Spread the love

মানুষ পাখি

*শাহানাজ শাম্মী সোনালী*

দাদিমা বলত,’মানুষ পাখি’-
দাদিমার দশ সন্তানের চারজন গেছে শৈশবেই
মৃত‍্যু তাই তার কাছে চিরসত‍্য
কিন্তু মানুষের ওড়াউড়ি বড্ড ভাবাত তাকে;
পুকুরের ওপারে ফজলু চাচা নতুন বৌ ঘরে রেখে
ভিনরাজ‍্যে গেল কাজে
তারপর কত কত বছর বৌটা বারান্দায় বাঁশের খুঁটিতে হেলান দিয়ে
বিড়ি বাঁধত একমনে
আঙুলের উবুদশে ফুটে উঠত যন্ত্রনা
মুখনীচু গাল চুপিসাড়ে ভিজে যেত অপেক্ষার জলে
দাদিমা এপার থেকে দেখত তার বসে থাকা
অন্ন জোগাতে যে ফজলু বিদেশ গেছে সে তো পাখি

অন‍্য গাঁয়ের ছেলে জগা পিসে
এসেছিল কীর্তন করতে আমাদের পাড়ার মন্দিরে
তারপর কোন এক পাখিনীর লাল ঠোঁটে বিঁধে
চিরকাল রয়ে গেল এ গাঁয়েই
কোন গাছের বাসা ছেড়ে নতুন বাসা সে বেঁধেছিল তেমাথার মোড়ে!
আর পাশের সেজ দাদুর যে বাড়িটা
একসময় কিচিরমিচির শব্দে ভরে থাকত
তিনমাথা সেজদাদু নিঃশব্দে বুনে চলত মাছধরা জাল
যে ঔৎসুকতা নিয়ে ছানার দল বসে বসে দেখত
কেমন করে সুতোর গিঁট আস্ত একটা জাল হয়ে ওঠে
তারা সব বড় হয়ে পাখা মেলে উড়ে গেল দূরে…দূরে…
সেই বাড়িতে সাঁঝের পিদিম জ্বালানোর লোক নেই একটিও
পোড়ো বাড়ির অন্ধকারে মাছধরা জালে
এখন বাসা বেঁধেছে মাকড়সা

মানুষ পাখিই বটে।
দাদিমা তের বছর বয়সে বাপের বাড়ি ছেড়ে এসে
অবাক হয়ে ভাবত -এ কোন গাছ!
ক্রমশঃ সয়ে গেল নতুন সবুজ রং
নতুন মুখের কারুকাজ
ক্রমশঃ ভুলে গেল তার ফেলে আসা সই
আর পুতুল খেলা ঘর
পুরুষ পাখিটি নৌকোর ছইয়ে বসে
জীবনের কবিতা শোনাতে শোনাতে একদিন
চলে গেল আকাশের ওপারে

আরো কিছুদিন সাজাবো ঘর
একদিন অথর্ব শরীর জলাশয়ে ফেলে
চলে যাব অন‍্য কোন আলোর বনে

দাদিমা বলত -‘মানুষ,পাখি’
দাদিমা সদলবলে উড়ে গেছে
ফজলু চাচা আর তার বৌও
সেই মাটির বারান্দা বাঁশের খুঁটি আর সেই অপেক্ষাও

মানুষ পাখিই বটে
উড়ে যায়
রেখে যায় শুধু ডানা ঝাপটানির শব্দ।

0 thoughts on “মানুষ পাখি – শাহানাজ শাম্মী সোনালী”
  1. কবি শাহানাজ শাম্মী সোনালীর ” মানুষ পাখি” কবিতাটি একটি আন্তর্জাতিক মানের কবিতা। স্যালূট জানাতেই হয়। বারবার পড়তে হয়, না হলে শান্তি হয় না।
    শুভাচ্ছা,
    ঋদেনদিক মিত্রো
    Ridendick Mitro

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *