Spread the love

ধারাবাহিক গল্প 

 

                  বিষন্ন হৃদয় (প্রথম অংশ)

লেখক – শংকর হালদার শৈলবালা।

◆ সুব্রত বিশ্বাস ভাবে, বাবা মা অকারণে আমার উপর অত্যাচার করে কেন! অন্য ভাই বোনদের কখনো করে না। যত দোষ সুব্রতের আর সবাই ধোয়া তুলসী পাতা।

আমি মায়ের যৌবনের পাপের ফসল নয়তো! আমাকে কেন্দ্র করে মাঝে মধ্যে মায়ের সাথে বাবার ঝগড়া বাঁধলে বাবা অশ্লীল ভাষায় খিস্তি খামারি দিয়ে বলে, কোনদিন তোর বড় ছেলেকে আমি স্বীকৃতি দেব না।

তাহলে আমার জন্মদাতা পিতাকে!

 

◆ একজন যুবতী সুব্রতের পিছন থেকে দুহাত দিয়ে কাঁধে স্পর্শ করে বলে, পড়ন্ত বিকেল বেলা কুমার নদের তীরে বট গাছের ছায়াতলে বসে এত কি ভাবছো?

 

◆ সুব্রতের ভাবনার জগত থেকে ফিরে এসে বলে, শ্যামলী; তোমার সাথে শুধু বন্ধুত্ব না ভালোবাসা, সঠিকভাবে বুঝতে কোনদিন দাওনি কেন!

 

◆ শ্যামলী মুখ কালো করে বলে, সেই শিশু কাল থেকে তোমার সাথে আমার মেলামেশা কিন্তু তবুও তুমি কি বুঝতে পারো না?

 

◆ সুব্রত বলে, শিশু কালের ভালোবাসা খেলার ছলে আর কিশোর কালের ভালোবাসা হয় আবেগে রঙ্গরসে ও যৌবনের ভালোবাসা হৃদয়ের টানে কিন্তু যৌবনে কিছু অনুভব করতে পারলাম না।

 

◆ প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে শ্যামলী বলে, পড়াশোনার প্রতি তোমার বিষন্নতা কেন! একসাথে পড়াশোনা শুরু করে আমি বিএ পাস করলাম আর তুমি মাধ্যমিকে পড়ে থাকলে।

 

◆ সুব্রত বলে, আমি সামাজিক, পারিবারিক, বন্ধুবান্ধব ও এমনকি শ্যামলী তোমার থেকেও ভীষণ ভাবে বিষন্নতায় ভুগছি।

 

◆ সুব্রতের বাবা ভবতোষ তার তার দাম্পত্য সঙ্গী কে বলে, তোমার ছেলে লেখাপড়া না শিখে সমাজের বুকে মাস্তানি করে বেড়াচ্ছে, অভিভাবক হিসেবে সবাই আমার কাছে অভিযোগ জানাচ্ছে, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের একজন শিক্ষককে মারধর করেছে।

 

◆ সুব্রত একদিন দুপুর বেলা প্রধান রাস্তা দিয়ে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার সময় হঠাৎ কিছু পাড়ার যুবক ছেলেরা আক্রমণ করে মারধর করতে করতে বলে, নিচু জাতের হয়ে বড় জাতের মেয়েকে প্রেমপত্র দেওয়া হয়েছে। মারতে মারতে গ্রাম ছাড়া করে দেবো।

 

◆ বাড়ির পাশের দীপান্বিতা বৌদি ছুটতে ছুটতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সুব্রত কে জড়িয়ে ধরে বলে, সুব্রত এমন কাজ করতে পারে না, তোদের তো আমি দেখে নেবো। কেন মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মারধর করছিস! করি কি কেউ নেই?

