|| নবাব সিরাজুউদ্দৌলা কবিতা সিরিজ : কবিতা নং -25 ||
|| কে জ্যোৎস্না-সমর্পিতা বিষয়টি জেনে, নিচে কবিতাটি পড়ুন ||
[এখানে সমর্পিতা হলেন একজন টিভি ষ্টার, যিনি কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদে এসে কাছাকাছি 2017 সাল থেকে নিয়মিত খোশবাগে নবাবের কবর স্নান করিয়ে ফুল দিয়ে প্রার্থনা করে পরিচর্চা করেন, নবাব সিরাজউদ্দৌলা মুক্ত বিদ্যালয় খোসবাগ — নামে একটি আন্তর্জাতিক ভাবনার স্কুল গড়েছেন, যেখানে নানা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হয় পূর্ণ নাগরিক হতে, কোনো বয়সের বাধা নেই — কারণ যে যেটা জানেনা সে সেটাই শিখবে! তিনি নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন যে তিনিই নবাবের প্রিয়তমা স্ত্রী লুৎফুন্নিসা ছিলেন কয়েক জন্ম আগে! যাঁর সিরাজ কেন্দ্রিক নানা আবিষ্কারসম মতামত ঐতিহাসিকদের চমকে দিচ্ছে, তাঁর সাহস, উদারতা, যুক্তি, বক্তব্যের কাঠামো, ও জীবন যাপন নিয়ে পৃথিবীর সেরা পরিচিতদের একজন হয়েছেন, তাঁর অবয়ব নিয়েই এই কবিতা, তাঁর জ্যোৎস্না-রূপটা কী ভাবে কবিতায় আনতে চেয়েছি, সেটাই এই গদ্য কবিতা, আরো কিছু অনিবার্য তথ্য দেখবেন কবিতাটি পড়ার পরে নিচে বিঃদ্রঃ-এ ]
?
কবিতা : জ্যোৎস্না সমর্পিতা
[ A Bengali Poem : Jyotsna Samarpita, i.e. “Samarpita Full Moon”, by Ridendick Mitro ]
———————————–
–ঋদেনদিক মিত্রো
গ্রামে মাটির দাওয়ায় যখন
জ্যোৎস্না এসে পড়ে,
তাকে বলে সমর্পিতা,
শব্দের এমনও লেনদেন হয়
মাঝে-মাঝে
যখন চোখ হয় রূপকথার,
এসো, সেই দিকে গড়িয়ে চলে যাই
জোৎস্না-হাওয়ায় কোনো শুকনো পাতার
গড়িয়ে চলার মত খানিকটা,
পল্টু নস্কর একটা চাটাইয়ে বসে
দড়ি পাকাচ্ছিলো
সামনে একটা ভূষা লাগা কাচের লণ্ঠন,
লণ্ঠনের পাশে খেলছে একটা মথ,
পল্টু নস্কর সেটাও দেখে নিয়ে
কী যেন ভেবে নিয়ে
আবার দড়ি পাকায়
হাতের অভ্যাস-চলনে,
এই দৃশ্যের নামও সমর্পিতা,
ছেলেটা একটা নড়বড়ে খাটে
ছেঁড়া মাদুরে বসে
পুরানো হেরিকেনের পাশে বসে
পড়ছে ইতিহাস,
একটু জোরে-জোরে পড়ছে —
নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন
বাংলা – বিহার -উড়িষ্যার
শেষ স্বাধীন নবাব,
কয়েক বার বাক্যটা পড়তে-পড়তে
হঠাৎ বাপকে বলে :–
বাবা, সিরাজকে দেখেছো?
বাপ পল্টু নস্কর কিঞ্চিৎ কিছু ভেবে দিয়ে
আবছা লণ্ঠনের দিকে তাকিয়ে
সেই মথটার দিকে তাকিয়ে
হাতের পাকানো দড়িটায়
জোড়া তালুর চাপ হালকা করে
বললে, ” লোকটার ঘর কোথায় ৱ্যা? “
ছেলেটি সবজান্তার মত মাথা নেড়ে বললে.
বাংলা -বিহার -উড়িষ্যা!
পল্টু নস্কর বলে, ” রাজু মাস্টারকে দিয়ে
একটা চিঠি পাঠা পোস্ট অফিসে,
লোকটার সাথে যোগাযোগ হবে! “
ছেলেটার মা রান্নাঘর থেকে
চচ্চড়ি রাঁধতে-রাঁধতে বলে —
” বাপের মত পন্ডিত হতে পারবি?
তোর বাপ কত বিচুক্ষণ দেখলি,
গেরামের কত লোক হিংসায় কয় —
পল্টু নস্কর, শালার আটান্ন পুরুষ পশু মূর্খ,
কিন্তু, আমি জানি তোর বাপের কত জ্ঞাইন!”
একথা কইবার সময় কেমন গব্ব ভরে
রান্নাঘরে কাঠ পাতার জ্বালানির
মাটির উনুনের সামনে
পল্টুর বউ ঠোঁটে তৃপ্তির হাসি হেসেছিলো,
সেটা পল্টু নস্কর মাথার ভিতর যেন
দেখতে পেলো হালকা অবয়বে,
খিড়কিতে রান্নাঘরের বিপরীতে
ঘরের সদরে বারান্দায় চাটাইয়ে বসে !
তারপর আবার দড়ি পাকাতে থাকে,
এই দৃশ্যের নামও সমর্পিতা,
এদিকে ছেলেটি কী যেন একটু ভাবলে,
তারপর বললে, ” বাবা, সিরাজ লোকটা তো
মারা গেছে ! তাহলে চিঠি যাবে কার কাছে?”
বাপ বলে, তাহলে তার ছেলের কাছে
চিঠি যাবে,
আরে ছেলেপুলেরা তো বাপের জমিজমা
দেখভাল করার জন্যি আছে!
এই সব কথা, কথার সাথে জ্যোৎস্না,
জোৎস্নার সাথে কিছু দূরে
গোয়ালের থেকে গরুর একবার হাম্বা ডাক.
পুরো পরিস্থিতিকে যেন সাজিয়ে দিলো–
পদ্মপাতায় কুয়াশার ফোঁটার মত
নির্ঝঞ্ঝাট ও সহজ,
এদিকে অদূরে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো —
বসির মিঞা শেখ,
পাড়ার চাচা,
লুঙ্গিটা পরে একটা আধ নোংরা গেঞ্জি পরে
জোৎস্নায় হেঁটে যেতে-যেতে বললে —
কইরে পল্টু , ছেলেকে পড়াচ্ছিস,
পড়া, পড়া, মানুষ কর !
পল্টু নস্কর একটু জোরে বললে —
চাচা গো , এযুগের ছেইলে,
শালারা কি আমাদের মত জ্ঞাইনী হবে?
তবু চেষ্টা করি!
চাচা কইলে, চেষ্টা কর, চেষ্টা কর,
পড়াশুনা ছাড়া জীবনটা ফাঁকা রে !
পল্টু নস্কর কইলে, চাচা গো,
এই জ্যোৎস্না রাতে,
যত পথ দেখা যাক,
রাত বলে কথা,
হাতে একটা লণ্ঠন নিতে পারতে?
চাচা তো জোৎস্নায় পথ দেখতে-দেখতে
পায়ের সাথে লুঙ্গির ছন্দ রেখে
চলতে-চলতে বললে —
পল্টু, এ মজা বুঝবি না রে,
মানুষের সাথে জ্যোৎস্না মিশে যায়!
এই দুনিয়া আসমানের কী খেলা! আহা !
এই কথাগুলো জ্যোৎস্না মাখা রাত হাওয়ায়
লেবু পাতার অঘ্রানের মত
চলাফেরা করছিলো,
এই দৃশ্যগুলিও সমর্পিতা!
———————————————–
(রাত্রি 12:07 , 12, 18 নভেম্বর 2021)
————————————————
বিঃদ্রঃ : এই তথ্য পাঠক -পাঠিকার কাছে একঘেয়ে লাগলেও, তবু বারবার ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলতে হয় প্রত্নতত্ব বিভাগের কাছে রেকর্ড ও গবেষণার সুবিধের জন্য, — তথ্যটি এই, 2021 এ মাঝামাঝি সময়ে একদিন ঘটনাক্রমে ক্লিক করি “লুৎফুন্নিসার কি পুনর্জন্ম হয়েছিল / Was Lutfunnisa reborn? ” — Manas Bangla — ইউটিউব চ্যানেল! সেটা দেখে এতোই উদ্বুদ্ধ হই যে, নবাব সিরাজ ও তাঁর পারিপার্শিক কিছু নরনারী, পরিবেশ পরিস্থিতি নিয়ে ইংরেজি ও বাংলা কবিতা লিখি, সেগুলি নানা সময়ে kabyapot.com, www.globalnewz.com, রূপুর পত্রছন্দ কবিতা সংকলন -প্রথম খন্ড, সম্পাদনা : নার্গিস খাতুন, প্রথম সংস্করণ :15th অগাস্ট 2021, ইত্যাদি ইন্টারনেট পত্রিকা ও মুদ্রিত সংকলনে বেরুচ্ছে !
—————-