হীরাঝিল বর্ণপরিচয় – ১ ম ভাগ ( স্বর বর্ণ, ব্যাঞ্জন বর্ণ)
———————————–
ঋদেনদিক মিত্রো
|| পুরো ফাইল দেখো নিচে নেমে। আগে পড়তে পারো “হীরাঝিল বর্ণপরিচয়”। পরে এই গদ্য। তবে এক সাথে সাজিয়ে দিলাম। কোনটা আগে পড়বে বা শুনবে, সেটা তোমাদের ব্যাপার। ||
Auto reading করার জন্য ওয়েবসাইটে নিচে মধ্যিখানে গোল জায়গায় ক্লিক করে দিলে একাই সেটা কেউ পড়বে, শুনতে পাবে। এটা না জানলে জেনে নাও। তবে তারপর নিজে পড়বে, কারণ, Auto reading হবার সময় অনেক জিনিস সঠিক নিয়মে পড়ে না। সেটা একবার করে শুনে তারপর চোখ দিয়ে মিলিয়ে নিলে বুঝতে পারবে।
(১)
তুমি এই গদ্য লেখাটা পড়তে না পারলে তোমাদের শিক্ষক বা শিক্ষিকা পড়ে দেবেন। নইলে এই “হীরাঝিল বর্ণপরিচয়” কেন লেখা সেটা বুঝতে পারবে না। অনেকেই জানো, কিন্তু এটা পড়লে আরো নিখুঁত করে জানবে।
তোমরা জানো, প্রায় সারা দেশ বিশ্বের অনেকে জানে, মুর্শিদাবাদে চলছে একটি ভারত বিখ্যাত ইতিহাস রক্ষার আন্দোলন। ভাগীরথী নদীর পশ্চিম পাড়ে। এখানে অযত্নে থাকা নবাব সিরাজুদ্দৌলার ইতিহাসকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন নিয়ে এই আন্দোলন। মুক্ত চিন্তার শিক্ষা ধারাও চলছে এখানে, ” নবাব সিরাজুদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ ” নামের শিক্ষালয়ে। সব বয়সের জন্য এই শিক্ষালয়। বহু রকমের জ্ঞানের শিক্ষালয়। মূল আন্দোলন দুটি হলো, হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন ও খোসবাগ যত্ন করার আন্দোলন। এদের সাথে আছে আরো নানা সামাজিক চাহিদার দাবী ও সেগুলির বাস্তব রূপায়নের প্রচেষ্টা। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ইউটুব, পত্রপত্রিকা ও নানা বৈদ্যুতিন মাধ্যমের মাধ্যমে আমরা এইসব জানি। তোমরা আরো জানবে।
(২)
পাশাপাশি একটা কথা বলে নিই, এই আন্দোলন হল ভারত সরকার, মাননীয় রাষ্ট্রপতি , মাননীয় রাজ্যপাল, রাজ্য সরকার ও সরকারি প্রত্নতত্ব বিভাগ দ্বারা দৃষ্টি আরোপিত, এবং বাংলাদেশে থাকা নবাবের বংশধর ও মুর্শিদাবাদে প্রাসাদে থাকা নবাব মিরজাফর এর বংশধর দ্বারা সমর্থিত । এর মধ্যে আছেন ভারত ও বাংলাদেশ সহ নানা দেশের সাংবাদিক, আইনবিদ, কবি লেখক, গায়ক গায়িকা, অভিনেতা, অভিনেত্রী, গবেষক, শিক্ষক। এবং উন্নত বিষয় চিন্তা করতে পারা ছাত্রছাত্রী। ৫ই ডিসেম্বর ২০২১ হয় “হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন” — “হীরাঝিল বাঁচাও কমিটি” এর সাথে হাজার মানুষের সহায়তায়। লালবাগ সদর ঘাট থেকে সারি হয়ে আসছিল দুই চাকা ও তিন চাকার র্যালি। কত ছাত্রছাত্রী, কত অভিভাভক, দাদা দিদি। সবার কন্ঠে মুখরিত হয়েছিল — সকলের দ্বারা দায়িত্ব প্রাপ্তা আন্দোলন পরিচালিকা সমর্পিতা ম্যাডামের লেখা শ্লোগান : —
ইতিহাসে গরমিল,
জেগে ওঠো হীরাঝিল।
সে এক দৃশ্য বটে। এই সব নিয়ে বছরে পালিত হয় আপাতত তিনটি দিন। পলাসির যুদ্ধ দিবস প্রতি ২৩ জুন। নবাব সিরাজ হত্যার দিন প্রতি ৩ জুলাই, ও অন্য যে কোনো একটি দিন আন্তর্জাতিক ” সবুজ সেনা সম্মান ‘ পুরস্কার ও অন্যান্য সম্মান জ্ঞাপনের দিন। যারা সৎ সাহসী ও সঠিক জ্ঞানী, তাদেরকে বলে চির তরুন বা চির তরুনী। তাই তারা সবুজ। এই আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করতে হীরাঝিলে জমি দান করেন উজ্জ্বল সরকার, নিখিল সরকার ও তাঁদের মা। হীরাঝিল মানে যেটা মন্সুরগঞ্জ নাম ছিল, সেখানে ছিল নবাবের প্রাসাদ ছিল, পাশে ভাগীরথী নদীতে তলিয়ে গেছে। কিছু ভাঙাচোরা আছে ডাঙায়। সেখানে ” নবাব সিরাজুদ্দৌলা স্মৃতি সুরক্ষা ট্রাস্ট ” এর তরফে বহু মানুষের থেকে নানা রকম সহায়তায় তৈরি হচ্ছে কত কী! তোমরা অনেকে দেখছ। যারা দেখোনি এসে দেখবে। দেশ বিদেশ থেকে কত মানুষ আসছেন এখানে। ভারতবর্ষকে নতুন আলোয় নিয়ে আসার জন্য এই বিপ্লবের ইতিহাস ও এর বিপ্লবীদের নানা কাজ নিয়ে লেখা হবে নতুন ইতিহাস।
আবার একটা কথা বলি, এই সভ্যতাকে কারা বাঁচিয়ে রেখেছেন ও বারবার মৃত্যমুখ থেকে জাগিয়ে তোলেন, জানো, তাঁরা হলেন বিপ্লবী আর সাংবাদিক। বিপ্লবী মানে তুমি যে কাজ করে জীবন চালাও — সেই কাজে রেখো সঠিক জ্ঞান, সুক্ষ্মতা, বিচক্ষনতা, সততা ও সৎ সাহস। বিশ্বের কোনো কিছু ভালো না করলে ও সৎ সাহসী না হলে তোমার শিক্ষার মূল্য নেই। কাজের মূল্য নেই। মানব চরিত্র খাঁটি হলে তাকে বিপ্লবী বলে। সেটা হলেই এই সমাজ, সংসার, বিশ্ব, সবখানে আসবে সুখ, শান্তি। বিপ্লবী ও সাংবাদিকগন, এঁরা সবাইকে আলোয় আনেন।
সাংবাদিকগন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাকেন আড়ালে। আমাদের কাজ হবে এঁদেরকেও সবার সামনে আনা। জানবে, যাঁরা সীমাহীন জ্ঞান অর্জন করেন ও বুদ্ধি বিচক্ষনতা দিয়ে সৎ সাহস নিয়ে বাঁচতে চান তাঁরাই বিপ্লবী। তাঁরা সকল বাধা পেরিয়ে চেষ্টা করে যান এটাই। তাই, পৃথিবীতে সব পদের চেয়ে বিপ্লবী ও সংবাদিকের পদ সেরা। আর, জগতের সব জ্ঞানকে আয়ত্ব করতে পারেন ও নানা ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে সেগুলি প্রকাশ করার কাজ করেন, সভ্যতাকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করতে চান, তাঁদের বলে সাংবাদিক। সাংবাদিক ছাড়া পৃথিবীতে কোনো সত্য আলোয় আসেনা। একজন সাংবাদিক হতে হলে কত জ্ঞান, ধৈর্য, সুক্ষ্মতা আর ঝুঁকি নিয়ে চলতে হয় জানো! আর শিক্ষক জাতি সব রকম জ্ঞান নিয়ে মানুষের মধ্যে প্রবেশ করান অতি ধৈর্য আর অনুভূতির সুক্ষ্মতা দিয়ে। এঁদের নিয়ে জগত চলমান। আর জগতের প্রাণ অস্তিত্বকে বাঁচিয়ে রাখেন কে, কৃষক।
[ কবির অনুরোধ ]
বিদ্যাসাগর -এর বর্ণপরিচয় -১ম ও ২য় ভাগ বেরিয়েছিল ১৮৫৫ সালে। কত বছর আগে সেই সময় সেই আধুনিক চিন্তা আজকেও আধুনিক।
যুক্তাক্ষর তাঁরই সৃষ্টি। যাইহোক, বাঙালাভাষীরা শিক্ষিত হতে শুরু করলো সহজ ভাবে তাঁর তৈরি শিক্ষা ধারায়। বোধের স্তর উন্নত হতে শুরু করেছিল বাঙ্গালীর তথা ভারতীয়দের। সমাজ সংস্কারক হিসেবে আগে যদিওবা সতীদাহ প্রথাকে আইনত রদ করার জন্য রাজা রামমোহন রায় কাজ করে সফল হয়েছিলেন। আর একটা কথা বলে রাখি, রাজা রামমোহন রায় কিন্তু বড় মাপের কবি ও লেখক ছিলেন। তাঁর রচনা সংকলন পড়ে নিও কখোনো। একটা বড় অভিধানের মত বড় তাঁর লেখার সংকলন। যদিওবা সেটা আমার পড়া হয় নি। এখোনো সময় ও সুযোগ হয় নি। পড়তে পারলে অনেক কিছু পাবো। কত কিছু পড়ার আছে, পড়ার কত সুখ।
পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর আমাদের মধ্যে ঘরে-ঘরে শিক্ষা নিয়ে আসেন ” বর্ণপরিচয় ” রচনা করে। এবং তিনি একই সাথে ছিলেন বড় লেখক। বড়দের জন্য অনেক বই লেখেন তিনি। আরো কত গুণে গুণী তিনি, সেসব জানলে অবাক হবে। ভাবো তো, কত বড় জ্ঞানী ও লেখক হোলে তবে ” বর্ণপরিচয় ” নামের পুস্তক লিখে শিক্ষার প্রণালীকে সহজ করা যায়! এঁদেরকে পুরোপুরিভাবে না জানার জন্য, আমরা জীবনে ভুল করে যাই ও ভুল অভ্যেসের মানুষদের সাথে মিশে নিজেরা ভুলগুলিকে গ্রহন করি। আমাদের খোলাখুলি চিন্তা করতে হবে ও সঠিকভাবে সব কিছু গ্রহণ করতে হবে।
আচ্ছা, এসোতো, রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের সময়কে কল্পনা করি। এসো তো সেই সময়কে অনুভব করি। সেই যুগ, সেই সময়ের গ্রাম, শহর, মানুষ, পোষাক, পশু, পাখি, গাছপালা পথঘাট, সামাজিক অভ্যেস আর পড়াশুনা কেমন ছিল। কল্পনা শক্তি জীবনের সেরা সম্পদ।
বলছি যে, শিশুদের বই কি আলাদা কিছু হয়? আমার প্রিয় বই পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ” বর্ণপরিচয় ” ও রবি ঠাকুরের ” সহজ পাঠ “। আমার ব্যাগে থাকে। আগের আদলের “বর্ণপরিচয় ” পেয়েছি। “সহজ পাঠ”কেও নিয়ে ব্যাগে রাখবো এবার। ট্রেনে, বাসে বসে চোখের সামনে খুলে দেখবো। আহ, কত সুখ। এইসব বই আমার সাথে সঙ্গে যায়। এইসব বইতে ওঁদের ছবি দেখলে বুকে কী সুখ হয়, আহা! চোখে কত মরমী চঞ্চলতা খেলে যায়। শিশু হয়ে যাই তখন চোখের গোপন জলের ফোয়ারায়। কাকে বোঝাবো এইসব অনুভুতি।
তাই, আমি যখন আমার মত করে ” বর্ণপরিচয় ” লিখছি, তখন বিদ্যাসাগরকে ভুলে যেতে বলছি না, বরং এটাই বলছি, আগে বিদ্যাসাগর এর ” বর্ণপরিচয় ” পড়ো, তারপর আমার ” হীরাঝিল বর্ণপরিচয় ” পড়ো।
রবি ঠাকুরের ” সহজ পাঠ ” এর মত আমিও কিছু লিখবো এই সময়ের ভাবনায়। অন্য বই। তবে আগে পড়বে রবি ঠাকুরের “সহজ পাঠ”। সেটা ভালোবাসলে, অনুভব করলে পড়বে আমার “সহজ পাঠ” । দুজনের দুটি সহজ পাঠ এক নামে হয় না। তাই বইয়ের নামটা একটু বদলে দিতে হবে তখন।
রবি ঠাকুর “সহজ পাঠ – প্রথম ভাগ”- এর খসড়া করেন ১৮৮৯ সালে ডায়েরিতে। ডায়েরির নাম Pocket Book of Rabindranath Tagore. পরে এর ২য় ভাগ এর খসড়া করেন ১৯২৭-২৮ সালের দিকে। বেরোয় ২০৩০ সালে। যদিওবা তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান ১৯১৩ সালে। তবে ২য় ভাগ প্রকাশের সময় এর ১ম সংস্করণে ভুলে মুদ্রন সময় ছাপা হয় নি। ২য় সংস্করণ হবার সময়কাল বাংলা সন ১৩৩৭, বৈশাখ। এই সময়ের মুদ্রন সাল নিয়ে কিছু মত পার্থক্য আছে। আগুপিছু হতে পারে। তবে, “সহজ পাঠ” এর দুটি ভাগের খসড়ার সময় ফারাক প্রায় ৪০ বছর। তারপর দুটি ভাগ প্রকাশিত হয়। এখানেই বুঝা যায় যে, শিশুদের জন্য লেখা তো সহজ নয়। এবং কত চিন্তা করতে হয়। বিশ্বকবি রবি ঠাকুরকেও এত চিন্তা করতে হয়েছিল ও বারবার লেখার আদল বদলাতে হয়েছিল। যে-কোনো কাজ নিখুঁত করতে কত জ্ঞান, ধৈর্য আর সংশোধন দরকার বলতো? জীবনের সব কাজেই এটা সত্য।
সত্যি, এইসব মানুষেরা না এলে আমরা কেমন মূর্খ থাকতাম বলতো? আমাদের শিক্ষার ক্ষমতা, অনুভব ক্ষমতা, এসব কিছুই এতোটা থাকতো না। একদম মধ্যযুগীয় হয়ে থাকতাম।
এঁরাই তো আমাদেরকে, আমাদের দেশকে, পৃথিবীকে গঠন করেছেন। এঁদেরকে আবছা করে আমাদের মাথায় কারা কী ঢুকিয়ে দিয়ে আমাদের অনুভুতিকে, আত্মবিশ্বাসকে ও খোলা ভাবনার ইচ্ছেকে দুর্বল করে দিতে চায়?