 

◆ গ্রামের একজন দারিদ্র্য পরিবারের মেয়ের বিয়েতে সুব্রত তার কয়েকজন অন্তরঙ্গ বন্ধু মিলে উপস্থিত হয়ে, বিয়ের কনের বাবাকে সুব্রত বলে, কাকাবাবু; সামাজিক কিছু লোকের কাছে আমি খারাপ হলেও কিন্তু মানুষের আপদ বিপদে সব সময় পাশে থাকার চেষ্টা করি। সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে এসেছি। বলে টাকা ভর্তি খামখানা বিয়ের কনের বাবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে, বাড়ির ভিতরে এত হইচই হচ্ছে কেন?

 

◆ বিয়ের কনের বাবা হরিসাধন টাকাগুলো নিয়ে কয়েকবার প্রণাম করে বলে, বরের বাবার সাথে বিয়ের চুক্তি অনুসারে, আর ৫০০০ টাকা দিতে পারি নাই বলে ছেলের বাবা বর তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছে।

 

◆ সুব্রত উত্তেজিত হয়ে বলে, কার এত বুকের পাটা, আমাদের গ্রামে এসে বিয়ে না করে চলে যাবে। বরের বাবাকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে।

 

◆ হরিসাধন তাড়াহুড়ো করে সুব্রত কে জড়িয়ে ধরে বলে, বাবা শান্ত হও, টাকা দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তুমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সমাজের মানুষের স্বার্থে আঘাত করার কারণে খারাপ চোখে দেখে কিন্তু তুমি একজন বিপদগ্রস্ত পিতা কে বাঁচালে। তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে নেমন্তন্ন বা টাকার জন্য কখনোই বলিনি কিন্তু তুমি পরিবারের নেমন্তন্ন পেয়ে এতগুলো টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে আসলে। এই সমাজের বুকে অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি কে টাকার জন্য বলেছিলাম কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেওয়াই সার। তুমি এই সমাজের একজন মহান দাতা, বোনের বিয়েতে খাওয়া-দাওয়া করে তারপর যাবে।

 

◆ এক রাতে দীপান্বিতা বৌদি সুব্রত কে আদর করে বলে, ছেলের বাপ হয়েছে কিন্তু এখন সংযতভাবে চলাফেরা করো, তোমাকে সব কাজে সমর্থন করার জন্য পাড়া-প্রতিবেশীর কাছে কলঙ্কিনী বধূ হয়েছি।

 

◆ শ্যামলী ফোন করে সুব্রত কে চুপি চুপি বলে, বাঁচতে হলে এখান থেকে এই রাতের অন্ধকারে পালিয়ে যাও, তোমার কারণে সবাইকে ভুগতে হবে-বাড়িতে পুলিশ এসেছে।

 

◆ সুব্রত বাড়ির বাইরে বেরিয়ে ভাবে, শহরে যাওয়ার এখন তো কোন বাস পাওয়া যাবে না, তাহলে সোজা 10 কিলোমিটার পথ মাঠের মধ্যে দিয়েই হেঁটে যেতে হবে। টেন বাস ধরে কয়েক দিন পর দেশের সীমান্ত রেখায় পৌঁছিয়ে যায়। আর বিনা পাসপোর্টে বিদেশে প্রবেশ করার জন্য বিএসএফ গ্রেফতার করে ক্যাম্পে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে।

 

◆ এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে সুব্রত কে গ্রেপ্তার করার জন্য শ্যামলীর পরিবারের বাবা মা সহ কয়েকজন কে পুলিশ থানায় তুলে নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

 

◆ সুব্রতের পরিবারের বাবা মা সহ ভাই বোন সমাজের মানুষের অকথ্য কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে সম্মানহানি ও পুলিশের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে গোপনে ঘরবাড়ি জমি ব্যবসা জলের ধরে বিক্রি করে জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।

 

◆ সুব্রত ভাবে, সমাজ ব্যবস্থার পরিস্থিতির শিকার হয়ে অপরাধ জগতের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছি, কিন্তু এখান থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোন পথ নেই কি?

 

◆ কয়েক বছর ধরে শ্যামলীকে খোঁজাখুঁজি করে, না পেয়ে সীমান্তবর্তী গ্রামের বিধবা কে বিয়ে করে সংসার বন্ধনে আবদ্ধ হয় কিন্তু হৃদয়ের বিষন্নতা চলতেই থাকে।

 

◆ দাম্পত্য সঙ্গীর ভাগ্যে স্বনির্ভরতা লাভ হলেও মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলে। বহু টাকা ও সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তবুও শান্তি নাই।

 

◆ সুব্রত বহু তীর্থস্থান ও সাধু-সন্তদের সাথে দীর্ঘদিন থেকে ভাবে, ধর্মের দোহাই দিয়ে সবাই ব্যবসা করে চলেছে। পরের টাকায় অট্টালিকা ব্যাংকে লাখ লাখ টাকা। কবি তার কবিতার ভাষায় বলে,

 

দেশ নেই রাজ্য নেই তবুও আমরা মহারাজা,

জমি নেই সঞ্চয় নেই তবুও জমিদারি চাল।

সমাজের সবার কাছে সম্মানিত সাধু বাবা,

চাল নেই চুলো নেই ভোগ লাগে সাত বার।

 

সমাজের বুকে লঘু অপরাধে হয়ে যায় মাফ

আমাদের টাকা ও খাদ্য থাকে জনগণের ঘরে।

বুদ্ধির দ্বারা মগজ ধোলাই করে আনতে হয় টাকা,

সেই টাকায় মন্দির আরাম আয়েশে আছি আমরা।

 

গোপনে গোপনে নারী ভোগ করার স্বাধীনতা,

সমাজের মানুষ ধর্মের ভয়ে বলতে পারে না কিছু।

কখনো ধরা পড়লে সাধু বলে এই নারী ধর্ম নষ্টকারী,

কলঙ্কিনী বলে সমাজ থেকে করে তাকে বহিষ্কার।

 

◆ সুব্রত এক রাতে সংসার থেকে নিখোঁজ হয়ে পড়ে, পাগলের ন্যায় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ বাল্য বান্ধবী শ্যামলীকে দেখতে পাই, আর ব্যাগ পত্র ফেলে দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে গিয়ে শ্যামলীকে প্রকাশ্যে রাস্তার মাঝে জড়িয়ে ধরে আর শ্যামলী ভয়ে আতঙ্কে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করে ওঠে। পথযাত্রীগণ কাউকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে কিন্তু সুব্রত কে গণধোলাই দিতে শুরু করে। এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে শ্যামলী কি ভূমিকা নেয়?

 

◆ দার্জিলিং এলাকার বরফের পাহাড়ে ঘেরা শহর থেকে অনেক দূরে একটি গ্রাম আর সেই গ্রামেই শ্যামলীর বাস।

 

◆ সুব্রত ভাবে, আর কোন দিন শ্যামলীর ভালোবাসা পাবো না, কাছাকাছি থেকেও আমাকে অবহেলা করে চলেছে। বিবাহ করেছিল কিন্তু ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন সময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে কিন্তু কারণ কি?

 

◆ দীঘা সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ করতে যাওয়ার সময় রাত নয়টার সময় এক গ্রামের মধ্যে তাদের বাস খারাপ হয়ে যায়। সুব্রত বাস থেকে নেমে রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে একটি বাড়ি থেকে সুব্রত এর নাম শুনতে পায়। বাড়ির মধ্যে ঢুকে জিজ্ঞাসা করতেই বাড়ির গৃহবধূ বলে, আমার শাশুড়ি অসুস্থ হওয়ার পরে কয়েক বছর ধরে শুধু সুব্রত সুব্রত বলে চিৎকার করে চলেছে কিন্তু এই সুব্রত সাথে আমার শাশুড়ির সম্পর্ক কি?

 

◆ শ্যামলী পথের ধারে বসে কান্না করতে দেখে সুব্রত কাছে গিয়ে হাত ধরে বলে, কান্না করছ কেন?

 

◆ শ্যামলী বলে, একমাত্র ছেলে আমার সবকিছু কেড়ে নিয়েছে, এমনকি থাকার ঘর পর্যন্ত দখল করেছে।

 

ক্রমশ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *