ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার অন্তর্গত পুপুনকিতে লীলাদেহী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের আশ্রমে শান্তির খোঁজে ……
(কাছে পিঠে ভ্রমণ)
রাজকুমার সরকার
২৬ শে জানুয়ারি ২০২১,সকালবেলা। ঘড়ির কাঁটায় তখন এগারোটা পার হয়েছে আমাদের গাড়ি তখন চলতে শুরু করলো জোধাডিহ মোড় (চাস,বোকারো) থেকে।ধানবাদমুখী গাড়িটি একটু দূরেই ভূতনাথ বাবার মন্দিরে থামলো।
আমাদের মূল ভ্রমণ পুপুনকি আশ্রম।
একদিনের সফরে অখন্ডমন্ডলেশ্বর স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের “পুপুনকি” আশ্রমে যেখানে মনের শান্তি, প্রাণের আরাম।
আশ্রম যাব একথা বলেছিলাম গতকালই শ্রদ্ধেয় মুকুন্দবিহারী বিশ্বাস মহাশয়কে।জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এই গুণীজন পুরুলিয়া জেলা শহরের বাসিন্দা।আমাদের অত্যন্ত কাছের মানুষ, সুতপা পত্রিকা গোষ্ঠীর আপনজন। তিনি এই আশ্রমের একজন। তিনি স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের শিষ্য। তিনি আশ্রমে ফোন করে দেন রাজেনবাবুকে। আমরা আশ্রমে ঢুকতেই খবর নিলাম রাজেনদার। একটু পরেই দেখা হোলো।উনি একটু ব্যস্ত ছিলেন ,মেদিনীপুর থেকে একদল শিষ্য আশ্রমে এসেছেন তাঁদের সাথে।আমাকে বললেন — রাজকুমারবাবু বসুন, আমি এক্ষুনি আসছি।বলেই মেদিনীপুর থেকে আসা শিষ্যদের নিয়ে ভেতরে চলে গেলেন। আমি একটু ভ্রমণপিপাসু মানুষ , আমি নিজেই আশ্রম ঘুরতে শুরু করলাম। ভাবলাম সময় নষ্ট না করে নিজেই একটু ঘুরি ফিরে দেখি তারপর তো উনি ভালোভাবে ঘোরাবেনই …..
মিনিট দশেক পরেই রাজেনবাবু এলেন । এসেই হাসিমুখে বললেন আসুন। তাঁর সাথে আশ্রম ঘুরতে শুরু করলাম। এখানে কোনো কোলাহল নেই।পাখীর কিচিরমিচির শব্দ, পাখিদের আনাগোনা এক অদ্ভুত ভালোলাগা অনুভূতি।
১৮০০ বিঘা জায়গার উপর গড়ে উঠেছে এই আশ্রম।প্রসঙ্গত বলে রাখি আমি কোনো ঠাকুরের দীক্ষিত নই। এই আশ্রমের নাম অনেকদিন থেকেই শুনে আসছি তাই এখানে ঘুরতে আসা।রাজেনদার সাথে আশ্রম ঘুরতে শুরু করেছি। নজরে এলো একটি বিশাল পুকুর। স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের তৈরি।নাম – মঙ্গলসাগর। ভারি সুন্দর নাম।মঙ্গলসাগরের ধারে বসলাম খানিকক্ষণ। এখন ক্যামেরার প্রয়োজন হয় না মোবাইলেই ছবি তুললাম।
বিশাল কর্মকাণ্ড স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের। নিজের চোখে না দেখলে অনেককিছুই অজানা থেকে যেত।
পঞ্চবটী, গোলঘর, অধ্যয়ন ঘর, মঙ্গলকুটীর, শ্রী শ্রী মায়ের ঘর, মঙ্গলসাগর, অন্নঘর আরও কত কি। নিখুঁতভাবে দেখতে হলে জানতে হলে সময় নিয়ে আসতে হবে।
মঙ্গলসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।কচ্ছপ ধরা নিষিদ্ধ।
আশ্রমেই রয়েছে স্কুল। আবাসীয় বিদ্যালয়। ছাত্র ছাত্রীরা মঙ্গলসাগরে তখন স্নানরত।জাতীয় পতাকা উড়ছে। আজ ২৬ শে জানুয়ারি।
মঙ্গলবার স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের জন্মদিন। একটা বিশেষ দিনেই আমরা ঘুরতে এসেছি এখানে।রাজেনদার বাড়ি দুর্গাপুরে, দশ বছর ধরে এই আশ্রমেই রয়েছেন। সবকিছু দেখাশোনা তাঁরই দায়িত্বে। তিনি আশ্রমের খুঁটিনাটি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখালেন। একজায়গায় বসে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হল। তাঁর হাতে তুলে দিলাম আমাদের সুতপা পত্রিকা। আশ্রমে রয়েছে একটি লাইব্রেরি ও পুস্তক এর দোকান। এখান থেকে সংগ্রহ করলাম স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের বই — কর্ম্মের পথে, পথের সাথী, নবযুগের নারী, সংযম সাধনা। রশিদ দিলেন ভারপ্রাপ্ত ভদ্রলোক।খুব সাজানো গোছানো বই এর ঘরটি।ভবিষ্যতে আবার বই নেবো বললাম ভদ্রলোকটিকে। উনি হাসিমুখে বললেন – নিশ্চয়ই।
আমাদের খাবারের ব্যবস্থা আজ আশ্রমেই। বসে থেকে দেখছিলেন রাজেন’দা। তাঁর অমায়িক ব্যবহার ভুলবার নয়।সুন্দর একটা কোলাহলহীন অরণ্যের মধ্যে এই আশ্রম যে কোনো মানুষের মন কেড়ে নেয়।
এখানে মনের শান্তি; প্রাণের আরাম।