“চোট”
রম্যরচনা
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
***************
ভোম্বল দাস তার মায়ের মৃত্যুর শ্রাদ্ধের জন্য কুড়ুল দিয়ে কাঠ ফাটাচ্ছে। গনগনে দুপুর বেলা, চাঁদি ফেটে যাওয়ার উপক্রম। ভোম্বলের একমাত্র ছেলে সম্বল বললো – বাবা তুমি বিকেলে এগুলো করবে। এইমাত্র তুমি খেয়ে, হাঁড়ি ডুবিয়ে এলে,একটু বিশ্রাম করো। সাবধানের মার নেই – কখন চোট লেগে যাবে?
ভোম্বল বললো – চোট লাগলেও মায়ের শ্রাদ্ধ শেষ করবোই। পায়ে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে তো ভোট করাবো না।যাদের ভোট করাতে হয় তাদের ভোট এলেই চোট লাগবেই কাঠ না কেটেই!আর বহুরূপী সেজে ভিক্ষা করবে ভোট। আমি মায়ের কাজ সম্পন্ন করতে যদি চোট লাগিয়ে ব্যাণ্ডেজ বাঁধি তাহলে লোকে বলবে মায়ের শ্রাদ্ধ ও পারলৌকিক ক্রিয়া,ব্রাহ্মন শ্মশান বন্ধু, আত্মীয় কুটুম্ব ভোজনের টাকা খরচের ভয়ে এসব করেছি।
সম্বল – লোকের কথায় কি আসে যায়? বাজে খরচ করে লোক খাইয়ে,ব্রাহ্মন পিণ্ডি চটকিয়ে আমাদের সর্বশ্রান্ত হতে হবে। ভিটেটাও হয় বন্ধক না হয় বিক্রি করতে হবে।তার চেয়ে তুমি পায়ে একটু আলতা লাগিয়ে ব্যাণ্ডেজ বেঁধে রাস্তায় বসো।লোকেই বলবে – আহারে! তোমার উপর সবার সহানুভূতি জাগবে। মানুষ জন বলবে অশৌচ পালন করো। পারলৌকিক ক্রিয়া পরে করবে সুস্থ হয়ে। তুমি অশৌচ পার হলেই ব্যাণ্ডেজ খুলে রাতারাতি গয়ায় ঠাকুরমার পিণ্ডি দিয়ে তাকে উদ্ধার করে আসবে। খরচের হাত থেকে বাঁচতে এটা মন্দ হবে না!
সামনে ভোট – পায়ে ব্যাণ্ডেজ দেখলে সব দল এগিয়ে এসে আমাদের সাহায্য করবে। পঞ্চায়েত প্রধান ডাবল রেশন শ্রীর ব্যবস্থা করবে। গৃহশ্রীতে পাকা ঘর হবে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে চিৎ হয়ে শুয়ে আকাশের দিকে চেয়ে ঠাকুরমাকে প্রণাম করবে। বলবে মা তুমি মরেছিলে বলেই আমার আজ শ্রীধনে ঘর ভর্তি।
—————————–