অতীন খুড়ো
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
চুল পাকলে দাঁত পড়লে
তাতে কি হয় বুড়ো ?
মনটা আমার বড্ড কাঁচা
বলল অতীন খুড়ো ।
এখনো তো মাইল পাঁচেক
হাঁটতে পারি সোজা,.
বইতে পারি সুখ দুঃখের
কত রকম বোঝা ।
মেলার মাঝে নাগরদোলা
চড়তে আমি যাই,
আগের মত গণ্ডা ছয়েক
জিলাপি কিনে খাই ।
তারপর তো তেলেভাজাটা
সঙ্গে দু সের মুড়ি,
দেখনা খুঁজে আমার মত
কে আছে আর জুড়ি ।
উঠতে পারি তেমন করে
গাছের মগডালে,
কাটতে পারি ডুব সাঁতার
ভরা নদীর জলে ।
কাজলি মাঠে লাঙ্গল নিয়ে
তেমনি চাষ করি,
সবার আগেই শক্ত হাতে
মিছিলে ঝাণ্ডা ধরি ।
মটর বাইক ছুটাই আমি
নব্বই কিমি বেগে,
এবার যদি বলবি বুড়ো
উঠব আমি রেগে ।
_____
ভক্ত
ভুবন দা
সংসার করাটাই
জানি অতি শক্ত
নাই যদি হতে পারো
বউয়ের ভক্ত ।
যাই বলে বউ তাই
মন দিয়ে শোনো,
থাকবে না ঘরে আর
ঝামেলাটা কোনো ।
শ্বশুর শাশুড়ি আর
শালা শালি যত,
খবরা খবর তুমি
রেখো নিয়মিত ।
নিজ পিতা মাতা আর
ভাই বোন ফেলে,
আরো সুখি হবে তুমি
যাও যদি চলে ।
ইসকুলে নিয়েছিলে
যত কিছু শিক্ষা,
সব ভুল, বউটার
কাছে নাও দীক্ষা ।
_____
জংলি ফুলের গন্ধ
ভুবন দা
জঙ্গলে রোজ
ফুটে যে কত
নানা রকম ফুল,
কেউ চেনেনা
কেউ জানেনা
নাইরে জাত কুল ।
আসেনা কেউ
ওদের কাছে
একলা ওরা থাকে,
নিজের দুঃখ
নিজের কাছে
লুকিয়ে শুধু রাখে ।
আমরা চিনি
হাসনুহানা
গোলাপ বেলী জুঁই,
গন্ধে তাদের
দিবস রাতি
বিভোর হয়ে রই ।
ওরাও ফুল
নয়তো ভুল
নয়তো কিছুই মন্দ,
তবু কি আর
কেউ কি নেয়
জংলি ফুলের গন্ধ ?
_______
হক কথা
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
বলেছিল হক কথা
একরাম আলি,
আসল মানুষ খুঁজি
পাই শুধু জালি ।
দূর থেকে মনে হয়
মানুষযে দাদা,
কাছে গিয়ে বুঝি পরে
একদম গাধা ।
মানুষের চামড়াটা
থাকে সব গায়,
আসলে জন্তুু সব
মানুষকে খায় ।
বাঘ হাতি সিংহের
মায়া থাকে তবু,
উদর ভরিলে আর
খায় নাত কভু ।
ওই সব মানুষেরা
দিন রাত খায়,
অভর পেট তাদের
ভরানো না যায় ।
______
ক্ষতি
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ইচ্ছে ছিল অনেক কিছুই
পূরণ হল কই,
সব ইচ্ছে মনের ভিতর
নিয়েই আমি রই ।
ইচ্ছে ছিল বাংলা ভাষাই
ভাল করে শিখব,
নিজের চোখে জগৎটাকে
নিখুঁত করে দেখব ।
কোথায় ছিল ইংরাজিটা
এসেই খেল গিলে,
চোখে আর হয়না নজর
চশমাটা না নিলে ।
পিতা মাতা দাদু দিদার
মনবাসনা পূর্ণ,
টাকা টাকা করেই আমার
জীবন হল চূর্ণ ।
আজকে তাই মনে যে হয়
নিজেকে মূর্খ অতি,
মায়ের ভাষা না শিখে আজ
করেছি কত ক্ষতি ।
_________
মদ
ভুবন দা
দুধ বেচে মদ খায়
মহাদেব পাল,
বউ তার দিন রাত
দেয় তাই গাল ।
মদ বেচে দুধ কেনে
ওপাড়ার কেষ্ট,
ঠিক থাকে নিজে শুধু
সব করে নষ্ট ।
বিকোয় না পড়ে থাকে
ভিটমিন খাদ্য,.
