বটু কৃষ্ণ হালদার
তবে কি ভবিষ্যতে সুন্দরবন দ্বীপ তলিয়ে যাবার আশঙ্কা
বিগত এক বছর যাবত বিশ্ববাসীর কাছে সময়টা মোটেই স্বস্থির নয়। ইতিমধ্যেই অতি মারী করোনা র ছোবলে পৃথিবী থেকে বহু মানুষ না ফেরার দেশে ফিরে গেছেন। বহুকষ্টে যখন পৃথিবী একটু শান্তি ফিরে পেল, ঠিক সেই মুহুর্তে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রবল উচ্ছাসে সঙ্গে প্রবল হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে ভারতবর্ষে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তে কার্যত সর্ব শান্ত ভারত বর্ষ। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সভ্যতা আজ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যের লাশ পোড়ানোর যে চিত্র আসছে শিহরিত হয়ে ওঠার মতো। শুধু তাই নয় গঙ্গার বুকে লাশের ছড়াছড়ি। মোহনার বুকে বালিতে ঢাকা ছিঁড়ে খাচ্ছে কুকুর। এই হল দেশ কান্ডারী দের মানসিকতা। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে দেশ বা রাজ্যের লাগাম অশিক্ষিত দের হাতে চলে গেছে তা বলা বাহুল্য। যে মুহূর্তে ভারতবর্ষের হৃদপিণ্ড প্রতি মারি প্রভাবে কম্পমান।ঠিক সেই মুহুর্তে আবহাওয়া দপ্তর থেকে এক দুঃসংবাদ দৈববাণীর মতো নেমে আসে। গত দুই তিন দিন যাবত সংবাদমাধ্যমগুলো সতর্কবাণী পরিবেশন করে চলেছেন। সময় মত দিনক্ষণ ধরে তাণ্ডবলীলা চালিয়ে গেল ইয়াশ। বরাবরই উড়িষ্যা ভদ্রক বালেশ্বরের উপকূল ধরে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে আছড়ে পড়ে পশ্চিম বাংলার অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র দীঘার, শংকরপুর তেজপুর ও মন্দারমনির উপর।ইতিপূর্বেই বহু ঝড় তাদের ধ্বংসলীলা কার্য সম্পন্ন করে গেছেন, ভারত বর্ষ তথা পশ্চিমবাংলায়। জনগণের সুবিধার্থে নিম্নে কয়েকটি ঝড় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো।
ঝড় প্রসঙ্গে বলতে গেলে সবার প্রথমে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার লাইনগুলো মনে পড়ে“দেখো রে চেয়ে নামল বুঝি ঝড়/ঘাটের পথে বাঁশের শাখা ওই করে ধড়ফড়/আকাশ তলে বজ্র পানির ডঙ্কা উঠল বাজি/শীঘ্র তরী বেয়ে চল রে মাঝি”। পশ্চিমবাংলায় বিধানসভা ভোটকে কেন্দ্র করে বহিরাগতরা এসে যেমনভাবে তছনছ করে দিয়ে গেল সাধারণ মানুষের ভবিষ্যৎ। ঠিক তেমনভাবে বৈদেশিক ঝড় গুলো উড়িষ্যার উপকূলবর্তী এলাকা, ও পশ্চিমবাংলা সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা গুলো ধ্বংস করে দিয়ে যায়।২০০৪ সালের ২৬ শে ডিসেম্বর ইন্দোনেশিয়া সুমাত্রা দ্বীপের উপকূলে সমুদ্রগর্ভে সংগঠিত ভূমিকম্প থেকে সুনামির অবতারণা ঘটেছিল। সমুদ্র গর্ভে ৩০ কিলোমিটার নিচে ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্র বিন্দু। ৯.১৯.৩ শক্তির জুড়ালো ভূমিকম্পন। শুধু তাই নয় এই ভূমিকম্প চলে প্রায় ৮ থেকে ১০ মিনিট ধরে। যা ছিল সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে রেকর্ড সৃষ্টিকারী ভূমিকম্প। সমগ্র বিশ্বের ভূগোলক ১ সেন্টিমিটার কেঁপে যায়। বিজ্ঞানীরা এর ভয়ঙ্কর প্রভাব থেকে নাম দিয়েছিলেন সুমাত্রা_ আন্দামান ভূমিকম্প। সুদূর আন্দামানের কম্পমান তরঙ্গ বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলো ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। ইন্দোনেশিয়া সমুদ্রগর্ভে যে ভয়ঙ্কর সুনামি হয়েছিল তার সমগ্র বিশ্বে প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। ঘরবাড়ি গাছপালা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিশ্বের ইতিহাসে রেকর্ড এর মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এর সাথে মারা যায় বহু গবাদি ও জঙ্গলের পশু। এই ভয়ঙ্কর সুনামির তাণ্ডবে বাদ যায় নি ভারত বর্ষ।