Spread the love

বুকে নীড় আঁকড়িয়ে

খগেন্দ্রনাথ অধিকারী

চিরকাল কারো একই ভাবে যায় না। পূর্ণচন্দ্র রোডের আড়াইতলা বাড়ীটার সামনে সানের ঘাটে রাতে খাবার পর, শীতবর্ষা বাদে, সারা বছর বসাক পরিবারের বোসতো গল্পগুজবের আসর। বড়দা কুনাল বাবু ছিলেন এর মূল হোতা। বাবা মনোরঞ্জন বাবু অকালে ক্যান্সারে মারা যাবার পর, ছয় ভাই বোনের সংসারের হালটিকে বড় ভাই হিসাবে উনিই শক্তহাতে ধরেছিলেন। ভারতী, স্মৃতি, কল্যাণ, মলয়, তখন সবাই খুব ছোট। সততা, সদালাপ ও কঠোর পরিশ্রমের জোরে বাবার করে যাওয়া ব্যবসা বাণিজ্যকে তিনি শুধু রক্ষাই করেননি। তাকে আরো সমৃদ্ধ করেছেন। সারা দিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম ও ভাইবোনদের পড়াশুনার শেষে, রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর সাড়ে দশটা নাগাদ, ঐ পুকুর ঘাটে বোসতো গল্পগুজবের আসর।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

কিন্তু, গতবছর, হঠাৎ বড়দা মারা যাবার ফলে বেশকিছু কাল এই ধারায় তাল কেটে যায়। উল্লেখ্য যে, বেশ কিছু দিন বড়দার ব্যবসা বাণিজ্যের হাল মোটেও ভালো যাচ্ছিল না। পল্লীশ্রী সিনেমা হল, কাজী পাড়ায় পাওয়ার লুম, বড়বাজারে কাপড়ের পটি, সব কিছুতে প্রবল লোকসান যাচ্ছিল। তার উপর ওঁদের পারিবারিক কিছু জটিলতার সুযোগে বন্ধুর বেশে বিমল খান ওঁর ঘাড়ে চেপে বসে বহু সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। ফলে ওঁদের আর্থিক মেরুদণ্ড ধ্বসে পড়ে।

বড় বোন আরতি, মেজোবোন ভারতী, নিজের শ্বশুরবাড়ি, সবাই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার। এই আর্থিক বিপর্যয়ে ওঁর পাশে দাঁড়ানোর মতো সাধ থাকলেও, সাধ্য এঁদের কারোরই ছিল না। একমাত্র ক্ষমতা ছিল ছোটবোন স্মৃতির। খুব আদরযত্নে কুনাল বাবু ওকে মানুষ করেছিলেন। বোনটি যাতে অনেক বড় হয়, তার জন্য এক অনন্য সাধারণ মেধা সম্পন্ন সদ্য পাশ করা তরুণ অধ্যাপককে প্রাইভেট টিউটর রেখেছিলেন। তার গাইডেন্সে ও যেন এম. এ পর্যন্ত খুবই ভালো রেজাল্ট করে। ওঁর একটা সুপ্ত বাসনা ছিল ঐ তরুণ অধ্যাপককে ছোট ভগ্নিপতি করার। তিলে তিলে উনি ছোট বোনকে গড়ে তুলেছিলেন।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

এই রাজ্যেই ওর অধ্যাপনার ব্যবস্থা ঠিক করে রেখেছিলেন বামপন্থী ঐ অধ্যাপক আশির দশকের গোড়ায় বাম জামানায়। কিন্তু অধ্যাপকদের মাহিনা তখন খুব কম। তার উপর, বন্ধুবেশে বাড়ীর কর্তা হয়ে ওঠা বিমল বাবু কোন অজ্ঞাত কারণে ঐ অধ্যাপকের সঙ্গে স্মৃতির বিয়ের প্রবল বিরোধী হয়ে ওঠে। সে আগরতলায় এক অরথোপেডিক্স ডাক্তার সুবল বসাকের সঙ্গে ছোট বোনের বিয়ের ঠিক করে। পুরানো জমিদার ওরা। প্রাইভেট প্রাকটিসে চুটিয়ে পয়সা রোজগার। তার উপর আগলতলা মেডিক্যাল কলেজে চাকরি। ওদের পয়সা খায় কে? এছাড়া বোন স্মৃতিও অধ্যাপনা পেয়েছে। প্রচুর টাকার মালিক ওরা।

স্ত্রী মৃণালিনী দেবীকে কুনাল বাবু একদিন জিজ্ঞেস করলেন,–

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

মালী, আর তো সংসার চলে না। বাড়ীটা ভেঙ্গে পড়ছে; সংস্কারের পয়সা নেই; ছেলেদুটো বাইরে পড়ছে; তাদের খরচ দেব কি করে? ব্যবসা থেকে আমার বা কল্যাণের আয় তলানীতে। একা মলয়ের মাস্টারীর মাইনার উপরে তিনভাই-ভাইবৌ-বাচ্চাদের নিয়ে বারো জন মানুষের সংসার। ভাবছি, বাড়ীটা সারাতে স্মৃতিকে কিছু টাকা সাহায্য করতে বললে কেমন হয়?

–খবরদার না। ওরা এটা কিভাবে নেবে, তা কি ভেবোছো?। বিশেষ করে তোমার ভগ্নিপতি রত্নটিকে তো চেনো! ও কিছুতেই সাহায্য দিতে দেবে না ঠাকুরঝিকে।

কুনাল বাবু তবু শোনেননি। একদিন লুকিয়ে ছোট বোনকে সকল দুর্দশার কথা জানিয়ে কিছু আর্থিক সাহায্যের কথা বলেন।

–দেখবো দাদা। এই বলে সে ফোন কেটে দেয়।

এই ঘটনার কিছু দিন পরে বড়দা নানান দুশ্চিন্তা করতে করতে হঠাৎ মারা যান। আকাশ ভেঙ্গে পড়লো সদ্য বিধবা বৌদির মাথায়। কিন্তু কল্যাণ ও মলয় শক্ত পায়ে অসহায় বৌদির পাশে দাঁড়ালো–

ভেবো না বৌদি। আমাদের যৌথ পরিবার। তুমি এর মাথা। আমরা দু’ভাই তোমার ও ভাইপোদের পাশে আছি। 

অনুজ দুই দেওরের ও দুই জাদের উদার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কিছুদিনের মধ্যেই বৌদির অকাল বৈধব্যের ক্ষত অনেকটা উপশম করে দিল। ধীরে ধীরে গোটা বাড়ীটায় স্বাভাবিক ছন্দ ফিরে আসলো। আবার শুরু হোল রাতে খাবার পর শানের ঘাটে বসে বড়দের গল্পের আসর। আজ কিছুক্ষণ এই আসরে কথাবার্তার পর কল্যাণ বললো–

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

জানো বৌদি। এই অতিমারীর মধ্যে আজ বিপন্ন লোকদের জন্য সাহায্য তুলতে দীপেন দা কয়েকজনকে নিয়ে টাউন হলের সামনে চাঁদা তুলছেন।

–দীপেন দা!

–হ্যাঁ গো হ্যাঁ! আমার ছোটদির গৃহশিক্ষক ছিলেন যিনি সেই প্রফেসর দীপেন সেন।

–বলছো কি তুমি ঠাকুরপো? ওঁর তো সত্তরের কাছাকাছি বয়েস। তার উপর শুনেছি, উনি খুবই অসুস্থ।

–হ্যাঁ বৌদি। দেখেও তো তাই মনে হোল। কিন্তু দেখলাম সাংঘাতিক মনোবল। ওঁর সঙ্গে আমার সহপাঠী উত্তম সেন সহ কয়েকজন শিল্পী-সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবি আছেন। ওনার পরিচিত, ওনার ছাত্র প্রতিম এক ভদ্রলোক ওনাকে প্রণাম করে বললেন– স্যার। এ তো এক মহান উদ্যোগ। কিন্তু, এই বয়সে, এই শরীরে আপনি নিজে না বেরুলেই পারতেন।

–পাশ থেকে, আমি শুনলাম, উনি বলছেন– দেখ ভাইটি। মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভূবনে, এই কথা কয়টি যিনি বলেছিলেন, সেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথও ১৮৯৮-১৯০৭ সাল পর্যন্ত প্লেগের অতিমারীর বিরুদ্ধে পথে নেমেছিলেন বিপন্ন মানুষকে সেবা করতে। জগদীশ চন্দ্র বসুর মতো প্রাণ ভয়ে ঘরে বসে থাকেননি। আমরা এই মহামানবের দেশের মানুষ। তাঁর উত্তরসূরী। আমরা কি চুপ থাকতে পারি? ওঁর কথা শুনে বৌদি আমিও খুব Moved হয়েগিয়েছিলাম। আমার কাছে মাত্র দুশোটি টাকা ছিল। মনে হোল ওঁর ত্রাণ তহবিলে দিয়ে দিই। কিন্তু, পারলাম না বৌদি। ছোটদির কথাটা মনে পড়তেই, মনটা ওঁর উপর আমার বিগড়ে গেল।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

— কেন, কেন ঠাকুরপো?

–ঐ যে!  আমার ছোটদিকে উনি ঠকিয়েছিলেন!

–তার মানে?

–আ, বৌদি যেন কিছুই জানে না! পড়াশুনায় দীপুদা বরাবর অসাধারণ। তাই দাদা ওঁকে ছোটদির গৃহশিক্ষক করলেন। আশা ছিল ছোটদিকে উনি অনেক বড় করে গড়ে দেবেন। দিচ্ছিলেনও। ওঁর আচার-আচরণ দেখে মা, দাদা, তুমি, সবাই, সবাই খুব খুশী হলে। ওঁকে এ বাড়ীর জামাই করার কথা ভাবলে। ছোটদিও ওঁকে তলে তলে ভালোবেসে ফেলেছিল। তারপর, এমন ছেলে যাতে হাত ছাড়া না হয়, তার জন্য বিমল দাকে দিয়ে ও আমাদের সবার বাল্য গৃহ শিক্ষক অসীম কাকুকে দিয়ে ওঁর সাথে ছোটদির বিয়ের কথা পাকা করলে। ছোটদি তখন সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। ঠিক হয়েছিল ছোটদি এম. এ পাশের পর ওঁদের বিয়েটা হবে। কিন্তু হোল না। উনি ছোটদিকে ছেড়ে অন্য মেয়ের প্রেমে পড়লেন। ছোটদিকে পড়ানো বন্ধ করে দিলেন। না হলে দেখতে বৌদি, আমাদের ছোটদি University-র প্রফেসার হোতো।

–সবটাই ঠিক বলেছো ঠাকুরপো। কিন্তু, শেষের টুকু ভুল বললে।

–কোন্‌টা?

–ঐ যে বললে, দীপেন বাবু তোমার ছোটদিকে ছেড়ে অন্য মেয়ের প্রেমে পড়লেন। ছোটদিকে পড়ানো বন্ধ করে দিলেন। এটা একদম বাজে কথা।

–তার মানে?

–তার মানেটা হোল এই, ছোটো, মেজো, তোরা ও বোন ভালো করে তাহলে আজ শুনে রাখ একটা ঘটনা, না হলে একটা নিষ্পাপ সরল সিধেসাদা আদর্শবান মানুষ অপবাদের মিথ্যে বোঝা মাথায় নিয়ে মরবেন। সেটা হোল এই, উনি, মানে ছোট ঠাকুরঝির গৃহ শিক্ষক, সদ্য চাকরি পাওয়া তরতাজা তরুণ অধ্যাপক দীপেন সেন অন্য মেয়ের প্রেমে পড়েননি, কিংবা ছোট ঠাকুরঝিকে পড়ানো বন্ধ করেও দেননি। মানুষটা ছিলেন বরাবরই খুব সরল, বিনয়ী, নির্লোভ, আর প্রখর আত্মমর্যাদাবান। ঠাকুরপো, তোমাদের অসীম কাকু তোমাদের দাদাকে বলেছিলেন, ওঁরা খুবই বনেদী গরীব ব্রাহ্মণ পরিবার। জমিদারদের পুরোহিত। ওঁর বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী তথা প্রাথমিক শিক্ষক। পয়সা না থাকলেও গ্রামে খুবই সম্মান ও নাম ডাক। কাজেই দীপেন এমন কিছু করবে না, যাতে বাপ মা এবং ওর মুখ পোড়ে। ছোট ঠাকুরঝি আমায় সব বোলতো। প্রথম দিন থেকেই ও দীপেন বাবুর প্রেমে পড়ে যায়। কিন্তু, দীপেন বাবু ওকে এড়িয়ে চলতেন। ছোট ঠাকুরঝি নাছোড়বান্দা। একদিন দীপেন বাবু ওকে বলে দেন– তুমি যেটা চাইছো সেটা হবে না। আমি আর তোমায় পড়াব না। অন্য শিক্ষক দেখে নাও। আর এটাও শোন। আমার কোন প্রেমিকা নেই, ও নিয়ে ভাবার সময়ও আমার নেই। কেঁদে-কেটে, ক্ষমা চেয়ে, সে যাত্রায় ঠাকুরঝি বিপদ কাটায়।

আমি বিষয়টা তোমাদের দাদাকে বলি। দেখলাম, মনে মনে উনিও ঠাকুরঝির জন্য দীপেন বাবুকে খুব like করেন। আর ওব্যাপারে আমার তো প্রচন্ড মত ছিলই। শেষ পর্যন্ত তোমার দাদা অসীম বাবু ও বিমল খানকে দিয়ে দীপেন বাবুর সঙ্গে ঠাকুরঝির বিয়ের কথা পাকা করেন: তোমাদের ছোটদির এম. এ. পাশের পর বিয়ে হবে ঠিক হয়।

বৌদি বলে চললেন–ঠাকুরঝি আমায় বলেছে, এই বাকদান পর্বের পর থেকেই দীপেন বাবু ওকে হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসতেন। ওকে অধ্যাপিকা হবার স্বপ্ন দেখাতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ওনার শিক্ষক দম্পতি ও পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠাকুরঝিরও শিক্ষক দম্পতি মীরাদি ও বঙ্গেন্দু বাবুর কথা বলে উনি প্রায়ই তোমাদের ছোটদিকে বলতেন ও লিখতেন যে “স্যার ও দিদি’র মতো আমাদেরকে অধ্যাপক ও অধ্যাপিকা হতেই হবে। জান দিয়ে পড়ো”।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

–সে তো হোল। কিন্তু বৌদি, ছোটদির পার্ট-১ পরীক্ষার আগে তাকে মাঝদরিয়ায় ফেলে উনি চম্পট দিলেন কেন অন্য মেয়ের সঙ্গে প্রেম করে?

–একদম ভুল কথা ঠাকুরপো। অন্য মেয়ে তো দূরের কথা। উনি চম্পটও দেননি। সবটা ছিল একটা চক্রান্ত।

–চক্রান্ত। কি বোলছো বৌদি?

–হ্যাঁ ঠাকুরপো! ঠিক বলছি। ওই তোমাদের পরিবারের গডফাদার, তোমার দাদার বন্ধু, তোমাদের গ্রেট সর্বনেশে বিমলদা! ওর চক্রান্ত। বিয়ের পরে ঘরে এসেই তোমার দাদাকে বলেছিলাম, তোমার এই বন্ধুটার থেকে সাবধান। ও ধান্দাবাজ। কিন্তু তোমার দাদা, সবার উপরে এ বাড়ীর মা, তোমার দিদিরা কেউ সে কথায় কান দেননি। এ বাড়ীর বাবার মৃত্যু সহ এ সংসারের এমন কিছু গোপন কথা ও বন্ধুর বেশে ঢুকে জেনে ফেলেছিল যে ওর হাত থেকে কারোর রেহাই ছিল না। মৃত্যুর আগে তোমার দাদা আমায় বলেছিলেন–মালী! তুমি ঠিক বলেছিলে। বিমল ছিল একটা শয়তান। বন্ধুর বেশে সব জেনে ও কার্যতঃ বার বার আমায় ব্লাকমেলিং করেছে। ওর সেই ব্লাকমেলিং-এ আমার লক্ষ লক্ষ টাকা জলে গেছে। আঙ্গুল ফুলে মোটা হয়েছিল ও। এমনকি দূর্গা প্রতিমার মতো ছোটবোনটিকে ওরই কুপরামর্শে আমি বনবাসে দিয়েছি।

–বনবাসে কেন বৌদি? ডাক্তারের সঙ্গে ছোটদির বিয়ে হয়েছে। বিশাল বড়লোক জামাই বাবুরা।

–না ভাই। তোমার দাদা অত দূরে আগরতলায় ছোটঠাকুরঝির বিয়ে চাননি। মাও চাননি। কিন্তু সব চক্রান্ত ঐ বিমলের। বিয়েটা ওর মোটেও ভালো হয়নি। ঘর বর এক কথায় দুটোই অপছন্দ ছিল তোমার দাদার। আমারও। কিন্তু ঐ বিমল মাথা খেয়েছিল তোমার ছোটদির। কি জঘন্য, কি ভয়ঙ্কর চক্রান্ত জানো?

তোমার ছোটদি ঠিকই ছিল। ওর অনার্স পাট-১ পরীক্ষার আগে তোমার মেজদির বিয়ে হয়। বিয়ের ঠিক তিন দিন আগে দীপেন বাবু সন্ধ্যাবেলা স্মৃতিকে পড়াতে আসেন। পড়িয়ে চলে যাচ্ছেন। তোমাদের বিমলদা, উঠোনে ওঁকে দাড় করিয়ে বলেন–“দাঁড়ান মাস্টার মশায়। ও মাসে অনেক কামাই হয়েছে। তাই অর্ধেক মাইনে এই ত্রিশ টাকা দিলাম।” বাঁ হাত দিয়ে উনি দীপেন বাবুকে টাকাটা দিলেন। আমি তখন এই শানের ঘাটে বসে। মুখ নীচু করে উনি চলে গেলেন। আর আসেননি।

রাতে তোমার দাদাকে বিষয়টা বলি। উনি শুনে থ হয়ে যান। আমায় বলেন–তুমি চিন্তা কোরো না। আমি বিমলের সঙ্গে একটু কথা বলে দু’জনে গিয়ে ভাবী ছোটভগ্নিপতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো এবং ভারুর বিয়ের নেমনতন্নটাও ওকে করে আসবো। একদম ভুলে গিয়েছিলাম।

কিন্তু, বিমলের আপত্তিতে এসব কিছুই আর সম্ভব হয়নি।

–কি বলছো বৌদি।

–ঠিক বলছি ঠাকুরপো। তোমার দাদা মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। কিন্তু কেন জানি না, উনি কিছুই করতে পারেননি। দীপেনবাবুর আর এ বাড়ীতে কোন দিনও আসা হয়নি। উনিই রটিয়ে দেন অন্য মেয়ের সাথে দীপেন বাবু প্রেম করছেন। তাই মাঝ গাঙে তোমার ছোটদিকে ভাসিয়ে উনি চলে গেছেন।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

–আরো শোন। উনি চক্রান্ত করে তোমার ছোটদির সঙ্গে ওর সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাইলেও, সে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। ছোটদি এম. এ. পাশ করা পর্যন্ত ওদের মধ্যে এই সম্পর্ক বজায় ছিল। এ বাড়ীর শুধু আমিই সেটা জানতাম। দীপেন বাবু প্রকাশ বলে তোমার ছোটদির এক সতীর্থ ভাইকে দিয়ে গোপনে নোট করে তাকে পাঠাতেন। ঠাকুরঝি সেগুলো পড়ে বি. এ অনার্স পার্ট-১, পার্ট-২ পাশ করেছে। ঐ ভাবে এম. এও পাশ করেছে। দীপেন বাবুর হাতের লেখাছিল খুব জড়ানো। যেখানে ঠাকুরঝি বুঝতে পারতো না, সেখানে দাগ মেরে দিত। পরের দিন প্রকাশ আবার ওর স্যারের থেকে সেগুলো ঠিক করে এনে দিত। এ ছিল ঠাকুরপো এক অবিশ্বাস্য বিদ্যাসাধনা, প্রেমসাধনা।

একটু থেমে বৌদি বলেন–

তোমার দাদা তো ছোটবোনকে অসম্ভব স্নেহ করতেন। প্রায়ই বিছানায় শুয়ে হা হুতোশ করতে করতে বলতেন, বোনটার পড়াশুনার কি সর্বনাশ যে হোল। বিমল নতুন টীচার ঠিক করে দিল, তাও নিল না। বলল, একা একা পড়ে ভালো রেজাল্ট করে দেখিয়ে দেবে। আমি তোমার দাদাকে সত্যিটা চেপেরেখে বোলতাম–আমি একটি মেয়েকে যোগাযোগ করে দিয়েছি উপরের ক্লাশের তিন বছরের। তার থেকেই তোমার ছোট বোন দেখিয়ে নেয়। দেখো খুব ভালো রেজাল্ট হবে। তোমার দাদা সরল মনে বিশ্বাস করে আশ্বস্ত হোত।

একটু থেমে বৌদি জিজ্ঞেস করলো–

–কি বুঝলে ঠাকুরপো? কি বুঝলি মেজো-ছোটো?

মেজো অর্থাৎ কল্যাণের স্ত্রী উত্তর দিল–

দিদিভাই! তুমি যা বললে, এ যে অবিশ্বাস্য।

–কিন্তু বোন! এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! আরো শোন। তখন তো কল্যাণ-মলয় হাফপ্যান্ট পরে। আমার বাবু সোনা তখন সবে হাঁটতে শিখেছে। তাই বোনের পড়াশুনা অন্তপ্রাণ ছিল তোমার দাদা। ভাই বোনেরা পড়াশুনার পাশাপাশি গান শিখুক এটা তোমাদের ভাসুরঠাকুর চাইতেন। বসিরহাটের সেরা গানের দিদিমণি বাণী সেনগুপ্তাকে ঠিক করেছিলেন মেজো ও ছোট ঠাকুরঝির গান শেখার জন্যে। দীপেন বাবুর বোন শিউলিকেও ওঁদের গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে বাণী মাসীমা গান শিখিয়ে আসতেন। 

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৌদি বলে চললেন–মেজো ঠাকুরপো! জানো? যখন তোমার ছোটদি সবে এম. এ ভর্তি হয়েছে, তখন দীপেন বাবু তিন বছরের ফেলোশিপ পান বিদেশে পড়তে যাবার। কিন্তু, বিদেশে গেলে বাকদত্তা পুত্রবধূর কেরিয়ার নষ্ট হবে, তাই দীপেন বাবুর বাবা মা ওঁকে বিদেশে যেতে দেননি; দীপেন বাবুও চাননি। তোমার ছোটদিকে ফেলে যেতে।

–এত কথা তুমি জানলে কি করে বৌদি?

–ঐ যে বললাম, বাণী মাসিমা। এ বাড়ীতে ও দীপেন বাবুর বাড়ীতে, দু’জায়গাতেই গান শেখাতেন, তিনি আমায় প্রথমে বলেন। পরে, তোমার ছোটদিও এটা আমায় বলে। আসলে basically তোমার ছোটদিতো ছিল খুবই সৎ ও সরল মেয়ে। ঐ শয়তান বিমলের পাল্লায় পড়ে ও একটা খুনী হয়ে গেছে।

https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104      (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});

–কি বলছো তুমি বৌদি?

–হ্যাঁ ঠিক তাই। এম. এ রেজাল্ট বেরুনোর পরে কলেজ সার্ভিস কমিশনের বিজ্ঞাপন হলে। ছোটদি অধ্যাপিকার পদে দরখাস্ত করে। দীপেন বাবু প্রকাশকে দিয়ে ছোটদির থেকে মার্কশীট, এ্যাডমিট, অনেকগুলো ছোটদির ফটো সব নিয়ে নেয়। ছোট দিই আমায় জানিয়েছিল যে ছোটদির সইটাও পর্যন্ত উনিই করে জমা দেন। আর যাতে Interview-এর চিঠিটা মার না যায় তার জন্য ছোটদির কথামতো C/O করে দীপেন বাবুর গ্রামের বাড়ীর ঠিকানায় ওটার mailing Address করে দেওয়া হয়। আমি তো ঠাট্টা করে ঠাকুরঝিকে বলেছিলাম, C/O কেন, W/O লিখতে বলবে তো? মিষ্টি বোনটা লজ্জারাঙা হয়ে আমার বুকের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে বুক লুকিয়েছিল।

একটু চুপ করে, একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৌদি বললেন–তারপর একমাসের মধ্যে যেন একটা ভূমিকম্প হোল। সেই ভূমিকম্পে আমার দেবীর মতো নিষ্পাপ ঠাকুরঝিটা কোথায় হারিয়ে গেল। যে মেয়েটি এতোটা এগিয়ে ছিল, সেই মেয়েটা ঐ কালনিমে বিমলের ঠিক করা আগরতলার অরথোপেডিক্সের ডাক্তার সুবল নন্দীকে বিয়ে কোরলো। আমি তখন বাপের বাড়ীতে। বাড়ীর বড় বউ, একমাত্র বউ আমি; তোমার ছোটদির অসমবয়সের বান্ধবী আমি। আমি কিছুই জানলাম না। বিয়ের মাত্র দশদিন আগে সব ঠিক হয়ে গেলে, আমি জানলাম বাড়ী এসে। জানো ভাই কল্যাণ, মলয়, মেজো, ছোটো, শুনে আমার মাথাটা ঘুরে গেলো। তোমার দাদাকে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, স্মৃতিই বিমলের পছন্দ করা এই পাত্রে মত দিয়েছে। তোমার দাদাকে কখনো আমি অবিশ্বাস করিনি। কিন্তু, আজ অবিশ্বাস করলাম। ছুটে গেলাম ঠাকুরঝির ঘরে। পেলাম না। একটু বাদে দেখলাম তোমার দাদার বাইকে চেপে সুবল ও তোমার ছোটদি মার্কেটিং করে ফিরছে। খুব হাসিখুশী দু’জনে। বিয়ের ৭দিন আগেই এসে সুবল এখানে আস্তানা গেঁড়েছিল। আমার আর জিজ্ঞাসা করার কিছুই রইলো না। শুধু দুপুরে খাবার পর শুয়ে ভারতীর বিয়ের তিন দিন আগে থেকে ছোটদির অধ্যাপনার ফর্ম ফিলাপ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা তোমার দাদাকে বললাম। চুপচাপ সব শুনে একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেছিলেন–এও সম্ভব মালী?