না, আমরা কেউই ভুলকে গ্রহণ করবো না! কারণ, আমরা ভাবতে পারি, তাই বিচার করতে পারি , তাই জাগতে পারি। নিজেদের বিচার বুদ্ধিতে সঠিক পথে চলতে পারি।
এই কথা খেয়াল রাখলে আমরা সবাই স্বাধীন। তখন কারোর ভুল ইচ্ছেতে ঢুকবো না। আমাকে কেউ যদি বোকা বানিয়ে ভুল কাজ করায়, তাহলে আমার শিক্ষার মূল্য নেই, বুদ্ধির মূল্য নেই।
আপাতত এখন, ” হীরাঝিল বর্ণপরিচয় ” -১ম ভাগ পড়ো। এটা স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জন বর্ণ নিয়েই একসাথে আছে।
সবাই পড়ো। আচ্ছা, শিশুরা ও বড়রা বসে যাও তো এক সাথে পাশাপাশি।
একটা কথা, কেউ আমাকে বলতে পারেন, “কবি, তুমি কবে থেকে ছোটদের জন্য লিখছো?”
ব্যাপারটা এমন, এই বাঙলায়, শিশুদের জন্য যাঁরা লেখেন তাঁরা যেন ছোট কবি। সাহিত্য কখোনো শিশু ও বড়র জন্য আলাদা হয় না। সাহিত্যটা সাহিত্যই। তবে এটা বলতে পারি, এই লেখাগুলি ইস্কুলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীরা সহজে বুঝবে। আবার রসবোধ না থাকলে ছেলে মেয়ের বাপ মায়েরাও বুঝতে পারবেন না। বোঝবার মনটাই আসল।
আমি লেখক, বড়দের জন্য যেমন লিখি, আবার শিক্ষা শুরুর প্রথম সময়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্যও লিখি।
সাহিত্যের মধ্যে শিশু ও বড়দের জন্য কবি লেখকদের নিয়ে বিভাজনের ভুল ধারণা বদলাতে হবে।
জানবে, নবাব সিরাজুদ্দৌলার ইতিহাস নিয়ে ও সেই সাথে তাঁর নামে শিক্ষা ব্যাবস্থা ও অন্যান্য দিকগুলি নিয়ে এই যে বিরাট আন্দোলন, এটার অনেক দিক আছে।
(১) নবাব সিরাজ এমন একটি নাম, তাঁর পেছন দিক থেকে পিছিয়ে হাঁটলে পাবে মধ্যযুগ ও প্রাচীনকাল। নবাবের সামনে থেকে এগিয়ে এলে দেখবে আধুনিক কাল।
(২) এই ইতিহাসের সাথে আছে বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৭৫৭ সালে ২৩শে জুন নবাব সিরাজকে অনৈতিকভাবে যুদ্ধে হারিয়ে কোম্পানির প্রধান অফিসার রবার্ট ক্লাইভ বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা দখল করে ভারতে প্রথম থাকবার ও শাসন করার অধিকার কেড়ে নেন। বাকি ভারতকে এই কোম্পানি কেড়ে নেয় ২২শে অক্টোবর ১৭৬৪ সালে বক্সার যুদ্ধে। তখন কোম্পানির ক্যাপ্টেন ছিলেন মুনরো। তাঁর প্রতিপক্ষ ছিলেন দিল্লীর সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম, অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা ও বাংলা নবাব মিরকাশিম। মিরকাশিম ছিলেন বাংলার ওই সময়ের নবাব, উনি সিংহাসন পান তাঁর শশুর নবাব মিরজাফরের পর। আর, এটা তো জানই যে, ইংরেজের সাথে হাত মিলিয়ে নবাব সিরাজের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর নবাব সিরাজকে অনৈতিকভাবে হারিয়ে নিজে বাংলার নবাব হন। আসলে ইতিহাসে নানা সময়ে নানা কারণে অনেক কিছু ঘটেছে। তাই বলে তাঁর বংশধরদের কেউ দোষ দিওনা। কেউ কারোর অপরাধের জন্য দায়ী নয়, যদি তাঁর অপরাধে অন্যেরা সহায়তা না করেন।
(৩) ইংরেজদের অধীনে বিশ্বের ১/৩ অংশ শাসনে ছিল। তাই তাঁদের শাসন করা প্রায় ৫০টির বেশি দেশ স্বাধীন হবার পরেও আছে কমনওয়েলথভুক্ত দেশ। মানে, ইংরেজের অধীনের দেশগুলি স্বাধীন হবার পরে সেগুলি যে ইংরেজদের অধীনে ছিল সেই প্রমাণ হিসেবে তাদেরকে কমনওয়েলথভুক্ত দেশ বলা হয়। বুঝলে? এবং এই ইংরেজ জাতীর দুটি দেশ ব্রিটেন ও আমেরিকা হল রাষ্ট্রপুঞ্জর ৫ জন স্থায়ী সদস্যের মধ্যে দুই জন। রাষ্ট্রপুঞ্জ বা রাষ্ট্রসংঘ বা জাতীপুঞ্জ মানে বিশ্বের সব দেশ নিয়ে যে-সংস্থা, সেটাই। এর মূল অফিস আমেরিকায়। তাহলে সেখানে ৫জন স্থায়ী সদস্যের মধ্যে দুটি ইংরেজের দেশ। সেই ইংরেজদের সাথে যুক্ত নবাব সিরাজের নাম, ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাস, ক্ষমতার হস্তান্তর, এবং আমাদের স্বাধীনতার পতাকা।
তাহলে, বুঝলে তো, নবাব সিরাজ নিয়ে সব রকম কাজ তাই আন্তর্জাতিক কেন। আন্তর্জাতিক মানে বিশ্ব কেন্দ্রিক। অবস্যই আমরা জানবো এই পলাসীর যুদ্ধে যোদ্ধাদের কাহিনী। সেগুলি শুনলে চমকে যাবে। শিক্ষক বা শিক্ষিকাদের থেকে জেনে নিও।
(৪) দেশ ও বিশ্ব জয় করা এত বড় আন্দোলনের সাথে যে-শিক্ষা ব্যাবস্থা আছে, সেখানে পড়ে বা পড়িয়ে জীবনের মাঝে কত সুখ আর রোমাঞ্চ, তাই না?
সেটাই তো, নবাব সিরাজুদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ। এটি বহু রকম চিন্তা ও শিক্ষার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে এটাকে School University বলা যাবে। পরপর এগুলি অনুভব করবে।
বা এইরকম মুক্ত চিন্তার আদর্শে অনুপ্রাণীত অন্য নামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি। পৃথিবীর যেখানে হোক, সেগুলি একইভাবে School University। সংকীর্ণতা পেরিয়ে যাওয়াই তো শিক্ষা।
(৫) নবাব সিরাজ এমন একটি নাম, তাঁর নামে হাজারটা সমালোচনা করেও বলতে হয়, তিনি অনেক গুণের অধিকারি ছিলেন। এবং তিনি মাত্র ১৪ মাসের শাসনে চেষ্টা করেছিলেন পরিবার থেকে পাওয়া ভুল অভ্যেসগুলি থেকে বেরিয়ে আসতে। আসলে, আমাদের পারিবারিক ভুল অভ্যেসগুলি আমাদের অনেক ভুল অভ্যেসে নিয়ে যায়। এই সতর্কতা না রাখলে আমরাও অনেক ভুল করবো।
(৬) চিন্তা করো, সারা পৃথিবীতে ইংরেজজাতি এত মেধাবান, শিক্ষিত ও ক্ষমতা কেড়ে নেবার বুদ্ধিতে ভরা, তারা ভেবেছিল ২৪ বছরের সিরাজ তাদের প্রতিপক্ষ।
অনেকে বলেন, বোকা ও অদক্ষ সিরাজকে জোর করে নায়ক বানিয়েছে ক্লাইভ, ওয়াটসন ও মিরজাফর, রাজা রাজবল্লভ, জগত শেঠ, ঘষেটি বেগম, ইত্যাদি সবাই। এই যে এতগুলি নাম, এঁরা পৃথিবীর সেরা কূটিল, সাহসী, বুদ্ধিমান ও ধনীর তালিকায় পড়ে। তাঁরা কি এত বোকা, তাঁরা নিজেরা ইচ্ছে করে ভিলেন হয়ে পাশাপাশি বোকা ও অদক্ষ সিরাজকে নায়ক বানিয়ে দিলেন? আসলে এটা হতে পারে, ঘটনায় ধারা সেই ভাবেই গড়িয়েছিল কোনো না কোনো ভাবে, কিন্তু, নবাব সিরাজের বিশেষ কিছু গুণের চমক ও ব্যাক্তিত্ব না থাকলে এত দূর যুদ্ধ পর্যন্ত গড়িয়ে না গিয়ে বরং যে কোনো সময় তাঁকে ঘিরে মেরে ফেলতে পারত কেউ না কেউ। কিন্তু, সেই কাজ করতে তখন কারোর হাত ওঠেনি। তাই তাঁরা সিরাজকে মারতে এতদূর কাহিনীকে গড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইতিহাস বিচার করতে গেলে মনস্তাত্বিক বিষয়গুলিও দেখতে হবে তো। জীবনের ও জগতের সব বিষয়ের বিচার করতে হয় খোলা জ্ঞান নিয়ে।
অনেকে তাঁকে দোষ দেন যে, তিনি অনেকের সাথে দুর্ব্যবহার করেছিলেন, তাঁর দাদু আলিবর্দি খাঁর সময়ের অনেককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে নিজের মত অনেককে সেইসব পদ বন্টন করেছিলেন। আসলে তিনি বুঝেছিলেন যে, আগে থেকে পদে থাকা লোকেরা বেশিরভাগ সংখ্যাই লোভী, কূটিল। তাই কিছু অদলবদল দরকার। বলতো, একপক্ষই কি ভোগ করবে আর খাবে। নতুনদের কি জায়গা হবে না? তবে তারুন্যের তেজে তিনি অনেক সময় অধৈর্য হয়ে হয় তো কারো সাথে অসংলগ্ন আচরন করেছিলেন, যেটা না করলেই হয়তো ভালো হোতো। কিন্তু, এই আচরন কি শুধু তাঁর মধ্যে ছিল। ভারতে আর কোনো রাজা, জমিদার, নবাব, সম্রাট ও সেনাপতির মধ্যে ছিলনা? প্রশ্নটা এখানেই। তবে ভুল কাজ যে করুক সেটা ভুল। আবার নবাব সিরাজ এমন একজন তাঁর কোনো কাজকে ভুল বলছি, আবার কোনোটাকে ঠিক বলছি। মানুষের কাছে এত কাছের ঐতিহাসিক চরিত্র একমাত্র নবাব সিরাজ। আর সেটা করিয়েছে হীরাঝিল বাঁচাও আন্দোলন, খোসবাগ যত্ন করার আন্দোলন ও নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ। ইতিহাসকে এত কাছে পাওয়া ও ভালোবাসার আনন্দ এরাই প্রথম করেছে। যেমন অনেক বড় কাজ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলি করেছে দেশ ও বিশ্বের নানা প্রান্তে। অনেকের অনেক বড় কাজ নিয়েই তো এই সভ্যতা।
আবার, অনেকে দাবী করেন যে, সিরাজ শিক্ষা বা পড়াশুনা ঠিক মত করেন নি। এটা সিরাজের প্রতি একটা দাবী আসতে পারে। দেখো, এই ২০২৩ সালেও শিক্ষা ও রাষ্ট্রের নানা দিক কত দূর্বল ও সমালোচিত। এমন কী, এই হীরাঝিল, খোসবাগ, এগুলি ডাহাপাড়া অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর হল এখনো ডাহাপাড়া অঞ্চলে একটা মাধ্যমিক স্কুল নেই বলে শুনেছি। এটা রাষ্ট্রের অন্যমনস্কতা, রাজ্যের অন্যমনস্কতা। আবার এটাও হতে পারে, অনেক বড় দেশ, তাই কত কাজ করার পরেও কত কাজ করা হয়ে ওঠেনা। তাহলে নবাব সিরাজের সময়ে, মানে পলাসীর যুদ্ধ হবার আরো আগে যখন সিরাজ ছিলেন শিশু বা তরুন বয়সে, তখনকার ভারতীয় শিক্ষা ব্যাবস্থা কেমন ছিল সেটা অনুমান করা যায়। বলছি যে, ১৭৪৫ থেকে ৫৭ সালে মধ্যযুগীয় বিদ্যা বুদ্ধিতে ভরা বিচ্ছিন্ন বিপন্ন ভারতের শিক্ষা কেমন ছিল, এবং সেই শিক্ষায় কজন কিভাবে সঠিক শিক্ষিত হতে পারতো, আমরা ভাবি এসো। সেই সাথে প্রায় প্রতি পরিবারে ছিল মূর্খ। পেশা মানে মাত্র কয়েকটি। কৃষি কাজ, লোকের বাড়িতে কাজ করা, বাড়ি তৈরি করা, ডাকাতি করা, যুদ্ধ করা, মাত্র কয়েকটি জিনিসের ব্যাবসা করা, পাঠশালায় শিক্ষকের কাজ, হাপরের কাজ, কুমারের কাজ, ছুতারের কাজ, ধোবার কাজ, তার মধ্যে কেউ-কেউ শিল্পও সাহিত্যের কাজ ও গবেষনার কাজ। শিক্ষা ও সৃষ্টির কাজগুলি কয়েক লাখ লোকের মধ্যে হয়তো দুই জন করত। আর, এই যুগেও মানুষ ভোগবিলাস নিয়ে পারিবারিক আবেগে মত্ত, এবং পারিবারিক আবেগের পক্ষপাতিত্ব নিয়ে নিজের বুদ্ধিকে দুর্বল করে রাখে। তাহলে সেই যুগে এইসব বুদ্ধির দুর্বলতা কত বেশি ছিল। আর, এই যুগে এত জ্ঞান, বুদ্ধি, শিক্ষা থেকেও মানুষ খারাপ সঙ্গ ও খারাপ নেশায় মত্ত থাকে, তাহলে সেই যুগ এই ক্ষেত্রে আরো কত বিপন্ন ছিল। তাই, সেই সব দিক বিচার করলে সিরাজকে আমরা কতটা দোষ দিতে পারি, ভেবে দেখো। বরং তিনি অন্ধকারাবৃত সমাজে ও ব্যাপ্ত চেতনাহীন পরিবারে, মানে ভোগ বিলাস ভরা জীবন যাপনে অভ্যস্ত পরিবারে থেকেও পরপর নিজেকে কতটা আলাদা করেছিলেন, সেটাই ভাবনার বিষয় হতে পারে। এবং লুৎফুন্নিসার বন্ধুত্বে ও বিচক্ষনতাকে ও শুদ্ধ সততাকে তিনি কিভাবে পরপর গ্রহণ করতে চেয়েছিলেন সেটাই উপলব্ধি করবো। সিরাজের মধ্যে লুৎফুন্নিসা সত্যিকার মানবিক রূপ না খুঁজে পেলে তিনি কি ৩৩ বছর নবাবের জন্য কেঁদে-কেঁদে নবাবের কবরের উপরে মাথা রেখে শেষ ঘুম ঘুমাতেন। নবাবের স্বভাবে উচ্চতা না থাকলে কি লুৎফা বৃটিশের থেকে আসা মাসোয়ারার টাকায় দরিদ্রদের সেবা করতেন? কিংবা নবাব মিরজাফর ও তাঁর পুত্র মিরনের থেকে বিবাহ প্রস্তাবকে ঘৃনার সাথে প্রত্যাখ্যান করে তিনি কি কুটিরে বাস করে নবাব সিরাজের কবরকে সেবা করে কাটাতেন, সিরাজ যদি আত্মিকভাবে অমানবিক বা সুবিধেবাদী হতেন! এইসব প্রশ্ন তো আমাদের চোখ ভিজে ঝাপসা করে দেয়। তাঁর সময় মুর্শিদাবাদের শিল্প সংস্কৃতির অনেক উন্নতি হয়েছিল। তাই এই সব নিয়ে ভাবলে বুঝতে পারা যায় যে, তাঁর দ্বারা কোনো খারাপ কাজের প্রমাণ থাকলে সেটা তিনি করেছিলেন খারাপ লোকদের দ্বারা বিভ্রান্ত ও দিশেহারা হয়ে। অন্য অনেক রাজা, নবাব, সম্রাটের মত কূটিল ও অট্টহাসি তিনি হাসতেন না। তবে, নানা খারাপ লোকের চক্রে কোনো পরিস্থিতিগত সিদ্ধান্ত তিনি ভুল করেছিলেন বা করেছেন, সেটা হতে পারে।
আসলে নবাব সিরাজকে নিয়ে আমরা অনেকে কঠিন সমালোচনা করতে চাই, কারণ, এটাই প্রমাণ করে যে আমরা তাঁর ভিতরে ঢুকতে চাইছি ও ঢুকেছি। এটাই নবাব সিরাজের বড় আকর্শন।
একটা উদাহারণ দিলে বুঝতে পারা যাবে, নবাব সিরাজের অনেক আগে ১৬৬৪ থেকে ১৬৭৮, এবং ১৬৮০ থেকে ১৬৮৮, এই সময় বাংলার সুবেদার বা নবাব ছিলেন ভারত সম্রাট আওরঙ্গজেবের মামা শায়েস্তা খাঁ। ১৭৫৭ সালের চেয়ে ঐ সময় জনসংখ্যা অনেক কম ছিল। এবং শায়েস্তা খাঁ ছিলেন আওরঙ্গজেবের মামা। তাই অনেক সুবিধে পেতেন দিল্লী থেকে। ঐ সময় ছিল টাকায় আট মন বা কখনো নয় মন চাল। কিন্তু, এই সুখের গল্পের ভিতর ফাঁক হোলো এই যে, কৃষকরা অধিকাংশ বছর মাঠ থেকে রাগে সব ধান তুলতেন না। কারণ, কৃষক পেতেন না ফসলের সঠিক দাম। গ্রামের অর্থনীতি কড়ি দিয়ে প্রায়শ চলত। কিন্তু ঐ এক টাকা মূল্যের কড়ি প্রায় লোকের ঝুলিতে থাকতো না। এক টাকা মূল্যের কড়ি কারো কাছে থাকলে তাকে যথেষ্ট বড়লোক বলা হোতো। অন্যদিকে সময় মত বর্ষা ও রোদ না হলে ফসল নষ্ট হোতো। তখন অনাহারে, আধাহারে কাটাতেন কৃষক পরিবারগুলি। সেই প্রভাব পড়ত বাকি সমাজে। তাতে কত লোক মারা যেত। আবার রোগ বা মড়ক এলে গ্রাম থেকে গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। জলদস্যুদের আক্রমনে নাগরিকেরা বিপন্ন ছিল। শায়েস্তা খাঁ তাই লোভ দেখিয়ে জলদস্যুদের ডেকে এনে সেনা বিভাগে কাজ দিয়ে কিছুটা সুস্থ পরিবেশ নিয়ে আসেন। খুব বুদ্ধিমানের কাজ বলতেই হবে। কারণ, অভাবে প্রায় লোকেরা তখন ডাকাতি বা দস্যুবৃত্তি করতো। কিন্তু, এত কিছুর পরেও দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের বিপন্নতা থেকেই যেত। দেশ ছিল দিশেহারা। অন্য রাজ্যের সুবেদারীতেও ছিল এই রকম সমান সমস্যা। তাহলে শিক্ষা, পথঘাট, জীবন বোধ, এইসব একেবারে ছিল অসংলগ্ন। আমি বোঝাতে চাইছি ঐ সময় দেশের পরিস্থিতিগুলি প্রায় এক রকম ছিল, নবাব সিরাজ পর্যন্ত। সিরাজের পরেও তাই। দিল্লিতে কর না দিলে সুবেদারী থাকবে না, আবার, দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্তের ক্ষমতা ছিল না কর দেবার মত। এই রকম বিভিন্ন অসহায়তার মধ্যে নবাব সিরাজ চলেছিলেন। কোনো বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন ও প্রয়োগের কোনো সুযোগ ছিল না। সেই অসহায়তায় থেকে নবাব সিরাজ সেই সময়কালীন শিক্ষা, বুদ্ধি, দক্ষতা দিয়ে যেটুকু কাজ করা সম্ভব সেটা করেছিলেন। তাই, নবাব সিরাজকে “অদক্ষ “, ” অপরিণত ” বা ” অযোগ্য ” বলে আমরা যতই দোষ দিই না কেন, যে-ধরনের দক্ষতার পূর্ণতা আমরা নবাব, সম্রাট ও রাজা, জমিদারদের থেকে আশা করি, সেই পূর্ণতা কাদের মধ্যে ছিল জানিনা।সেই উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমরা দিশেহারা হবো জানি। আর, তখন বুঝতে পারবো যে, নবাব সিরাজ সেই সময়ের পারিবারিক রীতিনীতি, আচরন ও শিক্ষার অবস্থানে থেকে এবং সেই সময়ের জনগন ও ক্ষমতায় থাকা অধিকাংশ লোভী লোকদের মধ্যে থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব ছিল না। এমনটাই তো আপাতত মনে হচ্ছে।
(৭) আসলে নবাব সিরাজ এমন একটি নাম, যেখান থেকে শুরু হল, সারা ভারত ও বিশ্বে ইতিহাস চর্চার প্রতি আগ্রহ ও ভালবাসা ও সমালোচনার ইচ্ছে। কারণ, তাঁর ইতিহাসকে রক্ষা করার জন্য আন্দোলন শুরু হবার পরেই শুরু হোলো তাঁকে নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা এবং সেই হাওয়া থেকে অন্য ইতিহাসগুলির প্রতি মনযোগ। তাই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা করা মানে তাঁর প্রতি অশ্রদ্ধা নয়, বরং ইতিহাস বিষয়ের প্রতি মনযোগী হওয়া। তাহলে, বুঝেছ, এই ইতিহাসকে কেন্দ্র করে এত বড় আন্দোলন, এর উপযোগীতা কত বেশি।
সেই হাওয়াতেই “হীরাঝিল বর্ণপরিচয়”।
(৮) ভেঙে যাওয়া বাঙালীজাতিকে এক করছে কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। শিশু থেকে বড়, সবাইকে চিন্তাশীল করছে কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। মানুষের সাথে মানুষের নানা রকমের দূরত্ব ঘোচায় কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। লুকিয়ে থাকা ও ছড়িয়ে থাকা উচ্চ চেতনার ছাত্রছাত্রী ও বড়দের একত্র করছে কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। মানুষকে আত্ম সমালোচক হতে এগিয়ে দিচ্ছে কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। ইতিহাসকে নিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কাব্য, সাহিত্য, সঙ্গীত রচনা ও অংকন ও অন্যান্য শিল্প করাচ্ছে কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। সব রকম পেশার মানুষদের বন্ধু করাচ্ছে কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। নিজের প্রতি কঠিন সমালোচনাগুলিকে আদর করে আঁকড়ে ধরছে কে, সে-ও একটি নাম সিরাজ। কোনো ইতিহাসকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করে নতুন করে ইতিহাস গড়া যায় প্রথম দেখালো কে, সে-ও একটি নাম, সিরাজ। যিনি হাসতেন সত্যিকার হাসি, কাঁদতেন সত্যিকার কান্না, তিনি একটি নাম, সিরাজ।
(৯) তোমরা যারা কল্পনা করো, আহা, যদি লন্ডনে বেড়াতে যেতাম, যদি পৃথিবীর নানা দেশের প্রাসাদ দেখতাম, —- তাদেরকে বলি যে, নবাব সিরাজের সময়ের ইংরেজ ঐতিহাসিক লিখে গেছেন যে, হীরাঝিল প্রাসাদ ছিল ইউরোপের তিনটি রাজ পরিবার থাকার মত। এবং লন্ডন শহরের চেয়ে উন্নত ছিল মুর্শিদাবাদ শহর। দেখো, আমরা আমাদের আকর্শনীয় জায়গাগুলি নষ্ট করে দিয়ে বিদেশের জায়গা দেখতে যেতে চাই, আমাদের আকর্শনীয় জায়গার চেয়ে উন্নততর ভেবে নিয়ে। এও এক মজার ব্যাপার তাই না।
(১০) ২৩শে জুন ২০২২, ২৬৫ তম পলাসীর যুদ্ধ দিবসে উদ্বোধন হয় শহীদ বেদী। উদ্বোধনে ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আসা নবাব সিরাজুদ্দৌলার নবম বংশধর সৈয়দা মেহমুদা ও তনভীর, এবং নবাব মীরজাফরের বংশধর — আজোবধি ভারত সরকারের দ্বারা নবাব উপাধীতে থাকা Nawab of Murshidabad, ছোটে নবাব রেজা আলী মির্জা। এঁদের আচরন, বিনয়, মেহনতি, সব কিছু সবার মনে খুব সমীহ পেয়েছিল। এঁদের সাথে থাকা অন্য আমন্ত্রিত ব্যাক্তিগন ছিলেন সম রূপ গুরুত্বপূর্ণ, যে যার নিজস্ব অবস্থান থেকে। ২৩শে জুন ২০২৩, ২৬৬ তম পলাসীর যুদ্ধ দিবসে উদ্বোধন হয় “সিরাজ উদ্যান”। উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের অতিথি মহাম্মদ দিলোয়ার হোসেন, স্বস্ত্রীক ও সেই ছোটে নবাব রেজা আলী মির্জা সহ নানা গুণীজন।
এইসব পরিচালনা করে “নবাব সিরাজুদ্দৌলা স্মৃতি সুরক্ষা ট্রাস্ট”। অবস্যই পাশে ছিল নানা দিকের বিপ্লবী মনস্ক অনেকের সহযোগীতা।
(১১) ২০২১ সালের শেষের দিকে হীরাঝিলে ভয়ংকর বিপদ সঙ্কুল অরন্য পরিস্কার করা হয়, ও প্রাসাদের ভাঙা দেওয়ালগুলির অস্তিত্ব বের করা হয়। কত দাদা ও ভাইয়েরা এসে তা করে গেছেন, অন্য কোনো কিছু না ভেবে। ২০২৩ গরমে খোসবাগে হয়েছিল জলসত্র। কত দাদা, ভাই বোনেরা মিলে সেই কাজ করেছিল, উতপ্ত গরমে। কী সুন্দর করে বড়-বড় হাঁড়ি ধুয়ে উঁচু বেঞ্চির উপর রেখে তাতে জল ভরে তারপর জড়িয়ে ছিল ভেজা লাল কাপড়। কী সুন্দর দেখতে হয়েছিল। যেন স্প্যানিশ ভাষী কোনো দেশে কোথাও ছিমছাম সাজে সাজিয়েছে জলসত্র।
(১২) আসলে কী জানো, আমরা সুন্দর স্বপ্ন দেখতে পারা মানুষেরা এক হলে এমনটি হয়।
তোমরা অনেকেই বলতে পারো যে, নবাব সিরাজ হোক, বা অন্য যেই হোক, তাঁদের ইতিহাসকে রক্ষার জন্য আমাদের এত আন্দোলন বা পরিশ্রম কেন?
ঠিক বটে। বুদ্ধিমানের প্রশ্ন। কিন্তু, বন্ধু, এর উত্তর হল এটাই যে, আমরা ইতিহাস অনুভব না করলে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অনুভব করতে পারবো না। কারণ, চেতনা চলতে চায় অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। ইতিহাস দেয় অভিজ্ঞতা। আবার, ইতিহাস নিয়ে বোধ আমাদের করে সুদূরপ্রসারী চিন্তার ক্ষমতায় সমর্থ ও অফুরন্ত সুখে সুখি। ইতিহাসে বোধ থেকেই আসে মেধা ও চিন্তার প্রসারণ। আর, এই অভ্যেস আমাদের করে বিশ্বজনীন। এই বিশ্বজনীনতাই মানব সভ্যতার উচ্চতা। বুদ্ধাংক কাকে বলে জানো? এর মানে বুদ্ধির পরিমান কত। এটাই নিয়ন্ত্রণ করে একটি জীবের অস্তিত্বের মাপকাঠি ও মানসিক ক্ষমতা। ইতিহাসে চিন্তা ও জ্ঞানের প্রবেশ করালে বুদ্ধাংক বাড়ে। এটাই প্রাণীর সব চেয়ে সেরা পাওয়া। এর চেয়ে বড় সম্পদ আর নেই।
(১৩) এবার পরের প্রশ্ন আসবে, এত ইতিহাস থাকতে নবাব সিরাজের ইতিহাস রক্ষা করার জন্য এই আন্দোলন কেন? এত আয়োজন কেন?
এইসব প্রশ্ন তো আসবেই। উত্তর না পেলে তুমিও বা এই আন্দোলনের রূপকে গ্রহণ করবে কেন?
এর উত্তর হল এই যে, আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করি কেন? স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করি কেন? নিজেদের বা অন্যের জন্মদিন পালন করি কেন? এর কারণ হল, অনুভব। সংগ্রামের অতীতকে শ্রদ্ধা করা। ভালো কিছুর অস্তিত্বকে শ্রদ্ধা করা। সময়ের সুদূরতাকে স্পর্শ করা।
তেমনি, নবাব সিরাজকে নিয়ে আমাদের অনুভুতি হয়। এই অনুভুতি অন্য অনেক ইতিহাসকে নিয়ে হতে পারে। কিন্তু, প্রথম দরকারি ইতিহাস নবাব সিরাজ এই কারণে যে, ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের সাথে তাঁর প্রথম যোগ। পরিকল্পনা মাপিক হোক বা কাকতালীয়ভাবেই হোক, নবাব সিরাজকে অন্যায়ভাবে পরাস্ত করেই ইংরেজ দ্বারা ভারতের পরাধীনতার শুরু। এবং পাশাপাশি তাঁর অনেক চিন্তা ও গুণ সামাজিক প্রেক্ষাপটে সব সময়ের জন্যই ধন্যবাদের যোগ্য। এবং তিনি এমন অবস্থানে আছেন, তাঁর পিছন থেকে আদি ভারতবর্ষ, তাঁর সামনে থেকে আধুনিক ভারতবর্ষ।
(১৪) কেউ বলবেন, নবাব সিরাজের ইতিহাস ও এটা রক্ষার জন্য আন্দোলন সহ সহযোগী অন্য দিকগুলি নিয়ে আমরা এত চর্চা করবো কেন?
