বাবা ভোলানাথকে কুমারী মেয়ের চিঠি
অশোক কুমার আচার্য্য
বাবা,
তুমিতো জানো মেয়েরা বাবাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।তাদের কাছে বাবাই একমাত্র পুরুষ যাকে আদর্শরূপে মনে করে। সব মেয়েরা একই কথা বলে- আমার বাবার মতো বাবা হয় না।
তুমিতো কেবল আমার বাবা নও,সবার বাবা।একমাত্র আন্তর্জাতিক বাবা বলে যদি কেউ থাকে তা তুমিই। বলো, কে তোমাকে বাবা বলে না।যখনই বিপদে পড়ে তখন সবাই তোমাকে বাবা বাবা বলে ডাকে।তোমার এই বাবা ডাক শোনার জন্য এত লোভ কেন? যেই কানে গেল বাবা ডাক অমনি তুমি নরম হয়ে গিয়ে আশীর্বাদ দিয়ে দিলে। আসলে তোমার হৃদয়টাতো আফিং আর গাঁজার নেশায় প্রফুল্ল হয়ে আছে। হৃদয়ের আসনে ফুটে আছে কুসুমকলি। সেইজন্য তোমাকে দোষ দেওয়া যায়না।
আমি কিন্তু বাবা তোমাকে যতই ভালোবাসি না কেন,আমি তোমার মতো স্বামী হোক চাই না। ছোট থেকেই দেখে আসছি মা পার্ব্বতীর সংসার চালানোর কত কষ্ট। ভিক্ষার চাল বাছতে বাছতে তার নখকুনি হয়ে গেল। তারপর নন্দী ভৃঙ্গী ও তোমার চেলাদের উৎপাত। তাও যদি মেনে নেওয়া যায় কিন্তু তোমার গায়ের শ্মশানের মড়া পোড়ানোর ধোঁয়ার গন্ধ আমার ভালো লাগে না।ওই বিদঘুটে গন্ধ আমি একদম সহ্য করতে পারি না। বমিবমি পায়। তোমার জামাইয়ের গায়ে ওই বিচ্ছিরি গন্ধ থাকলে এক বিছানায় ঘুমোতে পারব না।
বাবা,তুমি এক কাজ করো আমাকে একজন এমন স্বামী জোগাড় করে দাও সে যেন বিরাট কোহালীর মতো হয়।ক্রিকেটার হতে হবে এমন নয়।সব সময় আমার পছন্দ অপছন্দ খেয়াল রাখবে।আমার যখন সন্তান আসবে তখন সব সময় আমার পাশে থাকবে।ওর মতো পুরুষই আমি চাই।
প্রতি বছর শিবরাত্রিতে সবাই যখন তোমার মাথায় ডাবের জল কাঁচা দুধ নদীর নোংরা জল বাঁকে বাঁকে করে নদী থেকে এনে ঢালবে তখন আমার খুব ভয় করে। কেউ একবার ভেবে ও দেখে না তোমার ধূম জ্বর অাসতে পারে। ঠান্ডা লেগে বুকে কফ জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তখন মায়ের কি দশা হবে কেউ একবার ভেবেছে। বুকে তেল মালিশ করা, মিনিটে মিনিটে গাঁজার কল্কে সাজা তারপর পা টেপাটেপি তো আছেই। সেই জন্য আমি তোমার জন্য খাঁটি গাওয়া ঘি বেলপাতায় মাখিয়ে তোমার শরীরের সারা অঙ্গে মাখিয়ে দেব। তাতে তোমার ঠান্ডা কম লাগবে।
বাবা, আমি তো তোমারই মেয়ে। সেই জন্য আমার গলাটা যেন হলাহলে ভরে না যায় সেটা দেখার দায়িত্ব তোমার।
তোমার আদরের খুকি
তাং : শিবচতুর্দশী
হলদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
Advertisement :