জ্যোৎস্না ফুট ফুট করছে। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে শুনছে। বৌদি বলে চললেন–

জানো ঠাকুরপো! মনের গভীরে দীপেন বাবুকে আমার ভাই-এর মতো স্নেহ করে ফেলেছিলাম। বয়সে আমার থেকে সামান্য ছোটই ছিলেন উনি। ওনার উপর এই অন্যায়টা আমি কিছুতেই মানতে পারছিলাম না। আর সদ্য আগত ঐ ডাক্তার পাত্র সুবলের বডি language টা কিছুতেই আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। আড়াই বছর ধরে আমাদের বাড়ীতে, আর আড়াই বছর ধরে দূর থেকে তোমাদের ছোটদির নোট দেওয়া নেওয়ার মাধ্যমে, ছোটদিকে দেওয়া ছোট ছোট চিরকূটে তার ব্যক্ত করা হৃদয় আকূতি পড়ার মাধ্যমে বুঝেছিলাম যে ছোটঠাকুরঝি জীবনসঙ্গী হিসাবে পাচ্ছে এক দেব পুত্রকে; আর সুবলকে দেখে মনে হয়েছিল যে কোন এক দৈত্যপুরী থেকে এক দানবকে বিমলদা, ধরে এনেছে স্মৃতির সর্বনাশ করতে। কিছুতেই মানতে পারছিলাম না ব্যাপারটা। একটা ফাঁক করে ছোট ঠাকুরঝিকে ধরলাম। সে ভালো করে কথা বললো না আমার সাথে। শুধু বললো- “I am extremely happy now Boudi with Subal” 

–ছোটদি এমনটা করেছিল বৌদি তোমার সাথে?

–থাক সে কথা। ও সুখী হয়েছে, এটাই ভালো। তবে দীপেন বাবুর কাহিনীর আর একটু বাকী আছে ভাই।

–বলো বৌদি।

–দীপেন বাবুর বাবা মা স্মৃতিকে নিয়ে ভাবী পুত্রবধূর স্বপ্নে ছিলেন বিভোর। স্মৃতির বিয়ের খবর পেয়ে নিদারুণ আশাভঙ্গে মেশোমশাই অর্থাৎ দীপেনবাবুর বাবা স্ট্রোকে মারা গিয়েছিলেন। বিজয়া দশমীতে যখন আমরা সিঁদুর খেলছি তখন মাসীমার সিঁথি গিয়েছিল মুছে।

–ইস্‌। আঁতকে উঠলো, মেজো ও ছোটো জা।

–এর পর ঠাকুরপো, তুমি ঠিক করো, বজ্রাঘাতে ঝাঁঝরা হয়েও মানুষের জন্য পথে নামা ঐ মানুষটিকে তুমি কি বলবে?

বৌদির মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনে বাক্য হারা হয়ে গিয়েছিল কল্যাণ। নিজেকে সামলে নিয়ে ও বলল–

বৌদি! বিমলদা এমনটা কেন করেছিলো বলো তো?

–স্রেফ দাদাগিগির ও সম্পত্তি হাতানোর মোহে। দীপেন বাবুর মতো চোখ মুখ খোলা ছেলে এ বাড়ীর জামাই হলে ওনার খবরদারি ও ব্লাকমেলিং খতম হয়ে, সম্পত্তি লোপার্ট বন্দ হবে। আর সবার উপরে ছিল এ বাড়ীর মানুষদের লোকলজ্জায় ভয়কে পুঁজি করে আখের গোছানো। আমাদের পরিবারের ভিতরের কিছু অপ্রিয় সত্য বাইরে বেরিয়ে গেলে, সমাজের কাছে আমাদের মাথা হেট হয়ে যাবে, এই ভয়ে বিমলকে কেউ চটাতো না। দেখ ঠাকুরপো, এ বাড়ীর ভিতরে যে জটিলতা, তা আগে জানলে হয়তো আমরা যতই আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বলই হই, কিছু মনে করো না ভাই, তাহলে এ বাড়ীতে আমার বিয়ে আমার বাবা মা দিতেন না। কিন্তু বিয়ে হয়ে যাবার পর, আমি তো সবাইকে মেনে নিয়েছি তোমার দাদার মুখ চেয়ে আর তোমাদের মতো ছোটছোট ভাইবোনদের অসম্ভব ভালোবাসা পেয়ে। সবাইতো এ বাড়ীর ভালো নয়, ভালো ছিল না; মাথা উঁচু করে সবার কথা লোকসমাজে বলা যেত না, আজও যায় না। কিন্তু, আমি তোমার সদাশিব দাদাকে বারবার বলেছি যা হবার তা হয়েগেছে, অতীতের কারোর ভুলের খেসারত আর কতকাল আমরা দেবো? ব্লাকমেল করে বিমল যা করে করুক। বুক চিতিয়ে সত্যটা আমরা মেনে নেবো। কিন্তু, পারিবারিক মর্যাদা, ভাইবোনের বিয়ে থা, ইত্যাদির কথা ভেবে মানুষটা বিমলের সব মানসিক নির্যাতন স্বীকার করে নিয়েছিল। পরের দিকে হাঁফিয়ে উঠেছিল তোমার দাদা।

একটু থেমে, বৌদি বলে চললেন–ঠাকুরপো, পাপ কখনো বাপকে ছাড়ে না। তোমার দাদার মতো একটা সৎ, সহজ সরল মানুষের অন্ধ বন্ধুত্বের সুযোগে বিমল ওই বাড়ীর অন্দর মহলে ঢুকে নিজের স্বার্থে যা খুশী তাই করেছে, বিপুল সম্পত্তি করে নিয়েছে আমাদেরকে ব্যবহার করে। কোথায় গেল ভাই সে সব ফাঁকি দেওয়া সম্পত্তি? ভগবান ওকে ওর শঠতার কঠোর শাস্তি দিয়েছেন: কঠিন ব্যাধির যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে অকালে ওকে মরতে হয়েছে; অত্যন্ত বেদনার, তবু বলি, দু’টি মেয়ের একটি মেয়েকে শ্বশুর বাড়ীর লোকরা আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। যা হোক ঠাকুরপো, ও প্রসঙ্গ বাদ দাও।

–হ্যাঁ বৌদি ঠিক তাই। আমরা, আমাদের দাদা, কেউ আমরা কাউকে ফাঁকি দিইনি। তাই, ভাগ্যের জোয়ার-ভাঁটায় এখন আমাদের অবস্থান মরা কোটালে হলেও, মোটা ভাত, মোটা কাপড় তো ভগবান জোটাচ্ছেন।

— ঠিক তাই ঠাকুরপো।

–এর বেশি আর আমাদের কিছুই চাইবার নেই ঈশ্বরের কাছে বৌদি। এখন বলো তো বৌদি। খুব কষ্ট হচ্ছে দীপেনদার কথা শুনে। ছোটদির এই কান্ডকারখানার পর দীপেনদা কি আর বিয়ে থা করেছিলেন?

ঠিক এই সময় পাশের অর্ঘ ক্লাবের বিচিত্রানুষ্ঠান থেকে ভেসে এল 

সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে গান–

“জানি একদিন আমার জীবনী লেখা হবে,

সে জীবনী লিখে রেখো

তোমাদের গানের খাতায়।”

তন্ময় হয়ে সবাই গানটা শুনলো। তার পর বৌদি তাঁর গানের আবেগে ভারী হয়ে যাওয়া গলাটা খেঁকিয়ে নিয়ে বললেন–

বানী মাসীমার মুখে শুনেছিলেন, স্মৃতিকে হারিয়ে, নিজের বাকদত্তার ঘূর্ণিপাকে অকালে অকস্মাৎ বাবাকে হারিয়ে শ্রমিক-কৃষক-শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিয়ে লড়া, এর মধ্যেই দীপেন বাবু আত্মনিবেশ করেছিলেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত নিজের অকাল বিধবা মায়ের কান্নার কাছে হার মেনেছিলেন। আমি তো ভাই দেখিনি–ঐ মাসীমা এবং পরে বিভিন্ন সূত্রে জেনেছি, তোমার ছোটদির চেয়ে এক বছরের ছোট, এক মধ্যবিত্ত হাইস্কুল শিক্ষকের একমাত্র মেয়েকে উনি বিয়ে করেছেন। সে অসম্ভব সুন্দরী, মেধাবিনী, বাগ্মী জননেত্রী, ইংরাজীর অধ্যাপিকা, বাচিক শিল্পী, মিছিলে মিছিলে দীপেন বাবুর ছায়া সঙ্গিনী। 

–যাক, আমি খুশী বৌদি, আমার ছোটদি এই মানুষটির বুকে যে ছুরির ক্ষত করে গেছে, ঐ অজানা অচেনা, দিদিটি দীপেনদার বুকের সেই ক্ষতকে নিশ্চিত মুছে দিতে পেরেছে।

–নিশ্চিত তাই হবে। আমি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি। বিলম্বে হলেও ভগবান সৎ নির্লোভ মানুষকে অনেক অনেক দেন। ব্যাথা পেয়ো না ভাই কল্যাণ, মলয়, কিংবা মেজো ও ছোট তোরা। ছোট ঠাকুরঝির চেয়ে লক্ষ শুণ বেশী রূপবতী, গুণবতী, মেধাবতী ও লোকপ্রিয়া দীপেন বাবুর স্ত্রী। তিনি শুধু অধ্যাপিকা নন। ক্যাবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদা সম্পন্ন তিনি এই জেলায় দ্বিতীয় প্রশাসিকা।

–বৌদি, তুমি কি কখনো তাঁকে দেখেছো?

–না ভাই, বানী মাসী, তোমার সহপাঠী, আমাদের প্রতিবেশী উত্তম সেন সহ অনেকের মুখেই আমি শুনেছি। কেন বলোতো?

–হ্যাঁরে মেজদা। মলয় মুখ খুলল, ছোটদি তো আমাদের মুখে, বুদ্ধিজীবি মহলে চুনকালি মাখিয়ে দিয়েছে। বৌদি যা বললেন, তার সবটাই ঠিক। ছোটদি বোধ হয় দীপেন স্যারকে ঠকাতে গিয়ে নিজেই ঠকে বসেছে।

–মলয়কে থামিয়ে দিয়ে কল্যাণ শুরু কোরলো–জানো বৌদি, ঐ ত্রাণ সংগ্রহে দীপেন দার সঙ্গে একাধিক পুরুষ সঙ্গী ছিলেন, কিন্তু মাত্র একজন ভদ্রমহিলা ছিলেন।

–বয়স কেমন হবে মেজো ঠাকুরপো?

–ঠিক অনুমান করতে পারলাম না। এই ধরো ৬০/৬২ হতে পারে। তবে অপূর্ব দেবীমূর্তির মতো লালপেড়ে অতি সাধারণ শাড়ী, সধবা, কোন অলঙ্কার নেই। শুধু শাঁখা আর নোয়া বাঁধানো ছাড়া। সাদা কালো চুলের মাঝখানে সিঁদূরে রাঙানো সিঁথি। চোখ মুখ দিয়ে যেন মমতা, মাতৃত্ব, সংস্কৃতি, শিক্ষা ও মেধা ঝরে পড়ছে।

–ওঃ।

— আচ্ছা বৌদি। উনিই অধ্যাপিকা সেন নন তো?

–জানি না ভাই। উদাসভাবে বৌদি বললেন, হয়তো হবে, হয়তো বা না। একটু থেমে উনি বললেন–

–ছোট ঠাকুরঝিকে নিয়ে আমার কত স্বপ্ন ছিল: দীপেন বাবুর পাশে দাঁড়িয়ে, একাধারে অধ্যাপিকা হিসাবে সমাজসেবা করবে। কিন্তু সে আর হোল কই? যে মেয়েটা একদিন আঠারো বছর বয়সে নেতারহাট জঙ্গলে বেড়াতে গিয়ে, বনের শোভার দিকে না তাকিয়ে, তোমরা ছোট দুই ভাই, তোমাদেরকে নিয়ে ছুটেছিল দুঃস্থ আদিবাসীদের পল্লীতে, ক্যামেরা বন্দী করে এনেছিল পাঁজর বেরিয়ে পড়া তাদের ছবি, সেই নিষ্পাপ গরীব দরদী ননদটী আজ আমার হারিয়ে গেছে ত্রিপুরায় ঐ কুবেরের মিনারে। একদম সাজতো না। একটা দেবকীয় আলগাশ্রী নিয়ে, অতি সাধারণ পোশাকে সে থাকতো; বিশ্বকর্মা, দুর্গাপূজোয় গরীবদের বস্ত্রদানের জন্য তোমার দাদার কাছে, আমার কাছে এসে জুলুম করতো; সেই মেয়েটি আজ কি পরিবর্তন!

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বৌদি বললেন–

৬২ বছর বয়সে সে এখন তরুণী সাজতে চূনকালি মাখছে। 

–তার মানে দিদিভাই? মেজো-ছোটো দুই জাই একসাথে জিজ্ঞেস করলো।

— বুঝলি না তোরা? এই বুড়ী বয়সে নখে চুন দিচ্ছে।  

— চূণ?

–হ্যাঁ চূন! মানে সাদা নখপালিশ। আর কালি মানে, চুলে কলপ করছে। ভীমরতি হয়েছে।

–বাবা:। বড়দিভাই। তুমি আজ দেখছি আজ ফুল মুডে আছো। তাই না ছোটো?

— না না। ফুল মুড টুড না। এটাই বাস্তব। ওরা তো খোঁজ খবর নেবার সময় পায় না। VIP মানুষ। বড় ভাইটা নেই ছোট ভাই দুটো, তাদের বউ বাচ্চারা কে কেমন আছে, সে সব খোঁজ নেবার অবকাশ ওদের নেই। তাই ওর ১৮০০ ডিগ্রী ডিগবাজী খাওয়া নিয়ে আমার মনে যথেষ্ট ক্ষোভ থাকলেও, তোমার দাদা আর আমি তো পরম মমতা দিয়ে ওকে গড়ে তুলেছিলাম। তাই নাড়ির টানতো রয়েই গিয়েছে। সে কারণ, কদিন আগে আমি ঠাকুরঝিকে ফোন করেছিলাম। খুবই ব্যস্ত মানুষ কিনা। মিনিট দু-তিন কথা বলল। তার ভিতরেই সে জানিয়ে দিল, আপনি বাঁচলে বাবার নাম। আমি ও ডাক্তার বাবু, কেউই বাড়ীর বাইরে যাচ্ছি না। নিজের কানকে ঠাকুরপো আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ছোট ঠাকুরঝির এত অধঃপতন! অথচ দেখ! নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে দীপেন বাবু বিপন্ন মানুষের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। সঙ্গের ঐ ভদ্র মহিলা যদি তাঁর স্ত্রী হন, তাহলে তো কথাই নেই। যদি নাও হন, তাহলেও ভেবে দেখো। তাঁর কি উদার মানসিকতা যে জীবনের ঝুঁকি থাকলেও নিজের স্বামীকে তিনি বিপন্ন মানুষকে বাঁচাতে ত্রাণসংগ্রহে পাঠাতে কুণ্ঠিত হননি। আসলে কি জান ঠাকুরপো, কি জানিস সেজো, ছোটো? বনের সব গাছ একরকমের হয় না। বনস্পতি যারা, তারা শতবার বজ্রাঘাত পেয়েও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে, বুকে নীড় আঁকড়িয়ে। প্রফেসর সেন বনস্পতি প্রজাতিরই গাছ। তাই আজ ওঁরা রাজপথে, মানুষের জন্য ত্রাণ ভিক্ষাতে।

চুপ করে সবাই শুনছিলো। নীরবতা ভেঙ্গে এবার মলয় বললো–বউদি। তুমি এতো চাপা! তুমি এই সংসারকে ভালোবাসো জানি: কিন্তু এতো ভালোবেসো তা জানতাম না। স্কুলে আমি সাহিত্য পড়াই। তোমায় আজ নবরূপে দেখলাম। তুমি একাধারে মা গান্ধারী, ভগিনী জাহানারা। একই অঙ্গে তুমি সব। তুমি যদি একটু আগে এসব আমাদের জানাতে বৌদি! হয়তো ছোটদিকে কিছুটা শোধরাতে পারতাম। ও তো ছিল এ বংশের ক্রীম। ছোটো ঠাকুরপো, তোমরা দু’ভাই তখন নাবালক! তোমার দাদা একজন নিপাট ভালোমানুষ ছিলেন। বারো শত্রু তাকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে ধরেছে। আমি শুধু তারপাশে একা। বিমলের প্রেমে তখন এবাড়ীর সবাই গদগদ। আমি শয়তানকে ঠিক চিনে তোমার দাদাকে সতর্ক করি। তিনি সব বুঝেও ছিলেন অসহায়। কাজেই ঠেকানো গেল না। একটু থেমে বৌদি বললেন–তুমি ছোট ঠাকুরপো ঠিকই বলেছো। ছোট ঠাকুরঝি ছিল এ বংশের ক্রীম। তোমার দাদা এবং আমিও তাকে অসম্ভব স্নেহ করতাম। সমস্ত সাধ্যি নিয়ে তাকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু শঠতার কাছে আমাদের সততা হেরে গেছে ঠাকুরপো।

–বৌদি! হেরে গেলেও, আমরা তো হারিয়ে যাইনি। 

–সে কথা একশো বার।

–তাই বলছিলাম কি বৌদি, এত বড় একটা মহান কাজে ছোটদিকে সামিল করার একটা চেষ্টা করলে হয় না?

–আমি তো সেই উদ্দেশ্য নিয়েই, অতিমারী ও কর্মহারা মানুষদের হাহাকার, এই দুই বিপদের মধ্যে সাধারণ মানুষকে বাঁচাতে সে রাজপথে নামুক, এই কথাটা তাকে বলতেই ও সেই সঙ্গে তার কুশল জানতে আমি ফোনটা করেছিলাম। কিন্তু, তার কি বেদনা দায়ক ফল, সে তো তোমাদের বললাম।

–তবুও বৌদি, মলয়ের সাথে সহমত হয়ে বলছিলাম কি, আর একবার চেষ্টা করলে হয় না এই মহান কাজে ছোটদিকে সামিল করার জন্য উদ্যোগ নেবার?

–ঠাকুরপো! খুব ভালো কথা। কিন্তু, ঘরপোড়া গরু তো আমি; তাই বলি, বুঝেসুঝে এগিয়ো। যেন আহত হয়ে ফিরে এসো না। যে আঘাত একজন প্রবীণ মানুষ হিসাবে তোমার দাদা সহ্য করতে পেরেছেন, কিংবা পোড় খাওয়া কমিউনিস্ট ও সমাজবেসী হিসাবে দীপেন বাবু সইতে পেরেছেন, এত অল্প বয়সে সেটা হয়তো তোমরা সইতে পারবে না। সেটা দেখো।

–তার মানে বৌদি?

–তোমার দাদার যৌথ পরিবারের প্রাণ। ভেঙ্গে পড়া এই বাড়ীটাকে রক্ষার কথা তিনি খুব ভাবতেন। একদিন আমায় বলেন–স্মৃতিকে বাড়ীটা সংস্কারের জন্য কিছু টাকা দিতে মালী, অনুরোধ করলে হয় না? আমি তাঁকে নিষেধ করেছিলাম।

বৌদি হঠাৎ ভ্যাককরে কেঁদে ফেললেন। আঁচলে মুখ চেপে তিনি বললেন, মারা যাবার তিন দিন আগে তিনি আমার হাত ধরে বললেন, তোমার চুরি করে, তোমার বারণ না শুনে, ছুটকিকে বাড়ী সংস্কারের কিছু টাকার কথা বলেছিলাম মালিনী। 

তোমার দাদা আর কিছু বলেননি শুধু কাঁদছিলেন। চোখ দুটো আমি মুছে দিয়েছিলাম। এর পরের ঘটনাটি ছিল দীপেন বাবুকে নিয়ে। দীপেন বাবু ও ছোটঠাকুরঝির মাঝখানে আড়াই বছর ধরে সেতু হিসাবে কাজ করেছে যে প্রকাশ, রাত নেই, দিন নেই, যে ছেলেটি ছুটকিকে নোট বয়ে এনে দিয়েছে, নোট কারেকশান করিয়ে এনে দিয়েছে দীপু বাবুর থেকে, ওর কাছ থেকে ফটো, মার্কশীট ইত্যাদি নিয়ে গিয়ে দীপু বাবুকে দিয়ে অধ্যাপনার ফর্ম ফিলাপ করিয়ে দিয়েছে, ৪৫ বছর পর সেই প্রকাশ গুরুতর অসুখে ও অর্থ কষ্টে পড়ে চিকিৎসার জন্য স্মৃতির কাছে অর্থ সাহায্য চেয়েছিল। স্মৃতিকে ও বোন বলেই ডাকতো। কিন্তু, এক পয়সাও দেয়নি। আরও শুনবে? আরো শুনবে? উপায়হীন হয়ে দীপু বাবু নিজে স্মৃতিকে ফোন করেছিলেন প্রকাশের জন্য সাহায্য ভিক্ষা করে কিন্তু দেয়নি। 

–কি বলছো বড়দি ভাই? 

–দীপু বাবু ছোটদি ভাইকে এত কান্ডের পরও ফোন করেছিলেন?

–অবাক হলি না ছোটো?

–পৃথিবীতে যারা মানব দরদী, তারা অন্য ধাতুতে গড়া। নিজের ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ বেদনা সবই তাদের কাছে গৌণ হয়ে যায় যখন কোন বিপন্ন মানুষকে বাঁচানোর তাগিদ তাঁর কাছে জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। দীপেন বাবুরও হয়েছিল তাই। কিন্তু, স্মৃতি তাঁকেও ফেরায়। আসলে ছোট, কেউ উচ্চ পদে গেলে আর উচ্চ বিত্ত হলেই উচ্চ মনের মানুষ হয় না। মনুষ্যত্বটাই তার আসল মাপকাঠি। তোমাদের ছোটদি ভাই কি করলো বলো? এর পরেও তোমরা, আমার দেওর ভাইরা মনে করলে তাকে Approach করতে পারো। আমি বাধা দেবো না। কিন্তু, ফল কি হতে পারে, আগে থেকে ভেবে রেখো। তখন আহত হয়ে মুষড়ে পড়ো না। 

–তুমি ঠিকই বলেছো বৌদি। থাক, ছোটদিকে আর কিছু বলার দরকার নেই। কি বলিস মলয়?

–হ্যাঁ মেজদা। আমার তো মনে হয়, উত্তম দার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমাদের সামর্থ্যে যখন যেমন পারি, তখন তেমন, আমাদের গার্জেন বৌদির নামে সেই ত্রাণ দীপুদার হাতে পৌঁছে দিলে ভালো হয়।

–একদম তাই। 

–না না, ঠাকুরপো। দাদার অবর্তমানে তোমরা দুই ভাই এ বাড়ীর তরফে পাঠাবে।

–এবার কিন্তু খুব খারাপ হচ্ছে বৌদি। 

–মলয়ও যোগ দিল

–হ্যাঁ বৌদি। মেজদা ঠিকই বলেছে। 

বৌদির চোখদুটি আবেগে জলে ভরে আসে। তাকিয়ে দেখো আকাশের দিকে তোমাদের দাদা ফুল ছুড়ছেন তোমাদের মাথায় ওখান থেকে। কল্যাণ ও মলয়ের চোখেও জল। একটু সামলে নিয়ে কল্যাণ বললো, জানো বৌদি, মনকে বোঝাতে পারছি না মোটে যে ছোটদির এই পরিবর্তন হোল কি করে?

–কেন মেজদা? শোন! একটা ঘটনা বলি। নুরেম বার্গের জঙ্গলে একটা বাচ্চাকে একটা সিংহী তার গুহায় গালে করে নিয়ে যায়। বাচ্চাটাকে সিংহী মারেনি। বড় করে তোলে। বছর বারো যখন ওর বয়েস, তখন একদল বনরক্ষী তাকে খুঁজে পায়। মানুষের চেহারা। কিন্তু, সিংহশিশুর মত আচরণ। বাচ্চাটির নাম দেওয়া হয় কাশপার হসার। অনেক চেষ্টা করা হয় তাকে মানুষের জীবনে ফিরিয়ে আনার। কিন্তু সে চেষ্টা সফল হয়নি। আসলে পরিবেশগত প্রভাব। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে ত্রিপুরায় যে কুবেরী সংস্কৃতিতে আছে ও, তারই ফল এটা মেজদা।

–দ্যাখ ভাই। তুই যেমন এটা বলছিস, তেমন এ উদাহরণও আছে আমাদের মহাকাব্যে, রামায়ণে। অশোক কাননে বহু কাল ভিন্ন পরিবেশে বন্দী থেকেও, সীতা পাল্টাননি এতটুকুও। 

আসলে, সবার ঊর্ধ্বে হোল ব্যক্তিত্ব। কেউ সহজেই পাল্টে ফেলে নিজেকে; আর কেউ শত প্রতিকূলতার মাঝেও ধরে থাকে আপনাকে। ছোটদি পারেনি নিজের স্বকীয়তাকে রক্ষা করতে। মিনারী কালচারে সে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে।  

গল্পে গল্পে অনেক রাত হয়ে গেছে। আসর ভেঙ্গে যে যার ঘরে চলে যাচ্ছেন। 

ও দিকে বিচিত্রানুষ্ঠান কিন্তু জমজমাট। মাইকে ভেসে আসছে সতীনাথের আর একটি গান–

জীবনে যদি দীপ

জ্বালাতে নাহি পারো

সমাধি পরে মোর

জ্বেলে দিও।

তন্ময় হয়ে শুনতে শুনতে বৌদি ঢুকে যান ঘরে। অস্ফূটে বলে ওঠেন– ছোট ঠাকুরঝি!

লেখক পরিচিতি

অধ্যাপক খগেন্দ্রনাথ অধিকারী রাষ্ট্রীয় বিদ্যাসরস্বতী পুরস্কার ও এশিয়া প্যাসিফিক পুরস্কার সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বহু পুরস্কার প্রাপ্ত একজন খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ। ইনি কোলকাতার সাউথ সিটি (দিবা) কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ।

পোষ্ট- টাকী

পিন- ৭৪৩৪২৯

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *