শিশির বিন্দু ।।জয়শ্রী বসু।।
8th Feb 2024
প্রিয় ,
প্রিয় মুহূর্তে প্রশ্ন করেছিলে,”মন কি চাও? ”
“কি চাই? ”
প্রকৃতির অকৃপণ রূপের রহস্য চাবিকাঠি আমার মনে। আমি জানি কখন সুগন্ধ বট ফলের লোভী ঝাঁক ঝাঁক টিয়া পাখি উড়ে আসে। বৃক্ষে তাদের আনন্দ আস্বাদন।
চাঁদের মায়াময় আলোয় প্রস্ফুটিত কামিনীর মোহ মাদকতা। অনুভবে ছিল,স্রোতস্বিনীর সাগরের বুকে মিলনের উচ্ছ্বাস। আমার কোন অপ্রাপ্তি ছিল না।
আমি বিবাগীয় নয় ।তোমাকেও তো চেয়েছিলাম ভীষণভাবে। নক্ষত্র লোকে,কালপুরুষ রোহিনীর প্রেম খুঁজেছিলাম।
বলেছিলাম ‘তোমার কবিতা দিও,আর কিছু ফুল—- ”
আমার অন্তরে ঘুমন্ত নারী সত্তা,হয়তো এই নারী বহু যুগ আগে,সভ্যতার প্রথম আগুনে,রুচিকর আহার্যে প্রিয় পুরুষের তৃপ্তিতে তৃপ্ত হয়েছিল। রাতের সান্নিধ্যে তার বুকে মাথা রেখে,পরম নির্ভরতায়,আগামী সভ্যতার মনের ঘরের স্বপ্ন দেখেছিল।
মগ্নতায় আমার সত্তার , একাকীত্বের অহংকার ভুলে,তোমার কাছে ছুটে গেছি বারবার। তুমি পরিহাস করে বলতে,
“ঊনিশ শতকের বৃত্ত থেকে একটু এগিয়ে যেতে পারো তো!”
জানতাম আমার এই আমিই তোমার মনের মত।
ভিড়ে তোমার আঙুল বন্ধনে শিথিল হয়নি।
তোমার আধিপত্য মেনে নিয়েছিলাম।
বিদেশে যাওয়ার আগে বলেছিলে,
“মন তোমার গল্প সংগ্রহ শেষ করে ফেলো।
চেষ্টা করলেই হয়ে যাবে।
কেন নিজেকে,চার দেওয়ালে বন্দী রাখো?
বিশাল বিশ্বের সঙ্গে মন মিলিয়ে দেখতে পারো।”
“কোন বিশ্বের কথা জানব?
ক্ষমতা অহংকারী এক মহাদেশ অন্য দেশের সভ্যতা ঐতিহ্য জীবন ধ্বংস করে, নিষ্ঠুর বর্বরতায়।
অগণিত অসহায় শৈশব,সরকারি হোমে অজানা বাবা-মায়ের ঠিকানা খোঁজে,নিরাপত্তাহীনতায় !
বিজ্ঞানের অভিশাপে নিদারুণ বিস্ফোরণ,ছিন্ন হয় শান্ত সমাহিত প্রকৃতির বক্ষ,ভয়াবহ পরিণতির অজ্ঞতায় ।
রাতের এইসব চিন্তায় পরিশ্রান্ত ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম ভাঙলো ,অনেকদিন এর পরে জানলা গুলো খুলে দিলাম,স্নিগ্ধ বাতাস ঝাঁপিয়ে পড়ল ,ভোরের বাতাসে চন্দন সুবাস,সমাহিত শান্তি।
আমার প্রিয় কাঠের টেবিলের ধুলো পরিষ্কার করলাম ।আমার সাহিত্য বিস্তৃতি কাগজে-কলমে ডিজিটাল নয়। জানলার বাইরে ইটের গাঁথুনির বুকে এক আশ্চর্য নাম না জানা সজীব তরুণ কিশলয় ,কয়েকটি মাত্র ঘন সবুজ পাতা,কিছু ঝরা শিশির সূর্যের রশ্মিতে মুক্ত বিন্দু।নিশান্ত ঊষার ভালোবাসা ।
কি অপূর্ব! প্রকৃতির কি অনন্য উপহার! নিঃশর্ত সমর্পণ।
আমার এই শিশির বিন্দু।
আমার এই চার দেয়াল।
আমার একান্ত তুমি।
এটুকুই থাক।
ভালোবাসায়
তোমার মন।