এরপর ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডার ঘূর্ণাবর্ত বঙ্গবসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল।উত্তর ভারত মহাসাগরে অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় এর মধ্যে এটি ৪র্থ নামকরণ ঘূর্ণিঝড়। এই ঝড়ের আরো একটি নাম “ট্রপিক্যাল সাইক্লোন ০৬ বি”। শ্রীলঙ্কান শব্দ সিডার বা চোখের নামে নামকরণ। এই ঝড় ২০০৭ সালের ১৫ ই মের সকাল থেকে আছড়ে পড়েছিল ভারতবর্ষের উড়িষ্যা ও পশ্চিম বাংলার বুকে। বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৬০ কিমি _থেকে ৩০৬ কিমি ঘন্টায়। এই ঝড়ে সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২২১৭ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছিল।তার সঙ্গে বহু ক্ষতিসাধন হয়েছিলো। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এতো মারাত্মক ছিল যার ফলে বাংলাদেশের সরকার একে “জাতীয় দুর্যোগ” বলে ঘোষণা করেছিলেন। এরপর ২০০৯ সালে ২১ শে মে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে যে ঘূর্ণাবর্ত সৃষ্টি হয়েছিল টা উড়িষ্যা দীঘা সুন্দরবন উপকূলবর্তী অঞ্চলে আছড়ে পড়েছিল ২৫ শে মে। যার নাম ছিল “আয়লা”। এই ঘূর্ণিঝড়ের ব্যাস ছিল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। যা ঘূর্ণিঝড় সিডরের থেকে ৫০ কিলোমিটারের বেশি। এই ঝড় প্রায় ৮ থেকে ১০ ঘন্টা পশ্চিমবাংলা ও তার পার্শ্ববর্তী ও উপকূলীয় অঞ্চলের বুকে তান্ডব চালিয়েছিল। অন্যান্য ঝড়ের কথা হয়তো অনেকের মনে নেই,তবে আয়লা ঝড়ের স্মৃতি বহু মানুষের মনে এখনো তরতাজা আছে। এই শহরে সবথেকে মর্মান্তিক দৃশ্য হলো ফারাক্কা ব্যারেজে বহু মৃতদেহ ভেসে ছিল।এরপর ২০২০ সালে সমগ্র বিশ্বে যখন লকডাউন চলছে।তার মাঝে হানাদার দের মত আঘাত হেনেছিল আম্ফান। এই সময়ে ভারতবর্ষের মানুষ ছিল গৃহ বন্দী। এই ঝড়ে পশ্চিমবাংলার গ্রাম-গঞ্জ থেকে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কলকাতা। গত ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ঝড়ের প্রভাবে কলকাতা এমন ভাবে বিধ্বংস ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। জলমগ্ন হয়ে উঠেছিল তিলোত্তমা কলকাতা।বড় বড় গাছ পড়ে বিদ্যুৎ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছিল বহুদিন। কলকাতাবাসী রা বিদ্যুৎ ও পানির জলের অভাবে নাজেহাল হয়ে উঠেছিল। তবে আমফানে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল চাষী ভাইরা।বহু জমিতে পাকা শস্য ও শাক সবজি নষ্ট হয়েছিল।এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে রাজ্য সরকার রাজনীতি করে গেল। আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা কেন্দ্র সরকার তাদের একাউন্টে পাঠিয়ে দিলে ও সেই টাকা ক্ষতিগ্রস্তদের ভয় দেখিয়ে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ঘরবাড়ি মেরামত করার জন্য কোন সাহায্য প্রদান করা হয়নি রাজ্য সরকার থেকে। এমনকি ত্রিপল কম্বল ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিতরণ করা হয়নি। গ্রামেগঞ্জে পঞ্চায়েতের মেম্বার দের আত্মীয় পরিবারবর্গের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা য়।
ঝড় ভিন্ন নাম ধারণ করে আসে, কিন্তু বিভিন্ন সময়ে বহু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে এই সমস্ত উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষজন। যখনই সুন্দরবন ও তার উপকূলবর্তী অঞ্চলের মানুষজন জল ঝড় বন্যার মোকাবিলা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারমধ্যে নতুন করে বাধ সাধে সেই ঝড়।২০২০ সালের আমফানের ক্ষত এখনো দগদগে ইতিমধ্যে ইয়াস হায়নার মতো তেড়ে আসে সুন্দরবনের দিকে।এই মুহূর্তে সুন্দরবন সংরক্ষন এলাকাগুলো জলে ভেসে গেছে। মানুষজন ঘর ছাড়া। কোথাও কোথাও জল এর হাত থেকে বাঁচতে গাছের মধ্যে আশ্রয় নিয়েছে অনেকেই।চারিদিকে জল থৈ থৈ করছে। নোনা জলে ভাসছে মিঠা জলের মাছ। এলাকা থেকে এলাকা জলের মধ্যে ডুবে। বিভিন্ন দান শিবিরে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছে। আবার কোথাও কোথাও নদীর বাঁধ কে বাঁচাতে জাত ধর্ম নির্বিশেষে মানুষজন বাঁধ পাহারা দিচ্ছে।কোথাও বা দালবলে বাঁধে মাটি দিয়ে মেরামতের কাজ চলছে।এইসব বন্যা বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে সবথেকে বেশি কষ্টে রয়েছে বৃদ্ধ,শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা মহিলারা। এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে মাইলের পর মাইল জলমগ্ন পথ নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছাতে হচ্ছে।জলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া ছাড়া আর তো কোন উপায় নেই।হেঁটে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম গুলো সুন্দরবন এলাকাবাসীদের দুরবস্থার কথা মিডিয়াতে প্রচার করে চলেছে। যাতে তাদের আর্তনাদ সরকারের কানে পৌঁছায়। তবে এর আগে আয়লা,সুনামি ও আম্ফান এর মত বিধ্বংসী ঝড়ের মোকাবিলা করেছিল সুন্দরবন বাসীরা।কিন্তু ইয়াসের অভিজ্ঞতা তাঁদের কাছে সম্পূর্ণ আলাদা। ঐ সমস্ত এলাকার বয়স্ক শিশু মানুষজন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। অসহায় ও নিরাপদ হীন হয়ে পড়ল গবাদি পশু সহ জঙ্গলের বাঘ হরিণ রা। এত বিধ্বংসী ঝড় হয়েছে, এই প্রথম জঙ্গলের হরিণ,বাঘ সহ অন্যান্য জীবজন্তুরা জঙ্গল ছেড়ে লোকালয় আশ্রয় নিয়েছেন।মিডিয়ার মাধ্যমে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে অনেকেই আঁতকে উঠেছেন,আবার অনেকেই চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে জল।তাদের মুখে একটাই কথা ইয়াশ আমাদের আশ্রয় কেড়ে নিল।নিয়তির কি খেলা তাই না।করোনা তে বহু মানুষ মারা গেল। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বহু মানুষ ঘরছাড়া ও মারা গেছেন ইতিমধ্যে। তার ওপরে হাজার হাজার মানুষের আশ্রয়,ঘুম, অন্ন কেড়ে নিয়ে গেল ইয়াস।
সুন্দরবন বাসীরা ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস শিকার হলেন আবার।সুন্দরবনের এই সর্বহারা হতভাগ্য মানুষগুলোর জীবনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত খেলা করে চলে সরকারগুলো।
ঝড়ের তাণ্ডবে একদিকে মানুষের হাহাকার যখন বেড়ে চলেছে, ঠিক সেই মুহুর্তে দেশের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ মাধ্যমগুলোর ভূমিকা হতাশ করার মত। মিডিয়ার দৌলতে জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে। কোন সংবাদ মাধ্যম পুরানো খবর দেখিয়ে চলেছে, কোন কোন সাংবাদিক রা হাটু জলে সাঁতার কেটে মানুষের সহানুভূতি লাভের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ হাটু জলে ডুবে কাঁধে ব্যাঙ রেখে হাতে মাছ ধরে সংবাদ পরিবেশন করে চলছে। ভাবা যায় সংবাদমাধ্যমগুলো যদি এভাবে সংবাদ পরিবেশন নিয়ে নিজেদেরকে নোংরা ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে তাহলে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষেরা কোথায় যাবেন? তাই সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছে অনুরোধ আপনারা নিজেদের কথা না ভেবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ও অসহায় মানুষ গুলোর ছবি সংবাদ মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করুন। যাতে সরকারের নজরে আসে। তারা যাতে সাধ্যমত সাহায্য পায় তার চেষ্টা করুন। আর তাতেই বাঁচবে মানবিকতা। আপনারা মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠবেন। আর সেইসঙ্গে পাবেন অসহায় মানুষগুলোর প্রাণভরা আশীর্বাদ। এ পাওনা কিন্তু নেহাত কম নয়।
ঝড়ের সঙ্গে পশ্চিমবাংলার নাড়ির সম্পর্ক।কিন্তু প্রশ্ন রয়ে যায়, স্বাধীনতার ৭৪ বছর অতিক্রান্ত। এযাবত নিয়ম করে ভোট হয়,সরকার পরিবর্তন হয়। কিন্তু সুন্দরবন বাসীদেব দুরবস্থা একই রকম রয়ে গেছে। কোন পরিবর্তন হয়নি।তবে সুন্দরবনের জনগণকে কি ভোট দেয় না?প্রতিবারের সরকার সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে থাকেন। সেই মন্ত্রীর দায়িত্ব থাকে সুন্দরবনের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু যতবারই ঝড় আসে তত বারই সুন্দরবনের জনগণ জলে সাঁতার কাটে।নদীর বাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসে ডুবে যায় এলাকাগুলো। প্রত্যেক মন্ত্রীর তহবিলে নিজস্ব এলাকায় উন্নয়ন করার জন্য কোটি কোটি টাকা আসে।তবে সুন্দরবনের কোনো উন্নয়ন হয় না কেন? সুন্দরবনের জনগণ কি পশ্চিম বাংলার জনগণ নয়? তাদের কথা সরকার ভাববে না তো কে ভাববে।এই হিসাবটা জনগণ কবে নেবে? তবে পশ্চিমবাংলায় ঝড় আসার কথা শুনলে একশ্রেণীর নেতা-মন্ত্রীদের মনে দিল্লির লাড্ডু ফোটে। কারণ সুন্দরবন জলে ডুবল তবে তো তহবিলে টাকার অংকটা অনেকটাই বেড়ে যাবে। আর তাতে সুন্দরবন বাসির দুর্দশা মোচন না হলেও,এক শ্রেণীর নেতা-মন্ত্রীদের পকেট ভরে উঠবে সে বিষয়টা নিশ্চিত।তাই এ প্রসঙ্গে বলা যায় কারো পৌষ মাস তো কারো সর্বনাশ।
সুন্দরবন ভারতবর্ষের কাছে মা-বাবা। এই সুন্দরবন আছে বলেই সমগ্র বিশ্ব ভারতবর্ষকে জানে।এই সুন্দর বনের হরিন আর “রয়েল বেঙ্গল টাইগার” বিশ্ব বিখ্যাত। যার টানে সমগ্র বিশ্বের মানুষ প্রতিবছর এই সুন্দরবনে ভ্রমণ করতে আসেন। এ থেকে রাজ্য ও কেন্দ্র উভয় সরকারের লাভ হয়। বলতে গেলে সুন্দরবন হলো ভারতবর্ষের অন্যতম ব্যবসার জায়গা। বিদেশ থেকে আগত পর্যটকদের টানে এই সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গায় মেলা হয়। তাতে বোট,লঞ্চ,নৌকা,হোটেল, ভ্যান,রিক্সা মাছ ব্যবসায়ী সবজি ব্যবসায়ী,থেকে শুরু মুদিখানা দোকানদার সহ বহু মানুষ উপকৃত হন। এই সুন্দরবন আছে বলে নির্ভেজাল মধু ব্যবসা রমরমা হয়ে ওঠে। মধু মানব জীবনে কত উপকারী তা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না। সুন্দরবন এ ঘুরতে এসে বহু পর্যটক মধু কিনে নিয়ে যায়। তাতে লাভ হয় ঐ সমস্ত দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলোর। তারাও অপেক্ষা করতে থাকে কবে শীতকাল আসবে? কারণ ওই শীতকালেই সুন্দর বনে পর্যটকের ভিড়ে উৎসব মুখর হয়ে ওঠে। জীবনদায়ী অক্সিজেন সুন্দরবনের উপহার। তাই সুন্দরবনকে বাঁচানো দরকার। সুন্দরবন না থাকলে আমরা কেউ বাঁচবো না। হতভাগ্য মানুষগুলোর চাষের জমি যখনই চাষযোগ্য হয়ে ওঠে, তখনই নোনা জল ঢুকে আবার বন্ধ্যা তে পরিণত হয়। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বহু মানুষ জীবিকার টানে কলকাতায় পাড়ি দেন।কিন্তু এই লকডাউনে তিন আনা খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কাছে তীব্র যন্ত্রণা সমান হয়ে উঠেছে। কারণ এই মুহূর্তে সমগ্র কলকাতা প্রায় বন্ধ। তাই আমাদের উচিত সাধ্যমত সুন্দরবনের দিকে দুটি হাত বাড়িয়ে দেওয়া।আমরা এই মুহূর্তে হয়তো অনেকেই বাড়িতে বসে বসে চিকেন কাবাব বিরিয়ানি খাচ্ছি,পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি। বাড়িতে বিভিন্ন মেনু রান্না করে মিডিয়াতে পোস্ট করছি। অথচ সুন্দরবনের অসহায় মানুষগুলো একমুঠো ভাতের জন্য এই মুহূর্তে হাহাকার করছে। আমাদের ঘরের বাচ্চা শিশুরা কত ভালো মন্দ জিনিস খাচ্ছে। সুন্দরবনের আশ্রয়হীন শিশুগুলোর কথা ভাবুন তো একবার। তাদের এই মুহূর্তে পেট ভরছে একগাল মুড়ি আর জল দিয়ে।সেই জল হয়তো পরিশ্রুত নয়। আসুন আমরা সবাই মিলে সুন্দরবনকে বাঁচিয়ে তুলি।তাদের মুখে একটু অন্ন তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করি।তাদেরকে পোশাক দিয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করুন এইটা ভালো লেগেছে। তবে নিজেদের সাধ্যমত। আর এতেই বাঁচবে মানবিকতা। যারা ক্ষমতাবান তাদের এই মুহূর্তে ওই অসহায় মানুষগুলো র পাশে দরকার।তাইতো মহর্ষি স্বামী বিবেকানন্দ বলে গেছেন _”জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর”।
তবে অবগত হওয়ার জন্য এই তথ্যটা দেওয়া টা বিশেষ দরকার বলে মনে হল। ভারতবর্ষের মত আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ কিন্তু নদীমাতৃক। এর আগে আমরা দেখেছি পশ্চিমবাংলার মত বাংলাদে শে বরাবর বন্যা হত। কিন্তু বাংলাদেশের সরকার জনগণের কথা ভেবে বহু টাকা ব্যয় করে বাঁধ গুলো উন্নত থেকে উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহার করে মজবুত করে তুলেছে। যার কারণে পশ্চিমবাংলার মত এই সমস্যা বাংলাদেশ এখন বলতে গেলে খুবই কম। বাংলাদেশের সরকারের মতো যদি পশ্চিমবাংলা র সরকার এমন পদক্ষেপ নিতে তাহলে এ দিন হয়তো আমাদের দেখতে হতো না। নিয়ম করে ভোট হয়েছে, পশ্চিমবাংলায় সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু কোন সরকারের এই সদিচ্ছার অভাব ছিল না। এর ফলে বাংলাদেশ বন্যার কবল থেকে মুক্তি পেলেও পশ্চিমবাংলা পায় নি।
সতর্কবার্তা_”যতবারই বিধ্বংসী ঝড়ের তান্ডব হয়েছে তত বারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উড়িষ্যার উপকূলবর্তী অঞ্চল ও পশ্চিমবাংলার সুন্দরবন। তত বারই জলের তলায় ডুবে গেছে বহু এলাকা। তাই সুন্দরবন এলাকাগুলোর বাঁধ মেরামত না করলে হয়তো একদিন এমন ঝড় আসবে সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা খবর শুনবো সুন্দরবন আর নেই।ভারতবর্ষের অহংকার সুন্দরবন জলের তলায় ডুবে গেছে। তার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাবে বহু মানুষ জীবজন্তু। বিশ্বের মানচিত্র থেকে একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে সুন্দরবন নামক জনপ্রিয় জায়গা।অদূর ভবিষ্যতে এই সুন্দরবনের কাহিনী হয়তো পাঠ্য বইয়ে পড়ানো হবে ছাত্র-ছাত্রীদের।যে ভারতবর্ষের সুন্দরবন নামক একটা জায়গা ছিল যেখানে বহু মানুষ ভ্রমণ করতে যেত।তবে সেই দিনের থেকে হয়তো আর বেশি দূরে নই আমরা।
বটু কৃষ্ণ হালদার,কবর ডাঙ্গা,কল_১০৪
বংলাদেশের কিচু এলাকা নিম্ন অঞ্চলের অন্তর্ভূক্ত। এ কারনে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর জন্য এবং পানির লেভেল বৃদ্ধির জন্য কিছু এলাকা তলিয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন হওয়া উচিত।