Spread the love


ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব‍্য:–

* কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন*
উপস্থাপন–২
( পূর্ব প্রকাশিতের পর )



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

: ভগবদ্ গীতা :

পাণ্ডব সেনা হেরি কহেন দুর্যোধন,
ব‍্যূহ বদ্ধ ধৃষ্টদ‍্যুম্ন পাণ্ডু পুত্র গণ।।
রয়েছেন তথায় সকল মহারথ।
আরও আছেন সবে যাঁরা অতিরথ।।
মম পক্ষে যাঁরা বহু যুদ্ধ বিশারদ,
সবে মিলি করি মোরা পাণ্ডবে রদ।।
হেন কালে ভীষ্ম করেন শঙ্খ নাদ।
ভেরী পণব শৃঙ্গা করিল আর্তনাদ।।
ফুৎকারিলেন শঙ্খে কৃষ্ণ ধনঞ্জয়।
করিল বিদীর্ণ যেন কৌরব হৃদয়।।
আসন্ন হইল ক্রমে অস্ত্র বরিষণ,
পার্থ রথে সেনা মাঝে করেন গমন।।
তিষ্ঠাইল তাঁহার রথ স্থির নিশ্চল।
পার্থ কৃষ্ণ মাঝে দুই দিকে দুই দল।।
হেরি যতেক আত্মীয় আর গুরুজন,
কহেন পার্থ এঁরা মোর সুহৃদ গণ।।
আত্মীয় স্বজন বধে নেই কোন সুখ।
নিরস্ত্র বধিলেও মোরে নেই কোন দুখ।।
রাজ‍্য লোভে মহা পাপে উদ‍্যত আজ।
করিতে নারিব আমি এই পাপ কাজ।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
হেন কহি অর্জুন ত‍্যজেন ধনুর্বাণ।
বসিলেন রথোপরি করি মুখ ম্লান।।
কৃষ্ণ কহেন পার্থে হেরি বিষাদগ্রস্ত,
সঙ্কট কালে না হও কভু মোহগ্রস্থ।।
হইও না ক্লীব এবে শোন মোর কথা।
ত‍্যজ তব এ দৌর্বল‍্য আর বিষন্নতা।।
পার্থ কহেন অচ‍্যুতে হে মধুসূদন,
এর চেয়ে ভালো জানি ভিক্ষান্ন ভোজন।।
ধর্মাধর্ম লোপ আজি হয়েছে আমার।
দেহ উপদেশ শরণাপন্ন তোমার।।
এতেক শুনি কহেন কৃষ্ণ অর্জুনে,
ধর্ম কথা বলি আমি শোন এক্ষণে।।
অশোচ‍্যে তুমি কভু না করিও শোচন।
মৃত জীবিতে নাহি শোচেন জ্ঞানীজন।।
শরিরী আত্মার আসে কৌমার যৌবন।
কালক্রমে জরা পরে হয় দেহান্তরণ।।
ধীর ব‍্যক্তি তাহে নাহি হন মুহ‍্যমান।
নিজ কর্মে থাকি অটল, সদা অম্লান।।
যাঁর দ্বারা ব‍্যাপ্ত এই বিশ্ব চরাচর,
কেহ তাঁরে নাশিতে নারে তিনি যে অমর।।
এই নিখিল বিশ্বে ব‍্যাপ্তি সর্বত্র যাঁর,
না হয় জন্ম কভু না হয় মৃত্যু তাঁর।।
এও নহে জেনো জন্ম হলে একবার,
না লভিবেন জনম তিনি পুনর্বার।।
ইনি নিত‍্য অক্ষয় অনাদি জন্ম হীন।
হত শরীরেও ইনি বিনাশ বিহীন।।
যেমতি নরে ত‍্যজিয়া বস্ত্র পুরাতন,
গ্রহণ করে আবার কাপড় নূতন,
সেমতি আত্মা জীর্ন দেহ ক’রে বর্জন,
নব দেহ তিনি পুনঃ করেন ধারণ।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
লভিলে জন্ম, মৃত্যু জেনো হবে নিশ্চয়।
মৃত ব্যক্তির জন্মও পুনর্বার হয়।।
অপরিহার্য এ ঘটনা এ বিশ্বলোকে,
না হইও কাতর তুমি এ দুঃখ শোকে।।
আদিতে অব‍্যক্ত জীব ব‍্যক্ত জীবনকালে।
অব‍্যক্ত হয় পুনঃ মৃত্যু জীবের হলে।।
তবে কিসের লাগি তব মনোবেদনা,
ত‍্যজ তব দুঃখ শোক যতেক যাতনা।।
বিচারি স্বধর্ম না হইও বিকল্পিত,
ধর্মযুদ্ধে হয় জেনো ক্ষত্রিয়ের হিত।।
ধর্মযুদ্ধে যদি তব নাহি থাকে মতি,
পাপগ্রস্ত হইবে হারায়ে যত কীর্তি।।
হইলে হত জেনো লভিবে স্বর্গ তুমি।
হইলে জয়ী করিবে ভোগ এ রাজ‍্য ভূমি।।
অতএব হে কৌন্তেয় কর গাত্রোত্থান।
যুদ্ধে হইবে জয় করহ অবধান।।
সুখ দুঃখ লাভালাভ সকলই সমান।
জয়-পরাজয়ে তুমি কর সমজ্ঞান।।
এইরূপে যুদ্ধে তুমি হইও মনস্থ।
ধর্মযুদ্ধে না হইবে কভু পাপগ্রস্ত।।
এতেক কহি কহেন শ্রীমধুসূদন,
কর্মযোগ ধর্মতত্ত্ব করহ শ্রবণ।।
কর্মযোগ ধর্মতত্ত্বে যায় মহাভয়।
ভয়হীনের যুদ্ধজয় হবে নিশ্চয়।।
ত্রিগুণাত্মক বিষয় বেদেতে বর্ণন।
সেই গুণ তুমি করহ অতিক্রমন।।
অতঃপর ব্রতী হও দ্বেষাদি বর্জনে।
নিস্পৃহ কর মন সঞ্চয় ও রক্ষণে।।
আত্মনির্ভরশীল হও তুমি এইরূপে।
উপলব্ধিবে তখনই সত‍্য-স্বরূপে।।
কর্মেই আছে জানিও তব অধিকার।
কর্মফলে অধিকার নাহিক তোমার।।
কর্মের লাগি তুমি কর কর্ম কেবল।
কামনা না করিও কদাপি কর্মফল।।
সিদ্ধি অসিদ্ধিতে সদা তুমি সমরূপ।
যোগস্থ হও আসক্তি হইয়া বিরূপ।।
অতঃপর করিবে কর্ম কর্মই ধর্ম।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
সমত্বই জানিবে সদা যোগের মর্ম।।
গুণীজন যেরূপ করেন আচরণ,
আচরে সেরূপ জেনো লোক সাধারণ।।
নিজ প্রমাণে মানেন যাহা গুণীজন,
অনুবর্তী হয় তার সর্বসাধারণ।।
কর্তব‍্য নাহিক কিছু মোর ত্রিলোকে।
অপ্রাপ্ত বা প্রাপ্তব‍্যও নাহি কোন লোকে।।
তথাপি আমি সদাই কর্ম করে যাই।
কর্মই ধর্ম আমার অন‍্য ধর্ম নাই।।
স্বধর্ম যদিও হয় গুণহীন কভু,
পরধর্ম হইতে তা শ্রেয় হয় তবু।।
স্বধর্মে নিধনও শ্রেয় ইহা জানিবে।
পরধর্ম ভয়াবহ মনেতে মানিবে।।
জন্ম-বিকারহীন সর্বভূতের প্রভু।
মায়াবলে জন্মগ্রহণ করি আমি তবু।।
যবে হয় ধর্মগ্লানি অধর্ম উত্থান,
সৃষ্টিয়া নিজেরে আমি করি পরিত্রাণ।।
পরিত্রাণি সাধুগণে বিনাশি দুষ্কৃত।
সংস্থাপিতে ধর্ম যুগে যুগে আবির্ভূত।।
*


(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
হিতোপদেশ দিলেন কত এইরূপ।
প্রকাশিলেন অর্জুনে নিজ বিশ্বরূপ।।
বিষ্ময়ে অর্জুন হইলেন অভিভূত।
জোড়হস্তে কহিলেন হ’য়ে রোমাঞ্চিত।।
হে দেব, তব দেহে দেখি সর্ব দেবগণ।
যতেক প্রাণী, ব্রহ্মা আর ঋষিগণ।।
হে বিশ্বেশ্বর, দর্শিলাম তব বিশ্বরূপ।
উদর-মুখ-নেত্র শালী অনন্ত রূপ।।
দেখিতে নাহি পাই কেন কহ অচ‍্যূত,
তব আদি , মধ্য আর সেই সে অন্ত।।
কালানল সন্নিভ তব দ্রংষ্টা করাল।
মুখ সকল অতি ভয়ঙ্কর ভয়াল।।
নাহি পাই আজ আমি কোন দিশামুখ।
হৃদি মাঝে তাই মম নাহি কোন সুখ।।
আজি আমি হেরি তব একি ভিন্ন রূপ।
জগন্নিবাস হও তুমি চির প্রসন্নরূপ।।
যত রাজা আর ধৃতরাষ্ট্র পুত্রগণ,
সূত পুত্র কর্ণ আর যোদ্ধা ভীষ্ম দ্রোণ,
ধায়িয়া ত্বরায় তাঁরা তব অভিমুখে
করেন প্রবেশ সবে ভয়ঙ্কর মুখে।।
চূর্ণিত মস্তকে কেহ বা হয়েন পিষ্ট,
বিলগ্ন তব করাল দশনে হইছে দৃষ্ট।।
নাশিতে যেমতি নিজেরে পতঙ্গকুল,
প্রবেশে দীপ্ত অনলে হইয়া আকুল,
সেমতি হইতে নাশ দেখি যে ত্রিলোক,
করিছে প্রবেশ তব মুখে সর্বলোক।।
গ্রাস করিছ তুমি সব জ্বলন্ত বদনে,
নাশিছ সর্বলোক লেলিহান লেহনে।।
সমগ্র জগৎ তেজ করি জাগরিত,



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
তব উগ্র প্রভা, শ্রী বিষ্ণু দ্বারা পূরিত।।
নমি তোমায়, কহ কে তুমি উগ্র রূপ,
হেরিবারে চাহি তব সে প্রসন্নরূপ।।
বুঝিতে নারি তব এই প্রবৃত্তি ঘোর,
জানিবারে তোমারে ইচ্ছা প্রবল মোর।।
কহিলেন তখন শ্রীকৃষ্ণ ভগবান,
কহি আমি কৌন্তেয় কর অবধান।।
আমি কাল, জগতের করি লোক নাশ।
সমবেত যোদ্ধৃবর্গের হবে প্রাণ নাশ।।
নাহি মার যদি তবুও মরিবে তারা,
লিখেছি মৃত্যু কিরূপে পাইবে ছাড়া।।
ধনঞ্জয় জেনো তুমি, তুমি কেহ নও।
ঈশ্বর কর্তা, তুমি নিমিত্ত মাত্র হও।।
ওঠ, জিনিয়া এ যুদ্ধ কর যশ লাভ।
নাশিয়া শত্রুরে কর তব রাজ‍্য লাভ।।
এত শুনি অর্জুন কহেন আর বার,
হে জগন্নিবাস, তোমায় করি নমস্কার।।
না বুঝিয়া তোমায় আমি প্রমাদবশে,
সখা ব’লে ডেকেছি কভু প্রণয় বশে।।
উপহাসিলেম কত বিহারে ভোজনে।
সহিলে তুমি তাহা কারুণিক নয়নে।।
বুঝি নাই আমি তব অপার মহিমা।
প্রভু তুমি মোরে বারেক করিও ক্ষমা।।
অদৃষ্টপূর্ব দৃশ‍্যে হইয়া রোমাঞ্চিত,
ভয়ঙ্কর ভয়ালরূপে হইলাম ভীত।।
হে দেব, হও প্রসন্ন তুমি অপরূপ।
ধারণ করহ তুমি তব পূর্ব রূপ।।
কৃষ্ণ তাঁহার স্বরূপ গ্রহীলেন শেষে।
মার্জিত করেন পার্থে বহু উপদেশে।।
অতঃপর কৃষ্ণ কহিলেন অর্জুনে,
না করিবে যুদ্ধ তুমি যদি কর মনে,
সে পণ হইবে মিথ্যা প্রকৃতির গুণে।
যুদ্ধ করিবেই তুমি, তুমি রাখ শুনে।।
‘আমি করছি’- এই ভাব নাহিক যাঁর,
আসক্ত হয় না কর্মে কোন বুদ্ধি তাঁর।।
বধিলেও তিনি, মনে করহ ধারণ,
সে হত্যা, হত্যা নয় তাহার কারণ।।
সর্ব হৃদয়ে অধিষ্ঠিত শ্রীভগবান,
করেন চালিত লোক , সর্বশক্তিমান।।
অতএব হে পার্থ লইবে শরণ তাঁর।
শান্তি পাইবে, শুভ হইবে তোমার।।
আমাতে চিত্ত তোমার করহ অর্পণ।
ভক্তি রাখ মনে তুমি কর উপাসন।।
প্রণমিও তুমি মোরে, মোর প্রিয় তুমি।
তব কাছে করিলাম অঙ্গীকার আমি।।
আমাকেই পাবে তুমি নহে মিথ্যা কথা,
নাহি কর শোক তুমি পার্থ অযথা।।



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

সর্ব ধর্ম ত‍্যজি মোরে করহ শরণ,
আমি তব সর্ব পাপ করিব হরণ।।
অতএব কহি পুনঃ না করিও শোক।
যুদ্ধ করহ তুমি তব জয় হোক।।
এত শুনি অর্জুন কহেন, হে অচ‍্যুত,
মোহ বিনষ্ট মম, আমি মোহ চ‍্যুত।।
লভিলাম ধর্মজ্ঞান তোমার প্রসাদ।
দূর হইল যত সন্দেহ অবসাদ।।
ধর্মজ্ঞান হৃদে আমি করিব লালন।
আদেশ তোমার আমি করিব পালন।।
(ক্রমশঃ)



(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *