কবিতা : প্রথম বঙ্গ-মহাকবি কৃত্তিবাস
ঋদেনদিক মিত্রো
————————————-
[ 312 লাইন কবিতা, মিশ্র মাত্রার পর্ব-টানে পয়ারে পড়তে হবে ]
✍️
প্রথম মহাকবি তুমি অখণ্ড বঙ্গে,
বাংলায় রামায়ণ পয়ারের ছন্দে —
বাংলার রূপে রসে করেছো প্রকাশ,
কী কঠিন ছিল সেই বিস্তৃত কাজ,
অনুবাদ হয়েও তা অনুবাদ নয়,
এতোই প্রখর শুদ্ধ মৌলিকতা ময়!
শোনো, ওহে মহাকবি ওঝা কৃত্তিবাস,
দুহাজার একুশেতে এপ্রিল মাস,
16, 17, 18, 19, তিন দিন শ্রমে —
তোমাকে নিয়ে লিখি কী এক উদ্যমে —
এই দীর্ঘ কবিতাটি — এঁকে নানা চিত্র,
আমি দ্বিভাষিক কবি-লেখক ঋদেনদিক মিত্রো!
তোমরা আবিষ্কারক, আমরা তা জেনে–
তোমাদের অনুভবে পরপর নেমে —
অনেক কিছুই লিখি নতুনত্ব দিয়ে,
তোমরা তো আমাদের দিয়েছ সাজিয়ে —
কত কি অনুভূতির মর্মের টান,
কী করে বা থাকি — তোমাদের না করে প্রণাম,
মহাকাব্যের রস কী, কেমন গভীর,
শুনতে-শুনতে হয় মানুষ স্থবির,
দুইটি দৃশ্য বলতে এলো উন্মাদনা,
কলিকাতার শহর তলির দুটি ঘটনা,
একদিন দুই বন্ধু চলি হাঁটা পথে —
বিকেল, রাত্রি জুড়ে খেয়ালে বেড়াতে,
হঠাৎ পড়লো চোখে দৃশ্য এরকম,
রাত্রে হেরিকেন জ্বেলে প্রায় শতায়ু একজন,
সাধারণ মুদিখানায় পড়ছেন কী গ্রন্থ,
বাইরে বেঞ্চে বসে এক খদ্দের তো —
শুনতে -শুনতে পা চিপে দেয় উঁহু উঁহু শব্দ,
কাছে গিয়ে দেখি এক দৃশ্য অনবদ্য,
মুদিখানায় এক শতায়ু পড়েন রামায়ণ,
বাইরে অন্ধকারে বসে শুনছে একজন,
সেই শ্রোতা মহাকাব্যের রসেতে বিভোর,
এই দৃশ্য বোঝালো মহাকাব্যের বহর,
সেই রামায়ণ ছিল বাংলা রামায়ণ,
নিরালায় রাত্রিতে গভীর মাতন!
আর এক স্থানে ওই শহর তলিতে,
অন্য এক বন্ধুর সঙ্গে থাকি চলিতে,
মাঠ-পাশে গাছ ঘেরা পথ অন্ধকার,
রাস্তার পাশে দেখি চা দোকানদার —
পড়ছে মহাভারত চা নাই বেচে,
একমনে পড়ে যায় মহাভারতটিকে,
ছোট্ট একটা কেরোসিন আলো জ্বলছে,
তার মধ্যে মহাকাব্য পড়া চলছে,
একমাস এইভাবে পড়বার পরে–
শেষ দিনে খিচুড়ি দেবে ওই দোকান ঘরে,
যারা শুনবে মহাকাব্য এসে মাঝে-মাঝে,
তারা পেট ভরে ওই খিচুড়ি পাবে!
দোকানের এক যুবতী নিজেও তা পড়ছে,
মহাকাব্যকেও সে অন্তরে ধরছে,
আমরাও কেউ-কেউ গিয়ে পড়তে পারি,
যদি কিনা সেই পয়ার টান ধরতে পারি!
বাংলার এই রূপ দেখে আমি মুগ্ধ,
মনে হলো এই জীবনটা হয়ে গেছে শুদ্ধ!
মহাকাব্যের রসে বাংলার কী টান,
মুদি, চা দোকানিও তাতে ভরে প্রাণ!
এরকম দৃশ্য দেখে কত অনুভূতি —
আমারা দুই বন্ধু তো রসে জেগে উঠি,
এই ভাবে খিচুড়ি খাওয়া মজা, মনোরম,
কিন্তু, ফাঁকি দিয়ে সফলতা আসে কি কখন!
আমাদের ধান্দা ছিল দু এক দিন গিয়ে —
মহাকাব্যের পাঠে উপস্থিতি দেখিয়ে —
খিচুড়ি খাবার দিনে গিয়ে বেশ খাবো,
শেষের তারিখ দেখে খেতে চলে যাবো!
খিচুড়ির দিনটাই পেরিয়ে চলে যায়,
প্রতি বছরের ইচ্ছে হাওয়ায় মিলায়,
কিন্তু সেই দৃশ্যখানি চোখে ভাসছেই,
সেই অন্ধকার পথ আজ আর নেই!
সেইসব দিনগুলি কেন চলে যায় —
আজো সেই রাত ওড়ে রাতের হাওয়ায়!
সেই সব পথ, গাছ, গেলে বদলে,
সেই মাঠঘাট আজ কোথা গেছে চলে!
তবুও তাদের আনি কল্পনা-বোধে,
মানুষ তাই তো শ্রেষ্ঠ অতীত-অনুভবে!
সেখানে এসেই গেছে বিদ্যুতের আলো,
নেই সেই দোকানের বাহির আধ কালো,
সেই দোকানেও হয়তো বিজলি বাতি —
তাড়িয়েছে কেরোসিন আলোর রাতি!
হয়তো সেথা মহাকাব্য আজো পড়া হয়,
কিন্তু নেই কেরোসিন আলোতে পড়ার বিস্ময়!
এইসব দৃশ্যগুলি নিজেই মহাকাব্য,
গভীর-গভীর রসে আরো ভাববো!
তার আগে বলে রাখি আরো এক সত্য —
তোমার নামে আধুনিক ছেলে মেয়েরা যত —
কী ভাবে গভীর হয় মনে ও মননে,
উনিশ শ তিপান্নতে মিলে কয়জনে —
তৈরী করে ছিল তারা পত্রিকা “কৃত্তিবাস”,
তা থেকেই জন্ম নিলো অন্য রেনেসাঁস,
সেই দল পরপর বেড়ে যেতে থাকে,
যারাই চালিয়েছিল বাংলা সাহিত্যটাকে!
তাদের থেকেই সব আসে দিকপাল,
বাংলা সাহিত্যে আসে নতুন সকাল!
সে বিরাট ইতিহাস বাঙালির গর্ব,
তার সাথে মিশে আছে দুইপার বঙ্গ,
তাঁরাই ছড়িয়ে গিয়ে নানা পত্রিকায় —
এনে ছিল আলোড়ন দুই বাংলায়!
বাঙালির ঘরে-ঘরে সাহিত্য-পাঠ,
ওরাই তো গড়েছিল সেই মুক্ত মাঠ!
তার মূলে তুমি ওহে ফুলিয়ার কবি,
নগরে বন্দরে আছো জেগে নিরবধি!
কী তোমার ব্যাপ্তি আজো জনপ্রিয়তায়!
ধুতি, জিনস, সকলেই তোমাকেই চায়!
বটের ছায়ায় বসে লিখেছিলে যা,
তাতেই শিক্ষিত হলো সকল বাংলা!
চোখ ভেসে যায় কবি প্রখর আবেগে —
তখন কি লিখেছিলে এতো কিছু ভেবে —
বাংলায় রামায়ণ সুকঠিন শ্রমে?
তখন তো লিখেছিলে সৃষ্টি-উদ্যমে —
অপূর্ব সুন্দর কত ভাবনা অনুভবে —
পুঁথিতে চক্ষু দিয়ে সুদূরতা-স্তবে!
যে-বটের তলে লিখেছিলে রামায়ণ,
সেই বট কাব্যে দিলো নবজাগরণ,
এক একটি অনুভূতি, এক একটি দৃশ্য,
সুগভীর শুদ্ধতায় করে দেয় নিঃস!
এইবার শুরু করি ওহে মহাকবি,
তোমার জীবন নিয়ে এক একটি ছবি,
হয়তো তা যৎসামান্য তুলনীয়-ভাবে,
তবুও চেষ্টা করি আপন স্বভাবে!
