Spread the love

ভারতীয় সংস্কৃতি

  • অগ্নিমিত্র বিকাশ চাকরি করে তবে কাজে যায় না তেমন। পনেরো দিনে তিন বা চার দিন যায়। এটাই তার কর্মসংস্কৃতি ।
    অফিসের নতুন ম্যানেজার তবে কড়া আছেন। দক্ষিণ ভারতের লোক, নাম নটরাজন । রোজ উপস্থিতি খাতায় লাল দাগ দিতে থাকেন বিকাশের নামের বিপরীতে।
    কাউকে নটরাজন বিকাশ সম্বন্ধে জানতে চাইলেই তারা বলে -‘ কী জানি স্যর! বিকাশ তো এমনিতেই বেপাত্তা ।’
    সেদিন বিকাশ অফিসে আসতেই নটরাজন তাকে ঘরে ডেকে পাঠালেন ।
    বললেন-‘ সিট ডাউন বিকাশবাবু ।’
    বিকাশ দেখলো, নটরাজনের কপালে ইয়া বড় টীকা । পরনে বেষ্টি ও সাদা লুঙ্গি ।
    ‘ বিকাশবাবু, আপনার কি কোনো সমস্যা হচ্ছে?? এতো অ্যাবসেন্ট? এ ভালো কোথা আছে কি ?’
    বিকাশ আর কী বলে?! দাঁড়িয়ে থাকে।
    ‘আপনাদের বেঙ্গল সম্পর্কে আই হ্যাভ টু মাচ রেসপেক্ট! টেগোর, বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগর যেখানকার লোক তারা কাজে এত ইরেগুলার হবে কেন?’
    এই সব কথার যেন মন্ত্রের মতো প্রভাব পড়লো বিকাশের উপর। এবার থেকে সে রোজ অফিসে আসে। নটরাজনও বন্ধুর মতো হয়ে গিয়েছে ।
    ওঁদের বাড়িতে গেল বিকাশ সেদিন, নিজের গিন্নিকে নিয়ে । ওনামে নেমন্তন্ন ছিল বিকাশের। দেখলো, মিসেস নটরাজন কী সুন্দর চুলে ফুল লাগিয়েছেন । আর বিকাশের স্ত্রী ইলার সাথে পাঁচ মিনিটেই সখ্যতা হয়ে গেল মিসেস নটরাজনের। উৎসবটাও খুব ঘরোয়া । দারুণ কায়দায় আলপনা আঁকা মেঝেতে।
    এর পর দুর্গা পূজাতেও ইলা মিসেস নটরাজনের সাথেই ঘুরে তাঁকে কলকাতার সব বড় ঠাকুর দেখালো । মিসেস নটরাজন, মানে বৈজয়ন্তী দেবী তো দারুণ খুশি। কাঠের পেঁচা কিনলেন দুটো।
    বিকাশও এখন অনেক তামিল শব্দ শিখে গিয়েছে। বলে -‘ বারাক্কাম স্যার( স্বাগতম স্যার) ‘, ‘ সাপড়িয়া স্যার'( খাওয়া হয়েছে স্যার?), ‘ সেরি সেরি'( ঠিক আছে) ইত্যাদি । নটরাজনও অনেক বাংলা শব্দ শিখে নিয়েছেন।
    শুভ বিজয়ার মিষ্টি মুখ করতে আবার নটরাজন সস্ত্রীক গেলেন বিকাশদের বাড়ি। ছোট বাড়িতে শোরগোল পড়ে গেল । ইলা রাতে ওঁদের খিচুড়ি পায়েস খাইয়ে তবে ছাড়লো।
    যাবার সময় বৈজয়ন্তী বললেন-‘ ইউ নো ইলা, আমাদের দেশে এত রকম ভাষা, এত রকম খাবারের বৈচিত্র, এত রকম সংস্কৃতি, তাও কোথাও যেন এক সুরে বাঁধা আছি আমরা। তাই না ??’
    ইলা বলে-‘ ঠিক তাই দিদি। সাবধানে যেও। গিয়ে খবর দিও। দুগ্গা দুগ্গা!’ ( সমাপ্ত)

🌿🍀🌿🍀🌿🍀

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *