লক্ষ্মী পূজার দিন নোয়াখালি দাঙ্গা এক কলঙ্কিত অধ্যায়
বটু কৃষ্ণ হালদার (কবর ডাঙ্গা)
।স্বাধীনতার এক বছর পূর্বে, সালটা ১৯৪৬,অক্টোবর মাসে এমনি এক কোজাগরি লক্ষ্মী পূজার পূর্ণিমা তিথিতে অবিভক্ত বাংলাদেশে বাঙালি হিন্দুরা মা লক্ষ্মীর পূজার আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল।তখনও কোন হিন্দুরা ঘুনাক্ষরে বুঝতে পারে নি যে নোয়াখালী ,কুমিল্লা, ফেনী,চাঁদপুর ও তদসংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকার হিন্দুদের জন্যে ছিল সেবার শেষ পূজার আয়োজন।কারণ সেদিন শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষ হতেই শুরু হয়েছিল এক ভয়াবহ দাঙ্গা।হিন্দুদের
নিধন যজ্ঞ।সে ইতিহাস আজ আমরা ভুলে গেছি।তলোয়ার দিয়ে একের পর এক হিন্দুনিধন যজ্ঞ চলেছিল,তেমনই বাঁচার জন্য অশ্রুধারা আঁখিতে আকুতি,মিনতি করজোড় করে রেহাই পায় নি আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা কেউই।সেদিন কোতোয়ালরা ভুলে গিয়েছিল,যাদের হত্যা করছি,ধর্ষিত হচ্ছেন তাঁরা সবাই মানব জাত। তারা ও কারো ভাই, বোন, কন্যা, পুত্র, মা, বাবা। লেখা হয়েছিল কত কবিতা,গদ্য।কবিতা লেখা হয়েছিল:_বহু ধর্ষিত নারীর শেষ ঠিকানা হয়েছিল পদ্মা,ভাগীরথীর কোলে। উদ্বাস্তু হয়েছিল হাজার হাজার বাঙালি হিন্দুরা। তার মধ্যে সবথেকে লজ্জাজনক হলো ছোট ছোট শিশুরাও সেই নৃশংস হত্যাযজ্ঞ থেকে বাদ যায়নি। কি ছিল তাদের অপরাধ।তাদের অপরাধ একটাই তারা হিন্দু। কিছু স্বার্থপর নেতা-মন্ত্রীদের লালসার শিকার হয়েছিল হিন্দুরা।
দেশের লাগাম হাতে পাওয়ার জন্য হিন্দুদের হত্যা করে তাদের রক্তের মধ্যে দিয়ে ভারত বর্ষকে ভাগ করে নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এতোটুকু বিবেক দংশন হয়নি।
১৯৪৬ সালের অক্টোবর মাসে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন অবিভক্ত বাংলাদেশের নোয়াখালী কুমিল্লা চাঁদপুরে যে নৃশংস হত্যাকান্ড চলেছিল সেই সত্যের কালো পর্দা উন্মোচন করতে গেলে আমাদের কয়েক দশক পিছনে ফিরে যেতে হবে।
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট এসেছিল শুভক্ষণ।সমগ্র দেশবাসী আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল।নতুন মুক্তি সূর্যের আলো,বাতাস,প্রাণ ভরে নিতে শুরু করেছিল।বদ্ধ ভূমি উন্মুক্ত হয়েছিল।তবে তা সম্ভব হয়েছিল এক শ্রেণীর দেশ প্রেমিক দের জন্যে।তাদের আত্ম ত্যাগের ফলাফল দেশের মানুষ পরাধীন তার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়েছিল।কিন্তু স্বাধীনতা লাভের ঠিক এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে যে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল তা কিভাবে মেনে নিয়েছিল দেশবাসী।আমরা জানি দেশ স্বাধীন করতে জাত ধর্মনির্বিশেষে সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ছিল।অথচ স্বাধীনতা লাভের পূর্বেই দেশ সেবার পুরস্কার হিসেবে মুসলমানরা পাকিস্তান পেয়েছিল।তাও আবার লক্ষ লক্ষ হিন্দুর রক্তের বিনিময়ে।আর ভারতের ভাগ্যতে সর্বধর্ম সমন্বয়ের লেবেল লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল।যার কুফল ভোগ করে চলেছে হিন্দু ও বাঙালিরা। অথচ আমরা ভুলে গেছি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের প্রথম আগুন জ্বলেছিল এই বাংলার বুকে বাঙালির হাত ধরে।সেই বাংলায় বাঙালি বর্তমানে একঘরে হয়ে পড়েছে। সর্বদিক থেকে বাঙালিরা আজ বঞ্চিত,লাঞ্ছিত ও ভিক্ষুকে পরিণত হয়েছে। এই লজ্জা কি আমাদের সামাজিক লজ্জা নয়?
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছায়। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি ব্রিটিশ রাজের থেকে ভারতীয় নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে তিন সদস্যের মন্ত্রিসভা মিশন ভারতে প্রেরণ করেছিলেন।
সর্বভারতীয় মুসলিম লীগ ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯৪০-এর দশকে ভারতের গণপরিষদের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল। মুসলিম লীগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দের লাহোর প্রস্তাব থেকেই উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহকে ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ হিসাবে গঠন করার দাবি জানাতে থাকে। ব্রিটিশ রাজের থেকে ভারতীয় নেতৃত্বের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা জন্য ভারতে ১৯৪৬-এর ক্যাবিনেট মিশন একটি ত্রিস্তরীয় পরিকাঠামো প্রস্তাব করেছিল: কেন্দ্র, প্রদেশ গোষ্ঠী ও প্রদেশ। মুসলিম লীগের দাবি পূরণ করার জন্য “প্রদেশ গোষ্ঠী ” ছিল। মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস উভয়ই নীতিগতভাবে ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। যাইহোক, মুসলিম লীগ সন্দেহ করেছিল যে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা ছিল অবিশ্বাস্য।
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১ মে ভারতের গণপরিষদের দুটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস এবং অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার পরে এই ক্যাবিনেট মিশন ভারতের নতুন আধিপত্য এবং গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে একটি প্রস্তাব দেয়।মুসলিম লীগের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলে ‘স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম’ রাষ্ট্রের দাবিতে প্রাদেশিক স্তর এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে ‘’প্রদেশসমূহ’’ নামে একটি নতুন স্তর তৈরি করা হয়েছিল। প্রস্তাবিত ত্রিস্তরীয় পরিকাঠামোয় বলা হয়- কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক বিষয় এবং যোগাযোগের বিষয়গুলি পরিচালনা করবে এবং অন্যান্য সমস্ত ক্ষমতা প্রদেশ গুলিকে প্রেরণ করা হবে।
এক সময়ের কংগ্রেস সদস্য এবং বর্তমানে মুসলিম লীগের নেতা কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলী হিসাবে ১৬ জুন ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন।তবে ১০ জুলাই কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহেরু বোম্বাইয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেন যে, যদিও কংগ্রেস গণপরিষদে অংশ নিতে রাজি হয়েছে, তবে ক্যাবিনেট মিশন পরিকল্পনাকে উপযুক্ত করতে সংশোধন করার অধিকার সংরক্ষণ করে।কেন্দ্রীয় সরকারে হিন্দু আধিপত্যের ভয়ে মুসলিম লীগের রাজনীতিবিদরা জিন্নাহকে “তার পূর্বের অনমনীয় অবস্থান” ফিরিয়ে নিতে বলেন। জিন্নাহ ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিশনের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে গণপরিষদ বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে জিন্নাহ বোম্বাইয়ের (বর্তমান মুম্বাই) নিজ বাড়িতে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি ঘোষণা করেন যে মুসলিম লীগ “সংগ্রাম শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে” এবং তারা “একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছে”।তিনি আরও বলেন যে, মুসলমানদের যদি আলাদা পাকিস্তান না দেওয়া হয় তবে তারা ‘সরাসরি পদক্ষেপ বা প্রত্যক্ষ সংগ্রামের” ডাক দেবে। সুনির্দিষ্ট হওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, জিন্নাহ জবাব দিয়েছিলেন: “কংগ্রেসে যান এবং তাদের পরিকল্পনা জিজ্ঞাসা করুন। যখন তারা আপনাকে তাদের আস্থা নেবে আমি আপনাকে আমার আত্মবিশ্বাস দেখাবো। আপনারা আমাকে কেন হাত গুটিয়ে বসে থাকতে বলেছেন? আমরাও ঝামেলা করতে চলেছি।
পরের দিন, জিন্নাহ ১৬ আগস্টকে “প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস” হিসাবে ঘোষণা করেন এবং কংগ্রেসকে হুঁশিয়ারি দেন- “আমরা যুদ্ধ চাই না। যদি আপনারা যুদ্ধ চান, তবে আমরাও যুদ্ধ করতে পিছুপা হবো না। আমাদের হয় বিভক্ত ভারত অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত ভারত থাকবে।”
এইচ ভি হডসন তাঁর দ্য গ্রেট ডিভাইড বইয়ে উল্লেখ করেছেন, “ওয়ার্কিং কমিটি ভারতবর্ষের মুসলমানদেরকে ১৬ আগস্টকে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছিল। সেদিন, লীগের প্রস্তাব ব্যাখ্যা করতে সারাদেশে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা এবং মিছিলগুলি শেষ হয়ে গেল–যা স্পষ্টতই কেন্দ্রীয় লীগের নেতাদের উদ্দেশ্য ছিল–সাধারণ এবং সীমাবদ্ধ ঝামেলা ছাড়া এক বিস্তৃত এবং করুণ ব্যতিক্রম ছাড়া…যা ঘটেছিল তা পূর্বে কোনোদিন ঘটেনি
সংগ্রাম দিবস (১৬ই আগস্ট ১৯৪৬), এছাড়াও ১৯৪৬-এর কলকাতা হত্যাকাণ্ড হিসাবে পরিচিত, দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার একটি দিন ছিল।এটি ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের কলকাতা শহরে মুসলমান ও হিন্দুদের বৃহত্তর সহিংসতার দিকে পরিচালিত করেছিল।এই দিনটিই দীর্ঘ ছুরিকার সপ্তাহ নামে পরিচিত কুখ্যাত সপ্তাহকালের প্রথম দিন ছিল।যদিও তাদের স্বল্পমেয়াদী পরিণতি, বিতর্কিত ঘটনাসমূহের সঠিক ক্রম, বিভিন্ন কর্মকর্তাদের দায়বদ্ধতা ও দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক পরিণতি সহ হত্যার মাত্রা সম্পর্কে একটি ঐক্যমত্যের নিশ্চিত তুল্যমান রয়েছে (যদিও কোনও হত্যা বা মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না)
বিতর্কটি হত্যাকাণ্ডে পৃথক নেতাদের ভূমিকা ছাড়াও এখনও দুই প্রধান সম্প্রদায় হিসাবে হিন্দু ও মুসলমানদের সম্পর্কিত দায়িত্ব সম্পর্কে উত্থিত হয়। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৃষ্টিভঙ্গি উভয় সম্প্রদায়কে সমানভাবে দোষারোপ করেছিল এবং অপরাধী উপাদান বিশিষ্ট নেতাদের গণনা ও অনুগামীদের বর্বরতা এককভাবে প্রকাশ করেছিল।ঘটনাসমূহের কংগ্রেসের সংস্করণে,দোষটি সরাসরি মুসলিম লীগ এবং বিশেষত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোহ্রাওয়ার্দীর দিকে ঝুঁকছে। পূর্ব পাকিস্তানের উত্তরসূরি রাষ্ট্র বাংলাদেশে আংশিকভাবে বহাল রাখা মুসলিম লীগ পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গি হল বাস্তবে কংগ্রেস ও হিন্দুরা কলকাতায় মুসলমানদের একটি শিক্ষা প্রদানের জন্য সরাসরি সংগ্রাম দিবসের প্রস্তাবিত সুযোগটি ব্যবহার করেছিল এবং তাদের প্রচুর সংখ্যায় হত্যা করেছিল।এইভাবে, দাঙ্গাসমূহ কলকাতা সহ হিন্দু-অধ্যুষিত পশ্চিম বাংলা ও মুসলিম-অধ্যুষিত পূর্ব বাংলার (অধুনা বাংলাদেশ) মধ্যে বাংলার বিভাজনের একটি পথ উন্মুক্ত করেছিল।
ফলস্বরূপ, মুসলিম লীগ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে পরিকল্পনা থেকে তার চুক্তি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল এবং ১৬ই আগস্ট একটি সাধারণ ধর্মঘট (হরতাল) ঘোষণা দিয়েছিল, ঔপনিবেশিক ভারতে উত্তর-পশ্চিম ও পূর্ব প্রদেশের বাইরে নির্দিষ্ট ভারতীয় মুসলমানদের জন্য পৃথক ভূমি দাবিকে দৃঢ়রূপে ঘোষণা করার জন্য প্রত্যক্ষ সংগ্রাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়ে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, যে তিনি “বিভক্ত ভারত অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত ভারত” দেখতে চান।
সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পটভূমিতে, বিক্ষোভটি কলকাতায় ব্যাপক দাঙ্গার সূত্রপাত করেছিলমাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে কলকাতায় ৪,০০০ জনের বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল ও ১,০০,০০০ জন বাসিন্দা গৃহহীন হয়েছিল।এই সহিংসতা নোয়াখালী, বিহার, যুক্তপ্রদেশ (অধুনা উত্তরপ্রদেশ), পাঞ্জাব ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে আরও ধর্মীয় দাঙ্গার সূত্রপাত করেছিল। এই ঘটনাসমূহ শেষ পর্যন্ত ভারত বিভাজনের বীজ বপন করেছিল।
শোনা যায় কলকাতার মহা নিধন দাঙ্গায় মুজিব নিজ হাতে ছোরা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন মুজিব ব্যক্তিগতভাবে সুরাবর্দির মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। কাজেই গুরু যে দাঙ্গা আরম্ভ করেছিলেন তাতে শিষ্য যোগ দিবে তাতে আর আশ্চর্য কি? তবে দাঙ্গায় হিন্দু খুন করার শিক্ষা মুজিব তাঁর গ্রাম থেকেই পেয়েছিলেন। কারন আমাদের অঞ্চলে হিন্দু মুসলমানে সংঘর্ষ বাঁধলে ছেরামকান্দি, ডেমাডাঙ্গা ও টুঙ্গিপাড়ার মুসলমানরাই মুসলমানদের নেতৃত্ব দিত।
এভাবে ইসলামের সেনাপতি রূপেই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে নামলেন এবং ১৯৪৬ সালের ১৬ আগষ্টের নৃশংস কলকাতা দাঙ্গার নেতৃত্ব দিলেনপাকিস্তান সংগ্রামের তিনিই হলেন পূর্বাঞ্চলের প্রধান সৈনিকসুরাবর্দির প্রধান সেনাপতি ও ডান হাত শেখ মুজিবসেই সঙ্গে মুসলিম ছাত্রলিগের অন্যতম নেতাযখন স্বাধীনতা আন্দোলনে হাজার,হাজার হিন্দু যুবক হাসিমুখে প্রাণ দিচ্ছিল, হাজার হাজার হিন্দু দেশপ্রেমিক কারা অন্তরালে কাঁদছিল এবং হাজার হাজার আহত পঙ্গু যুবক মৃত্যুর দিন গুনছিল, তখন যুবক শেখ মুজিব স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ না দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে জেহাদের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেনএভাবে জেহাদের ডাক দিয়ে হিন্দুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। ২০০৫ সালের কলকাতা বইমেলায় ‘বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। উপরের দুটি স্তবক সেই বই থেকে নেওয়া।হোক কালীদাস বৈদ্য র বই নিয়ে আলোচনার জন্য এ লেখা নয়, বেশ কিছু বছর ধরে পশ্চিম বঙ্গ থেকে এই ন্যারেটিভ দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে– ‘১৯৪৬ এর কলকাতা দাঙ্গায় শেখ মুজিব জোরালোভাবে জড়িত ছিলেন হিন্দু নিধনে’গোটা ভারতের মতো পশ্চিম বঙ্গে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জাঁকিয়ে বসার সময়ে এ ন্যারেটিভ আরো জোরালো হচ্ছে, বাংলাদেশে কিছু তথাকথিত বামপন্থী আবার এটি সজ্ঞানে প্রচার করেন রসালোভাবে।
১৬ ই আগষ্ট। ১৯৪৬ সালের এই দিনেই জেহাদী নরখাদকরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কলকাতার বুকে হিন্দুর বিরুদ্ধে ” প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ” ডাক দিয়ে। জন্ম নিয়েছিল ” গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং ” হিন্দু নরমেধ যজ্ঞ।সেই জেহাদীদের বিরুদ্ধে বীর বিক্রমে লড়াই করেছিল এক গড় বাঙালি গোপাল মুখার্জী ওরফে গোপাল পাঁঠা। থামিয়ে দিয়েছিলো জেহাদীদের উন্মাদনা। গোপাল মুখার্জির নেতৃত্বে সেদিনের লড়াই কলকাতাকে সম্পূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলো।
তবে সেই ভয়ঙ্কর ১৬ই আগস্ট এর দিন কলকাতার নিশংসভাবে হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছিল ঘর থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মা-বোনেদের। শিশুদের শিরশ্ছেদ করা হচ্ছিল। সেই মুহূর্তে কলকাতা হিন্দু মৃতদেহের পাহাড়ে পরিণত হয়।যখন কোন হিন্দু ঘর থেকে বের হতে পারছিল না ভয়ে ঘরের ভিতরে ঢুকে ছিল। তখন গোপাল মুখার্জি উরফে গোপাল পাঁঠা তিনি একাই রাস্তায় বের হয়ে সেই হত্যাকারীদের শিরশ্ছেদ করা শুরু করে তার দেখাদেখি সমস্ত হিন্দু যুবক রাস্তায় নেমে আসে এবং সমস্ত হত্যাকারীদের একে একে নিধন করতে থাকে।মনে রাখতে হবে তাবড়,তাবড় বুদ্ধিজীবী রা ভয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল,যখন কেউ আসেনি রাস্তায় নেমে তখন গোপাল মুখার্জি জীবনের কথা না ভেবে রাস্তায় নেমেছিলেন।বহু নারীদের শাঁখা,সিঁদুর,সম্ভ্রম ও শিশুদের জীবন বাঁচিয়ে ছিল।তাঁর কথা আজ কেউ মনে রাখেনি।
যুগান্তর দলের বিপ্লবী ও পরে বামপন্থী নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার আত্মকথা ‘বিপ্লবের সন্ধানে’–তে লিখেছেন, “…লীগ থেকে যখন ১৬ই অগাস্ট হরতাল ঘোষণা করা হল, তখন হিন্দু মহাসভা এবং কংগ্রেস মিলে ১৪ই অগাস্ট দেশপ্রিয় পার্কে এক বিরাট সভা করে এক প্রস্তাব পাশ করা হল যে, এ হরতাল কিছুতেই সফল হতে দেওয়া যাবে না, … ১৬ই আগস্ট হরতাল উপলক্ষে যে দাঙ্গার সম্ভাবনা ষোল আনা, এটা সকলেই অনুভব করতে লাগল এবং দুই পক্ষই তার জন্য প্রস্তুত হল।”
হিন্দু সংহতি এ দিনকে মহিমাম্বিত করার জন্য গোপাল মুখার্জি নামে একজনকে নায়ক বানানোর চেষ্টা করে। এদের মাংসের পারিবারিক ব্যবসা ছিল বলে তিনি ‘গোপাল পাঁঠা’ নামে পরিচিত। বলা হয়, ‘গোপাল পাঁঠা’ হিন্দু তরুণদের সংগঠিত করে ‘দাঙ্গাবাজ’ মুসলমানদের ‘উপযুক্ত শাস্তি’ দিয়ে কলকাতার হিন্দু তথা ভারত রাষ্ট্রকে সেদিন বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। তরুণ ‘গোপাল পাঁঠা’ যেহেতু হিন্দু পক্ষের নায়ক সেহেতু মুসলমান পক্ষে সেরকম একজন ভিলেন তো লাগেই। সোহরাওয়ার্দী মাস্টার মাইন্ড হলেও বয়স্ক আনফিট; তাকে তো আর সরাসরি দেখানো যায়না। কাজেই এ ক্ষেত্রে ২৬ বছরের ছাত্রনেতা দীর্ঘদেহী শেখ মুজিব মানানসই।
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে বাঙালির অস্তিত্ব লড়াই শেষ হয়ে যায় নি। আজও বাংলার আনাচে কানাচে জেহাদীরা তাদের হিংস্র চেহারা নিয়ে বাংলার ভূমি বাংলার সম্মান অস্মিতা ধ্বংস করতে সক্রিয়। তাই লড়াই থামবে না। বাংলার ভূমি বাংলার মা বোনের সম্ভ্রম বাংলার সংস্কৃতি আজ বিপন্ন। রাজনীতির তুষ্টিকরণে হায়নার দল উন্মত্ত। সেই উন্মাদদের সংহার করতে চাই নিরন্তর সংগ্রাম। চাই সংকল্প চাই শক্তি চাই সাহস চাই আত্মবিশ্বাস।
।বর্তমান অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ আবার সেই একই জায়গায় পৌঁছেছে হয়তো এখন আমাদের রক্ষা করার জন্য সেই গোপাল মুখার্জি আর আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু এখন সময় হয়েছে সকল হিন্দু যুবকদের নিজেকে গোপাল পাঁঠা তে রূপান্তরিত করার নাহলে আজকে একজন দুজন কালকে শয়ে শয়ে হিন্দু যুবক মারা যাবে, ঘর থেকে টেনে নিয়ে যাবে মা বোনেদের।সে দিনের থেকে বেশি দূরে নেই বাংলা।
শুরুতে যে নোংরা রাজনীতির খেলা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরে ও আজও তা সমান তালে পাল্লা দিচ্ছে, আজও আমরা এক রাজ তন্ত্রের মধ্যে দিয়ে জীবন অতিবাহিত করছি তা নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই।যে নোংরা রাজনীতির মধ্যে স্বপ্নের ভারতের ইতিহাস বন্দি হয়েছিল, সেই রাস্তায় আবদ্ধ হয়ে পড়েছে স্বপ্নের ভারতের অদূর ভবিষ্যত।
বটু কৃষ্ণ হালদার,
লক্ষী পুজার দিন নোয়াখালীর দাঙ্গা এক কলংকিত অধ্যায় — বটু কৃষ্ণ হালদারের লেখা নিবন্ধটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। ইনি আমাদের কালের খুব নামী নিবন্ধকার। নিয়মিত দৈনিক যুগশঙ্খ-তে ওনার লেখা পাই, খুব জ্ঞান ও সাহস দিয়ে তিনি দেশের চেতনা ফেরাতে কলম ধরেন। আসলে দেশের রাজনীতি শেষ করছে দেশকে ১৯৪৭ সালের আগে ও পরের থেকে। এর ফলাফল প্রতিবেশে দেশগুলিতও পড়ছে। মানুষ খুব বিপন্ন, অন্য সব জীব ও প্রকৃতি ছাড়াই। আসলে ভুল সংবিধানের প্রনেতা ড. বি আর আম্বেদকর এইসব কারনের সহায়ক ছিলেন, যদিচ রাজনীতির কারণে তাঁকে মহানায়ক বানিয়ে ব্যাবহার করা হচ্ছে, আসল মহানদের পরপর আবছা করে দিতে। এসব প্রমাণ আমার কাছে আছে। এই পক্ষের সমর্থকগন সেই সব যুক্তি পড়ে বা শুনে পালিয়ে যান মাথা নত করে। এসব বিরাট কাহিনী। আর কত রকম বিপন্নতা নিয়ে কত বছর মানব সভ্যতা চলবে জানিনা।
— ঋদেনদিক মিত্রো ( ভারত)