা পার্বণে এলাহী ব্যাপার। দলবদ্ধভাবে মেয়েদের লাইন ফুচকার দোকানে। ফুচকার সারি সারি দোকান শহরের ইন্দ্রপ্রস্থ মোড়ে। এক ফুচকা বিক্রেতা সন্তু সূত্রধর খুব মুখরোচক মশালাদার ফুচকা বানান তাই তার দোকানে ভীড়। পাশের দোকানে ভীড় কম হওয়ায় সে চিৎকার করছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ফুচকা এখানে আসুন। বিজ্ঞান সম্মত ফুচকা, তেঁতুল গোলা জল পর্যন্ত পরিশুদ্ধ জলে তৈরি।সন্তু সূত্রধরের ওসব কানে শোনার সময় নেই। ও পথেই যাচ্ছিল ভম্বল দাস! ওর ক্লাসের ও পাড়ার বান্ধবীদের ফুচকা খাওয়া দেখে বললো– ছাগল সব। গোগ্রাসে গিলছে দেখ।যা দিচ্ছে না দেখেই মুখে পুরে ফেলছে নিমেষেই। এক পা এক পা ক’রে ভম্বল এগিয়ে গিয়ে দেখলো ফুচকা বিক্রেতার পুরো হাতে হাঁজা পাকুইয়ে থস্ থস্ করছে। আলো আঁধারীতে সবাই ভাবছে হাতে মশালার উপকরণ লেগে আছে। ভম্বল ভাবলো এই হাত তেতুঁল জলে চুবিয়ে দিচ্ছে আর স্বাদে ভরপুর হচ্ছে। সময়ে সময়ে সন্তু সূত্রধর নাকের জল মানে পোটা ফেলছে ছড়াৎ করে। ঐ পোটা মিশছে ফুচকার আবরণে। নীচু হয়ে কাজ করলে নাকের জল এমনিতেই বেড়িয়ে আসে।তাই বিক্রেতা বারবার নাক ঝাড়ছে। ওদিকে কারো লক্ষ্য নাই। সবাই খেয়েই চলেছে। ভম্বল বিচার করে দেখলো এর অনেক বিক্রি হয়ে গেছে,পাশের দোকান সব ফাঁকা। তখন ভম্বল বললো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে খাওয়া উচিত। এর দেখো হাতে পাকুই হাঁজা,নাকের পোটা মিশে ব্যঞ্জন ভালোয় হচ্ছে।তাই এখানে ভীড়। পাশের গুলো মাছি তাড়াচ্ছে। এ যুগে ভালোর কদর নেই। যেই বলা সবাই তখন সন্তু সূত্রধরের হাত লক্ষ্য করছে ও মাঝে মাঝে পোটা ফেলছে দেখে বমি করতে লাগলো।জায়গাটা বমিতে ভর্তি হয়ে গেলো।
এবার ভম্বল দেখলো এক বিরিয়ানি দোকানে প্রচুর ভীড়। মানুষ ঠেলা দায়! পাশের দোকানগুলোতে তেমন ভীড় হচ্ছে না। পূজার সময় শহরের মানুষ বাইরে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে।এটা একরকম ফ্যাশন। ভীড় ঠেলে ভম্বল দেখলো এতো ভীড় কেন? মনে মনে ভাবলো নিশ্চয়ই পচা মাংস।যেমন ইলিশ মাছ না পচলে স্বাদ হয়না।যতো বেশি পচা হবে তার ততো স্বাদ মনে হয়।এরা হয়তো মাংস পচিয়ে রান্না করেছে তাই স্বাদের জন্য ভীড় এখানে। ভম্বল এবার এগিয়ে চললো শহরের প্রতিমা দর্শনে। ভাগাড়ের মাঠ দিয়ে গেলে অনেক প্রতিমা দেখা যাবে আর পথটা কম হবে।যেই বলা ও হাঁটতে শুরু করলো। ভাগাড়ের মাঠে আলো আঁধারি আলোছায়ায় ভাগাড় ওলোট পালোট মনে হলো তার। একটু এগিয়ে দেখে নোংরা ঘেঁটে সরিয়ে কিছু লোক কি যেন খুঁজছে। নাকে রুমাল দিয়ে এগিয়ে যেতেই সামনে ওরা। ভম্বল বললো – তোমরা কি করছো? তোমরা কে?
ওরা সবাই বললো ময়লা আবর্জনা খুঁজে প্লাস্টিক বোতল প্যাকেট এগুলো খুঁজছি। ভম্বল বললো তা বেশ। নোংরা আবার পরিস্কার হয়ে বাজারে আসবে এই পলিথিন,ও বোতল। তারপরে ভোম্বল দেখলো একটা বস্তা থেকে খুব গন্ধ বের হচ্ছে।ভোম্বল বললো এতে কি আছে? ওরা বললো টাটকা মৃতদেহ। এগুলো চলবে , অচল নয়। ভোম্বল বললো- কোথায় চালান দেবে এগুলো? ওরা বললো বড়ো বড়ো হোটেল রেস্তোরাঁয়। ভোম্বল ভাবলো- হায়রে এই জন্যই বিরিয়ানির ভীড়। শুনেছি হরিণের মাংস পচিয়ে রান্না করতে হয়, তবে হয় সুস্বাদু। মরা হাতীর লাখ টাকা দাম।তাই বুঝি মরা খাবার জন্য এতো ভীড়। জ্যান্ত তো খাওয়া যায় না। জীবকে হত্যা করেই খেতে হয়।ওতে রক্ত পাত হয়। আর ভাগাড়ের রক্তপাত হয়না। যাকগে আজ ভাগাড় পরিস্কার হচ্ছে। শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ দায়িত্ব নিয়েছেন পরিস্কার করার খাদ্য হিসেবে। আবার চলতে লাগলো প্রতিমা দর্শনে। রাতের বেলায় এদিকে চলাচল দায় কুকুরের অত্যাচারে। কিন্তু আজ কুকুরগুলো কোথায় গেলো ? ওরাও কি ঠাকুর দর্শনে বেড়িয়েছে। ভোম্বলের লক্ষ্য পড়লো আমবাগানে। একটি ছোট্ট আমগাছে সারি সারি ছাগল টাঙানো আছে। ভোম্বল ভাবলো এই মাংস অর্ডারী। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো এই ছাগলগুলোর মাথা কোথায়? ওরা বললো মাথা দোকানে সারি সারি রাখা আছে। আমরা বডি নিয়ে গিয়ে ঝুলিয়ে দেবো। পাশেই দেখলো কয়েকটি কুকুর বাঁধা রয়েছে। ভোম্বল বললো কুকুর গুলো বাঁধা কেন? ওরা বললো কুকুরের যা অত্যাচার । শুধু চিৎকার করে করে কামড়াতে আসে।তাই বেঁধে রেখেছি। এবার বাগান পেড়িয়ে বড়ো রাস্তা। ভোম্বল দেখলো পুকুরে বস্তায় পোরা কি ছটফট করছে।জলে ডুবিয়ে এদের মারা হচ্ছে। ভোম্বল জানে শুয়োরকে ডুবিয়ে মারে , তারপর মাংস কাটে ছাল ছাড়িয়ে। ভোম্বল চুপ করে গাছতলায় দাঁড়িয়ে পকেট থেকে বিড়ি বের করে খাবে এমন সময় বস্তা কেটে মুখ বের করে একটা কুকুর চিৎকার করছে! লোকগুলো মাথায় সজোরে লাঠির বাড়ি মেরে কাবু করে জলে ডুবালো। একটু পরেই বস্তা বন্দী অবস্থায় ওই বাগানে নিয়ে গেলো। ভোম্বল বিড়ি টানতে টানতে ওদের কাছে গিয়ে বললো- ছাগলের ডাক ঘেউ ঘেউ কেন? ওরা বললো মরণকালে সবাই কতো নাম ডাক করে। তাই ছাগল কখনো কুকুর, বেড়ালের মতো ডাকে। এবার ভোম্বল দেখলো আস্ত সব এক একটা কুকুর। ভোম্বল বললো – আমি এখনই মাইকে প্রচার করবো তোমাদের কুকীর্তি! ওরা বললো এক কাজ করো ভোম্বল। একটি সন্ধিচুক্তি হোক। তোমাকে একহাজার টাকা দিচ্ছি মুখ বন্ধ করার জন্য। পূজার কদিন ভালো মন্দ খাও আর স্ফুর্তি করো। ভোম্বল দেখলো এতো অনেক টাকা! একটু বোতল খেলে ভালো হতো! নাকে মুখের গন্ধ ও অরুচি ভাব সব দূর হবে। মাঠ পেরিয়ে গাছতলায় ভীড় দেখে ভোম্বল একপা একপা করে এগিয়ে যেতেই দেখলো- মেঘ না চাইতেই জল। একেবারে জমাট আসর পাঁচশো টাকার বিনিময়ে। ভোম্বল টাকা জমা দিয়ে বসে পড়লো আসরে। প্রথমে ফল, কাজুবাদাম,ভুজিয়া দিয়ে কয়েক পেগ খেতেই নেশা ধরে এলো। তারপরে মদের বদলে জল পড়লো গ্লাসে। ভোম্বল গিলেই চলে। এবার বললো মদ হজম করে মাংসে। একটু মাংস হোক। ওরা বললো মাংস খেলে আরো পাঁচশো টাকা লাগবে। ভোম্বল দিয়ে দিলো। এবার সেই ইন্দ্রপ্রস্থের রেস্তোরাঁ থেকে মাংস গেলো। আকণ্ঠ মাংস মদে নিমজ্জিত ভোম্বল শুধু ঘেউ ঘেউ শব্দ জুড়ে চলতে লাগলো। এই দেখে কুকুরেরা ভোম্বলের পিছনে পিছনে চললো। ভোম্বল চিৎকার করে বলতে লাগলো – আমি একা ঘেউ ঘেউ করা কুকুর নই? সমস্ত সরকারী কর্মচারী, শিক্ষক মহাশয় সবাই ঘেউ ঘেউ করে! ওরাও সবাই সরকারি কুকুর!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *