কলকাতার মাদার আর্থ ফাউন্ডেশনের অসামান্য বৃক্ষ-প্রেম, বসুন্ধরা মেলা, ও গাছ নিয়ে কবিতা তিনটে ✍️
————————————————
প্রতিবেদন : ঋদেনদিক মিত্রো
[ A discovery : Unbelievable, Mother Earth Foundation’s tree-love, kolkata, India and its “Earth Fair” including others/3 poems “Ambition”, TUMI GACH. i.e.YOU TREE, “Rat-sagar pragga” i.e. “The Dark-taste of The night ocean” : exposed by Ridendick Mitro ]
🌴🌵🌲
তুমি কী হতে চাও?
কত স্বপ্ন, কত শিক্ষা,
বড় হতে কত নিষ্ঠা–
নিয়ত দেখাও,
পাবে কত হাততালি,
সেলাম, প্রণাম,
পাবে কত নাম যশ,
আর সম্মান,
কত টাকা, সম্পদ,
ভোগের দ্রব্য সব,
সমাজের শ্রেষ্ঠ হবে —
কল্পনাতে নাচ,
আমি বলি — শোনো তবে–
সত্যিই সেরা হবে,
যদি তুমি হতে পারো
একখানি গাছ!
[ এম্বিশন : ঋদেনদিক মিত্রো ]
লেখার জন্য পেলাম চিন্তার সমুদ্র গাছেদের সঙ্গে মিশে, গাছের অরণ্যে প্রবেশ করে, পেলাম চিন্তার সমুদ্র, হ্যাঁ, সমুদ্রের পাশেই তো গাছের সারি থাকে, এ সমুদ্রে কত ভাসবো কুলহীন নিশানাহীন! তাহলে ছোট্ট নৌকোতে চড়ে ভাসতে শুরু করি এখন! কূল খুঁজে না পাই, ভাসার সুখ তো পাবো! তাহলে ভাসা যাক, অসংলগ্ন দিকদিশাহীন!
আগেই বলে দিই, লেখাটা পড়ার আগে পুরো লেখাটা দেখে নিন নিচে নেমে, মাঝে-মাঝে বিজ্ঞাপনের box আছে, অন্যমনস্কতায় সেখানে শেষ ভাববেন না, পুরো নিচে নেমে লেখাটাতে একবার তাকিয়ে দেখে চোখের সাথে set করে নিন, তারপর নিজের মত রয়ে সয়ে পড়তে থাকুন! তবেই খুব সাবলীল ভাবে পড়তে পারবেন, অজান্তে অনুভূতিটা ছড়িয়ে যাবে সমগ্র, আরাম লাগবে পড়তে!
গদ্যের শেষে উপহার আছে “তুমি গাছ ” ও “রাত-সাগর প্রজ্ঞা” শিরোনামে দুটি কবিতা! শেষের টি গদ্য কবিতা, যে-পাঠক যেমন টি চান! গাছ নিয়ে এতদিন অনেক কবিতা পড়েছেন, বিভিন্ন স্বাদের, এগুলি পড়বেন নতুন আরেক রকম স্বাদে! কিন্তু, তার আগে গদ্যের সমুদ্রে ভাসি চলুন! ভাসবার মজাটাই জীবন, চলুন ভেসে চলি অনুভবের অথৈ সমুদ্রে, —- হ্যাঁ, অসংলগ্ন দিকদিশাহীন!
লেখাটি আপনারা পড়বার আগে বলে রাখি, এই রচনাটি লেখার সামগ্রিক দর্শন পেয়েছি কোনো-কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা থেকে, বিভিন্ন সময়ে তাঁদের সাথে কমবেশি সময় কাটিয়ে, কিন্তু, এই লেখার বিষয় পৃথিবীর সব সঠিক উদ্দেশ্যের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও মুক্ত মনের ব্যক্তিদের নিয়ে! সকলের সৎ পরিশ্রমকে শ্রদ্ধা করেই এটা লেখা!
তাই, এই লেখাটিকে কেউ একটি সাধারণ সংবাদ বা নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের সংবাদ হিসেবে নেবেন না, কারণ, এটার ভাবনা ও বিষয় সবাইকে নিয়ে!
এবার শিরোনামের বিষয়ে ঢুকছি:–
আমরা “ভালোবাসা” শব্দটা নিয়ে সবচেয়ে নাড়াচাড়া করি, আর সেই জন্য কতকি করে বসি, গুরুজনের টাকা চুরি করি, নিজের কষ্টের অর্জিত অর্থ নষ্ট করি, কিংবা আরো নানা পথ অবলন্বন করি, জীবনকে বিপন্ন করি, কেউ বা আত্মহত্যা করি, কেউ দিনরাত্রি ঝগড়া করি, সবই আমাদের প্রচলিত নিয়মের ভালোবাসা ও ভালোবাসা মানে এমনটাই — এমনি একটা ট্রাডিশনাল বিশ্বাস নিয়ে আমরা বাঁচি! এই “ভালোবাসা” শব্দটাকে আমরা সবচেয়ে বড় করে নিই নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক সম্পর্কের সত্যে, একই সাথে গুরুজনের সাথে লঘুজনের সম্পর্কের সত্যে, বন্ধুত্বের সত্যে, — যেটা আমাদেরকে চার দেওয়ালের মধ্যে কারাগার জীবনে নিঃক্ষেপ করে এবং প্রতিনিয়ত জীবনকে বিষাক্ত করে তোলে!
এর কারণ, “ভালবাসা” শব্দের সাথে আমরা ব্যাপ্ত আকারে প্রকাশিত ও বিকশিত হতে পারিনি!, তার কারণ আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা ও সমাজ সংসারের একমুখী সংস্কার ভাবনা এতোই আত্মকেন্দ্রিক যে, আমরা প্রকৃত আলো থেকে দূরে থাকি সারা জীবন!
এই সূক্ষ্ম সত্য দেখানোর দার্শনিক শিক্ষক কোথায়? জীবনকে পূর্নতা দিতে পথ পন্থা কোথায়?
এই বিপন্ন জীবনের মধ্যে, বিষাক্ত স্বার্থপর প্রবণতার সমাজে, দিশাহীন পৃথিবীতে, সঙ্গতিহীন রাজনৈতিক অবস্থানে দেশ দুনিয়া যখন ক্রমশঃ সর্বনাশের দিকে যাচ্ছে, পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান ও বিজ্ঞানীরা চিন্তিত, তখন কিছু-কিছু ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আমাদের বন্দি চেতনার অন্ধকারে ঘরের জানালাটা খুলে দিলেন, আর এমনি একটি সংস্থা হলো কলকাতার মাদার আর্থ ফাউন্ডেশন!
এঁদের সারা বছরের কাজ গাছকে ভালোবাসা ও গাছকে ভালোবাসানোর জন্য মানুষকে উপলব্ধিতে জাগরিত করা! এঁদের মধ্যেও আছেন কেউ-কেউ সাংসারিক আত্মকেন্দ্রিক মানুষ, কিন্তু গাছকে ভালোবাসার কর্তব্যে এসে এঁরা পরপর গোপন দার্শনিক হয়ে উঠছেন, আর এই নিভৃত পরিবর্তনটা খুব সমীহপূর্ণ রৌদ্রজ্জ্বল দৃশ্যের মত সুন্দর ও দিগন্ত বিস্তৃত!
যাঁরা নীরবে নিভৃতে কাজ করেন তাঁরাই সংসার সমাজের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন, এটা ইতিহাসের সত্য! তাঁরাই হন ইতিহাসের ইতিহাস, এটা সময়ের সত্য, আমার নিজস্ব মতামত নয়!তাঁদের কাছে সবচেয়ে বড় পাওয়া হলো নিজের কাজের সফলতাকে আগে নিজের চোখে বিশ্বাস করা! এই দর্শনে তাঁরা নিবেদিত!
এই সংস্থার রয়েছে যথেষ্ট উন্নত মানের বিস্তৃত নার্সারি, আরো জায়গা ও অর্থ সাহায্য পেলে হয়তো কাজের আরো বিস্তৃতি হতো আমার ধারণা!
দেশের দায়িত্বশীল কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মধ্যে তাই এই সংস্থা — আমার মনে হলো, মানে, কলকাতার মাদার আর্থ ফাউন্ডেশন দায়িত্বশীল সংস্থাগুলির মধ্যে একটি!
এঁদের কাজ নার্সারি, একই সাথে নানা স্থানে বৃক্ষ রোপন, এবং recycling, এবং নানা উন্নত ভাবনার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে সাথে নিয়ে ভ্রাতৃসুলভ একতায় প্রকৃতিকে নানা বৈধ কাজে লাগানোর জন্য গবেষণায় একত্রে মনোনিবেশ করা!
প্রতিবছর সেই সফলতাগুলো নিয়ে এঁরা একটা মেলা করেন, বসুন্ধরা মেলা বা Earth Fair, সরকারি অনুমতিকে কেন্দ্র করে কখনো পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে, বা নিজেদের প্রয়োজনে স্থান পরিবর্তনের কারণ না থাকলে — বালিগঞ্জ ট্রায়াঙ্গুলার পার্কে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারীতে এই মেলা হয়, এবং চেষ্টা করা হয় 28 (আটাশ ) ফেব্রুয়ারীতে এই মেলা করতে!
গত বছর এঁদের সাথে এই প্রতিবেদক, মানে আমার প্রথম পরিচয় ও 28 শে ফেব্রুয়ারী বালিগঞ্জ ট্রায়াঙ্গুলার পার্কে আমি উপস্থিত ছিলাম! এবছরও 28 ফেব্রুয়ারী 2021 এই মেলা হলো!
গড়ে প্রতি বছর তিরিশ চল্লিশটা নানা স্বেচ্ছাসেবীর স্টল বসে পুরো park ঘিরে নিয়ে! প্রতিটি স্টলে প্রদর্শিত হয় মানুষ ও জীব জগৎ কী করে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচবে ও সুস্থতা অর্জন করবে — তার নানা পদ্ধতি!
যেমন কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা হাসপাতাল ও রাস্তা থেকে নানা মানসিক রুগীদের এনে তাদেরকে প্রাকৃতিক নিয়মে চিকিৎসা করে সারিয়ে তুলে তাদেরকে দিয়ে আবার নানা জিনিস উৎপাদন করায় ও এইভাবে সাবলীল জীবনে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে! একই সাথে চলে নানা রকমের বই পত্রিকা পড়াশোনো! কারণ পড়াশুনো ছাড়া মানুষ সুস্থ থাকতে পারেনা, যতই ঔষধ খাক, বা শরীর চর্চা করুক!
দেখে আশ্চর্য হতে হয়, বেসামাল মানসিক রুগীরা সেরে উঠে তাদের হাঁটাচলা, আচরণ, উন্নত কথা, আলোচনা ও নানা যোগ্যতা কী ভাবে প্রদর্শিত করছে –, তখন নিজেকে প্রশ্ন করি, এদের যারা হীন দৃষ্টিতে দেখেছিলো তারাই মানসিক রুগী বা অপরাধী বা ডিগ্রীধারী অশিক্ষিত!
সম্বোধনটা কোথাও “আপনি” কোথাও “তুমি” হয়ে যাবে, এই বিষয়টা মাপ করে দেবেন!দিনরাত্রি লিখছি তো!
উপস্থিত সংস্থাগুলি কেউ বা কেমিক্যাল রঙ ছাড়া শুধু ফলের রস বের করে আইসক্রিম তৈরী করে, কেউবা কোনো কৃত্তিম মিশ্রণ না দিয়ে পিঠে তৈরী করে, কেউবা ক্ষতিকারক দ্রব্য না দিয়ে ব্যাবহারিক জিনিসপত্র তৈরী করে, কেউ উন্নত কোনো যন্ত্র বা পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যেটা দিয়ে মানুষ ও সমগ্র জগৎ সুস্থ থাকবে! আসলে এঁদের কাজগুলো এতটাই সুদূরগামী ভাবনার ওপর দাঁড়িয়ে এবং এতো নিভৃত পরিশ্রমের ও ধৈর্যের সফলতা, আপাতত আমার তরফ থেকে বলতে পারি, এঁদের কাছে এলে নিজেকে তুচ্ছ মনে হয়!
এঁরা শারীরিক ত্রুটিযুক্ত শিশুদের নিয়ে ছবি আঁকা প্রতিযোহিতা করেন! প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় তিনটি পুরস্কারের জন্য শিশু শিল্পীদের নির্বাচিত করেন, কিন্তু সেটা মঞ্চে বলা হয় মুখে — ছবির কোয়ালিটির ক্রমিক নম্বর বোঝাতে, কারণ, এটা প্রতিযোগিতা!
আবার, একই সাথে এঁরা পুরষ্কার দেন সবাইকে সমান পুরষ্কার, কারণ, বড় কাজের সফলতার জন্য চেষ্টা করেছে এরা সবাই সমান ভাবে অনেক কঠোর বাধা অতিক্রম করে, তাই প্রতিযোগির মর্যাদায় সবাই সমান!
কী ব্যাপ্ত ভাবনার আয়োজন, ভাবুন একবার!
আর একটি কথা, সত্যিকারের প্রতিবন্ধী কারা, তারাই সত্যিকারের প্রতিবন্ধী — যারা সমাজে জুলুম দিয়ে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে চায়, অধিকার দাবী করে, কারণ তাদের যোগ্যতা ত্রুটি যুক্ত, তারা জানে, তাই সামঞ্জস্যহীন আচরণ করে তারা তাদের অধিকার দাবী করে — যতটা অধিকার তাদের দরকার তার চেয়ে বেশি! এই চরম সত্যটা যেদিন আমরা বুঝবো, সেদিন আমরা চলবার ও বলবার পথ বদলে ফেলবো — তখন শারীরিক ভাবে কাউকে বেঁকে চলা বা বেঁকে তাকানো দেখে তাকে প্রতিবন্ধী বলবোনা!
তখন বদলে ফেলবো বাঁচবার আঙ্গিক! বদলে ফেলবো বিবেচনার রীতি!
আর একটি বৈজ্ঞানিক সত্য, পৃথিবীর সকলের দেহে কোনো না কোনো ত্রুটি আছে, জন্মগত, এমন কী যে-মানুষটা বাত-রোগে আক্রান্ত হয়ে চলতে পারে না, বা কেউ খেলতে গিয়ে আঘাত পেয়ে শরীরের বাইরে বা ভিতরে কোথাও ত্রুটি আছে, সেটাও প্রতিবন্ধীত্ব, আবার যখন কোনো দেশের শাসন ব্যবস্থা প্রতিবন্ধী হয়, তখন সেই দেশের রাজা রানী প্রতিবন্ধী, তাই সেই দেশের জনগণও প্রতিবন্ধী!
আসলে, আমি এটাই বলতে চাই, প্রথাগত চলে আসা বিশ্বাসে “প্রতিবন্ধী” বলে কোনো পরিচয় নেই আলাদা ভাবে কোনো মানুষের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ যে-ভাবনাতে আমরা প্রথাগত ভাবে “প্রতিবন্ধী” শব্দটি ব্যবহার করি, আমাদের সেই ভাবনাটাই প্রতিবন্ধী!
তাই এই সংস্থা, বা এইজাতীয় সংস্থাগুলি শারীরিক বিশেষ ত্রুটিযুক্ত শিশুদের বলে থাকেন special child.
অর্থাৎ, সেক্ষেত্রে বোঝানো হয়, সহজ ভাবে ছবি আঁকার ক্ষেত্রে যেসব শিশু উপযুক্ত সক্ষম নয়, তারা কে কতটা ভালো ছবি আঁকতে পারে সেটা নিয়েও প্রতিযোগিতা!
ধরা যাক, আমি ফুটবল খেলায় ঠিক সক্ষম নই, কিন্তু আমার মত অনেকে মিলে একসাথে ফুটবল খেলবো, সেক্ষেত্রে বলা হতে পারে special male দের নিয়ে ফুটবল!
আসলে সব শেষে এটাই সত্য, পৃথিবীতে তারাই সবচেয়ে বড় মানসিক প্রতিবন্ধী যারা অন্যের ভালো কাজকে নষ্ট করে, পৃথিবীতে তারাই সবচেয়ে বড় দৈহিক প্রতিবন্ধী যারা প্রতিবাদে ভয় পায়, এবং তারাই মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী — যারা ভাবে যে আত্মকেন্দ্রিক সংসার-জীবন নিয়ে থাকলেই আমি সুখি থাকবো! আবার তারাও প্রতিবন্ধী — যারা ভাবে যে নিজের প্রয়োজনের কথা না ভেবে সব কিছু দান করাটাই দান, আবার তারাও প্রতিবন্ধী যারা অলসকে সাহায্য করে! আবার তারাও প্রতিবন্ধী যারা সৎ পরিশ্রমীকে অকারণ চাপ দিয়ে অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেবার চেষ্টা করে! সবচেয়ে প্রতিবন্ধীত্বর প্রমাণ হলো বোকা চালাকি করা, — সংসারে, সমাজে দেখবেন এক একজন মানুষ দিনরাত বোকা চালাকি করে যায়, এটাই নাকি বুদ্ধিমত্তা!
আর তারাও প্রতিবন্ধী যারা অসহায় শ্রমিক বা বাড়িতে কাজ করতে আসা লোকেদের সাথে কৌশলের আচরণ করে –সেই সাথে চালায় নানা রকমের অমানবিক আচরণ, — যে-আচরণ পুরো দেশ, সমাজকে নারকীয় করে রেখেছে! প্রতিবন্ধীত্ব সেটাও, যখন আমরা ভাবি — আমাদের পরিবারটা সবচেয়ে জ্ঞানী, সৎ, দাতা, মহান, আর প্রতিবেশীরা আমাদের পরিবারের চেয়ে তুলনায় অতি তুচ্ছ!
সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধীত্ব হলো পক্ষপাতীত্ব স্বভাব, ও স্বজন পোষণ চরিত্র! যেটা সমাজে সব রকম দুর্যোগের কারণ হয়ে চলেছে!
না, “প্রতিবন্ধী” শব্দটি নিয়ে আর ব্যাখ্যায় যাবো না, এটা নিয়ে এর বেশি ব্যাখ্যায় গেলে এই লেখাটাই সাহিত্য-গুণে প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে!
স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান নিয়ে যাঁদের অনেক ভ্রু কুঁচকানো জিজ্ঞাসা আছে বা বিরক্তি আছে নানা কারণে, তাঁরা আবার এঁদের দেখলে ও বুঝলে অনুভব করবেন, এঁরাও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং এঁদের শ্রদ্ধা না করে পারা যায় না! এঁদের জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার না করলে তখন আপনার মানসিক শান্তি হবে না! কারণ, সত্য ও সুন্দর অনুভূতি মানুষকে মুক্ত হতে তাগাদা দেয়!
এখানে “এঁদের” মানে পৃথিবীর যেকোনো দায়িত্বশীল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কথা বলছি! প্ৰিয় পাঠক পাঠিকা, আনার কোনো লেখাকে কোনো সংকীর্ণ অর্থে নেবেন না!
এবছর অনেক আকর্ষণীয় জিনিসের মধ্যে ছিল গোবরের বৈজ্ঞানিক টব, ও সারের ধূপকাঠি, যে-ধূপকাঠি দেড় মাস মত নিজের নিয়মে ক্ষয়ে-ক্ষয়ে গাছকে সার যোগাবে ভারসাম্য রেখে! উঃ, কী বিজ্ঞান!
মেধা কখনো বয়স বা পদ্ধতিগত শিক্ষা ডিগ্রীর নিয়মে মাপা হয় না, তাই ক্যালেন্ডারের নিয়মে অপ্রাপ্ত বয়স্ক পাকিস্তানের মালালা মাত্র সতেরো বছর বয়সে শান্তিতে নোবেল পান, এবং তিনি যে সত্যি কতটা যোগ্য, সেটা আবার প্রমাণ করেছিলেন নোবেল পুরষ্কার নিতে গিয়ে বাঙ্কোয়েট স্পিচ এর মাধ্যমে ! তাঁর সেই বক্তৃতা আজ পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে সেরা পাঁচ ছয় জন ব্যক্তির বক্তৃতার মধ্যে গণ্য হয়! আমরা সেটা ইউটুবে শুনে বুঝতে পারবো, Malala Nobel speech. ইউটুবে দেখুন মার্টিন লুথার কিং এর public speech ” I have a dream”, বিশ্ব বিখ্যাত বক্তৃতা! তিনিও শান্তিতে নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন! ওই একটা বক্তৃতাই নোবেল পাবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট, আপনার শুনে মনে হবে পৃথিবীতে শরীর ও মন কাঁপানো এতো রোমাঞ্চকর সুখ ছিল, আগে কেন খুঁজে পাইনি!
নোবেল দিয়ে সকলের যোগ্যতা বিচার করতে পারি না, কিন্তু, ঘটনা ক্রমে তথ্যের কারণে বললাম মার্টিন লুথার কিং নোবেল পেয়েছিলেন! উনি কোনো কারণে নোবেল না পেলে কি ওনার যোগ্যতা কম ধরা হতো? নিশ্চই নয়!
হ্যাঁ, সতেরো বছরের স্কুল ছাত্রী মালালার নোবেল কক্তৃতা সেই পর্যায়ের বক্তৃতা হিসেবে ধরা হয়! পৃথিবীতে খুব কম জন ছিলেন ও আছেন, যাঁরা এমন করে বক্তৃতা দিতে পেরেছেন ও পারেন!
নিচু ভাবনার সামাজিক জীবনে প্রথাগত বয়স ও মুখস্ত বিদ্যার শিক্ষা ডিগ্রীর মাপ দিয়ে, কখনো অর্থনৈতিক মাপকাঠি দেখে মানুষের যোগ্যতা বিচার হয়, আর তাই এই দুর্বল সিদ্ধান্তের সামাজিক ব্যাবস্থার সমাজ এগুতে পারেনা! শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে এও বিশ্বাস আছে, বিবাহ না করলে নাকি বুদ্ধি খোলে না! আসলে এইসব ভুল ভাবনার সমাজ ব্যাবস্থায় এই দেশ বিপন্ন, আমার দায়িত্বে কথাটা দুঃখের সাথেই বলছি! আমরা কেউ ভাবিনা যে — অনন্ত সময়ের কাছে আমাদের সকলের বয়স শূন্য, এবং প্রাকৃতিক নিয়মে কেউ না কেউ আগে পিছে জন্মায়, ও পরিবেশ ও সামর্থ অনুযায়ী যে যেমন ভাবে শিক্ষিত হয়, কিন্তু মানুষের মেধার ও অন্যন্য বেশ কিছু প্রকরণেই জুনিয়ার সিনিয়র নির্বাচিত হয়!
আসলে যখন কোনো দেশ পিছিয়ে থাকে তখন তার অর্থনীতি যতই চাঙ্গা হোক, ভাবনার ভিতর ভুল থাকলে সেই দেশ হয় বিপন্ন ও তার সব উন্নতির কাজগুলি হয় অসার!
এই সব ব্যাখ্যা আমাদের প্রয়োজন! আর এঁদের মধ্যে এলে দেখবেন, স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী থেকে বাবা মা ও সম্পর্কে আরো বড়, ইত্যাদি সকলেই একই তারুণ্য নিয়ে চিন্তার জগতে ও বাস্তবের মাটিতে বন্ধুসম অনুভবে আয়োজনে কাজ করছেন! এই জাতীয় দৃশ্য আমাদের দুর্বল সমাজকে আন্তর্জাতিক করে তোলে!
না, আমি এঁদের নিয়েই শুধু বলছি না, এই জাতীয় ভাবনায় দেশে পৃথিবীতে যত সংস্থা বা ব্যক্তি আছেন, সবাইকেই আমার এই প্রতিবেদন স্পর্শ করবে সম্মান জ্ঞাপনে!
তাঁরাই প্রকৃত সুখি, যাঁরা নিজেদের অনুভবে বড় কাজ করে যান, যা তাঁদেরকে সুদীর্ঘ ব্যাপ্তিময় শান্তিতে প্রতিস্থাপিত করে! এঁদের মূল্যায়ন আমি করবো, কী যোগ্যতা আছে আমার! এই জাতীয় মানুষেরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুন, তাঁরা সেলিব্রিটির উর্দ্ধে সেলিব্রিটি, লাখ -লাখ মানুষের হাততালির বাইরে তাঁদের নিজস্ব গৌরব!
যাইহোক, এই বসুন্ধরা মেলায় উপস্থিত সব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে সমান শ্রদ্ধা জানিয়ে, আয়োজক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে আর একটু কিছু বলে এই লেখাটা শেষ করছি!
আয়োজক প্রতিষ্ঠান, মাদার আর্থ ফাউন্ডেশন 2020 করোনা-covid-19 অতিমারীর ভয়ঙ্কর সময়েও নানা স্থানে গিয়ে গাছের ওপর নানা অনুষ্ঠান করেন, এবং এঁদের কেউ-কেউ সহযোগী কর্মী ওই সময়ে নিজস্ব কোনো রোগে অকাল মৃত্যুতে বিদায় নেবার পরেও গভীর বিষন্নতা নিয়ে এঁরা তবুও নিজেদের কাজে থেমে থাকেন নি!
শুধু এই কাজ নয়, আরো নানা মুখি উত্তরণের কাজে এঁরা সুযোগ ও সামর্থ থাকলে এগিয়ে যান! সেইগুলি এখানে আর খুলে বলে বিস্তৃত করছি না!
এই ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে এখন কারা, এই প্রশ্ন করলে উত্তরে বলবো, যাঁরা তাঁদের আগের কর্মজীবনে দেশকে গৌরব এনে দিয়েছেন, তাঁদের কেউ-কেউ এই ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রে! তাঁরা তাঁদের নাম অফিসিয়াল কাজ ছাড়া প্রয়োগ করতে স্বস্থি অনুভব করেন না!
এখানে পদমর্যাদা নিয়ে খন্ডযুদ্ধ নেই, কারণ, গাছের উদ্দেশ্যে যাঁরা জীবন সোঁপেছেন, গাছকে অনুভব করেছেন, সারা বিশ্বের লুকিয়ে থাকা নীরব সত্য তাঁদের মধ্যে মিশে গেছে, তাঁরা কোনো পদ পাবার জন্য খন্ড যুদ্ধ করাকে ছেলেমানুষি ছাড়া অন্য কিছু ভাবেন না!
এঁরা Sunday Programme করেন বিভিন্ন স্থানে! এঁরা বিশ্বাস করেন যে, প্রকৃতির সাথে সাহিত্য শিল্প সংস্কৃতি যুক্ত না হলে কর্মের তৃপ্তি পূর্ণ হয় না, মানব অস্তিত্বের ব্যাপ্তিতে খামতি থাকে! তাই বাৎসরিক বসুন্ধরা মেলা সহ সাধারণ Sunday Programme এ এঁরা কবিতা, নাটক, আবৃত্তি, বক্তৃতা, ছবি আঁকা প্রভৃতি নিয়ে ফাংশান করেন! কাজের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন!
কেউ আমাকে বলবেন, এইভাবে তো কোনো স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান নিয়ে লেখা হয়না, বা দেশে এরকম অনেক উন্নত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান আছেন, যাঁদের নিয়ে এইভাবে কেউ একক ভাবে বা সম্মিলিত ভাবে আলোকপাত করেনি, তাই এইভাবে এতটা এমন করে লেখাটা কতটা ঠিক!
এখানে আমার উত্তর হলো, কেউ যদি এই নিয়ে ভাবনার পরিসরে সময় দেবার সুযোগ না পান, তাহলে সেজন্য দায়ী কে? আমি সেই ভাগ্যবান, এঁদের সাথে একটুখানি মিলিত হবার সুযোগ পেয়েছিলাম!
কেউ বলবেন যে, আমার এগুলি আবেগ! আমি বলবো, প্রমাণ করুন! তাহলে এইজাতীয় লেখা আর লিখবো না!
একই সাথে এই লেখার মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম, সেইসব ব্যক্তি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাদের প্রতি শ্রদ্ধা, যাঁরা করোনা মড়কে (Corona Pandemic ) মৃত্যু-ভয়কে তুচ্ছ করে সাহস নিয়ে পথের ওপর গরীব মানুষদের বাঁচবার দ্রব্য বিতরণ করেছিলেন, সেই জন্য মানুষের কাছে ছোট হয়ে টাকা ভিক্ষা করেছিলেন, তাঁদের প্রতি এই প্রতিবেদনে সমান শ্রদ্ধা জানাই! সরকারি ত্রাণ যখন অজানা নিয়মে কোথায় চলে যায় আমরা জানিনা, তখন এইসব সাহসী ত্যাগী ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন অসহায় মানুষ থেকে রাস্তার কুকুর, বেড়াল, পাখীদের বাঁচবার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে!
আসলে, আবার বলছি, পৃথিবীর যেকোনো বিপন্নতায় যাঁরা বিপদ-থেকে উদ্ধার করতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, কিংবা গৃহের মধ্যে থেকেও বুদ্ধি, সাহস ও যোগ্যতা দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে আগ্রহী হন, তাঁদের সবাইকে নিয়েই এই লেখাটি!
তাঁদের সকলের সম্মিলিত কাজেই টিকে আছে এই সৃষ্টি সমাজের শ্বাস প্রশ্বাস, সেই সমাজের মধ্যে আমিও একজন তুচ্ছ নাগরিক!
এরপরও কি আমাকে কেউ দোষ দিয়ে বলবেন, এই প্রতিবেদন লেখার পেছনে আমার কোনো অতিরঞ্জিত আচরণ আছে?
এঁরা শেখান, গাছকে কেন তুমি ভালোবাসবে! এঁরা শেখান, গাছ কেন তোমার সেরা বন্ধু! গাছই আমাদের প্রকৃত জীবন দিয়েছে, গাছ-ই আমাদের জীবন রক্ষা করে, গাছই আমাদের প্রকৃত নিষ্পাপ শ্রদ্ধেয় পূর্বপুরুষ, এবং প্রকৃত ভালোবাসা বোঝবার জন্য প্রকৃত বন্ধু ও পৃথিবীকে সুস্থ রাখার যোগ্য বংশধর!
গাছ-ই জীবনের সবকিছু প্রয়োজন মেটায়, আমাদের ভালোবাসে, আমাদের জন্য কাঁদে, আমাদের বাঁচাতে আত্নত্যাগ করে, — কিন্তু সেই গাছের সাথে আমরা করি সবচেয়ে দুর্ব্যবহার ও বেইমানি! এই নির্মমতা নিয়ে একজন মানুষ আর একজনকে বলে, ” আমি তোমায় শ্রদ্ধা করি, ” কেউ বলে, ” আমি তোমায় ভালোবাসি!”, কেউ বা বলে, ” আমি তোমায় স্নেহ করি!”
আসলে, মানুষের সাথে মানুষের এইসব শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, স্নেহ সবই নাটক বা কৌতুক, কারণ, — নির্লোভ, সৎ, বিনয়ী ও সর্বত্যাগী গাছকে আমরা শ্রদ্ধা করিনা, ভালোবাসিনা, স্নেহ করিনা, বরং নির্মম দুর্ব্যবহার করি, তাহলে স্বার্থপর চিন্তার মানুষ-বন্ধুকে আমরা শ্রদ্ধা করবো কী করে, ভালোবাসা দেবো কী করে, স্নেহ দেবো কী করে? আসুন তো একবার ভেবে দেখি এই আড়াল হয়ে থাকা সত্যটা!
সত্যি, এই চিন্তা না নিলে আমরা কোনো দিন পাবো না শান্তির দিশা, পৃথিবীতে কোনো সমস্যার সমাধান হতে পারে না বৃক্ষ-প্রেম ছাড়া!
অথচ এই জাতীয় ভাবনায় যেসব সংস্থা নিবেদিত — কর্মের নানা রকমারি আয়োজনে, তাঁদেরকে সরকার ও ব্যবসায়ী ও সাধারণ নাগরিকগন মন-খুলে অর্থ সাহায্য করেন না! দুঃখ হয়! অথচ কত মানুষ কত অর্থ, সম্পদ উদ্দেশ্যহীন ভাবে বা ক্ষতিকারক কাজে নষ্ট করেন!
সমাজ সেদিন এগুবে যেদিন সৎ স্বেচ্ছাসেবীদের সরকার, ব্যবসায়ী ও জনগণ মুক্ত মনে অর্থ দেবেন ও একই ভাবে স্বেচ্ছাসেবী কর্মীদের সুখে দুঃখে তাঁরা উপযুক্ত অর্থ সাহায্য করবেন — শ্রদ্ধা দিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতায়! কারণ স্বেচ্ছাসেবী কর্মীগনও মানুষ, তাঁদেরও জীবন আছে, শিক্ষা আছে, জ্ঞান আছে, সম্মান আছে, ত্যাগ আছে, এবং তাঁরাই সমাজকে স্বপ্ন দেখান, সুস্থ রাখতে সাহায্য করেন! স্বেচ্ছাসেবী মানে উপোষ ও নগ্ন হয়ে পরের জন্য কাজ করো — এমন দাবী যারা করবে, তারা মূলত লুটেরা! তারা পাবার জন্য দাবী করে, দেবার জন্য আগ্রহী নয়! এইসব স্বার্থপর নাগরিকদেরও সাহায্য করাটা নৈতিক অপরাধ বা কষ্ট দ্বারা সঞ্চিত সম্পদের অপব্যবহার, আমার ধারণা!
আমার এক পরিচিতা সমাজসেবী, বর্ধমানের অজ পাড়াগাঁয়ে থেকেও শিশুদের জন্য কাজ করেন! কবিতা লেখার সূত্রে পরিচয় হয়েছিল! সমাজ সেবার জন্য রাজ্য সরকারের কোনো একটি পুরস্কারে পুরস্কৃত! তিনি দুঃখের সঙ্গে আমাকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি যাদের জন্য অনেক কিছু করে মুখে হাসি ফুটিয়েছেন, তারা বড় হয়ে তাঁকে সমাজসেবার জন্য সামান্য পঞ্চাশ-একশত টাকাও চাঁদা দিতে আগ্রহী নয়, বেশি টাকা দেওয়া তো দূরের কথা! বরং এড়িয়ে থাকে! আমি ওই মহিলাকে জানি, যিনি সত্যিই একজন দরদী নাগরিক, নিজেই একক ভাবে স্বেচ্ছাসেবী! তাঁর ছেলেরা তাঁর সাথে ঝগড়া করে — উপকার নিয়ে সব চলে যায়, যারা উপকার নিয়ে চলে যায় তারা একটুকুও ফিরে তাকায় না! কাদের জন্য নিঃস্ব হয়ে সেবা করছো তুমি?
আমি মনে করি, তারই নেবার অধিকার আছে, যার দেবার প্রবণতা আছে, এই সত্যটাও চুপিচুপি বুঝে আমাদের চলা দরকার, তা না হলে আমরা স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করতে গিয়ে স্বার্থপর মনগুলোকে শিক্ষা ও ক্ষমতা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার নামে সমাজের ভিতর স্বার্থপর ও লুটেরার সংখ্যা বাড়িয়ে তুলি! সেই জন্যই অনেক স্বচ্ছাসেবী সংস্থা এবং ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে যাঁরা সমাজসেবা করছেন — তাঁদের সকলের কাজের ফলাফল নিস্ফলতায় দাঁড়িয়ে যায়! এনিয়ে এখানে আর ভেঙে বলা দরকার নেই, যাঁরা বোঝার বুঝে গেছেন, আমি কী বলছি!
কিংবা, এটাই ঠিক, দুস্থ শিশুদের ও দুস্থ বড়দের জন্য কিছু করার আগে তাদের মানসিক প্রবণতাকে উন্নত করা দরকার বিশেষ ট্রেনিং দিয়ে, তবেই স্বেচ্ছাসেবীদের কষ্টের সঞ্চয়গুলি সত্যিকারের সমাজের কাজে লাগবে!
সব কথাগুলি বলছি আমার মতো ভাবনাতে, উপদেশ নয়, — আসলে একজন লেখক বা যে কেউই হোক, কিছু বলতে বা লিখতে গেলে নিজের ভাবনাটা শেয়ার করতে হয়! আপনারা সেই ভাবেই পড়ুন, কে কোন বিচার থেকে কোনটা কতটা গ্রাহ্য করবেন, সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার!
আমাকে আপনারা কঠোর বলবেন, কিন্তু সঠিক বিচার যেটা — সেটা চিরকালই কঠোর, যা কঠোর তা সব সময় শয়তান নয়, বরং ভুল বা শয়তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর যোগ্য শক্তি!
যাঁরা ধর্মের নামে কেবলি নরম হতে বলেন , সেটাই নাকি ধর্ম, তাঁরা সব চেয়ে অধর্ম করেন, কারণ তাঁরা বুদ্ধি-বিচারের শক্তি ও সাহস-শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়ে পৃথিবীতে আসল প্রতিবন্ধীর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলছেন, যার ফলে পরিবার ও সমাজের সর্বত্র জমিয়ে চলছে আগ্রাসন ও নানা নির্মমতা!
আসলে আমাদের প্রবণতা ভালোকে অগ্রাহ্য করা, উপকারীকে এড়িয়ে যাওয়া!
এই স্বভাব আমরা সংসারে ছড়াই বলেই আমরা নিজেরাই নিজেদের সংসারের নানা সদস্য দ্বারা বিপন্ন হই, আর সেই বিপন্নতার কাছে নীরবে দুস্থ হয়ে বেঁচে থাকি, এই সত্যগুলো আমরা না ভাবলে কোনোদিন প্রকৃত শিক্ষিত বলে দাবী করতে পারি না এবং বিপন্নতা থেকেও মুক্তি পেতে পারি না!
অন্যদিকে, যাঁরা মহৎ পথে চলতে ভালোবাসেন, তাঁরা চাইবেন মহৎ পথে চলবার নিয়মিত সুখ পেতে , তাই বিশ্বকে জয় করার নিজস্ব অনুভবে তাঁরা বিনীত, কিন্তু বাকি সমাজ যখন তাঁদের প্রতি সাবলীলতা হারায়, সেটা মারাত্মক অপরাধ, এই সত্যটা কবে বুঝবো আমরা!
মনে পড়ে একটি কাহিনী, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু রাত্রে বাড়ি ফিরেছেন! রাত্রে বাগানে বেরুতে নেই, কিন্তু তবু তিনি নিজের ইচ্ছেতে কী মনে করে দুঃসাহস নিয়ে ঢুকে গেলেন বাগানে! এবার হঠাৎ একটি গাছ তার শাখা নামিয়ে বিজ্ঞানীকে ঝাপ্টা মেরে দিলো! সেই ঝাপ্টার মধ্যে কী যেন একটা কষ্ট ও ক্ষোভ আছে বিজ্ঞানী এটা অনুভব করলেন! তিনি দেখলেন, কোনো পাখী বা পশু, হনুমান ওই গাছের ডালে আছে এমন কোনোকিছু প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না!
তিনি বাগান থেকে এবার বাড়িতে ঢুকে বাগানের মালিকে জিজ্ঞেস করলেন, ” হ্যাঁ রে, সব গাছে জল দিয়েছিস? “
মালি বললো, ” কেন বাবু, কী হলো? “
বিজ্ঞানী বললেন, ” বলবি তো, সত্যি করে বল, তোকে বকাবকি করবো না, কথা দিচ্ছি!”
মালি বললো, ” বাবু, আজকে সবগুলি গাছে জল দেবার পর দেখলাম একটা গাছে বাকি আছে, ভাবলাম, আবার কি কষ্ট করে পুকুর থেকে জল এনে দেবো! — না, থাক, একদিন একটা গাছে জল না দিলে কী আর হবে, পরের যেদিন জল দেওয়া হবে সেই দিন ওই গাছটাকে জল দিলেই হবে! তাই একটা গাছে দিই নি! কিন্তু, কী করে এটা বুঝলেন বাবু?”
জগদীশ চন্দ্র এবার কাহিনীটা বললেন, এবং মালি বললো যে, সে ঠিক ওই গাছেই জল দেয়নি — যে-গাছটা তার বাবুকে ঝাপ্টা মেরেছে!
এই ঘটনা বলে দেয়, গাছের অনুভূতি কতটা, এবং কেন জগদীশ চন্দ্র বোস বিশ্ব বিখ্যাত মহৎ বিজ্ঞানীদের তালিকায় গ্রাহ্য হয়েছিলেন!
এইজাতীয় সত্য ও অনুভূতির সত্যিটা কখনোই আদালতের উকিলের যুক্তিতে ধরা যাবে না!
তাই, এইরকম যাঁদের মরমী গভীর অনুভব, তাঁরাই গাছ, পশু, পাখী, কীট, মাটি, ঝোপঝাড়কে ভালোবাসতে পারেন! আমাদের চোখের আড়ালে তাঁরাই বিশ্বশান্তির দূত! আমাদের মত তুচ্ছ মনের মানুষদেরকে তাঁরা নম্র হৃদয়ে ক্ষমা করে যান :
“হে ঈশ্বর, এরা জানেনা এরা কী করছে, এদের ক্ষমা করো!”
আচ্ছা, পৃথিবীতে যদি এমন কোনো দিন আসে, যেকোনো পদক কেউ দিলে তার ভিতর একটা ছোট্ট চারা গাছ থাকবে, না হলে সেটা পদক হিসেবে পূর্নতা পাবে না, নোবেল বা অলিম্পিক, ইত্যাদি সবর্ত্র মেডেল দেবার সাথে একটি চারাগাছ দেওয়া হবে, যেকোনো উৎসবে যেকোনো উপহারের সাথে একটি চারাগাছ দেওয়া হবে, দেশের মন্ত্রী কোনো চারাগাছে ছুঁয়ে শপথ বাক্য পাঠ করবেন! কোনো মানুষকে কোনো লোন বা যেকোনো সুবিধা দেওয়া হবে— সেই লোকটি চিন্তায়, চরিত্রে ও বাস্তবে কতটা বৃক্ষ-প্রেমী সেটার প্রমাণ দেখে, তাহলে পৃথিবীটা হবে দার্শনিক ও মুক্ত জ্ঞান ও সহজ হৃদয়-দানে অভ্যস্ত সভ্যতা! তখন, মানুষকে শাসন করার জন্য কোনো আতঙ্ক তৈরির পদ্ধতি দরকার হবে না! সেই দিনটি আমরা কবে দেখবো?
একই সাথে সেই দিনটা আমরা কবে দেখবো, যেদিন প্রেমিক প্রেমিকা ভালবাসার প্রতীক হিসেবে গাছ থেকে গোলাপ না ছিঁড়ে পরস্পরকে উপহার দেবে একটি করে চারাগাছ! Beautiful কোনো ঝাঁ চকচকে চারাগাছ, ছোট্ট সুন্দর টবে!
সেই সময় খুব ছোট্ট-ছোট্ট টবে চারাগাছ বিক্রি হবে বাজারে, তাতে স্টিকার দেওয়া থাকবে — nursery of love, বা Sign of Love ইত্যাদি! যেমন আজকে রাখী বিক্রি হয়, তেমনি বাজারে বিক্রি হবে প্রেমের উপহার হিসেবে ছোটছোট টবে কত রকমের চারাগাছ! কেউ কারোর বাড়ি গেলে যে-উপহার সে নিয়ে যাক না কেন, সেই উপহারের সাথে একটি গ্রন্থ বা চারাগাছ না নিয়ে গেলে নিজেকে অশিক্ষিত বা দরিদ্র বলে ভাববে, অপমানিত বোধ করবে, — কে বলতে পারে, হয়তো সেই দিনটা আর খুব বেশি দূরে নেই!
কিংবা নারী-পুরুষ একত্রে বসবাস করার জন্য যে-অনুষ্ঠান হবে সেখানে অগ্নি স্বাক্ষী নয়, বৃক্ষকে স্বাক্ষী রেখে তারা বন্ধনে রাজি হবে, তা প্রচলিত কথায় বিবাহ বা লিভ টুগেদার, যাই হোক! এবং সেখানে খাদ্য পরিবেশন হবে কোনো প্রাণী হত্যা করে খাবার নয়, সেখানে খাওয়া হবে শুধু ফলমূল, সেই সাথে নিরামিষ জাতীয় নানা খাদ্য!
আমরা উপলব্ধি করতে চাইনা, তাই শিক্ষিত হয়েও অশিক্ষিতের মত আচরণ করি!
মানুষের যেকোনো শুভ অনুষ্ঠান হয়, তা অন্নপ্রাশন, বিবাহ, পারলৌকিক অনুষ্ঠান, পিকনিক, পার্টি, আড্ডা, সবকিছুই প্রাণী হত্যা করে, কিন্তু শুভ কাজে প্রাণী হত্যা করে খাদ্য তৈরীটা কতটা মর্মান্তিক, সেটা আমরা একটু সতর্ক নিয়মে ভাবলে চমকে উঠবো!
আসলে আমরা ভাবিনা এতটা গভীরে, কিন্তু ভাবতে চাইবো — যদি গাছকে ভালোবাসি! কেউ বলবেন, গাছকে মেরে তো মানুষ খায়, আমি বলি — এটা ভুল, কারণ, গাছের ফুল ফল মানুষ সংগ্রহ করে, গাছকে মারে না! কিছু কিছু শস্যের ক্ষেত্রে গাছকে মারতে হয়, কিন্তু সেটা একটা চরম সময়, যখন গাছ যেন বলেই দেয় — নে, তোরা এবার আমায় ব্যবহার কর, আমি তোদের বাঁচানোর জন্য উৎসর্গীকৃত!
আসলে, গাছ-ই পারে আমাদের মানুষ করে তুলতে! তাই গাছের সংস্পর্শে আমাদের থাকা জরুরি!
যাঁরা বলবেন, আগুন আমাদের সভ্যতা দিয়েছে, তাই আগুনকে স্বাক্ষী করে নারী-পুরুষের একত্র থাকার শাস্ত্রীয় অধিকার হিন্দু ধর্ম পালন করে, অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে তাঁদের ধর্মগুরুদের অনুমতিতে ও আশীর্বাদে নারী-পুরুষের একত্রে বসবাস করার সামাজিক রীতি অনুযায়ী অধিকার দেওয়া হয়!
আমি বলি, এইসব রীতি আজ থেকে বন্ধ হয়ে নতুন রীতি যদি আসে কেমন হয়? — চারাগাছ উপহার দিয়ে পাত্র ও কন্যা পক্ষ সম্পর্ক স্থাপন করুক, সঙ্গে দুই পক্ষ থেকে কমপক্ষে একটি করে বই, কারণ, বৃক্ষ দিয়েই আগুনকে বাস্তবে দেখানো হয়, কারণ, শুকনো কাঠেই আগুন জ্বালানো হয়! এবং সব ধর্মের পুরোহিত বা ধর্মগুরুগন গাছের দেওয়া শ্বাসে বাঁচেন, তাহলে আমাদের জীবনের মূল সূত্র ও সর্বোচ্চ সম্মান গাছের প্রাপ্য, সেটাকে এড়িয়ে আমরা অগ্নি, ধর্মগ্রন্থ, পুরোহিত, পন্ডিত, ধর্মগুরু, — এঁদেরকে গাছের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিই শুধু নয়, বরং এটাই বলা যায়, গাছকে আমরা কোনো মূল্যই দিই না! আর, বই নিয়ে বললাম, কারণ, বই জ্ঞানের সঞ্চয় করে!
যাইহোক, উপরিউক্ত বিশিষ্ট নাগরিকদের আপনি অবশ্যই গুরুত্ব দিতে পারেন, কিন্তু, গাছের চেয়ে বেশি নয়, বইয়ের চেয়ে বেশি নয়, এই গভীর সত্যগুলিকে কবে ভাববো আমরা?
ঠিক এমন দিন যবে আসবে, সেদিন থেকে মানুষজাতি যান্ত্রিক সভ্যতার প্রতি মোহ হারাবে ও প্রয়োজনের বেশি যন্ত্র ব্যবহার করবে না! গাছকে যত্ন করে বাঁচাই হবে তার সভ্যতা!
তখন মানুষ স্টেটাস বলতে বুঝবে গ্রন্থ ও বৃক্ষ নিয়ে নানা আলোচনা, এবং জৈবিক বিভিন্ন সুখের অধিকারগুলি প্রকৃতির কাছে হবে বৈধ, এবং জৈবিক নানা অনুভূতির গভীরতা যাবে বেড়ে, কারণ, তখন মানুষ তার আগ্রাসী ও নাটকীয় স্বভাব হারিয়ে হবে স্বাভাবিক — সকলের কাছে সকলে!
তখন দাঁড়িয়ে আমরা আজকের সভ্যতার স্মৃতিচারণ করে বলবো — বর্বর, অজ্ঞ, অসভ্য, ইতর! হায়, আমরা কত পিছিয়েছিলাম!
হ্যাঁ, এটাই তখন বলবো আমরা!
এখন কয়েক বছর ধরে জার্মানিতে চলছে clean meat নিয়ে গবেষণা! clean meat মানে প্রাণী হত্যা না করে প্রাণীর কোষ বা cell বিভাজন ঘটিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বড় আকারে ওটাকে গড়ে তোলা, তখন সেই বড় অংশ থেকে কেটে নেওয়া হয় কিছুটা অংশ পরপর, এবং ওই অংশটি যে-প্রাণীর শরীরের কোষ বা cell থেকে তৈরী — সেই প্রাণীর মাংস হিসেবে বিক্রি হয়!
সেই বিজ্ঞানীরা বলছেন, “কয়েক বছর পরে আমাদের বংশধরেরা বলবে, আমাদের বাপ ঠাকুরদারা কী নিষ্ঠুর ছিল! প্রাণী হত্যা করে খেত, ইস এতো বর্বর ছিল!”
এখানে ভেবে দেখুন, মানুষ পরপর কী ভাবে পরিবর্তন করছে তার জীবন প্রণালী — এগিয়ে যাচ্ছে সব প্রাণীদের বাঁচতে দেবার অঙ্গীকারে!
আমাদের দেশে কেউ বলবেন, খাদ্যে কেন ব্যক্তি-রুচি মানা হবে না? কেন আমিষ খাদ্য প্রত্যাহার করতে হবে? প্রাণী হত্যা করলেই বা কী হবে!
তার উত্তরে আমি বলছি, খাদ্য নিয়ে আপনার রুচি বা লোভ বা অভ্যেসকে কেউ বাধা দিচ্ছে না, কিন্তু, সবচেয়ে মাংস-প্ৰিয় জাতিরাই আজ clean meat নিয়ে আগ্রহী, একইসাথে তাদের অনেকে বলছে যে — clean meat খাবার দরকার হবে কেন, ওটাও তো বাঁকা পথে প্রাণীকে খাওয়া! হয়তো হত্যা করে নয়! মাছ মাংস ছোট বেলা থেকে খাওয়া অভ্যেস করেছি বলে খাই, পরপর সেই অভ্যেস কমাতে থাকলে আমরা নিরামিষ ভোজী হতে পারি, এবং বংশধরদেরকে প্রথম থেকে খাদ্যাভাস বদলে দিলেই হলো! এইভাবে একটা যুৎসই সভ্য দরদী মানব সভ্যতা গড়ে তোলা যায়! তবে পাল্টা অভ্যেসটা একটা বিশেষ পদ্ধতিতে করা দরকার, তা না হলে আমিষভোজী লোকেরা হঠাৎ শারীরিক অসুবিধায় পড়তে পারে! যদিও ভালো ইচ্ছে থাকলে নিজস্ব অনুভূতি দ্বারা পরপর পর্যায় বুঝে-বুঝে অভ্যেসকে উন্নত করা যায়!
আসলে আমি এতক্ষন যা বললাম, সবই কিন্তু গাছকে ভালোবাসার মত নরম জীবনে বয়ে যাবার ধারাবাহিক কাহিনী! এর দ্বারা এটাই বোঝাতে চাইছি, গাছকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে যে-নীরব অনুভূতি মানুষকে উন্নত হবার দিকে নিয়ে যায়, সেই উন্নত অনুভূতির একটা প্রকরণ জার্মানিতে clean meat এর আবিষ্কারের মধ্য-দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের, আরেক রকম করে! মূল জিনিস অহিংসতাই শ্রেষ্ঠ, এটাই মানুষ বিশ্বাস করছে নানা প্রকরণে! আর সেই চিন্তা-প্রকরণের শ্রেষ্ঠ সূত্র ও শিক্ষক বৃক্ষ-প্রেম!
আজকের বৃক্ষ-প্রেমী সংস্থাগুলো কি আমাদের সেই দিকেই নিয়ে যাচ্ছে, প্রকৃত সভ্যতার দিকে!
আমরা কারসাজীকে ভাবি কাজ, কাজকে ভাবি ঝামেলার কারণ! এই চরম দুঃশ্চরিত্র স্বভাবকে শুধরে দিতে থাকে গাছের প্রতি ভালোবাসা! এখন গাছ নিয়ে ভাবতে-ভাবতে অনেক গভীরে ঢুকে গেলাম, মনে হলো একটা কবিতা লিখি! না লিখে বাকি কথাগুলো বলতে পারছি না ! কারণ, বাকি কথাগুলো এই কবিতাতেই আছে! তাই লিখে ফেললাম “তুমি গাছ ” নামে কবিতাটা! গাছ নিয়ে আমার অনেক কবিতা আছে, কিন্তু “তুমি গাছ” নামে কোনো কবিতা আছে কিনা এই মুহূর্তে মনে আসছে না! যাইহোক লেখাটি পড়ুন! একটা কথা, এই কবিতাতে চিত্রকল্প দিয়ে কাজ করিনি, এটাকে সার্বিক জনগনের কবিতা হিসেবে লিখেছি, সহজবোধ্য ভাবে! এর পরের কবিতা “রাত-সাগর প্রজ্ঞা”-তে ভিন্নমুখি taste দিয়েছি চিত্র-কল্পের সাথে আরো অনেক কিছু দেওয়া! :–
কবিতা: তুমি গাছ 🌱
—————————-
ঋদেনদিক মিত্রো
তুমি গাছ, কত গুণে মাপা,
তুমি গাছ, বীজ, ফুল, ফল,
তুমি গাছ, শিকড় ও পাতা,
তুমি আনো আকাশের জল!
তুমি ঘাস, আর মহীরুহ,
তুমি ঝোপঝাড় হয়ে ঢাকো,
তুমি দাও সুন্দরে মোহ,
তোমাকেই দিয়ে হয় সাঁকো!
ভোর হলে তোমারি শাখায়–
রোদ প’ড়ে করে ঝিলমিল,
পাখপাখি খেলা করে যায়–
জেগে ওঠে বিশ্ব-নিখিল!
অমাবশ্যায় ঘোর নিশা–
ভূত প্রেত নিয়ে কত ভয়,
কত অনুভূতি হয় দিশা–
প্রাগৈতিহাসিক মনে হয়!
জোৎস্নার রূপকথা-রূপে—
তুমি গাছ — কত ভঙ্গিমা,
কত অনুভূতি চুপে-চুপে—
পের হয় কত সীমানা!
তুমি শ্বাস, বাঁচবার আশা,
তুমি ছায়া পথিকের কাছে,
পিঁপড়ে ও পাখী গড়ে বাসা–
তোমারই তো ডালপালা মাঝে!
প্রতিবাদী অস্ত্র বানায় —
তোমাকেই দিয়ে নানা রূপে,
বৃদ্ধ ও রুগী দুজনায় —
লাঠি ক’রে চলছে সুখে!
তোমাকেই দিয়ে হয় স্কেল,
হয় দাঁড়িপাল্লাও বটে,
তোমাকেই নিয়ে সব খেল–
দেখি সবদিকে জগতে!
তোমাকেই দিয়ে হয় বাড়ি,
কুটির, প্রাসাদ সবটাই,
উনুনেতে দেখো কড়া, হাঁড়ি,
তুমি জ্বলো, তাই খেতে পাই!
তুমি রূপ, তুমি রঙ হও,
তুমি হও শস্য ও খড়,
দিনরাত কত জ্বালা সও,
নেই বিশ্রাম, অবসর!
প্যান্ডেল বাঁধা হবে যদি—
তোমাকেই দিয়ে শুরু হয়,
তোমার ভেষজে সারে রোগী,
তুমি হলে মহা বিস্ময়!
তুমি নড়ো হাওয়াতে, আবার–
তুমি হয়ে ওঠো খরো ঝড়,
মাটি হতে সাগর, পাহাড়,
সবখানে তুমি বিস্তর!
যত করে ভাঙি, কাটি, —শেষে–
ফের বেঁচে ওঠো কিভাবে,
নৌযান হয়ে জলে ভেসে–
পারাপারে মাতো কী লাভে!
ডুবে যাওয়া তরীর নাবিক–
জলে ভেসে হতভম্ব,
কখন আসবে ভেসে ঠিক
এক টুকরো — কাঠ খন্ড!
তুমি গাছ, সবটাই সুখ,
তুমি জানলা ও দরজা,
তুমি হও বাক্স সিন্দুক,
কখনো বা জয়ধজ্জা!
গৃহে আসবাবের বাহার –
তৈরীটা তোমাকেই দিয়ে,
তুমি কখনো বা উপহার–
নানা রূপ দিয়ে সাজিয়ে!
তোমাকেই দিয়ে যন্ত্র,
তোমাকেই দিয়ে গাড়ি-ঘোড়া,
তোমাকেই দিয়ে গ্রন্থ,
তোমাকেই নিয়ে হাঁটে খোঁড়া!
শিক্ষক তোমাকেই দিয়ে
ছড়ি করে করেন শাসন,
বসা হয় তোমায় নিয়ে–
পিড়ি হতে রাজসিংহাসন!
যে-খাতায় করি লেখালিখি,
তৈরি তো তোমাকেই দিয়ে,
তুমি গাছ, তুমি প্রকৃতি–
জগৎকে রাখো সাজিয়ে!
সমুদ্রতট — ক্ষয়ে গেলে–
তোমার শিকড়ে ধরে মাটি,
তোমার হাওয়ায় সব ফেলে—
সাগরের পাড়ে কত হাঁটি!
বীজ হয়ে থাকো নীরবে,
কত যুগ হয়ে থাকো চুপ,
পাইনা তো ধরা অনুভবে–
বীজে থাকে মহীরুহ-রূপ!
যার এতো ত্যাগ আর বোধ,
তার অনুভূতি কী গভীর!
আমি তাই করে অনুভব–
একেলা হচ্ছি স্থবির!
কে তোমায় পেরেক পোঁতে,
ইচ্ছে মতন মারে কোপ,
তোমার দুঃখে জ্বলে উঠে
কে বা আছে করবে বা শোক!
