গুরুত্বপূর্ণ
দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়
————————
অতিরিক্ত সুযোগে,— সেই সুযোগের গুরুত্ব আমরা হারিয়ে ফেলেছি ।
বারবার ফোন করেও নিরুত্তর । ওপাস থেকে এলোনা কোন জবাব। মন খারাপের আকাশে আজ ঘোর অন্ধকার। মেঘগুলো কালো জলে ভরা, দ্রুত গমনা-গমনে বজ্রপাত “অশনি সংকেত” বহন করছে।
মহুয়ার চোখের জলে বৃষ্টি নামলো, প্রথমে ধীরে তারপর ভয়ংকর আকার নিল ।তারা এখান থেকে চলে যাচ্ছে বহুদূর ,—
তার বাবার চাকরি বদলি হয়ে গেছে পোস্টিং বিদেশে ,
মাত্র কয়েক ঘণ্টার প্রস্তুতি। তারপর বাবা মার সঙ্গে সে বিদেশে পা রাখতে চলেছে—
যাবার আগে প্রেমিক সুবীর কে খবর দিতে, বারবার ফোন করেছে—
ব্যর্থ হয়েছে।
বাইরে প্রবল বৃষ্টি নেমেছে।
সারারাত ঘুম নেই !
মা বাবা সামান্য লাগেজ গুছিয়ে প্রস্তুতি সমাপ্ত করেছে ।
রাত কাটতেই এলো সুন্দর সকাল। ছেড়ে গেল ফ্লাইট ।
মহুয়ার উপায় থাকতেও নিরুপায় হল।
অথচ সে বড় পিসিমার থেকে গল্প শুনেছে তাঁর স্বামীর অফিস থেকে একবার সরাসরি শিলিগুড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল ।
পিসেমশাই সঙ্গে কিছু না নিয়ে সেদিন শিয়ালদহের অফিসে কাজ করছিলেন।
হঠাৎ পাশের বাড়ির ল্যান্ড ফোনে পিসিমাকে জানান
সাথে সাথেই পিসিমা পিসেমশাইয়ের জন্য রাতের খাবার, জল ,জামা, প্যান্ট, গামছা ব্রাশ-পেস্ট প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যাগে পুরে বাড়ি থেকে দু মাইল পথ হেঁটে স্টেশনে এসে পিসেমশাই কে সেই ট্রেনে খুঁজে বার করে দেয়। অবশ্য অনেক কষ্ট হয়।
তিনি তো জানেন না কোন কম্পার্টমেন্টে তিনি উঠেছেন ,তিনি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ট্রেনটির কামরায় কামরায় খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন পিসেমশাইকে।
শেষ কামরার এক চেয়ারে বসে থাকতে দেখে পিসেমশাইয়ের নাম ধরে পিসীমা চিৎকার করতে থাকেন, তখন পিসেমশাই ও সাড়া দিতে থাকে ।কিন্তু জানলা দিয়ে সে ব্যাগ কিছুতেই গলে না ।
পিসীমা ও ছুটতে থাকেন অবশেষে দরজা পর্যন্ত চলন্ত ট্রেনের সঙ্গে দৌড়ে দৌড়ে এসে এক অন্য যাত্রীর হাতে ব্যাগ তুলে দেন এবং আরো ছুটতে থাকেন সেই যাত্রী পিসেমশাই কে ব্যাগটা আদৌ পৌঁছেছে কিনা ।আর বলতে থাকেন পৌঁছেছে পৌঁছেছে—
তখন পিসেমশাই সিট থেকে উত্তর দেন পেয়েছি পেয়েছি—
তারপরও পিসিমা অনেকক্ষণ ছুটতে থাকেন ট্রেন প্লাটফর্ম ছেড়ে গেলে,
তারপর তিনি দম নেন ।
অথচ একটা সামান্য মোবাইল থাকলে পিসেমশাইয়ের কম্পার্টমেন্ট জেনে পিসিমা সরাসরি তাঁর হাতে ব্যাগটি দিতে পারতেন।
মহুয়া প্লেনে উঠেও ফোনে অনেক ট্রাই করল , মেসেজ করল,—
এভাবে এক সপ্তাহ কেটে গেল। তারা বিদেশে গিয়ে নিজেদের মতন গোছগাছ করে ব্যবস্থা করে চলাফেরা আরম্ভ করে দিল।
তারপর এক সপ্তাহ পরে মেসেজ দেখলো সুবীর।
ফোন করল।
কিন্তু—