আজকাল সময় বড় খারাপ । রঘু বসে বসে ভাবছিল সেকথা।
আগে লোকে কাজ করে ক্লান্ত হয়ে ঘুমতো সন্ধ্যা থেকেই । নাক ডাকার শব্দে দরজা খোলা বা চাবি হাতানোর খুটখাট আওয়াজ শোনা যেত না।
আর এখন ?! ..চারদিক তালাবন্ধ; লোকে তেমন কোথাও যায়ই না। বাড়ি থেকেই নাকি বেশির ভাগ লোক কাজ করছে! তাই ক্লান্তি নেই, ঘুমও পাতলা!
এই তো সেদিন, পদ্মপিসির বাড়ি ঢুকেছিল রঘু। চাবিটা কোথায় রাখে পিসি রঘু তা জানে। খুট করে চাবি ও তালার শব্দ হতেই পিসি সোজা বসে পড়ে ‘ কে রে?’ বলে বিকট চেঁচিয়ে উঠলেন ।
সেযাত্রা ধরা পড়েও রঘু ছাড়া পেল, পিসির দয়ার শরীর । তবে ‘ মাক্স’ না কী পরে যায়নি বলে পিসি দশ টাকা জরিমানা করেছে । আর হাতে কী একটা গন্ধজল দিল; একটু ঘষতেই সেটা উবে গেল!
তাই রঘু আজকাল একটা কালো ‘ মাক্স’ কিনেছে । ..ওটা পরেই বেরোতে হয়। নইলে পুলিশও ধরলে ছাড়বে না!
নাঃ, আর পারা যায় না। সাতপাঁচ ভেবে রাত একটু গাঢ় হতেই বেরিয়ে পড়ল রঘু ।
কোণের ওই বাড়িতে নতুন লোক এসেছে । তেমন সড়গড় বা সাবধান নয় বলেই মনে হয়। এই তালে মোটা দাঁও মারতে হবে! ..
টুক করে পাঁচিল টপকে ঝোলা নিয়ে ঢুকে পড়ল রঘু । ..এক তলাটা মোটামুটি অন্ধকার । একটা কোণের ঘরে মনে হয় আলো জ্বলছে ।
রঘু অন্ধকারে দিব্যি দেখতে পায়। দরজাটা শুধু ভেজানো ছিল। ভিতরে ঢুকে এদিক ওদিক তাকিয়ে ফুলদানি, কিছু ছড়িয়ে রাখা খুচরো টাকা, হাতঘড়ি, এসব সে ঝোলায় পুরলো।
বেরোতে গিয়ে কোণার ঘরটা থেকে কী সব কান্নার শব্দ শুনে কান পাতলো সে। কী ব্যাপার?!
একটা মেয়ে যেন ফোনে কাউকে বলছে -‘ কী গো? কবে আসবে?..
কী ? সেই পরশু? ততদিন আমি কী করবো?!..
জানি বাইরের ঘরে অল্প কিছু টাকা আছে, ফ্রীজে খাবার আছে, তাও বর না থাকলে খেতে ভালো লাগে?…
তালাবন্ধ হয়ে গেল, আটকে গেলে, সব মানলাম। কিন্তু আর ভালো লাগে না ।
হ্যাঁ বাবা, বাইরের দরজা এখুনি বন্ধ করছি। ..আর কিছু খাব। তবে সকাল বেলাতেই চলে আসবে পরশু! ..আমার ভালো লাগছে না কিন্তু! ‘
মেয়েটা যেন এদিকেই আসছে! ..ওর গলাটা একদম রঘুর সেই মরে যাওয়া ছোট বোনটার মতো ! ..
রঘু জিনিসগুলো ঘরের মেঝেতে নামিয়ে রেখে তাড়াতাড়ি পালালো ।..
নিজের মনেই সে বলল-‘ আমি চোর, কিন্তু অমানুষ নই !’
🍀🍀🍀🍀🍀