রাতপেঁচা
মুস্তারী বেগম
আলোর পথ ধরে ধীরেধীরে হাঁটছি।
যুগের পর যুগ এই পথচলায়
গুঁড়ো গুঁড়ো জ্যোতিচুম্বন
আরো উদ্ভাসিত পথ।
মোমবাতির মতো কাত হয়ে শুয়ে থাকে রেললাইনের শরীর
কালো ধোঁয়া ওগরায় ।
একটি চাদরের মতো মেঘ রোদ বুকে করে মাঠ পার হয়।
তোমার ঝাঁকড়া চুলে শব্দরা খেলাকরে।
সদ্যবিধবার মতো থেঁতলে যাওয়া হৃদপিণ্ডের পাশ দিয়ে
বাঁশরীরা যায়।
দুখু মিঞার চুরুলিয়ায় মেঘ নামে।
একটু একটু অবহেলা জমতে জমতে পাহাড় হয়।
অভিমান বিপ্লব করে।
কে যেনো চিৎকার করে বলে
আমি স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি,,,,
তোমরা আমাকে শব্দ ফিরিয়ে দাও।
ঝড় নামে
মোমবাতি কেঁপে ওঠে।
একদল মানুষ অবিকল কাকেদের মতো
ময়ূরের ডানামেখে দুখুর সাথে ফাজলামি করে।
প্রতিভাপুরে তখন হাজার অন্ধকার।
রেললাইনের পাশে পরে থাকে শতশত পাণ্ডুলিপির মুখ
বাতাসে ভেসে আসে আমি স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি
তোমরা আমাকে শব্দ ফিরিয়ে দাও।
দুখুর কান্নায় বটগাছগুলোর পাঁজর মুচড়ে ওঠে।
অবমাননার দিনলিপি মুখ থুবড়ে পড়ে নর্দমায়।
একদল বিচারক কালোপোশাকে হেঁটে যায় বর্ণমালার মাঠে।
চাঁদ নেমে আসে।
দুখুর অবোলা শরীরে শতশত বঞ্চনার কালসিটে।
জ্যোৎস্না ধুয়ে দিয়ে যায়।
তারপর পরীদের দেশে কে বা কারা দুখুকে নিয়ে যায়।
বাতাস বাঁশি বাজায়।
সমুদ্র ফুঁসে ওঠে।
বিদ্রোহী কবিতার পঙক্তির গায়ে বারুদ খেলা করে।
ঝিঙেফুলে ছেয়ে যায় রাজপথ।
তবলায়,সানাইয়ে,শঙ্খে মেতে ওঠে বাংলা।
ছুঁয়ে দেখার বাসনায় বাংলা কেঁপে ওঠে।
দুখুর বোবা ঠোঁঠে তখন একটিই আকূতি
এবার আমি ঘুমাবো।
রোদ এসে নামলো কবির জানালায়
একঝাঁক কান্না মুখমুছলো নিরালায়।
ঝিঙেফুল ঠোঁট খুললো
কিছু বেহালাবাদক বেহালায় কান্নার সুর তুললো।
বুলবুলি ফুলশাখাতে ভিজে ডানায় মুখ মুছলো
একজন কবির বিদায়ে আকাশ,বাতাস,মাটি দুলে উঠলো।
মসজিদের কিনারে মাটি খোঁড়ার আওয়াজ উঠলো
অবিকল সৃষ্টি সুখের উল্লাসে।
পরিযায়ী কবির বুকে একমুঠো মাটি দিতে দিতে বাংলাপ্রেমীরা হাহাকার করে উঠলো।
আর আমরা?
সব শব্দের পথচারীরা
আলোর পথ ধরে ধীরে ধীরে হাঁটছি।
যুগের পর যুগ।
দুখুমিঞার গল্প শুনি ভালোদাদির কাছে।
শেষ লাইনটা বেশ মনে আছে।
আমরা আর কাঁদতে পারিনি।
লজ্জায় আমাদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।
হ্যাঁ, আজকের নজরুল ।কালকের নজরুল
অতীতের দুখু মিঞা
নিজেকে প্রমাণ করার জন্য
একদিন দাঁত দিয়ে যিনি মেঘ ছিঁড়েছিলেন।
কে যেনো চিৎকার করছে আজো
“আমি স্মৃতি হারিয়ে ফেলছি,,
তোমরা আমার শব্দকে ফিরিয়ে দাও।
কেউ সাড়া দেয়না।
একটি মৃত কবির জন্মস্থানে রাতের পেঁচাটি ডাকে
আমাদের পূর্বপুরুষের সময় থেকেই অশ্রু শুকিয়ে গেছে।