এর উত্তর হোল, যে-ভালো খাবার আগে খাওয়া হয়নি সেটা খাবো। যে-ভালো পোষাক আগে পরা হয়নি সেটা পরবো, যে-ভালো জায়গায় আগে যাওয়া হয় নি সেই জায়গায় বেড়াতে যাবো। তেমনি যে-ইতিহাস চর্চার সুখ আগে পাইনি সেটা পেতে চাই। তাই এই আন্দোলন নিয়ে আমাদের এত আগ্রহ ও দায়িত্ব। কি, উত্তর ঠিক দিলাম তো?
(১৫) খেয়াল করেছ কি, নবাব সিরাজের ইতিহাসকে নিয়ে উপযুক্তভাবে কোনো যত্ন নেওয়া হয় নি। সরকারিভাবে এই অন্যমনস্কতা খুব দুঃখের। তবে এটা ঠিক, প্রত্নতত্ব বিভাগের মমত্ব না থাকলে এই আন্দোলন এতটা এগুতো না। তাঁদেরও চলতে হচ্ছে সরকারি পদ্ধতির পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। কিন্তু, তাঁদের ভিতরের মনটা কত দায়িত্বশীল এই ইতিহাসের বিপ্লবের প্রতি, তাই তো তাঁদের এক অফিসার এসে বলেছিলেন যে, তিনি অবসরের পরে “নবাব সিরাজুদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ” স্কুলে পড়াতে চান।
প্রত্নতত্ব বিভাগের অফিসার ও কর্মীগন কত গভীর পড়াশুনা করে তবে এইসব জায়গায় চাকরি করেন। তাঁদের মন থেকে এই অনুভুতি ও আবেদন আসছে, এর মানে এই আন্দোলন ও শিক্ষা ব্যাবস্থা এবং সহযোগী পরিকল্পনাগুলি কতটা সঠিক, তাই এত গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা।
এইসব প্রমাণ কি আমাদের বুঝিয়ে দেয় না যে, এই ইতিহাসকে কেন্দ্র করে সব রকম আন্দোলন ও পরিকল্পনাগুলি কত স্বচ্ছ ও উন্নত স্বপ্নে উজ্জ্বল!
যাইহোক, নবাব সিরাজের ইতিহাস নিয়ে অনেক কিছু হচ্ছে, হবে। তোমাদের ভালোবাসা ও সহায়তা থাকলে আরো কত কিছু হবে পরপর। আরো কত কিছু হয়েছে, সেগুলি স্যার, ম্যাডামদের থেকে জেনে নিও।
অনেক কিছু জানা হোল।
আচ্ছা, এসো এবার পড়া শুরু করি। হীরাঝিল বর্ণপরিচয় এমনভাবে লেখা, নানা রকম জ্ঞান ও অনুভুতি মিশে আছে এখানে। যাতে মনের ভিতরে জাগে মুক্ত চিন্তার হাওয়া। চেষ্টা করেছি। তোমাদের ভালোলাগলে আমার চেষ্টা সার্থক।
————————————
হীরাঝিল বর্ণপরিচয় ১ম ভাগ ( স্বর বর্ণ )
—————————
স্বরবর্ণ ১২টি। যদিও ১১ টি ব্যাবহারে লাগে। কিন্তু, সব কিছু কি ব্যাবহারের কাজের জন্য কাজে লাগাবো? না, কখনোই নয়। আমরা অনুভুতি দিয়ে আরো গভীরে বুঝবো, আগে কতগুলি স্বরবর্ণ ছিল। আবার ১২ টি স্বরবর্ণ উচ্চারণ করলে এর দোলা খুব ভালো লাগে। ১১টি স্বরবর্ণের উচ্চারন করলে এর দোলা কেটে যায়। পড়ার স্বাদ সুখ বলে একটা ব্যাপার আছে তো। সেটাই তো পড়ার আনন্দ। তাই ” ঌ” বর্ণ এখানে আমি রেখেছি।
অ আ ই ঈ উ ঊ ঋ ঌ এ ঐ ও ঔ
অ :
অ-তে অতিশয় ভালো আচরণ,
জয় করে নিতে হবে মানুষের মন।
আ :
আ-তে আশা আছে, কাজ করো ভাবিয়া,
মনটাও রহে যেন চুপচাপ জাগিয়া।
ই : ( হ্রস্ব – ই )
ই- দিয়ে হয় চিঠি শেষে শুধু ইতি,
সব কথা, সব কাজে রাখিও গো নীতি।
ঈ : ( দীর্ঘ – ই )
ঈ দিয়ে নাম বাঙালীর ঈশ্বর,
তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
উ : ( হ্রস্ব উ )
উ-দিয়ে হয়, আকাশেতে উড়িছে,
পাখিগুলি নিজমনে একা-একা ঘুরিছে।
ঊ : ( দীর্ঘ উ )
ঊ – দিয়ে কেউ বলতে পারো ঊন,
এর মানে “কমজোরি”, হয়োনা কখনো।
ঋ : ( রী)
ঋ-দিয়ে বলি শোনো, করতে নেই ঋণ,
ঋণ করলে আসে মানুষের দুর্দিন।
ঌ: ( লি )
ঌ-দিয়া কিবা হয়, জানা আছে কাহারই,
পা-টা পিছনে তুলে উপরেতে বাহারি।
এ :
এ-তে একুশে ফেব্রুয়ারী,
বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস, ভুলতে কি পারি।
ঐ : ( ওই)
ঐ- দিয়ে লেখা যায় কথাটা ঐহিক,
নবাব সিরাজ লয়ে আলোচনা দৈনিক।
ও :
ও-এ ওৎ, ইস্কুলে জানালায় ছেলেমেয়ে,
পথিক হাঁটিয়া যায়, ওৎ পেতে দেখে চেয়ে।
ঔ : (ওউ )
ঔ- দিয়ে ঔষধ, সকলেই জানবে,
দেহ, মন বুঝেশুঝে সব কিছু মানবে।
*———————————*
হীরাঝিল বর্ণপরিচয় – ১ম ভাগ ( ব্যাঞ্জন বর্ণ)
—————
ব্যাঞ্জন বর্ণ : ৩৯ টি
ক খ গ ঘ ঙ
চ ছ জ ঝ ঞ
ট ঠ ড ঢ ণ
ত থ দ ধ ন
প ফ ব ভ ম
য র ল
শ ষ স হ
ড় ঢ় য়
ৎ ং ঃ ঁ
———————–
ক:
ক-থেকে কল হয়, কলে নাও জল,
জল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে খাও ফল।
খ :
খ-থেকে খড় হয়, কেন খোসবাগ,
ঘুমিয়ে আছেন যেথা নবাব সিরাজ।
গ :
গ-তে গরু হয়, গরু করে চাষ,
কোনোও প্রাণীকে কোরোনা গো উপহাস।
ঘ :
ঘ-থেকে ঘড়ি হয়, সময় হিসাব,
সময় বুঝিয়া করো সব কিছু কাজ।
ঙ : (উঁঅ)
ঙ-তো বসে মাঝে, কখনো বা পরে,
বাঙলা, রঙ, ঢঙ, এইরূপ গড়ে।
———————
চ :
চ-দিয়ে চলা হয়, পথে চলবে,
চলার সময় কথা নাহি বলবে।
ছ :
ছ-দিয়ে ছক হয়, মানে ভাবনা,
কী ভাবে কোন্ কাজ হয় দেখোনা।
জ : (বরগিয় – জ)
জ-তে জল ভালো করে খাবে,
দেহে আসে নানা রোগ জলের অভাবে।
ঝ :
ঝ-তে ঝড় হয়, গতির বাতাস,
কালো মেঘে ঢাকা হয়, বোশেখ আকাশ।
ঞ: (ইঁয়ঁ)
ঞ- তো একা হয়, চাই তার সঙ্গী,
মিঞা বা জ্ঞান দেখো, আলাদা ভঙ্গী।
———————
ট :
ট-দিয়ে কিবা হয়, কাঁচা আম টক,
নুন দিয়ে খেতে হয়, জিভ চকপক।
ঠ :
ঠ-দিয়ে ঠগ হয়, যারাই ঠকায়,
নানান কথার চালে তোমায় পটায়।
ড :
ড-দিয়ে ডিবা হয়, ভালো কিছু রাখো,
কোনো কিছু ঢুকিয়ে চাপা চেপে চাপো।
ঢ :
ঢ-দিয়ে ঢং, যাকে কায়দা বলে,
ঢং করে কি ভাই পড়াশুনা চলে।
ণ : (মুর্ধন্য)
ণ- দিয়ে বানান দেখো,
দন্ত ন, মুর্ধ্য ণ, বুজিয়া লেখো।
——————
ত:
ত-দিয়ে তারা হয়, রাতে কত তারা,
মহাজগতে যে কত সৃষ্টির ধারা।
থ :
থ-দিয়ে বলছি রাত থমথমে,
হীরাঝিলে যাই চলো, খুব ভালো জমে।
দ :
দ-দিয়ে দম হয়, কাজে চাই দম,
সেই সাথে চাই ভাই তরতাজা মন।
ধ :
ধ-দিয়ে ধরা হয়, সেইটাই ধরো,
যেটাকে দেখে, বুঝে, ভালো মনে করো।
ন : (দন্ত ন)
ন-নিয়ে হয় নখ, খুব বাজে,
বেড়ে গেলে কেটে দাও, ধুলা জমে খাঁজে।
——————
প :
প-দিয়ে সেরা কথা প্রত্নতত্ব,
যেটা হতে দেখা হয় ইতিহাস সত্য।
ফ :
ফ -দিয়ে ফল হয়, খুব উপকারি,
ফল মানে ফলাফল, তাও দরকারি।
ব :
ব-দিয়ে বঙ্গ, বাংলার নাম,
ব-তে বাগানপাড়া, হীরাঝিল যান।
ভ:
ভ-দিয়ে ভাগীরথি, মুর্শিদাবাদ,
এরই পশ্চিমে হীরাঝিল, খোসবাগ।
ম:
ম-তে মন হয়, কোথা থাকে এটা,
সব কিছু করে, তবু যায় না তো দেখা।
য : (অন্তস্থ য)
য-দিয়ে লেখা হয় যশ,
যশ তার হয়, যার থাকে না তো দোষ।
র :
র-দিয়ে রস হয়, কথাতেই রস —
যার থাকে তার কাছে সকলেই বস।
ল :
ল-দিয়ে লুৎফা, লুৎফুন্নিসা,
নবাব সিরাজের স্ত্রী, তিনি, জানো না!
শ : (তালব্য শ)
শ- দিয়ে হয় শশী, মানে চাঁদ,
রাতের আকাশে দেখো, কী সুখ অগাধ।
ষ : (মুর্ধন্য ষ)
ষ-দিয়ে লেখো যদি ষাঁড়,
ওর পথে যেতে দাও, ওর অধিকার।
স :(দন্ত স)
স- য় সাংবাদিক, যাঁদের দ্বারা —
পৃথিবীতে টিকে আছে সভ্যতা ধারা।
হ :
হ-দিয়ে যদি বলা হয় হীরাঝিল,
নবাব প্রাসাদ ছিল, জানো কি নিখিল!
ড় :(ড-য় শূন্য অড় )
ড় – বসে ধ্বনির ডানে,
বড়ো, গড়ো, চড়ো, নড়ো, দেখো এখানে।
ঢ় :(ঢ-য় শূন্য অঢ় )
ঢ় – বসে শব্দের শেষে,
গুঢ়, মুঢ়, দেখে বোঝো এক নিমেষে।
য় : (অন্তস্থ-য়)
য়- বসে মধ্যে বা শেষে,
প্রয়োগ, অতিশয়, এ রূপ যায় এসে।
ৎ : (খন্ড – ত)
ৎ-বসে মাঝে আর পরে,
চমৎকার জ্যোৎস্না জগৎ সংসারে।
ং : ( অনুশ্বর )
ং -বসে শব্দের মাঝে, শেষে,
সংগ্রাম, জং, দেখে বোঝো নিমেশে।
ঃ : ( বিষর্গ )
ঃ – বসে মাঝে কিংবা পরে,
নিঃস্ব, প্রায়শঃ, কিভাবে পড়ে।
ঁ : ( চন্দ্রবিন্দু )
ঁ- তো বসে অক্ষরে মাথায়,
নাকি সুরে কথা কয়ে নাকেরে জাঁকায়।
*———*
অনেক লেখার সাথে এই লেখাটিও হারিয়ে গিয়েছিল, ২০২৩ সালে জুনের শেষের দিকে শিয়ালদায় মোবাইল হারিয়ে যাবার পরে। কিন্তু, ঘটনাক্রমে এটি সংরক্ষিত ছিল অন্য এক বিশ্বাসী কবির কাছে, যাঁকে ঋদেনদিক কয়েকটি অক্ষর বসাতে পোষ্ট করেছিলেন। সেই অক্ষরগুলি ঋদেনদিক নিজে আনতে পারছিলেন না কোনো কারণে। সেইজন্য এটি সেখানে থেকে গিয়েছিল। সেটি ফেরত পেয়ে আরো ভালো করে সাজিয়ে প্রকাশ করা হল। আবার, নবাব সিরাজ কেন্দ্রিক ইতিহাস ও এর আন্দোলনের উপর লেখা ঋদেনদিকের দশ হাজার লাইনের মহাকাব্যের পান্ডুলিপি মোবাইল মারফৎ ইমেইলে কয়েকটা ফাইলে লিখে আগেই ইমেইলে প্রকাশকের কম্পুটার দপ্তরে পাঠানো হয়েছিল। তাই রেহাই হয়েছে। অনেক লেখা ও নানা তথ্য ছিল হোয়াটসাপে ও ইমেইলে ও অন্যান্য জায়গায় মোবাইলের মধ্যে। সেগুলির অনেকটাই বিকল্পভাবে রক্ষা করা ছিল বলে সেগুলির অস্তিত্ব পাওয়া গেছে ও পাওয়া যাবে। তাই যদি কেউ চুরি করে হারিয়ে যাওয়া মোবাইল থেকে, তবে কোনো এক সময় সে বা তারা ধরা পড়বে প্রমাণ সহ। প্রায় কয়েক হাজার লেখা। তবে বেশ কিছু লেখা শুধু হোয়াটসাপে ছিল, কিছু ইমেইলে Drafts হিসেবে ছিল। ছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের প্রয়োজনীয় ভিডিও। সেগুলি সংখ্যায় কম হলেও খুব গুরুত্বপূর্ণ। যাইহোক, “হীরাঝিল বর্ণপরিচয়” লেখাটি উদ্ধার হয়েছে।
সুখবর, শিয়ালদায় কবির হারানো মোবাইল উদ্ধার হয়েছে শিয়ালদা দক্ষিন রেলে GRP অফিস থেকে। হারানোর প্রায় চার মাস পরে। কেউ বা দেড় বছর পরেও তাঁর মোবাইল পেয়েছিলেন। সেই গল্প বিরাট ও মজাদার। যাইহোক, কবি এটা ফিরে পাবার পরে অনেক কিছু নিরাপদ হয়েছে, সেগুলি এখানে বলার দরকার নেই। তবে এটাই সুখবর।
— সম্পাদক
আমাদের অনলাইন কাব্যপট ই-পত্রিকার জন্য আপনার লেখা নির্ধারিত বিভাগ অনুসারে Word file এ পাঠাবেন নিচের ঠিকানায়
Email: kabyapot@gmail.com
WhatsApp: +918240042145