উড়ে যায় পলকেই
যত সব মদ্য ।
মদ পান করে কেউ
ক্ষনিকের রাজা,
মদ বেচে কেউ ধনী
চিরকাল তাজা ।
কেউ মরে কেউ বাঁচে
মদ ভাল মন্দ,
যত খুশি বাড়ে দাম
নেই কোন দ্বন্দ্ব ।
______
নেতাজী
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
বলতে পারো বলতে পারো
বীর নেতাজী তুমি ?
হঠাৎ করে কোথায় গেলে
ছেড়ে ভারতভূমি ।
অনেক খোজা হলই সারা
হদিস পেলাম কই,
ভারতবাসী আমরা তাই
দুঃখ নিয়েই রই ।
নিজের জীবন তুচ্ছ করে
বন্দুক হাতে ধরে,
জানালে তুমি ইংরেজকে
যাও ভারত ছেড়ে ।
তোমার মত দেশ প্রেমিক
সত্যি পাওয়া ভার,
হাজার কষ্ট সহ্য করেও
মানোনি কভু হার ।
ইচ্ছে তোমার অনেক কিছু
ছিল সবাই জানি,
বুঝিনা সেই আদর্শে দেশ
চলছে কতখানি !
_______
ভালবাসা
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ওদের নিখুঁত প্রেম
সাগর ও নদী,
চিরকাল ভালবাসা
থাকে নিরবধি ।
ছুটে যায় নদী ওই
কত গান গেয়ে,
সাগর আশায় থাকে
তার পথ চেয়ে ।
দুজনাই দুজনার
অতি প্রিয়জন,
কোনদিন কোনকালে
নাই বিভাজন ।
মন চায় এরকম
ভালবাসা পেতে,
আগামী জনমে যেন
এই পৃথিবীতে ।
_______
গাছ
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
একে একে ঝরে পাতা
কিবা ক্ষতি তায়,
আবার নব পল্লবে
গাছ ভরে যায় ।
ঝরা পাতা উড়ে উড়ে
ধুলোতেই শেষ,
গাছ থাকে হাসি খুশি
সবুজেই বেশ ।
দেয় ফুল দেয় ফল
দেয় ছায়া ওই,
তার মত প্রেম কেউ
দেয় আর কই !
______
চিঠি
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
নদী স্রোতে ফেলে আসা
সেদিনের চিঠি,
ফিরে পেতে বার বার
তার কাছে ছুটি ।
বলে নদী নেই কাছে,
সাগরের বুকে,
তোর সব চিঠি আমি
আসিয়াছি রেখে ।
সব কিছু তুই যদি
ফিরে পেতে চাস,
একবার সাগরের
কাছে তবে যাস ।
বলিস আমার কথা
তার কানে কানে,
রেখে গেছে নদী চিঠি
সব এইখানে ।
মনে পড়ে যাবে জানি
সব কিছু তার,
ফিরে পাবি সব কিছু
সব ব্যথা ভার ।
_____
টাকা
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
টাকা টাকা করি রোজ
আরো টাকা চাই,
টাকা ছাড়া দুনিয়াতে
বন্ধু কেহ নাই ।
টাকা যার রাশি রাশি
আছে ভাই ঘরে,
পার পেয়ে যায় সে যে
অপরাধ করে ।
তার মত শক্তিশালী
নেই কেউ আর,
টাকার কাছেতে সব
মেনে যায় হার ।
হও যত জ্ঞানী গুনী
একদম পাকা,
টাকা না থাকলে যে
সব কিছু ফাঁকা ।
পাবেনা সঠিক তুমি
মোটে সম্মান,
সকলের কাছে শুধু
হবে অপমান ।
খুঁজে আর পায় কেউ
জীবনের মানে ?
নেই টাকা যার আজ
সেই শুধু জানে ।
____
অন্ধকারে
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ওরা সব মিথ্যে বলে
আমরা ভাবি সত্য,
এই ভাবে বেঁচে থাকা
স্বপ্ন দেখি নিত্য ।
আশমানে মেঘ পানে
মেলে রাখি দৃষ্টি,
হয় নাতো এক ফোঁটা
মরু বুকে বৃষ্টি ।
আলো চেয়ে সূর্য্যটার
আরাধনা করে,
জীবন ভরেছে যেন
বেশি অন্ধকারে !
____
জাল
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ডিগ্রি নিয়ে মস্ত বড়
পণ্ডিত আজ তুই,
ঠিক করে দেখ ভেবে
মানুষ হলি কই !
আছে টাকা গাড়ি বাড়ি
আছে প্রতিপত্তি,
নেই শুধু মানবতা
তোর এক রত্তি ।
নিজেকেই চিনেছিস
এযাবৎকাল,
মনে হয় ডিগ্রি তোর
সব কিছু জাল ।
———————————
ভুল
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
চোর সাধু মিলে মিশে
এক সাথে রয়,
আমাদের চিনে নিতে
মুশকিল হয় ।
সাধু বলে চোর ধরি
করি পদ সেবা,
বলি গুরু তুমি ছাড়া
আছে আর কেবা !
চুল দাড়ি মালা হাতে
জপে যায় নাম,
দিয়ে যাই শ্রদ্ধা ভক্তি
তাকে অবিরাম ।
শুনে হই হতবাক
একদম শেষে,
সাধু নয় পাকা চোর
আছে সাধু বেশে ।
_______
ঝরাপাতা
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
ঝরা পাতা রেখে যায়
সৃষ্টির উল্লাস,
নিজে শুধু নিয়ে যায়
ব্যথা একরাশ ।
পড়ে থাকে ম্লান মুখে
ধুলো মাখে গায়,
একে একে লীন হয়
সকলের পায় ।
তাই দেখে কিশলয়
খিল খিল হাসে,
বুঝে নাতো এই দিন
সবার যে আসে ।
____
সোনার গ্রাম
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
এমন সোনার ছোট্ট গ্রাম
কোথায় আছে আর,
এইতো আমার জন্মভূমি
তুলনা নাই তার ।
দীঘির জলে মরাল ভাসে
পাড়েতে তার গাছ,
হরেক পাখি উঠছে ডাকি
করছে দেখি নাচ ।
রাঙা মাটির পথটি ওই
গেছে অনেক দূর,
বনে রাখাল বাজায় বেণু
খুশিতে ভরপুর ।
সকাল হলে চাষীর ছেলে
কোদাল নিয়ে হাতে,
ফলিয়ে় তারা ফসল শুধু
আনন্দে সব মাতে ।
আকাশে ওই মেঘের ভেলা
দূরে সবুজ বন,
শহর ছেড়ে এইখানে আজ
হারিয়ে গেছে মন ।
______
চৈত্র বলে
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
চৈত্র বলে সব শেষে
আমি আসি ভাই,
গাছগুলি ফুলে ফলে
ভরে ওঠে তাই ।
বনে বনে পাখি ওই
মেতে ওঠে গানে,
আমি সুখ নিয়ে আসি
সকলের প্রাণে ।
পুরাতন গ্লানি আর
নিয়ে মলিনতা,
আনি আমি নববর্ষ
কত উচ্ছলতা ।
সুখে থাকো ভাল থাকো
আমি যাই তবে,
আবার তো একদিন
দেখা ঠিক হবে ।
______
মানুষ হতে
ভুবন বন্দ্যোপাধ্যায়
বলল বাবা আমায় ডেকে
হতে হবে ডাক্তার,
মায়ে তখন বলল এসে
হবে তুমি মাস্টার ।
তাই না শুনে কাকা তখন
বলল কাছে এসে,
হতে হবে নাম করা এক
গায়ক এই দেশে ।
সবার শেষে ফোকলা দাঁতে
লাঠিতে ভর করে,
বলল দাদু উকিল হতে
আইন নিয়ে পড়ে ।
সবার কথা শুনেই আমি
ভাবছি নিরবেতে,
বলল না কেউ আমায় যে
সত্যি মানুষ হতে ।
________