ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব্য
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
★কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন★
কাব্যরূপ:–কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন– ২৭
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
২১। অশ্বত্থামার নারায়ণাস্ত্র মোচন।
[ পঞ্চদশ দিনের যুদ্ধান্ত ]
রণাঙ্গনে অশ্বত্থামা করেন সংহার।
প্রলয়ে শমন সম হাজারে হাজার।।
দীপ্ত মুখ সর্প সম শত শত বাণ।
শূল,গদা,সেনাদলে করে খানখান।।
নারায়ণাস্ত্র নির্গত শত শত অস্ত্র।
নাশিল পাণ্ডব সেনা ক্ষুরধার অস্ত্র।।
জ্ঞানশূন্য সেনাগণ পলায়ন রত।
উদাসীন ধনঞ্জয় হন আশাহত।।
যুধিষ্ঠির অস্থির ধৃষ্টদ্যুম্নে কন,
“পাঞ্চালসেনা লয়ে কর পলায়ন।।
সাত্যকি তুমি তোমার সেনা লয়ে সাথে,
রণক্ষেত্র ছাড়ি যাও এক্ষণে তফাতে।।
ধর্মাত্মা বাসুদেবেই দিনু কর্মভার।
করিবেন যাহা আছে মনেতে তাঁহার।।
সমরে বিরত হও সব সেনাগণ,
অনল মাঝারে মোরা করিব গমন।।
ভীষ্ম ও দ্রোণ দুস্তর সেই পারাবার।
আমরা সকলে ক্লেশে হইলাম পার।।
এক্ষণে গোষ্পদে সবে কাটিতে সাঁতার,
নিমজ্জিত হয়ে হবে মরণ সবার।।
পিতৃতুল্য আচার্যে আমি করানু হনন।
আজি দেখি সত্য হয় অর্জুন-বচন।।
অন্যায়ে বালকে কেন করিল হনন,
নীরব পাঞ্চালী-প্রশ্ন করিয়া শ্রবণ।।
অক্ষয় কবচ ক’রে দুর্যোধনে দান,
চাহিলেন অর্জুনের লইবারে প্রাণ।।
অকারণে ব্রহ্মাস্ত্রের করিয়া ক্ষেপণ,
ব্রহ্মাস্ত্র-অজ্ঞে করেন ব্রহ্মাস্ত্রে নিধন।।
এ হেন সুহৃৎ(?) দ্রোণ হত রণাঙ্গনে।
তার লাগি প্রবেশিব অনলে মরণে !!
হেনকালে কৃষ্ণ কন,”শোন সেনাগণ,
আজ্ঞা যাহা করি তাহা করহ শ্রবণ।।
বাহন হইতে ত্বরা অবতর সবে।
তারপর ত্যাজি অস্ত্র স্থির সবে রবে।।
নারায়ণাস্ত্র হইবে তাহে নিবারণ।
অন্যথায় সেই অস্ত্রে হইবে মরণ”।।
হেন কেশব-বচন করিয়া শ্রবণ,
অতি ক্রুদ্ধ ভীমসেন কহেন তখন,
“অস্ত্র তব কেহ নাহি করিও বর্জন,
শরাঘাতে এই অস্ত্র করিব খণ্ডন”।।
হেন কহি ভীমসেন ভীমবেগে যান।
ক্ষণকালে শরজালে ওষ্ঠাগত প্রাণ।।
কেশব-আজ্ঞায় সব পাণ্ডু সেনাগণ,
ছাড়িয়া বাহন, অস্ত্র করিল বর্জন।।
সকল অস্ত্র তখন ভীম পানে ধায়।
নারায়ণাস্ত্রে তাঁহার বুঝি প্রাণ যায়।।
হেন হেরি কৃষ্ণার্জুন হইয়া শঙ্কিত,
ভীমবেগে ভীম পানে তাঁহারা ধাবিত।।
কহেন কেশব ভীমে, “করহ শ্রবণ,
তাড়াতাড়ি অস্ত্র তব করহ বর্জন।।
আজি কেন ভীমসেন তব মূঢ় মতি।
অস্ত্র দ্বারা এ অস্ত্রের রোধিবে না গতি”।।
এতেক কহি ত্বরিতে শ্রীমধুসূদন।
যতেক অস্ত্র ভীমের করেন হরণ।।
ক্রোধান্বিত ভীমসেন শোণিত নয়ন।
সর্পসম মোচে শ্বাস অতি ঘন ঘন।।
নারায়ণাস্ত্র নিবৃত্ত হেন রূপে হয়।
পাণ্ডবসেনা ত্বরিতে যুদ্ধরত হয়।।
কহিলেন দুর্যোধন অশ্বত্থামা শুন।
এই অস্ত্রের প্রয়োগ কর তুমি পুন।।
অশ্বত্থামা কহিলেন, “শুন হে রাজন।
সে অস্ত্র তখন মোরে করিবে হনন”।।
অশ্বত্থামা অন্য অস্ত্রে রণে রণাঙ্গনে।
বিজিত সাত্যকি আর ধৃষ্টদ্যুম্ন রণে।।
হইলেন রণাঙ্গনে হত মালবরাজ ।
তার সাথে বৃদ্ধক্ষত্র, চেদি যুবরাজ।।
অশ্বত্থামা আগ্নেয়াস্ত্র করেন ক্ষেপন।
ব্রহ্মাস্ত্রে অর্জুন তাহা করে নিবারণ।।
সর্ব বেদের আধার জলদ বরণ,
আবির্ভূত ব্যাসদেব হয়েন তখন।।
কহিলেন অশ্বত্থামা, “হে ভগবন,
নারায়ণাস্ত্র হইল ব্যর্থ কি কারণ।।
কৃষ্ণার্জুন-মায়া কিম্বা কোন দৈবগুণ।
হইয়া নর নিষ্কৃত কেন কৃষ্ণার্জুন”।।
অশ্বত্থামায় মহর্ষি করেন বিদিত।
নারায়ণ-মায়া দ্বারা জগৎ মোহিত।।
কৃষ্ণরূপে নারায়ণ করেন ভ্রমণ।
নারায়ণাস্ত্রে করেন তিনি নিবারণ।।
অশ্বত্থামা জ্ঞানবান মহর্ষি বচনে।
কেশবে করেন তাই শ্রদ্ধা মনে মনে।।
ব্যাসদেবে করি তিনি ভক্তি নিবেদন।
কৌরব-শিবিরে ত্বরা করেন গমন।।
হেনকালে সূর্য পাটে করেন গমন।
সেদিনের মতো সাঙ্গ সেই মহারণ।।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
★
২২। মহাদেবের মাহাত্ম্য ।
নিবেদিলা ব্যাসদেবে অর্জুন প্রণমি।
কেমনেতে প্রকাশিব নাহি জানি আমি।।
যুদ্ধক্ষেত্রে দীপ্ত এক হেরিনু পুরুষ।
ঘন শ্যাম কান্তি তাঁর করিনু চাক্ষুষ।।
মোর অগ্রভাগে তিনি স্থিত অনুক্ষণ।
প্রদীপ্ত ত্রিশূল হস্তে করেন গমন।।
ভূমিস্পর্শ নাহি করে চরণ তাঁহার।
পরাভূত অরিকুল প্রভাবে তাঁহার।।
করিলেন না কভুও ত্রিশূল ক্ষেপন।
কিম্বা নাহি করিলেন কোনরূপ রণ।।
ত্রিশূল হতে নির্গত শত শত শূল।
প্রভাবে তারই শত্রু হইল নির্মূল।।
নর ভাবে আমি রণে শত্রু নাশ করি।
নাহি জানে এই নাশ করিছেন হরি।।
কে সেই পুরুষশ্রেষ্ঠ আজও অজ্ঞাত।
কে তিনি কহেন মোরে হই অবগত।।
কহিলেন ব্যাসদেব করিয়া শ্রবণ।
প্রজাপতি শ্রেষ্ঠ ইনি শিব ত্রিলোচন।।
ইনি পিনাকী, ধূর্জটি, শম্ভু, বিশ্বেশ্বর।
স্থাণূ, পশুপতি, রুদ্র, হর, মহেশ্বর।।
ভূতনাথ, বৃষধ্বজ ইনি শূলপাণি।
ঈশান, স্বয়ম্ভু ইনি, ইনি শস্ত্রপাণি।।
ইনি রণে অগ্রে তব করেন গমন।
সেই মহাদেবে সদা লইবে শরণ।।
যাও পার্থ রণক্ষেত্রে কর মহারণ।
নাহি ভয় হবে জয় সাথে জনার্দন।।
★★★
(চলবে)
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
*******************************
কবি কৃকৃষ্ণপদ ঘোষ রচিত মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে কাব্য-ছন্দে ধারাবাহিক ভাবে লিখে চলেছেন একের পর এক অংশ। আজ উপস্থাপন করা হল ২৭ তম ভাগ।
পাঠকগণ এর কাছে একটাই নিবেদন, পড়ুন এবং অন্যদের পড়ার সুযোগ দিতে শেয়ার করুন।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});