বঙ্গের নদীয়ায় ফুলিয়া সে গ্রাম,
জন্মেছিলে কবি কৃত্তিবাস ওঝা নাম,
পঞ্চদশ শতকের সেই বঙ্গ গ্রামে —
ছিল সে কেমন রূপ, কজনে তা জানে,
কল্পনায় ভেসে যাবো আজ খানিকক্ষণ,
অনুভব নিয়েই তো শ্রেষ্ঠ জীবন!
আনুমানিক তেরোশত একাশি খ্রিস্টাব্দ,
জন্মেছিলে কৃত্তিবাস, দিন হয় ধার্য,
কারো মতে আরো অন্য সাল ও তারিখ,
এই নিয়ে চিন্তিত নানা ঐতিহাসিক,
রায়বাহাদুর দিনেশচন্দ্র সেন, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত,
এই নিয়ে কিছু বলতে হলেন সমর্থ,
তাঁদের মতে ইংরেজি 1440-এ তোমার জন্ম,
সেটাকেও সত্য বলে সবাই করেনা গণ্য,
দীনেশচন্দ্রের মতে ওই সালে শ্রীপঞ্চমী, রবিবার,
অন্যদিকে Indian ephemeris এর আবিষ্কার —
1443, 6 ই জানুয়ারী, শ্রীপঞ্চমী, রবিবার জন্ম,
মৃত্যুদিন নিয়েও মতভেদ করে বিপন্ন,
ডঃ নলিনীকান্ত ভট্টশালীর গবেষণায় —
তোমার জন্ম দিন নিয়ে নতুন তথ্য পায়,
জয়ানন্দের চৈতন্য মঙ্গল কাব্যে লিখিত —
শ্রীচৈতন্যর জন্মের পূর্বেও তুমি ছিলে জীবিত,
সালটা ইংরেজি চৌদ্দশ তিরানব্বই লেখা,
মতভেদে-মতভেদে তথ্যে বিপন্নতা!
জন্ম সন, জন্ম ক্ষণ, ইত্যাদি যাই হোক,
মূল কথা তুমি হলে জাগরণী চোখ,
গরীবের ঝুপড়ি হতে ধনীর অট্টালিকা,
রামায়ণ পঠিত হয়, তোমারি তো লিখা,
দিবা কিংবা নৈশ রাতে মুদি-দোকানে,
তোমার বাংলা রামায়ণ পঠিত সেখানে,
তোমার জনপ্রিয়তায় মাইকেল কবি —
কল্পনাতে দেখেছেন একমাত্র ছবি —
মুগ্ধ হয়ে তোমার মত চেয়েছেন হতে,
কী তোমার রস গুণ অক্ষরের স্রোতে!
সংস্কৃত ভাষা হতে বাংলা-রূপায়ণ —
অনুবাদ করেছ মহাকাব্য রামায়ন,
দেহ রেখেছ চৌদ্দশ একষট্টিতে,
এইটুকু সময়ে কী দিলে বাঙালিকে,
রুকনুদ্দীন বারবাক শাহ গৌড়েশ্বর,
তোমাকে আদেশ দেন বাক্য মনোহর —
রচনা করতে হবে বাংলা-রামায়ণ,
তারপর শুরু হলো তোমার জীবন–
নতুন চিন্তা নিয়ে ব্যাপ্ত অনুভবে —
ডুবে গেলে দিনরাত্রি লেখনীর স্তবে!
কারো মতে তুমি নাকি দিয়েছ বর্ণনা,
সেই মতো পাই তথ্য উপস্থাপনা,
সেই মতো তেরো শত নিরানব্বইতে
জন্মেছিলে রবিবারে শ্রীপঞ্চমী তিথিতে,
মাঘ মাস ছিল সেটা, সে যুগের শীত —
সে যুগের গ্রাম ছিল আজের বিপরীত,
দূর -দূর অন্তর একখানি ঘর,
চারিদিকে মাঠঘাট দিগন্ত বিস্তর,
সেই রোদ, দুপুর ও বিকেল বেলা,
শৈশবে তোমাদের ছিল কী কী খেলা,
এসব জানতে চেয়ে ডুবি কল্পনায়,
অনুভবি অন্তর সে যুগে চলে যায়!
পিতা বনমালী, ছয় ভাই এক ভগ্নি,
তুমি জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলে চিন্তনে চিন্তনি,
অভিলাস ছিল মনে হতে হবে কবি,
উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত হয়ে গেলো সবই,
প্রাথমিক শিক্ষা পিতা ও পিতামহের কাছে,
উচ্চশিক্ষা নিতে গেলে বারো বছর বয়সে —
গৌড়ের রায়মুকুট পন্ডিত মহৎ —
আচার্য্য চূড়ামনি বৃহস্পতি মিশ্রর নিকট,
সময়টা 1454, 4 ঠা জানুয়ারী,
উচ্চশিক্ষা উদ্দেশ্যে ছেড়েছিলে বাড়ি,
তারপরে গুরু উত্তরবঙ্গে আচার্য্য দিবাকর,
তিনিই তোমাকে বলেন শিক্ষার পর, —
রামায়ণ নিয়ে লেখো পাঁচালি বা গান,
তা থেকেই রামায়ণে এসেছিলো টান!
তারপর গেলে রাজা গণেশের কাছে,
তাঁর উৎসাহে তুমি লেগে গেলে কাজে,
শুরু হয় রামায়ণ-অনুবাদ কাজ,
ধন্য-ধন্য করে মানব সমাজ!
মাতার নাম কোথাও মালিনী লেখা,
কোথাও বা মেনকা, মানিকী বা মালিকা,
নানা পুঁথিকারগন নানা নামে তোমার মা-কে —
নাম দিয়েছেন দেখি তাঁদের লেখনীতে!
মাত্র বাইশ বছরের দামাল যুবক,
বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে দূর পথ,
গৌড়েশ্বর রুকনুদ্দীন শাহের দরবারে —
সাতটি শ্লোক রচনা করে শোনালে তাঁরে,
তিনি অভিভূত হয়ে রাখেন প্রস্তাব —
তোমায় দেবেন রাজ সম্মান, খেতাব,
এ সুযোগ না নিয়ে করে হাতছাড়া —
শ্লোক দিয়ে সম্রাটকে দিয়েছিলে নাড়া,
“কারো কিছু নাই লই করি পরিহার,
যথা যাই তথায় গৌরব মাত্র সার!”
কত আত্মবিশ্বাস ছিল যে তোমার,
তাই মহাকবি হলে বিরাট বাংলার!
কেউ বলেন গৌড়েশ্বর রুকনুদ্দীন শাহ
তোমায় দিয়েছিলেন খুব উৎসাহ,
কেউ বলেন, রাজা গণেশ করেন আদেশ —
রামায়ণ-অনুবাদে করিও প্রবেশ,
দূর-ইতিহাস কোনটা ঠিক আর ভুল—
সেই সত্য সত্যিই দুরূহ অকূল,
সব ইতিহাস ছেড়ে কর্মের প্রমাণ —
সত্য হয়ে জেগে থাকে জোৎস্না-সমান,
সেটাই আমরা নিয়ে তোমার প্রতি–
শ্রদ্ধা জানালে প্ৰিয়, আছে কিবা ক্ষতি?
বর্তমান বাংলাদেশ ছিল সেই স্থান,
তোমার পূর্বপুরুষ নরসিংহ ওঝা নাম,
তিনিই দনুজ রাজার অমাত্য যখন,
ধর্মীয় যুদ্ধের কারণে বিপন্ন তখন,
কেউ বলে রাজ্যে আসিলে আকাল,
নরসিংহেরও হয় বিপন্ন হাল,
দনুজ রাজার যেই শাসনটা যায়,
নরসিংহ তখনি তো আসেন নদীয়ায়,
ফুলিয়া গ্রামেতে নেন ভিটে মাটি অংশ,
তুমি কৃত্তিবাস তাঁর চতুর্থ বংশ,
গঙ্গার পাড়ে কাছে হলো সেই গৃহ,
যেথায় জন্মালে তুমি, মহাকবি প্ৰিয়!
সেই গঙ্গা সরে গেছে অনেক দূরে,
নদীর ইচ্ছে হলো চলে ঘুরে-ঘুরে!
ওই গ্রাম কী কারণে ছিল ফুলিয়া নাম,
পূর্বে মাঝিরা সেথা করতো ফুল বাগান,
ফুল থেকে পরপর ফুলিয়া হয়েছে,
সময় ধারায় কত কী যে বদলেছে!
গ্রামের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে গঙ্গা বহে,
কত ইতিহাস — নদী যায় শুধু কহে!
সেকালের নিয়মেতে যারাই কুলীন,
বিবাহ করতে হতো কমপক্ষে তিন,
তুমিও তো সেই সূত্রে করেছিলে তাই,
কী করে যে সামলাতে, বুঝেই না পাই,
একাধিক নারী যদি থাকে এক সাথে,
সেই পুরুষের হায় কী ভাবে যে কাটে,
তোমার রমণীদের আচার আচরণ,
জানতে ইচ্ছে করে তা ছিল কেমন!
দেহ-সুখও ব্রহ্ম-সুখ ব্রহ্মর বিধান,
একে যারা মান্য না দেয়, জড় সম প্রাণ,
হলেও অমৃত, যদি হয় অতি ভক্ষণ,
অমৃত হইবে বিষ অতীব মোক্ষম!
দেহ-সুখও সুখ, কিন্তু সব সুখ নয়,
তাই তো ভিন্ন-সুখে জীবনটা বয়!
এই সত্য যারা বোঝে তারা জ্ঞানী, সুখি,
ধন্য হই হয়ে তাহাদের মুখোমুখি!
সৎ জ্ঞানী যদি করে কোনো রূপে স্পর্শ,
ধন্য হয় প্রাণ সত্বা, বাড়ে ঔৎকর্ষ!
সেই স্পর্শ যে-রূপেই হউক যথা তথা,
সৎ জ্ঞানী অঙ্গ ছুঁলে কাটে দুঃখ-জটা!
তুমি হলে সেই জ্ঞানী, সৎ জাগরণ,
তোমার স্পর্শে নারীর ধন্য দেহ মন!
মুক্ত আলোর সাথে রমনে কী সুখ–
যে পায় সেই বোঝে সে-সুখের রূপ!
জীবনের সত্যটা কী জানি কোথায় —
আলো ও অন্ধকারে মিলে মিশে যায়!
অন্ধকার মানে নহে দুঃখ যন্ত্রনা,
অন্ধকার মানে হলো অনন্ত প্রেরণা!
এইসব অনুভূতি নিয়ে চলছিলে,
কত বিচিত্র অনুভবে তুমি জ্বলছিলে!
কত কিছু নিয়ে তুমি মহাকবি-শ্বাস,
বাংলা রামায়ণের লেখক কবি কৃত্তিবাস!
জন্ম দিয়েছিলে এক পুত্র, চার কন্যা,
মর্মে কতটা ছিল দেহ-সুখ বন্যা!
দেহ-সুখও সুখ বটে জগৎ প্রকৃতি,
জীব-দেহে দেহ-সুখ জীব প্রাণ রীতি!
বধূদের হাসি আর কান্নার রূপ,
রাগ আর গর্জন কেমন স্বরূপ,
জোৎস্নায় কী বলতো তোমার সাথে,
চুমু দিত নাকি তারা তোমার হাতে,
যে-হাতের থেকে নামে ছন্দরস শব্দ,
গরীব ও ধনী হয় সকলেই মুগ্ধ,
সেই হাত ও সেই বোধের গভীর পুরুষ —
তাদের জীবন-সাথী — যেই হতো হুঁশ —
এমনি অন্য এক আবেগের ঝোঁক —
তাদের মাতিয়ে দিতো — মুগ্ধ আলোক!
এখন আইস ভাবি, কবি কৃত্তিবাস,
ফুলিয়া গ্রামেতে ছিল কী মুগ্ধ বাতাস,
অদূরেতে বটবৃক্ষ দিত সে কি ছায়া,
সে ছায়ায় ছিল এক অব্যক্ত মায়া,
সেখানেই খুঁজে নিলে লেখবার স্থান,
সুগভীর নিরিবিলি সে ফুলিয়া গ্রাম!
পুঁথিতে হরফ লিখে সাজাতে পংক্তি,
সেই যুগে লিখবার যা ছিল পদ্ধতি,
একটি আসন পেতে বসে বটের ছায়ায়,
যখনি থাকতে ডুবে চিন্তা মগ্নতায়,
দূরে কোনো নারী যেত কলসি কাঁখে,
আকাশে উড়তে -উড়তে পাখিরা ডাকে!
নারী থাক যেখানেই যে-রূপে যখন,
তার উপস্থিতিতে হয় মহাবিস্ফোরণ,
তুমিও যখন দেখতে দূর-পথে নারী —
কলসিটা কাঁখে নিয়ে মৃদু হাস্যে ভারি —
হেঁটে যেত, দেখে যেত, তোমার লেখনী,
তোমায় ধন্য করতো নারী-সম্মোহনী!
আরো -আরো উৎসাহেতে তুমি লিখে যেতে,
দূরে গরু চরে যেত ঘাস খেতে-খেতে,
নদীতে নৌকা বয়ে যেত একাকী,
মাঝি আর তার সাথে কয়টা যাত্রী,
কত কি বলতো তারা যে যার মতন,
মুক্ত শুদ্ধ গঙ্গা নদী ছিল যে তখন!
সেই বট আজো আছে, আছে সেই নদী,
নেই শুধু তুমি আজ সেই মহাকবি,
তোমার অস্তি-সমাধি আছে সেই গ্রামে,
কত ভ্রমণার্থী এসে কত কিছু জানে!
তাদের মাঝে কজন আজো দেখে যায় —
গঙ্গার মুক্ত হাওয়ায় বটের ছায়ায় —
আজো বসে লিখছো বাংলা রামায়ণ,
মাঝে-মাঝে করে যাও পংক্তি উচ্চারণ,
কেমন হয়েছে লেখা, কত যুৎসই,
সেই দৃশ্য আজো আছে, বটচ্ছায়ে ওই!
————————————————–
রচনা : 16, 17, 18, 19 এপ্রিল 2021,
————————————————–
Kobita : Mahakabi Krittibas Ojha, i.e. A Bengali poem : Epic poet Krittibas Ojha, by Ridendick Mitro.
——————————————
কবি কৃত্তিবাস ওঝার ওপর সম্ভবত একটি কবিতা আজ থেকে বছর চারেক আগে মুর্শিদাবাদের একজন সম্পাদককে দিয়েছিলাম একটি কবিতা সংকলনের জন্য! ওটার বরাদ্দ ছিল মাত্র 20 (কুড়ি ) লাইন! তবে সেটাও ছিল 20 লাইনের রসে একটা কবিতা! যদিও সেটা লিখে ঠিক পোষায় নি ! এখন এই লেখাটি লিখে মনে একটু তৃপ্তি হলো! সেই কবিতার নামটা কী ছিল এই মুহূর্তে মনে নেই, তবে ঝুঁকি না নিয়ে এমন নামকরণ করলাম যেটার সাথে আমার সেই লেখার মিল না থাকে!
আপেক্ষিক তথ্যের ভিত্তিতে কবিতাটি লেখা!
কোনো তথ্য বা অনিচ্ছাকৃত কোনো বানান ভুল হয়ে গেলে সেটা বিবেচনা ও সংশোধন যোগ্য! আমার এই বাংলা হরফে দাঁড়ি (পূর্ণছেদ) না থাকায় সব দাঁড়ি-র জায়গায় “!” লাগিয়েছি, বিচারকগন এই অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি মার্জনা করবেন! বাংলা সংখ্যাও এতে লেখা যাচ্ছে না বলে সাল, তারিখগুলিও ইংরেজিতে লিখলাম, এক্ষেত্রে কী আর করি!
—- ঋদেনদিক মিত্রো
বিঃদ্রঃ :– ঋদেনদিক মিত্রো (Ridendick Mitro), কলকাতা, ভারত, পেশা : ইংরেজি ও বাঙলা ভাষায় কবি-ঔপন্যাসিক-গীতিকার-নিবন্ধকার (পৃথক ভাবে দুটি ভাষায়), একটি বিশ্বজাতীয় সংগীত ” World anthem — we are the citizen of the earth, ” ও “Corona anthem 2020 official bengali anthem, ” প্রভৃতি বিশেষ ধরণের সঙ্গীতের রচয়িতা! 2020 পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে বইয়ের সংখ্যা প্রায় 20 (কুড়ি).
Editor : kabyapot.com