(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
“ন-কাঠা”
🌱 🌱 🌱 🌱
পর্ব -১ :-
‘আ…মোলোজা, মরন দশা! মড়ার কাকগুলো ভর দুপুরে এরম বাড়ির ওপর ঘুরে ঘুরে কা! কা! করচে কেন বলতো!
হইই হুস্ হুস্… যাঃ! যাঃ!’
প্রতিদিনের আদর্শমিশ্রিত কর্তব্যকে পালনের নির্ভেজাল ইচ্ছায় সেদিনও পাশের বাড়ির পুঁটি’র বুড়ি ঠাকুমাটা খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশযুক্ত এঁটো থালার হাতটা নিয়ে ডাক ছাড়লো ‘আ তু…..
আঃ!…. আঃ!’
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
স্নান সেরে অপুর মা সবেমাত্র বাইরে মেলতে এসেছে কাপড়-জামাগুলো।
আকাশগঙ্গার কেন্দ্র থেকে আনুমানিক সাতাশ হাজার দুশো আলোকবর্ষ গড় দুরত্বে অবস্থিত জ্বলন্ত গ্যাসীয় পিন্ডটা সেদিন যেন বেশ রেগেই ছিল।
তার উপরে উনচল্লিশ ডিগ্রী প্রকৃতির স্বাধীনতা অর্জনকারী বাতাসটা যেন চুড়ান্ত অভিমান করে আসেইনি সেদিন এদিক পানে এমনটাই মনে হচ্ছিল।
দুরে…মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুল ও স্বাস্থ্যবান অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে বিশালাকৃতির বটগাছটা তাকিয়ে কেমন যেন অশুভ একটা ঈঙ্গিত করছে বলে হঠাৎ-ই মনে হল অপু’র মায়ের।
নাঃ চোখের ভুল!…..
তখনও পর্যন্ত তিন ছেলের
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({}); ক্লাস ফোর পাশ গ্রাম্য মা-টা জানতোই না যে কাকগুলো তাদের ধ্বনির মাধ্যমে বহন করছে কি ভয়াবহ ঈঙ্গিত!!
‘হই! হই! যাঃ যাঃ’..
ভর দুপুরে বাড়ির চারপাশে কাকগুলোকে দেখে সেও হয়ে পড়েছিল বেশ বিরক্ত!
তার উপরে তারস্বরে কর্কশ চিৎকার সাহায্য করেছিল বিরক্তের মাত্রাকে দ্বিগুণ করতে।
মা-টার ছয় বছরের বড় ছেলে অপু ভর্তি হয়েছে গ্রামের এক সদ্যজাত ইস্কুলে।
ইস্কুল গর্ভে জনা তিনেক মাষ্টার ও বিশ-পঁচিশ ছাত্র-ছাত্রী, পড়াশুনার মান ভালোই।
মেজটা বছর চারেকের ভোলা আর নামবিহীন ছোটোটা ঘুমোচ্ছে ঘরে।
আবার বিকট কা! কা! শব্দে হঠাৎ ছোটো ছেলেটা যেন ডুকরে উঠলো কেঁদে!
কেমন একটা অজানা আতঙ্কে আচমকা এবারে ছ্যাঁত করে উঠলো বুকের ভেতরটা মা-টার!
ছুটে ঘরে ঢুকেই ছোটো ছেলেটাকে কোলে নিয়ে ব্লাউজের হুকটা আলগা করতে যাবে এমন সময়ে….
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
‘অপুর মা… ও অপুর মা, সর্বনাশ হয়ে গেছে গো! সর্বনাশ হয়ে গেছে!… বলি ও অপুর মা…!’
বলতে বলতেই জনা নয়েক বয়স্ক ও মাঝবয়েসী চেনাপরিচিত প্রতিবেশী লোকজন ও মেয়ে-বউ দীর্ঘনিঃশ্বাসযুক্ত কয়েকটা চরম ব্যস্ত মনসহ আস্ত শরীর নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে উপস্থিত হল বাড়িতে!
স্বাভাবিকত্ব লঙ্ঘন করা অকস্মাৎ এই ভয়াবহ ডাক মনে হচ্ছিল অজানা সেই আতঙ্কের আগুনে কেউ ঢেলে দিতে এল ঘি!
ক্রমবর্ধমান হৃদস্পন্দনকে সঙ্গী করে, অবর্ণনীয় ভয়, চরম উদ্বেগ, ও মুহুর্তের তীব্র দুশ্চিন্তাকে সারা চোখ-মুখ ও মনে মেখে হুড়মুড়িয়ে মা-টা বাইরে বেরোতেই এক জমকালো সংবাদ যেন মুহুর্তেই ধরে উপরে নিল তার হৃদপিন্ডটাকে!
যেন ছিনিয়ে নিল তার অস্বচ্ছল সংসারের ছোটো ছোটো সুখ, শান্তি, স্বপ্ন ও তার শিশুগুলোর ভবিষ্যৎ!
কেড়ে নিল টুকটুকে লাল এক চিলতে সিঁদুর’টার সম্পূর্ণ অধিকার চিরকালের মতন!
‘কি হয়েছে?…
তো… তোমরা এখন, এখানে, এভাবে কেন?
কি বলছো তোমরা?’
প্রশ্ন করে বসল অপুর মা’টা।
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
চরম ইতস্ততভাবে আমতা আমতা করে দুচোখে জল নিয়ে অপুর বাবার বিশ্বস্ত বন্ধু দিনেশ বাধ্য হয়ে বলেই ফেলল….
‘পরাণদা… মানে!’
বিস্ফোরিত ও আতঙ্কিত দৃষ্টিতে শীর্ষে থাকা হৃদস্পন্দন’কে অতি কষ্টে সামলে পরাণের বউ এবারে প্রশ্ন করল,
‘কি হয়েছে ওর?
না মানে…
পরাণদা গলায় দড়ি দিয়েছে!’
মাত্রাতিরিক্ত দুঃসংবাদযুক্ত বাক্যের নির্গমনে আপাতত দাঁড়ি টেনেই বন্ধু দিনেশসহ জনা তিনেক পরম সহানুভূতিশীল প্রতিবেশী লোক ও বউ হাউ হাউ করে শুরু করে দিল কাঁদতে!
‘না…. আ… আ…!!
আমার সব শেষ হয়ে গেল গো!
আমার এ কি হল!, কেন এমন হল?’
বলেই পরাণের বউ সপাটে আছড়ে পরলো মাটিতে!
একটা বুকফাটা তীব্র আর্তনাদে সম্পূর্ণ প্রাণহীন বাড়িখানা মুহুর্তের মধ্যে মনে হল বিভৎসভাবে হতে লাগলো আন্দোলিত!
পাশের বাড়ির পুঁটি’র বুড়ি ঠাকুমা’টা পড়ি-মড়ি করে ছুটে চলে এল এই দৃশ্য দেখে!
মুহুর্তের মধ্যে আশেপাশের বাড়ি ও রাস্তার লোকজন এসে ভিড় করে ফেললো।
ছোটো ছেলেটা চিৎকার করে উঠলো কেঁদে!
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পর্ব-২
চরম ঋণাক্রান্ত পরাণ’দা দুশ্চিন্তাহীন রাখতে তার একমাত্র বউটাকেও সেসব বিষয়ে কোনদিন জানায়নি কিছু ও শেষ সম্বল হিসেবে কাঠা ন’য়েক ভিটেটাকে বাঁচাতেই নাকি তার এই অনিচ্ছাকৃত মৃত্যুকে নিঃশব্দে আলিঙ্গন বলে বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর একমাত্র বিশ্বস্ত বন্ধু দিনেশ।
পর পর দু’বার আলু ব্যবসায় সাক্ষাৎ হয়ে পড়ে অনেকখানি টাকা ক্ষতির সাথে!
তার উপরে এই জায়গাটা কেনার সময় কম পড়েছিল কিছু টাকা।
পরে আবিষ্কৃত হয় যে, সে টাকা পরাণ ধার করেছিল এক সুদখোর ব্যক্তির কাছ থেকে। সেখান থেকেও প্রায়দিন আসছিল সুদসহ আসল ফেরৎ দেওয়ার চাপ!
এক বন্ধুর থেকেও বেশ কিছু টাকা ধার করেছিল সে সংসারের এটা সেটা কেনার উদ্দেশ্যে। সে টাকাও প্রায় নেই নেই করে বছর দুই হয়ে গেল পরিশোধে সে ছিল অক্ষম!
অতঃপর সব শেষ!
অনুভূতিহীন তিনটে ছোট নিষ্পাপ শিশু, ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখলো মায়ের শাড়ির রঙের পরিবর্তন।
দেখলো মায়ের কপালে লাল রঙের মৃত্যু ও দাউ দাউ করে পুড়ে ছাই হতে থাকা বাবার চিতার হলদে-লাল আগুনটা!
তারা জানতোনা যে সেই বয়েসে বিনা দোষেই তাদের পৃথিবীর সিংহভাগটা হয়ে গেল জমকালো অন্ধকারে আবৃত!
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
মাথার উপর থেকে ধ্বসে পড়ে মিশিয়ে গেল মাটিতে বিস্তীর্ণ ছাদখানা!
জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখায় সারাজীবনের মতন পুড়ে ছাই হয়ে গেল তাদের ‘বাবা’ শব্দটা!
অবশেষে……
পিতৃহারা তিন-তিনটে শিশুকে নিয়ে এভাবেই রচিত হতে থাকলো সহায়-সম্বলহীনা মায়ের দুঃখ-যন্ত্রণা জর্জরিত জীবন সংগ্রামের মর্মান্তিক ইতিহাস!
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পর্ব-৩
গ্রামের দু-একটা বড়লোকের বাড়িতে এঁটো থালাবাসন মাজা, ঘর-দুয়োর ঝাঁট দেওয়া, মোছা, কাপড় কাচা, এভাবেই অতি কষ্টে টেনে হিঁচড়ে চলতে থাকে পরম দায়িত্ব-কর্তব্যপরায়ণ মা’টার জীর্ণকায় সংসার!
দিনরাত একটাই চিন্তা মাথায় স্থাপন করে ছিল তার আধিপত্য,
বাচ্ছাগুলোর সুষ্ঠ, স্বাভাবিক ও বিপদমুক্ত বেড়ে ওঠা।
তাঁর অমানবিক বৌমা বাধ সাদলেও পুঁটি’র ঠাকুমাটা যতদিন ছিল টুকিটাকি সাহায্য করত লুকিয়ে চুরিয়ে।
অপুর বাবা’র সেই বন্ধু দিনেশ মাঝে মধ্যে সংসারে কিছু সহযোগীতা করতো ঠিক-ই কিন্তু তা আর বেশিদিন উঠলোনা পেরে।
কিন্তু এভাবে আর কিছুতেই পেরে উঠছিলনা মা’টা!
তিন তিনটে ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দুশ্চিন্তায় নুইয়ে পড়ছিল সে!
দিবারাত্র অপুর বাবার ওই নিথর ঝুলন্ত দেহ, তছনছ করে দিত মনটাকে!
প্রায়ই নিঃশব্দ রাতের অন্ধকারে ঘুমে অচৈতন্য শিশুগুলোর মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে কাঁদতো সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে!
সুদখোর’টা তার মতলবকে কু বানিয়ে মাঝে মধ্যেই নাকি হানা দিত পরাণের বাড়িতে।
একদিন অনায়াসে সহ্যটা অতিক্রম করল তার সীমাকে।
সেদিন ভোরে, খোলা জানালাটায় পূবের রক্তিম আভায় অশ্রুসিক্ত দুচোখ রেখে, হাতদুটো জোড় করে বসে পরাণের বউ বললো,
‘আমায় তুমি ক্ষমা কোরো, আমি নিরুপায়!’
এরপর বাধ্য হয়ে শেষপর্যন্ত রাতের গহীন অন্ধকারে লোকচক্ষুর আড়ালে মাঝে মধ্যেই তাকে পরিশোধ করতে হয়েছিল সুদখোরের সুদ-আসলের হিসেব!
একবুক চাপা যন্ত্রণা! অমানুষিক পরিশ্রম ও অকল্পনীয় কষ্টে, একটা শীর্ণ শরীরের পুষ্টি দুগ্ধে, অতি সাধারণ মানের খাবার ও পোষাকে পরম স্নেহ-মমতায় বেড়ে উঠতে থাকে তিন ছেলে।
দুর্ভাগ্যবশত পড়াশুনাটা তিনজনের কারুর জীবনেই পেলনা পূর্ণতা!
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পর্ব-৪
আজ বেয়াল্লিশটা বছর কেটে গেলো, তবুও মা-টা আজও যেন স্পষ্ট শুনতে পায়, ‘অপুর মা… ও অপুর মা, সর্বনাশ হয়ে গেছে গো! সর্বনাশ হয়ে গেছে!’
আতঙ্কিত চিত্তে হঠাৎ-ই বুড়িটা কেমন যেন করে ওঠে!
সাত বছরের এক কন্যা শিশুর অর্ধদায়িত্ববান মদখোর বাবা অপুটা আজ কাঁচা সব্জীর দু-দুটো দোকানের মালিক।
ভোলাটা নিজে নিজেই সেরে নিয়েছে বিয়ে। একটা অটো রিক্সা কিনে বেশ ভালোই আয় করে সে।
প্রায় অনেককেই বলতে শোনা যায়, একটু দেখতে সুন্দর বলে ভোলা’র বউটা নাকি প্রায় সময়ে মহাকাশচারীর ভূমিকায় রেখে চলে তার অস্তিত্বের নিদর্শন।
আর সেই নামবিহীন অবিবাহিত দেবু’টা আজ রঙের কাজে বেশ রঙিন করেছে তার নাম,
একটা আলাদা তিন কাঠাও নাকি কিনেছে সে।
পর্ব-৫
বেশ বছর দুই হল, প্রায় সময়েই তিন ভাইয়ের মধ্যে ন-কাঠা নিয়ে অশান্তিটা ছাড়িয়েছে তার মাত্রাটা!
কানাঘুষোয় শোনা যায়, যত দিন নাকি বউদুটো আসেনি এমন হতনা।
সারাজীবনের চুড়ান্ত মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত ও নিঃস্বার্থ কর্তব্যপরায়ণ পরম মমতাময়ী বিধবা বুড়ি মা-টার শেষ জীবনের এ পরিণতি পাড়ার অনেকের কাছেই নাকি চুড়ান্ত অমানবিকতার নিদর্শন রেখে গেছিল এমনটাই শোনা যায়।
সংসারের অস্বচ্ছলতায় ‘অ’-এর মৃত্যু হলেও জন্ম হয়নি সুখ-শান্তির!
বিশেষত দুই ছেলের বউ ও ছোট ছেলের ধ্যান-জ্ঞান স্তব্ধতা পায় মায়ের পড়ে থাকা ন’কাঠায়।
যে যার সাধ্যমতন বানিয়ে নিয়েছে ঘরও এই ন’কাঠায় আর মা থাকতেন অতিতের ভগ্নপ্রায় সেই ঘরটায়, যে ঘরে কখনও নিদ্রাকে হত্যা করে আবার কখনও বা অর্ধাহারে/অনাহারে পরম স্নেহে তিনছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাটিয়েছেন রাতের পর রাত।
অসম্ভব বুকের যন্ত্রণায় দিন যাপন করেছেন স্বামীর করুণ স্মৃতিকে দু-বাহুতে আঁকড়ে ধরে!
সংসারে নানাভাবে চলতে থাকে মা’কে নিয়ে অশান্তি!
আর সেই অশান্তির আগুনেই ধিকিধিকি পুড়তে থাকে দুর্বল রেটিনা ও ঘুমন্ত শিরা জেগে ওঠা মা’টার বিশ্বাস, আশা-ভরসা, স্বপ্ন, যত্ন ও সম্মান!!
একদিন ভোলার মাধ্যমিক পাশ সুন্দরী বউটা ধাক্কা মেরে তার শাশুড়িকে ঘর থেকে বর্জ্য পদার্থের মতন ফেলে দিয়ে রক্তচক্ষু দৃষ্টি নিক্ষেপিত স্ব-শরীরে মন্তব্য করে,
‘বুড়িটা মরেও না, ছেলেগুলোর ন’কাঠা ভাগ করে দিতে পারিসনি?
সারাজীবন করলিটা কি? স্বামীটাকে খেলি আর নিজে বসে শুয়ে গিলছিস!’
একটা ঝামা ইঁটে মাথাটা লেগে ফেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়েছিলো অনেকটাই আর কোমরের একটা হাড় গেছিল ভেঙে!
বুকফাটা চাপা কষ্টে, জলভরা দুচোখে এ অসহনীয় যন্ত্রণা ও চরম অপমানের কারণটা সে (মা-টা) জানতে চেয়েছিলো পরম করুণাময়ের কাছে, উত্তর সে পায়নি!
দিনটার সেই মুহুর্তটার সাক্ষী ছিলো কিছু প্রতিবাদহীন প্রতিবেশী, যারা প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলো, চরম অপমানের বোঝা কাঁধে করে তারা ফিরেছিল বাড়িতে।
‘এটা আমাদের বাড়ির ব্যাপার, তোমরা কেন নাক গলাতে এসেছো হে?’
দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে ভোলার বউটা এল তেড়ে বলতে।
নির্দ্বিধায় ও স্বাভাবিকভাবেই ছোট ছেলেটা একদিন তো বলেই বসলো,
‘মা তুমি মরলে তোমার ভাগটা কিন্তু আমায় দেবে।’
কারণ হিসাবে তাঁর বিশ্লেষণের প্রকৃতি এমন যে দুই দাদার চেয়ে সে মাকে ভালো ও পরিমাণে বেশি খাওয়ায় ও টুকটাক পয়সাকড়িও দেয়।
দিনের পর দিন ধরে চলতে থাকা এ নরকসম পরিস্থিতে ক্লান্ত অবসন্ন ও বিধ্বস্ত বুড়ি মা’টা মনে মনে কামনা করতে থাকে মৃত্যু!
মনে পড়তে থাকে বড় ছেলেকে ছোট্ট আঙুল ধরে গুটি গুটি পায়ে স্কুলে নিয়ে যাওয়া, ভোলাটা’র সারা শরীরে তেল মাখিয়ে শীতের স্নান করিয়ে কাজলের ফোঁটা দেওয়া, নিজের কমপক্ষের আশাটুকুকে হত্যা করে ছেলেদের এটা সেটা কিনে দেওয়া, আরো কত কি!
আর দুচোখ বেয়ে মুক্ত হয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে চরম বেদনাশ্রু!
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পর্ব-৬
‘পারলে আমায় ক্ষমা কোরো অপুর মা।
সুখ, শান্তি ও ভালো খাওয়া-পরা, আমি কিছুই তোমায় দিতে পারিনি!
তোমার বুকে তিলে তিলে গড়ে ওঠা মমতা জড়ানো এ কোমল মমতার পরিবেশ, এমন নরকে পরিণত হবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি কোনদিন, বিশ্বাস করো তুমি আমায়।
যোগ্য স্বামীর পরিচয় আমি দিতে পারিনি, বিশ্বাসঘাতক স্বামীটাকে তুমি ক্ষমা কোরো! নিজে মুক্তি নিয়ে তোমায় পারিনি দিতে মুক্তি অপুর মা!
এ ঋণ পরিশোধযোগ্য নয় জেনেও,যদি অন্য কোনো জীবনে তোমায় স্ত্রী হিসাবে পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়, চেষ্টা করবো তোমার এ ঋণ শোধ করার।
শুধু একটা বার ক্ষমা কোরো আমায়!’
এ স্বপ্ন গভীর ঘুমে জীবন্ত হলেও,
অপমানিত, নির্যাতিত ও অবহেলিত বিধবা মা-টা আর কোনদিনও দেখতে পায়নি আর একটা নতুন ভোর, সেদিন রাতের পর..!
প্রাচীন আধখাওয়া ঘরের ঘুণ ধরা অসুস্থ টেবিলে রাখা দলিলটায় শুধু আইনত উল্লেখের হিসেবের অঙ্কটা ছিল ‘তিন গুণ তিন।’
(adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});