গল্প- স্তন
রচনা – পিকু
আমি শিমুল গো শিমুল। আর আমার কোলে এইটা আমার ভাই। বাপ বলেছে ওর নাম ‘ বাবুয়া ‘ রাখবে। বাপের নামের সাথে মিলিয়ে ‘ বুধিয়া মাহাতো’র ছেলে ‘ বাবুয়া মাহাতো ‘ । কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল ওর নাম রাখব পলাশ। শিমুলের ভাই পলাশ। কিন্তু সে কথা বলতেই আমার নতুন মা আমার কান ধরে জোরে মুচড়ে দিয়েছিল। বলেছিল
– হারামজাদি মা খাগী মিয়া , তুয়ার মত অপয়া মিয়ার সাথে আমার ছেইলার নাম মিল্লাহাই রাইকব !? মরিস না কিনে হারামজাদি।
সত্যি বলছি কানটা এখনো যন্ত্রণায় কট কট করে। তোমরাই বলো সত্যি কি আমি অপয়া ? আমার মা-টা যে সাপের কামড়ে মরল তাতে আমার দোষ কি বলো? তবে যাই বলো মা-টা আমার ভীষণ ভালো ছিল। কত আদর করতো। কি সুন্দর ডাকত
- আয়রে আমার শিমুল সোনা!
আর নতুন মা ডাকে হারামজাদি। এটাই বা কি খারাপ নাম কি বল! আর রইল আমার মরার কথা? মরতে তো পারতামই। ঐতো শালবনের ঐ পারে কাঁসাই নদী, সেদিন দেখছিলাম আমার মতই একটা ছোট্ট মেয়ে ন্যাংটো শরীরে মরে ভেসে আছে জলে। কিন্তু মরতে পারি না বাপটার জন্য। বাপটা আমাকে যে বড্ড ভালোবাসে। ওই দেখো আমার নতুন মা আসছে। ভাইটাকে আমি কোলে করে রেখেছিলাম নতুন মা স্নানে গিয়েছিল যে। স্নান থেকে এসে কাপড় জামা ছেড়েই আমার কোল থেকে ভাইটাকে ছিনিয়ে নিয়ে নতুন মা বলছে - আরে দ্যাখ কেনে ভাইটাকে কেমন কইরে ধইরছে। ভাইটাকে কলে পর্যন্ত নিতে পারেনি গ । ইখাইন থেইকে দুর হ হারামজাদি। তুর বাপ আইসলে ত আবার নালিশ কইরবি কেনে। তুকে দিয়া ইত্ত কাজ করাইঞ্চি । একটু জল উঠানো, মুঠিয়া দেওয়া আর দুই এক খাইন ভাইয়ের হাগা মুত্তা জামাকাপড় ধুওয়া। ই কি আবার কুন কাজ হইল ? সব তো রঙ্গ চরাই বাপের কাছে নালিশ হবে বটে। তোর বাপ টাও তো তেমনি মিয়া সুহাগী বটে। উ তুর কথা ট সব মাইনি লিবে। জা জা ইখান থেইকে জা কিনে।
হ্যাঁ এগুলো সকাল থেকে আমার অবিরত করে যাওয়া কাজের পুরস্কার। দেখলেন তো আমার কোল থেকে আমার ভাইটাকে নতুন মা কেমন ছিনিয়ে নিয়ে গেলো। অথচ কিছুক্ষণ আগে যখন স্নানে যাওয়ার ছিল তখন নতুন মা-ই ভাইকে আমার কোলে দিয়ে গিয়েছিল। সে যাক ওটাতো ভাইয়ের নিজের মা। আমি তো আসলে ওর নিজের দিদি নয়। সৎ দিদি। তবে অসৎ নয়। আমার এই হাড় জিরজিরে কালো শরীরটা শুধুমাত্র একটা ছোট ফুটো প্যান্ট ছাড়া কিছু নাই। বড্ড শীত করছে আজকে যদি মা থাকতো তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে একটা জামা অন্তত পরিয়ে দিত। একটা ছেড়া জামা আছে বটে, কিন্তু সেটা তো আজকে ধুয়ে রোদ্দুরে শুকাতে দিয়েছি। ভাববেন না এই কাজগুলো করছি এত কথা বলছি বলে আমার অনেক বয়স, এইতো তিন বছর বয়স হবে সামনের মাসে। সকাল থেকে আমার এখনো পেটে কিছু পরে নাই তাই বড্ড খিদা লাগছে। মা থাকলে মায়ের বুকের মধ্যে ঢুকে পড়লে কোথায়-শীত কোথায় খিদে সবকিছু নিমেষে উধাও হয়ে যেত। বাপ খিচুড়ি ইস্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিল। ওখানে তাও পেট ভরে খেতে দিত। কিন্তু এখন তো সেও বন্ধ। পেটটা কেমন খিদায় মোচড় দিচ্ছে। ভাইটাকে নতুন মা দুধ দিচ্ছে। নতুন মায়ের বুকটা সম্পূর্ণ খোলা। স্তন দুটো কি সুন্দর আমার মায়ের বুকের মত। ভাই একটা দুধের বোটা মুখে নিয়ে আরেকটা দুধের বোটাতে হাত রেখেছে। মনে হচ্ছে যেন দুটো দুধ নিজের দখলে রাখতে চাইছে। মা ও মা আমারও ভীষণ তোমার বুকে মুখ ডোবাতে ইচ্ছা করছে। তোমার মধুর দুধ খেতে ইচ্ছে করছে গো মা। কিন্তু তুমি কোথায় মা !? তুমি কি আসবে মা!? শুধু আর একটা বার এসো। দেখো নতুন মায়ের স্তন দুটো তোমার মতো কালো দুধের ভারে ইসৎ নম্র অথচ উদ্ধত। সুন্দর।ঠিক যেন তোমারি বুক। কিন্তু ওই বুকে আমার কোন ঠাই নাই, আমার কোন অস্তিত্ব নাই, আমার জন্য ভালোবাসা নাই, ওই বুকে কোন মধু নাই মা, ওই বুকে কোন মধু নাই । তুমি কি আর একবার আসতে পারো না!? বিশ্বাস করো আমি অপয়া নই মা। এবার আসলে তোমাকে গলা জড়িয়ে ধরে রাখবো কোথাও যেতে দেব না।
বাইরে কারও একটা আসার শব্দ যেন শুনতে পাচ্ছি। বোধ হয় আমার বাপটা এল। বাপটা আমার আমাকে ভীষণ ভালোবাসে, কিন্তু নতুন মায়ের সামনে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা। মা – টা যখন মরল আমি মাত্র দেড় বছরের ছিলাম বলে আমাকে দেখাশোনা করতেই নাকি নতুন মাকে ঘরে এনেছে। কিন্তু নতুন মা যে আমার এতোটুকুও ভালোবাসে না। এতটুকুও না। ঐতো বাপের হাতে কিসের যেন দুটো প্যাকেট। আর গরুর জন্য খানিকটা ঘাস কেটে এনেছে। বাপ গোয়াল ঘরে গেল ঘাস রাখতে। তাহলে কি….. থাক একটু পরে দেখা যাবে।
বাপটা গোয়াল থেকে বেরিয়ে আসলো।
- তুর মা কুথাকে বটে?
বাপ জানতে চাইল। আমি হাত তুলে দেখালাম। বাপ ঘরে ঢুকতেই নতুন মা বলল - কি আইঞ্চ উটা।
- লও ইটা লও কিনে।
নতুন মা পলিথিন এর প্যাকেট হাত নিয়ে তার ভেতর থেকে টেনে কাগজের ঠোঙা বার করলো। ওটার ভেতরে তিনটে জিলাপি। - আর উ প্যাকেটে কি বটে?
জিজ্ঞাসা করল নতুন মা। বাপ বলল - এই একটা মুটা ফরক জামা।
- আইটা কি করইঞ্চ? সামনে ছেইলেট্যার কত খরচ আনইঞ্চে সিটা খিয়াল আছে ।
- আহা আমি কিছু কিনি নাই । সেনাপতি বাবুদের বাড়ির ছুটো মিয়ার জন্য উয়ারা কিইনে আইঞ্চল। কিন্তু উয়াদের পসন্দ হয় লাই বইলা আমারে দিয়া দিল। তাই মিয়ার জইন্য নিয়া আইসলাম
আমি জানি বাপটা আমার মিথ্যা কথা বলছে। কিন্তু আমার মিথ্যাবাদী বাপটাকে ভীষণ ভালো লাগছে। মিথ্যা কথা বললে পরেও কাউকে যে এত নিষ্পাপ পবিত্র লাগে আমার বাপকে না দেখলে তোমরা বুঝতে পারবে না। নতুন মা একটা জিলাপি বাপের হাতে দিলো আর একটা থেকে একটু কোনা ভেঙ্গে আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বলল
- উ সকাল থেকে ইত্ত খাইঞ্চে। বেশি খাইলে পেট লাইমবে বটে। ইটুকুই খা।
বলে দুটো জিলাপি নিজেই খেতে শুরু করেছে। বাপ আমার দিকে চোখে একটা ইশারা করে বলল - ইখান থিকা যা না কিনে।
- বলে ফ্রকটা আমার দিকে ছুড়ে দিল। আমি নিজেই ফ্রকটা পড়লাম। কি সুন্দর লাল একটা ফ্রক । মা থাকলে নিশ্চই বলত
- শিমুল রে তুকে তো রাঙা শিমুল ফুলের পারা লাইগঞ্চে।
আমি ধীরে ধীরে গোয়াল ঘরের ভিতরে গেলাম। যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই ঘাসের আটিটার পিছনে লুকানো আছে একটা পলিথিনের প্যাকেট।প্যাকেটটা নিয়ে আমি আমার প্যাণ্টের ভিতর ঢুকিয়ে নিলাম। ঘরের পেছনে শাল গাছটার নিচে গিয়ে বসলাম। প্যাকেটটা খুলে দেখলাম তারমধ্যে খানিকটা মুড়ি একটা জিলাপি আর একটা দানাদার। আমি বাপটাকে কোনদিন বলিনি যে দানাদার আমার খুব ভালো লাগে কিন্তু বাপটা বুঝলো কি করে? দানাদারটা কামড়ে খানিকটা মুখে পুড়ে দিলাম উমম্ কি সুন্দর মিষ্টি রস সারা মুখ ভর্তি হয়ে গেল! আমি চোখ বুজে দেখতে পেলাম আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বাপের লোহার পাটার মতো বলিষ্ঠ বুকটা দেখতে পাচ্ছি। আমার বাবার বুকেও যেন অদৃশ্য দুটো স্তন আছে । আর আমি যেন সেই স্তনের মধুর সুধা পান করছি।