অনির্বাণ,
আমাকে ভুল বুঝিস না তুই।
কোটি টাকার ফ্ল্যাট, লক্ষ টাকার গাড়ী, আর বিদেশে সন্তান থাকার গল্প,
আর মস্ত বড়ো অফিসের চাকরির গল্পে,
আমাকে আর সন্তুষ্ট করতে চেষ্টা করিস না, অনির্বাণ।
আমি এক অন্য মানুষ।
মাটি কামড়ে, বসে থাকি
গাছের মতো।
আমার সন্তান ছুটছে, অবিরাম ছুটছে, যেমন করে আর পাঁচটা জীব, খাওয়া পরা, বেঁচে থাকার জন্য ছুটে বেড়ায়।
অনর্থক এ সব গল্প আমাকে মুগ্ধ করে না।
আমি সবুজের মাঝে, মাটির সোঁদা-সোঁদা গন্ধ, আর পাট পঁচা গন্ধে, বেড়ে ওঠা, এক সাধারণ মেয়ে।
অনেক কাজ করি, সারাদিন ভোর।
দুপুর জুড়ে গরম ভাত খেয়ে
আলসে শুয়ে বসে আমার গল্প করা হয়না বন্ধু।
রাগ করিস না।
বয়স অনেক হোলো রে অনির্বাণ, এখনও আমরা
শাড়ি, গয়না, ঐশ্বর্যের গল্পে মশগুল।
অথচ সবাই জানি, এসব যে কোনো মুহূর্তে ছেড়ে যেতে হবে।
আয় অনির্বাণ, আয় আমার দিকে হাত টা বাড়িয়ে দে।
এখনো কতো ছেলে মেয়ে
সাদা-সাদা ভাতের গন্ধে, মায়ের মাথার গোড়ায় দাপাদাপি করে।
কতো মানুষ একটা কাঠের ভ্যানে আমার’ই মতো পা ঝুলিয়ে যায়।
মুড়ি আর কাচা লঙ্কা , তাদের ব্রেকফাস্ট ।
অনির্বাণ, আমি হারিয়ে যাই
অনেক সময় ওদের মাঝে।
আমার এই শূন্য হাতের আঙুল দিয়ে ধরি তাদের হাত।
জানি অনির্বাণ জানি ওদের গায়ে মাছ ধরার আঁশটে গন্ধ।
জমি নিড়িয়ে, আগাছা তুলে, পায়ের নখে, হাতের নখে কাদা ঢুকে আছে,
তবু অনির্বাণ,
ওই মেয়েদের ছবি, আমি মন থেকে মুছতে পারি না।
আয় না অনির্বাণ, একবার আয়, তোর ঐ বিশালাকার লাল টুকটুকে গাড়ী নিয়ে।
হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, যে মেয়েরা, সন্ধ্যা সাতটায় ঘুমিয়ে পড়ে।
যে মেয়েটি ময়লা, ধুলো হাত মুখের মধ্যে পুরে দেয়।
রাস্তা দিয়ে, গুড়-বাদামের পাটালি খেতে খেতে যায়।
তাদের নিয়ে চল , ঘুরে আসি।
ওদের তুই তোর শিক্ষা দিয়ে বল, ময়লা হাত মুখে ভরে না।
আয়না, অনির্বাণ, ওদের একটু গরম খিচুড়ি খাওয়া। বেঁধে দেওয়া ওদের ময়লা হাতে রাখি।
ভয়াবহ করোনাকে অগ্রাহ্য করে যারা ঘুরে বেড়ায়, শহরের দোকান থেকে তুই নিয়ে আয়, মাস্ক।
ওদের বুঝিয়ে দে,
তুই মস্ত মানুষ। কি সুন্দর তোর গাড়ী। ওরা গাড়ীতে হাত দিয়ে দিয়ে দেখুক। কতো ধূলো জমেছে সেখানে।
দেখবি, অনির্বাণ দেখবি,
সে এক সুখ।
তোর লক্ষ টাকার গাড়ী, কোটি টাকার ফ্ল্যাটে সে সুখ পাবিনা রে।
আমার মাটি-কাদার রাস্তায়, ডুবে যাওয়া নালা পেরিয়ে আয়,
আমি তুই, ওরা সব এক হয়ে যায়।
আর সময় নাই।
পৃথিবী ভয়ানক অসুখে ভুগছে।
এখন আর ডুয়ো গল্পে সময় কাটাস না। আমি যা পারছি না, তুই তায় কর। তোর ঐ শক্তিশালী হাতটা দিয়ে আমার হাতটা ধর।
এখন আর ফোনে ফুটুস ফাটুস না করে,
আমার সত্যিকারের, হৃদয়ের বন্ধু হয়ে যা।
আমার মতো, তুইও হয়ে যা অনির্বাণ,
এক অন্য মানুষ।
এক রাশ আনন্দ দিয়ে যা আমার কাছে।
চিরটাকালই আমার প্রহর জুড়ে গল্প করা আমার হয়না।
অনির্বাণ ক্ষমা করিস বন্ধু,
আমি এক অন্য মানুষ।
খাপছাড়া। পাগল।