ভ্রমণকথা
ভিক্টোরিয়ায় একদিন
কলমে – অগ্নিমিত্র
- কলকাতার গর্ব ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল। মার্বেলে তৈরী এই স্মৃতিসৌধকে ‘ তাজ অফ দি রাজ’ও বলা হয়। ময়দানে এই জায়গাটায় এক দিনের জন্য যেতে ভালোই লাগবে। তবে একটু হাঁটাহাঁটি করতে হবে।
১৯০৬ সালে ইংলন্ডের প্রয়াত রাণী ভিক্টোরিয়ার স্মৃতিতে নির্মাণ শুরু হয় কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের। নির্মাণ শুরু করান তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড কার্জন। এর জন্য মার্বেল আনা হয়েছিল ভারতের রাজস্থান ও অন্যান্য জায়গার থেকে। তখনকার দেশীয় রাজারাই ইংরেজ শাসকদের তুষ্ট করতে দান করেছিলেন সেই সব মার্বেল বা মর্মর প্রস্তর।
১৯২১ সালে নির্মাণ শেষ হয় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের। আজ তা কলকাতার এক দর্শনীয় স্থান। আমরা এক রবিবার তাই পৌঁছলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল দেখতে।
প্রবেশের দুটি গেট আছে। টিকিটের মূল্য বেশি নয়। সৌধটি অপূর্ব। একদিকে রাণী ভিক্টোরিয়ার মূর্তি, অন্যদিকে লর্ড কার্জনের মর্মর মূর্তি। বিশাল প্রাঙ্গণে চারদিকে চার কোণে আছে চারটি পুকুর। আছে কিছু রাজহাঁস। গাছ আছে, আছে ফুলের বাগান। ইতিউতি খেলে বেড়াচ্ছে কাঠবেড়ালি।
অনেকটা হেঁটে মূল হলে ঢুকতে হয়। সিকিউরিটি চেকের পরে ভিতরে দেখলাম সাতটি হল ও তার বিভিন্ন দ্রষ্টব্য বস্তু। বর্তমানে মূলতঃ এখানে নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজের বিভিন্ন চিঠি, নথিপত্র, অস্ত্রশস্ত্র ও অন্য জিনিস রাখা আছে দর্শকদের জন্য। দেখলাম আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাপতি শাহনওয়াজ খানের নিজের পেন্সিলে লেখা ডায়েরি। আছে সিপাহী বিদ্রোহের বীর সেনানী তাঁতিয়া টোপীর ব্যবহৃত রণবস্ত্র ও চুল। আর দেখলাম বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুটি তৈলচিত্র। কেন্দ্রস্থিত হলে ঢুকে দোতলার কারুশৈলী দেখে চমকে যেতে হয়। দোতলায় বারান্দা ও ঘর আছে। তবে সেগুলি দর্শকের জন্য নয়।
শেষ তিনটি হলে আছে বাংলার নবাবদের বসার মসনদের নীচের পাথর ও অন্যান্য জিনিস। এমার্সনের দ্বারা করা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের আসল মডেলটিও আছে।
বেরিয়ে বাড়ির পথ ধরলাম। পাম গাছের ছায়ায় একটু বসা আর ছবি তোলা, তার পর বাড়ি যাওয়া।
একটা তথ্য দিয়ে শেষ করছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জাপানী ফৌজ ব্রিটিশ অধিকৃত কলকাতায় বোমা বর্ষণ করতে থাকে। মূলতঃ সন্ধ্যায় ও রাতে বোমা বর্ষণ হতো। শ্বেতশুভ্র ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলকে বোমার আঘাত থেকে বাঁচাতে তাই তার চারদিকে বাঁশের ছাঁচ বা খাঁচা লাগিয়ে কাদা ও আলকাতরা দিয়ে লেপে মাখিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তা জাপানী বোমারু বিমানের নজরে না পড়ে।
মনের মধ্যে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের স্মৃতি সযত্নে রেখে দিয়েছি।।
☘️🌸☘️🌸☘️🌸