তুমি গাছ, কে তোমার বনে–
আগুন লাগায় দিগ্বিদিক,
দাউদাউ জ্বলো নির্জনে–
কেঁদে মরে পশু, পাখি, কীট!
তুমি কাঁদো, সেকি বিভিষিকা,
নির্মম সেই দৃশ্য,
আকাশ-উঁচিয়ে লাল শিখা–
কেঁদে-কেঁদে হও নিঃস্ব!
কে তোমার হয়ে কাঁদবে,
মানুষ “দানব” হয় যদি,
কে তোমার হয়ে জাগবে,
কাপুরুষ যদি হয় কবি!
পৃথিবীতে বিপ্লব যত —
মানুষের চাওয়া-পাওয়া খেলা,
তুমি গাছ নিপীড়িত কত–
বিপ্লব নেই তার বেলা!
যদিও সবার পিছু তুমি,
সবার আগেও তুমি হাঁটো,
তুমি সেরা দাতা, জ্ঞানী-গুণী,
তবুও তোমাকে করি খাটো!
শানবাঁধানো ঘাটে দেখি
কোত্থেকে ফেটে বের হও,
তখনি তো চমকিয়ে উঠি–
কোনো ভাবে পরাজিত নও!
তুমি গাছ — বীজ হয়ে থেকে–
পাথরকে চুপচাপ একা–
ভেঙে দাও ধৈর্য রেখে–
কত কিছু আছে বলো শেখা!
দাঁত নেই, নেই লোহা স্টিল,
তবু ভাঙো বাধার পাথর,
কখনো বা যাও টপকে
উঁচু বাধা প্রাচীরের স্তর!
তুমি গাছ, কফিনের কাঠ,
তুমি গাছ, চিতা হয়ে পোড়ো,
তুমি গাছ, সব সংঘাত—
ভালবাসা দিয়ে তুমি মোড়ো!
তুমি গাছ, তবে বলি শোনো—
তোমার দুঃখে যাঁরা দুখী,
সন্দেহ নেই তায় কোনো–
তাঁরাই প্রকৃত জ্ঞানী, সুখি!
তোমার কষ্টে যাঁরা তীব্র–
প্রতিবাদে পড়েন ফেটে,
তাঁরাই তো চেতনায় সিদ্ধ–
জীবনের পথে যেতে-যেতে!
তোমার দুঃখে যাঁরা কেঁদে —
করেন নিয়ত বিপ্লব,
তাঁদেরকে নিয়ে কেউ ভেবে–
কজন বা করি অনুভব!
তাঁরাই তো মহাবিপ্লবী —
বিশ্বের স্বাধীনতা-চেয়ে,
তাঁরাই তো সব-সেরা কবি–
তোমাকে বোঝেন মনে, দেহে!
তাঁদের স্যালুট করি আমি —
যাঁরা বুঝেছেন তোমাকে,
হে গাছ, তারা আসামী —
তোমাকে কষ্টে যারা রাখে!
এসো পৃথিবীর সকলেই,
চাই বৃক্ষের স্বাধীনতা,
জীবনের সব সত্যেই —
বৃক্ষই হলো শেষ কথা!
বৃক্ষের হয়ে যারা কাঁদে–
তারাই সত্যবাদী ঠিক,
এই কথা যারা ব’লে জাগে–
তারাই আসলে নির্ভীক!
***
গাছের ওপর সরল নিয়মের অন্তমিলের কবিতাটা পড়ে যাঁদের ভালোলাগার পরেও মনে ইচ্ছে জাগলো, একটা অন্তর্মুখী স্টাইলের কবিতা, তাঁদের জন্য আর একটু পরিশ্রম জুড়ে দিলাম, না হলে সমালোচকগন বলবেন — ভিন্নমুখি হাতের খেলা কই?
তাঁদের জন্য এই কবিতাটি :–
————————–
রাত-সাগর প্রজ্ঞা ♠️
————————–
[ A Bengali Poem:– Rat-Sagar pragga (The Dark-taste in the Night Ocean) : Ridendick Mitro]
————————–
ঋদেনদিক মিত্রো
গাছ উড়ে যায় হাওয়া হয়ে রাত-সমুদ্রে,
এর নাম রাতের বাতাস,
নৌকোগুলো এখানে সেখানে
শরীরের ভিতর চৌর্য-আলোর
গোপনীয়তা নিয়ে
মিশে গেছে
প্রাগৈতিহাসিক অভিযোজনে!
জল, অথৈ জল,
জল মানে প্রাগৈতিহাসিক মুগ্ধতা,
নিশায় রাত্রি মাখে,
দিবসে সূর্য মাখে,
আর সেই সাথে সে
একটি শব্দ বয়ে বেড়ায় — চলাচল!
নৌকার নিচে নেমে গেছে জল-সুড়ঙ্গ,
জলজ প্রাণীরা জানে
সেই সুড়ঙ্গের মানচিত্র,
হে অদেখা বিগব্যাং,
তোমার ঔরসে ছিল
এতো রূপকথা?
এতো গ্রহ, নক্ষত্র, তারা, ছায়াপথ, ধূমকেতু,
জিজ্ঞাসার ইথার জগৎ,
আর এই পৃথিবী নামক এক অনির্বচন,
যেখানে চোখ বলে কিছু আছে —
যারা দ্যাখে জোৎস্নায় নক্ষত্র, তারা, মেঘ,
আর বৃক্ষের ভৌতিকতা,
যারা অমাবশ্যায় খুঁজে নেয়
নিজেদের জন্ম-কথা
আর চলে যাওয়ার হাওয়া-বদল,
মানুষ কি সত্যিই দৈহিক কিছু,
তাহলে সে অদৃশ্য হয় কেন?
বলতে-বলতে হঠাৎ একটা জাহাজ
ভোঁ-ভোঁ শব্দ করে
রাত্রের সাগরে জানিয়ে চলে যাচ্ছে–
“আওয়াজ” বলে তো কিছু আছে
এই nothingness এ,
এই শব্দ যতদূর যায়,
ছোট-ছোট নৌকোর মাঝিরা
নড়েচড়ে ওঠে
রাত্রির ঘুমন্ত পাখির ভ্রমে,
পুরানো কোনো
ভেঙে খসে পড়া অকেজো লাইটহাউস
ইতিহাসকে ছোট্ট আলোর অবয়বে
তুলে ধরে —
রাত্রির সমুদ্রকে
জানিয়ে দিচ্ছে : —
আমি আছি, আজো আছি,
কয়েকশ বছরের সেই লাইটহাউস,
মানুষ তুলনাহীন তাই,
সে এইসব দেখতে জানে!
————————————————-
(9, 10 ও 11 মার্চ 2021, final করতে রাত বারোটা পেরিয়ে 12 মার্চ পড়ে গেলো, সময় এখন 00:45 মিনিট ! Ridendick Mitro)
# লেখাটাকে নিখুঁত সুন্দর করার জন্য তিনদিনের বেশি সময় ধরে প্রায় তিরিশ-বত্রিশ বার চেষ্টা করেছি, এবার পাঠক-পাঠিকার কাছে পৌঁছে দিলাম, যদি তাঁদের শান্তি দেয়, পাঠে তৃপ্তি দেয়, শ্রম সার্থক!
—- লেখক
Note : (1) বিগব্যাং = প্রথম যে-বিন্দু ফেটে গিয়ে এই মহাজগতের সৃষ্টি হয়েছিল, সেই বিরাট ফেটে পড়ার মুহুর্ত ! বিজ্ঞানীদের কল্পনা!
(2) ইথার = সাধারণ ভাবে যেটার অস্তিত্ব দেখা যায় না, বোঝা যায় না, কিন্তু যার মধ্য দিয়ে বেতার তরঙ্গ চলাফেরা করে!
(3) Nothingness (নাথিংনেস)= জগতে সবই আছে, আবার কোনো কিছুই অস্তিত্বে যেন ঠিক সত্য নয়, এটাই নাথিংনেস!
———
বিঃদ্রঃ- ঋদেনদিক মিত্রো (Ridendick Mitro ), কলকাতা, ভারত, পেশায় ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় (অনুবাদ নয়, পৃথকভাবে ) কবি-ঔপন্যাসিক- নিবন্ধকার-গীতিকার, একটি বিশ্বজাতীয় সংগীত ” World anthem — we are the citizen of the earth”, ও ” corona anthem 2020 official Bengali song, প্রভৃতি বিশেষ ধরণের সংগীতের রচয়িতা! 2020 সাল পর্যন্ত বিবিধ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত গ্রন্থ আঠেরো-উনিশ টি !
—সম্পাদক, kabyapot.com
————————–
Advertisement : Mobile phone