৯২ বছরের তাজা লেখক নৃপেন্দ্রনাথ দাস চমকে দিলেন “দাসেদের লাল দালান” লিখে, আপনিও চমকে যাবেন আপনাকে বিচার করে।
—————————– ——–
প্রতিবেদক ঃ ঋদেনদিক মিত্রো ( কলকাতা, ভারত)
অনুরোধ, পুরোটা পড়ুন। মাঝে-মাঝে বিজ্ঞাপন আসে, সেখানে শেষ নয়। একদম নিচে নেমে গিয়ে দেখুন পুরো লেখাটা কতটা। তারপর পড়ে যান। সব ইন্টারনেটের লেখায় এইটা খেয়াল করবেন। বিজ্ঞাপন অনেক আসে লেখার মাঝে পরপর। কিন্তু মূল লেখা সেখানে শেষ নয়। বিজ্ঞাপন আসাটাও জরুরি। এটাও শুভ বার্তা।
উচ্চ স্বপ্নহীন মানুষ হল বার্ধক্য, ১৮ বছরের মানুষ হলেও তারা তাই। আবার ১০০ বছরের স্বপ্ন দ্রষ্টা কর্মঠ মানুষ হল যৌবন। এটা আমার কথা নয়, প্রকৃতির সত্য।
সেই প্রমাণ পেলাম সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে। ২৬ মার্চ ২০২৪, নদীয়ার কৃষ্ণনগরে লেখিকা লিলি সেনের বাড়িতে একটি বাৎসরিক সাহিত্য অনুষ্ঠানে। এর আগে বলে নিই দুটো কথা। ধারাবাহিকভাবে বলছি। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনুন। অনুরোধ করি। পরপর সব পেয়ে যাবেন।
এন, সি, চৌধুরি, পুরো নাম নীরদ চন্দ্র চৌধুরি ৭০ বছর পর্যন্ত শুধু পড়াশুনা করতেন। এবং ৭০ বছর বয়সে প্রথম বই লেখেন। পরে লন্ডনে কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তাঁকে রাখা হয়েছিল অমৃত্যু অতি যত্ন সহকারে। তিনি বাংলা ও ইংরেজিতে লিখতেন। কলকাতার প্রকাশনী থেকেও তাঁর বই বেরুতো। এখান থেকেই তিনি প্রতিষ্ঠিত হন। উপন্যাসিক ও সমালোচক। ১০০ বছর পর্যন্ত বই লিখেছেন, পায়চারি করেছেন নিয়মিত। খেয়েছেন স্বাভাবিক নিয়মে।
ভারতের মত শাসন ধারার দেশে তথাকথিত নিয়মে ৬০ বছরে অসামরিক চাকরি থেকে অবসর হয়। সামরিক চাকরিতে অনেকে ১৮ বছর বয়সে প্রবেশ করলে ৩৬ বছর বয়সে অবসর নেন। অর্থাৎ, “অবসর” শব্দটি সমাজে মানুষকে বোকা বানায় বা নিস্তেজ বানায় কত সাবলিলভাবে। অবশ্য এটাও ঠিক, দ্রুত অবসর না করালে পরের ধাপের অপেক্ষারতরা চাকুরি পাবে না। কিন্তু, আমি বলছি, তথাকথিত নিয়মে অবসর মানে অকেজো বা বার্ধক্য নয়।
আবার সাধারণ নিয়মের বাইরের মানুষেরা ৭৫ বছর বয়সেও সিনেমার নায়ক ও নায়িকা হয়ে অভিনয় করে কোটি-কোটি মানুষকে প্রেমের কম্পন দিয়ে মুগ্ধ করে। ৭০ বা ৮০ বা নব্বুই বছরের কত মানুষ খেলার জগতে সফল কোচ হয়ে সুনাম অর্জন করে। রাজ্য থেকে অলিম্পিক ও বিশ্বকাপে সেইসব প্রমাণ অনেক আছে।
এবং রাজনীতিতে তো এইগুলি আরো বেশি। এখানে সময়ের দীর্ঘতা বয়ে বেড়ানো মানুষদেরকে বেশি তাজা গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ হিসেবে রাজনীতির জগতে সমাদর করা হয়।
আসলে জীবনের জীবনী শক্তি কোথায় শেষ। তুমি যেখানে শেষ করেছ বা করতে চাইছ সেখানেই শেষ। আপনি একজন ১৮ বছরের ছেলে বা মেয়ে, আপনি একটা ব্যাগ বইতে পারেন না। আর কুলিরা বিরাট ওজনকে কত সহজে বয়ে নিয়ে যান। তাঁরা এই কাজ করেন জীবনের প্রায় শেষ সময় অবধি।
আসল জিনিস হল মনের বিকাশ। সেই সাথে সমানুপাতে চলে দেহের বোধ ও সামর্থের অবস্থা।
পাকিস্থানে একটি জায়গা আছে সেখানে ১২০ বছর সাধারণ আয়ু। কারোর আরো বেশি। ৬০ বা ৭০ বছর বয়সে সাধারণ যৌবনের সময়। এই সময় তারা বিবাহ করে। কারণ তারা সবাই সবার কাছে বিশ্বাসী ও হাসি খুশি। তাই তাদের মানসিক চাপ নেই, শরীরের ভিতরে তন্তুগুলি ধাক্কা খায় না। মানসিক চাপ আসে না। পরিবেশেও দুষন নেই। খাদ্যে নোংরামি নেই। তাহলে, যৌবন আর বার্ধক্যের সীমানা কোথায় কিভাবে কে নির্ধারণ করবে?
২২ বছরের কোনো ছেলের বউ কোনো ৭২ বছরের পুরুষের কাছে যায় তার মনের সঠিক অনুভূতির সঠিক বন্ধুত্ব খুঁজে পেয়ে। সবটাই টাকার লোভে সম্পর্ক নয়। টাকার লোভে হলে সে আর একজন ২২ বছরের অন্য পুরুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে পারতো। এইখানেই যৌবনের মাপকাঠি বিচার। মেধা, সততা, চিন্তার উচ্চতা সহ অনেক দিকগুলি আপনাকে সঠিক যৌবনের প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাবে।
এইগুলি জটিল সুন্দর সত্য। তথাকথিত সমাজ আপনাকে দুমড়ে দেবে, আপনার সাবলিল দেহ ও মনের সামর্থকে থিতিয়ে দেবে। এইজন্য সব সময় সম উচ্চ মনোভাবের মনের পরিচিত ছাড়া মিশবেন না। এর মানে এই নয় যে তারা সৎ হবে। আমি বলছি, কথোপকথনের সময় দুর্বল কথা যারা বলবেনা বা বলাবে না, তাদের সাথে মিশতে পারেন বা একাই থাকুন একার মত। দেখবেন জীবন চলছে সঠিক ও নানা উন্নত স্বপ্ন নিয়ে, আপনিও আপনার মত চুপচাপ এগিয়ে চলছেন। তবে “আত্মিয়” শব্দটি ভয়ানক বিপদজনক হয় অনেক সময়। অবশ্য যার অভিজ্ঞতা যেমন। সাবধান। আপাতত আমাদের মত দেশগুলিতে। নিজের বাড়ির কোন গুরুজন বা লঘুজন কখন কী রূপ নেয় চুপিচুপি, সেটাও আপনি জানেন না। নিজের সব রকম বিফলতার কারণ খুঁজবেন। সেগুলি হল
(১) আপনি অনেক বেঠিক মানুষদেরকে সঠিক ভেবেছিলেন, তাই সঠিক গন্তব্যে যেতে পারেননি।
(২) আপনার স্বভাব হল সামাজিক চাপ যুক্ত সংস্কারকে ভয় পেয়ে চুপ থাকা, তাই সঠিক গন্তব্যে যেতে পারেন না। সব কথা উল্লেখ নাই বা করলাম।
(৩) আপনি পারিবারিক শান্তির নামে ভুল চিন্তার লোকেদের কাছে বোকা দাসত্ব করে নিজেকে নষ্ট করছেন হয়তো, তাই সঠিক গন্তব্যে যেতে পারেন না।
(৪) আপনি নিজের এক বা একাধিক গোঁয়ার চিন্তার জন্য সঠিক গন্তব্যে যেতে পারেন না।
(৫) আপনি সময়কে সঠিক নিয়মে খরচ করেন না, তাই সঠিক গন্তব্যে যেতে পারেননি। বিশ্ব নিয়ে ভাবনায় কোনো সহজাত সংকীর্ণতা রয়েছে অনেকের মাঝে। বাইরে সমাজ সেবা, জীব বা প্রকৃতিকে সেবা একান্তই লোক দেখান্তে বা কাজের জন্য কেউ-কেউ করেন। কিন্তু অন্তরে সহজ নন। সহজ মানে বোকা নয়। গভীর তীক্ষ্ম বুদ্ধি রাখতে হবে। এটা আপনার বাঁচার অধিকারে জন্মগত দাবী। কিন্তু মনের ভিতরে রাখতে হবে বিশেষ রকম প্রাসঙ্গিক স্বচ্ছতা। সেটা কয় জনের আছে?
(৬) শত্রুর পিছনে অকারণ ধাওয়া করা বা সেই চর্চা করে সময়, টাকা, লোকবল ও মেধার অপব্যাবহার করে জীবন অপচয় হয়। এটা আপনার বোকামি। বহু রকমের শত্রুকে নাস্তানাবুদ করতে হবে ঠিকই এবং নীরবে খেয়াল রেখে সতর্ক থাকতে হবে — এটা যেমন সত্যি, নইলে আপনার অস্তিত্ব ও সামাজিক নানা দিক বিপন্ন হবে, তেমনি নিজের স্বপ্ন ও কাজকে পাশে সরিয়ে রেখে বিচিত্র শত্রুদের নিয়ে মত্ত থাকলে তখন নিজের জীবনের সরল সুস্থ নিয়ম বিপন্ন হয়ে আপনার উচ্চ উদ্দেশ্য বাধা পায়। নিজেও কারণ খুঁজে পান না, কেন আপনার উদ্দেশ্য সঠিক গন্তব্যে যেতে পারেনি। এইসব কারণে আপনি পিছিয়ে গেছেন বা বিপন্ন। নিজের কাজ, চিন্তা, স্বভাব, বিশ্বাসের ভুল ও ঠিকগুলি কী কী, এইসব নিয়ে নিজে বিচার করুন। নিজের অনুভবকে কাজে লাগান। উচ্চ স্বপ্নের কাজে আসল মন দিতে হবে। এবং নানা প্রকরণে অন্য দিকগুলো খেয়াল রাখতে হবে, নিজের অনুভূতির সত্যে।
(৭) এইসব বোধ ক্ষমতা ও নিজস্ব গোপন সৎ সাহস যে সব মানুষ ধরে রাখেন, তাঁরাই চির যৌবনের প্রতিনিধি হয়ে সমাজে বিরাজ করেন তাঁদের স্বপ্ন ও কর্ম নিয়ে। বাড়িতে দুর্বল কথা আলোচনা করা বা দুর্বল চিন্তার আত্মিয় ও বন্ধুদের আসা বন্ধ করুন। নাটকবাজ সঙ্গ বাদ দিন। চাপ সৃষ্টিকারি ভুল সংস্কারকে ধরে রেখে ঠিক কাজের ঠিক সফলতা চাইলে পাওয়া যাবে কি? এই ছোট্ট কথাই আপনাকে সব উত্তর দিয়ে দেবে। ভুয়ো কথা, ভুয়ো আড্ডা, কারণহীন হল্লা, কারণহীন খারাপ প্রতিযোগীতা জীবনের দুর্লভ সময়কে নষ্ট করে চলে প্রতিনিয়ত।
অনেক দেশ পিছিয়ে কেন? সেই সব দেশ ততটাই পিছিয়ে যেই সব দেশের লোকেরা দুর্বল কথার আড্ডা ও মজলিস ও উৎসব ও দুর্বল বিশ্বাস নিয়ে থাকে। আপনিও সেই দলে হলে সেটার বাইরের অন্য উচ্চ সফলতা চাইছেন কোন অধিকারে?
এই প্রশ্ন সমস্ত সমাজকে করছি।
এবার আসি আর এক যুবকের কথায়। এখন তিনি ১২৭ বছর। নেতাজী সুভাষ বসুর সমকক্ষ। ব্রিটিশ ভারতের সিলেটে জন্ম। ভিক্ষাবৃত্তি করে পরিবার চলত। মাত্র ৬ বছর সেই শিশুর মা ও দিদি নদীয়ার এক সন্যাসির কাছে সেই শিশুকে সমর্পণ করেন, কারণ তাহলে শিশুটি ভাত খেতে পাবে। ভিক্ষা করে তাঁদের ভাত জুটতো না। সেই শিশুই এখন বারানসীতে শিবানী বাবা বলে পরিচিত। সম্প্রতি পেলেন “পদ্মশ্রী” উপাধী।এঁরাই আসল “ভারত রত্ন”, বিশ্ব রত্ন। কিন্তু এইভাবেই চলছে দেশের নিয়ম। এই সব মানুষেরা সব পুরস্কারের উর্ধে। তবে, তবুও “পদ্মশ্রী” দেওয়া হয়েছে সরকারি গুরুত্বে ইনার জীবন, চিন্তা ও অন্য দিকগুলিকে সংরক্ষিত করার জন্য। সেক্ষেত্রে এটা যথেষ্ট। দরকার ছিল।
সেকথা থাক। বছর পঁচেক আগে উত্তর চব্বিশ পরগনায় একটি আশ্রমে আমি ঘটনাক্রমে গিয়ে ছিলাম। সেই দিন ঘটনাক্রমে তিনি আসেন। তখন তিনি ১২২ বছরের তরুন। প্রতি দুই হাত পরে-পরে উবু হয়ে শুয়ে-শুয়ে দণ্ডি দিয়ে আসছিলেন এই ১২২ বছরের তরুন। আমরা তো অবাক। অতি সাধারণ খাদ্য খান। কোনো গল্পে সময় দেন না। কোনো ভুল বন্ধুতে সময় দেন না। সাদা পোষাক। আর্ধেক কাটা সাদা ধুতি, ছোট সাদা জামা। পায়ে সাধারণ কোলাপুরি জুতা। ভারতের সেরা একটি সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের ১৬৫ জন ডাক্তার, মানে দুই শতের কাছাকাছি সংখ্যার ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখেছিলেন কোনো রোগ আছে কিনা। এবং এত সাধারণ খাবার খেয়ে এত আয়ু হয় কিভাবে। তাঁরা কোনো রোগ পাননি ও এইভাবে এত দীর্ঘায়ুর কারণ খুঁজে পাননি। তিনি আলাদা কোনো ব্যায়াম করেন না। শুধু ভুল চিন্তার লোকদের সাথে সময় দেন না। চাহিদার চিন্তা মানসিক চাপ আনে। সেই চাহিদা পাওয়া ও না পাওয়ার কারণে জীবনের নানা দিকে প্রভাব পড়ে প্রতিদিন। এতেও মন ও শরীরের অনেক বিপন্নতা আসে। এসবের বাইরে তিনি জীবন কাটান। এটাই দীর্ঘায়ুর কারণ।
আমি তাঁকে শ্রদ্ধা অর্পণ করেছিলাম তাঁর রীতি মেনে। অনেকেই ছিলেন সেখানে। তাঁরাও তাই করেছিলেন।
এবার বলি মূল আলোচনার কথা। ৯২ বসন্ত পেরিয়ে আসা লেখক নৃপেন্দ্রনাথ দাসের কথা বলতে গিয়ে আমি এত কথা বললাম, কারণ এই লেখক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ আমাদের লেখক জীবনে, সমাজ জীবনে ও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখার প্রয়োজনে।
আমি তাঁর পাশে বসেছি। সাক্ষাতকার নিয়েছি। আমি আগে নিজস্ব নিয়মে লক্ষ্য করেছিলাম তাঁর লেখার মান কেমন। আমি চমকে গেলাম, তার এই আত্মজীবনী উপন্যাসটি স্বচ্ছ গদ্য ও মর্মস্পর্শী রচনার জন্য পুরস্কার পাওয়া উচিত এবং কলেজ বা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীতে দেওয়া উচিত। রচনার আঙ্গিক এত নিখুঁত, স্মৃতি চেতনার সাথে সঠিক বাক্য প্রয়োগে এত নির্মেধ প্রবনতা, সেটা আমাকে মুগ্ধ করে। আমি এই বিরাট যৌবনের প্রতিনিধিকে ও অসম্ভব গদ্য লেখনি ক্ষমতার অধিকারিকে শ্রদ্ধা জানাতে মঞ্চ থেকেই উনার হাত থেকে “দাসেদের লালদালান” বইটি কিনি সঠিক মূল্যে। কারণ, তাঁর এই গ্রন্থকে নিয়ে এসে আমি দেখাতে চেয়েছি সমাজে। কী করে স্বপ্ন দেখতে হয় ৯২ বছর বয়সে। তাহলে ১৯ বা ২৯ বছর বয়সে মানুষ স্বপ্ন দেখতে ও উন্নত কাজ করতে আশা হারায় কেন?
আমি সমাজকে উনার কাজের মূল্যায়ন দেখাবো বলেই বইটা কিনি। অনেকে আমার এই কাজের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়েছিলেন। আসলে, আমি এইভাবে দেখতে ভালোবাসি, বুঝতে ভালোবাসি। কারণ, তথাকথিত সামাজিক বা পারিবারিক চিন্তা ও স্বভাবের বিশ্বাসে আমি চলতে পারিনা। এইসব মানুষকে গুরুত্ব না দিলে আমার কাছে আমার গুরুত্ব খুঁজে পাবোনা।
বইটি, বাংলাদেশ থেকে আসা পরিবার, মানে তখনকার পূর্ব পাকিস্তান থেকে উঠে আসা একটি পরিবারের জীবন চরিত্রের কাহিনী। আত্মজীবনী গ্রন্থ। কিন্তু এটা সরাসরি কাহিনী নয়। জীবনকে চেনার আয়না। না, তিনি তথাকথিত জমিদারদের মহান বানাতে চাননি। বরং তিনি দেখিয়েছেন জমিদারদের বাড়ির কারোর ভালো মনুষত্বর পাশাপাশি তাদের দ্বারা অবহেলিত দরিদ্র মানুষদের জীবন যন্ত্রণা। সেই সাথে বহু চরিত্রের ভীড়ে বহু চিন্তার চলন গমন। কী অপূর্ব রচনা। কোনোভাবেই আত্মপক্ষ সমর্থন করেননি। এটাই তাঁর মনুষ্য চরিত্রের স্বচ্ছতা। এই বোধ ও সাহস তাঁকে লেখকের সঠিক উচ্চতায় বসিয়েছে।
৮৫ বছর বয়সে বইটি লেখা শুরু। প্রকাশ পেল ৯২ বছর বয়সে। জানলাম, প্রকাশক এই বইয়ের পান্ডুলিপি পড়ে বলেছিলেন যে এই লেখা নিয়ে বলবার কিছু নেই।
ইচ্ছে থাকলে, স্বপ্ন লুকিয়ে থাকলে মানুষ কবে কী করে দিয়ে চমকে দেয় কেউ জানে না।
আসলে ইনি পেয়েছিলেন উপযুক্ত উচ্চ মরমের সন্তান সন্ততি। তাঁদের চাপে ইনার এই বই লেখা। ইনিও ভাবেননি এই সময় লেখক হবেন। এই গ্রন্থ বেরুনোর পরে লেখক হিসেবে গুরুত্ব পেয়ে পরের গ্রন্থ নিয়ে কাজ করছেন। সেটাও বেরুচ্ছে। পেয়েছেন খুব আত্মবিশ্বাস। আমাকে বললেন, ” পরের বইটা শেষ করে যেতে পারবো কিনা জানিনা।” আমি বলেছিলাম, “এসব কী কথা! আপনাকে করতে হবে। আপনি তো তাজা যুবক সেটা প্রমাণ দিয়েছেন। তাহলে এই সব প্রশ্ন কেন? সমাজ অনেক কিছু আশা করে আপনার থেকে।”
আমার একটি বিতর্কিত উপন্যাস প্রায় চারশত পৃষ্ঠার বই, “দংশন” নিয়ে উনি খানিক চোখ বুলিয়ে বলেন, ” এতে বিষয়টি খুব গভীর।” এটা বলেই পরে বলেন, “রচনাভঙ্গি খুব ভালো।” আমি তখন পরে উনাকে মঞ্চে তুলবার জন্য কতৃপক্ষকে অনুরোধ করি। পরে উনাকে আবার মঞ্চে তুলবার পরে আমার এই উপন্যাস তাঁকে উপহার দিই। এইসব পাঠক দুর্লভ। এসে আমার প্রকাশককে বলি, “বিশেষ কারণে আমার লেখক কপি একজনকে দিয়েছি। আমাকে নতুন একটা কপি দিও।” এই বলে পুরো কাহিনী বলি। প্রকাশক বিষয়টি বুঝে সানন্দে আমার অবেদন মঞ্জুর করেন। কারণ তাঁর তো এটা ব্যাবসা। তবে এক্ষেত্রে প্রকাশক খুশি হন। এখানে আমার প্রকাশকের নাম বলা অনুচিত। কারণ বিষয়টা আমাকে নিয়ে লেখা নয়। তবে সংযুক্ত প্রসঙ্গে কিছু বলতে হল।
অনুষ্ঠান সঞ্চালিকা সুপ্রিয়া ঘোষকে অনুরোধ করে শ্রদ্ধেয় লেখক নৃপেন্দ্রনাথ দাসকে মঞ্চে দ্বিতীয় বারে তুলবার আগে আমি চমকে গিয়েছিলাম, এত দ্রুত অপরিচিত কোনো একটি বইয়ের কোনো অধ্যায় দেখে বুঝে নিলেন সেই বইয়ের বিষয় ও কোয়ালিটি। আমাকে প্রশংসা করেছেন বলে বলছিনা। ভিন্ন পাঠক ভিন্ন মতানত দিতেই পারেন। আমি বলছি উনার আত্মবিশ্বাস ও ইচ্ছাশক্তি কত নিখুঁত আজও। এবং লেখক চরিত্র কত সাবলিল।
বইটির সম্বন্ধে তথ্য ——
“দাসেদের লালদালান”।
লেখক : নৃপেন্দ্রনাথ দাস।
প্রথম সংস্করণ : জানুয়ারী ২০২৪, কলকাতা বইমেলা।
প্রচ্ছদ : মনীষা বিশ্বাস।
প্রকাশক : “লীনা পাবলিকেশন”। শ্যাম বাজার, কলকাতা -৭০০০০৪. ভারত।
দাম ১৫০ টাকা।
ISBN: 978-81-968260-6-2
—————————— ————-
About this Columist : ঋদেনদিক মিত্রো ( Ridendick Mitro) , পেশায় ইংরেজি ও বাংলাভাষায় কবি-উপন্যাসিক-গীতিকার-কলামিস্ ট। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মানে সম্মানীত। অনেক ইংরেজি ও বাংলা গ্রন্থ আছে। সামগ্রিকভাবে বিশ্বে বহু দেশে পরিচিত লেখক। স্প্যানিস ভাষাতেও লিখবার জন্য ও এই ভাষাতেও বক্তৃতা দেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
—————————– —————————