কে খাদ্য কে খাদক
( মুক্ত ঘূর্ণন ছন্দ মিশ্র অন্তমিল )
———————————————
— ঋদেনদিক মিত্রো
অসহায় প্রাণীদের হত্যা করে তুমি কেন খাও,
তুমিও তো প্রাণী,
ভেবে নাও তোমাকেই হত্যাটা করে
যদি খাই আমি —
লাগবে কেমন,
বলবে তখন কি —
খাদ্য ও খাদকের সম্পর্ক,
নিজের সময়ও কি তুমি মানবে তেমন !
তোমাকেই যদি আমি মেরে রেঁধে খাই,
লাগবে কেমন !
মিথ্যা যুক্তি দিয়ে শান্তনা নেওয়া —-
শান্তি তো নয়,
শান্তি তাতেই আসে অন্তর যদি বলে —
এইটাই ঠিক, তাই এইটাই জয়,
যে-কোনো কাজেই সেটা সত্য,
জানো নিশ্চয় !
ভেবে নাও যে-জীবটা রান্না হয়ে
তোমারই খাদ্য-পাত্রে আছে রাখা,
তুমি খেতে গিয়ে যেই খুললে পাত্রের ঢাকা,
ভেবে নাও ওই রান্না হওয়া
অঙ্গ বা জীবটা তুমি,
এবং তোমারই জায়গায় আমি বদলে গেলাম,
দৃশ্যটা ভেবে দেখো, কেঁপে কি উঠলো না
তোমার আমিষ-লোভী প্রাণ?
তবে বলো বন্ধু, যাদের হত্যা করো
খাদ্য ভেবে,
তাদেরও ভিতর আছে
প্রেম প্রীতি ভালোবাসা,
অনুভব জেগে,
তাদেরও যন্ত্রনায়
তারা দেখো ওই ওঠে চেঁচিয়ে কেঁদে,
কেবল মানুষ ছাড়া আর বাকি প্রাণী কুল,
বোধ নাকি শূন্য,
কী করে তাহলে তারা করে প্রেম, অভিমান,
সন্তান দেয় জন্ম,
কী করে তারাও করে জীবন-যুদ্ধটা
বেঁচে থাকতে,
আতঙ্কে পালায় তারা যখনি তাদেরকে যাও মারতে !
তারাও তোমার মত করে ঘর সংসার,
পিঁপড়ে হতে সব কীট , পশু, পাখি, মাছ,
তাদেরও রয়েছে ভাষা, শুধু তাই নয়,
তারাও তাদের মতো করে কত সাজ,
আবার মানুষ যদি তাদের পোষে,
মানুষের সাথে তারা মিলে করে কাজ,
প্রাণ-ভরে দেয় ভালোবাসা,
কোলে বা পায়ের পাশে
এসে কী সুন্দর চুপচাপ বসে !
কখনো তোমাকে তারা বিপদ থেকে
বাঁচাতে চায় নানান ভাবে,
তবুও তাদেরকে — বুদ্ধিহীন জীব বলে
হেনস্থা করে যাবে?
তাদের পুষেও কেউ বিক্রি করো—
টাকা নিয়ে তুলে দাও ঘাতকের হাতে,
যাকে পুষে ভালোবেসেছিলে তুমি কখনোও,
তাকেই আবার দেখি মাপো অর্থের মাপে,
কখনো আবার দেখা যায়,
যে-প্রাণীকে পুষেছ অনেক বছর,
তাকেই কাটছো তুমি, রান্না হবে,
সে-প্রাণীটা কী বলছে তোমাকে জানো —
” আদরের হাত দিয়ে আমায় মারছো তুমি
হে মানুষ, এতো নিষ্ঠুর!
আমাকে মেরেই হয় তোমাদের
উল্লাস উৎসব বৈভব !
আমার কষ্ট তুমি বুঝতে কি পারছো না,
‘বাঁচাও, বাঁচাও’ বলে হাঁক দিয়ে কাঁদছি,
তুমি নাকি আমাকে ভালোবাসতে,
সব মিথ্যে বলেছিলে, সব মিথ্যে, সব !”
বলো বন্ধু, এ কান্না শোনো নি কি তুমি,
তবু তুমি শিক্ষিত, ধার্মিক, দাতা, জ্ঞানী, গুণী !
যে-শিক্ষা দেয়নি চেতনা আর অনুভূতি
জীবনের প্রতি, আর জগতের প্রতি,
সেই শিক্ষার নাম হলো ধিক-শিক্ষা,
যা নিয়ে তোমার ও পৃথিবীর ক্ষতি !
ক্ষতি করবার ক্ষমতাকে বলে কি শিক্ষা,
দুর্গতিকে তবে বলবো গতি !
মানুষ ছাড়া আর সব জীব নাকি — ইতর প্রাণী,
একথা শিখিয়েছেন কোন মহা জ্ঞানী!
সেটাকে বলছো জ্ঞান — যেটা শয়তানি?
যখন ওদের দাও কারো কাছে বেচে,
ওরা সব বুঝে নিয়ে
কী করুণ স্বরে জানো কাঁদতে থাকে,
ওরা বুঝতে পারে ঠিক, আর থাকবে না বেঁচে !
কিংবা যে-জীবকে পুষছো তুমি, সেটা রেখে—
খাদ্যের জন্য তার মতো আর একটি
সেই জীব করো হত্যা,
ওদের দুটোর কি আলাদা সত্বা,
প্রশ্ন টা করো নিজে চুপচাপ,
জানবে, জীবন ও পৃথিবীর যত কিছু দুঃখ,
আড়ালে কারণ হলো মানুষের অপরাধ, পাপ!
তুমি যদি নাস্তিক — মানোনা তো এসব হিসেব,
তবে, নিজেরই কোনো অঙ্গ নিজে কেটে বলতো —
“যন্ত্রনা হচ্ছেনা, হলেও তা কী বা আসে যায়, ”
দেখি তো, যুক্তিবাদী নাস্তিকের দৌড় টা কত !
প্রাণী হত্যা করে খাওয়া কেন অনুচিত,
নিজেকে প্রশ্ন করে বোঝো, কেন ঠিক !
এগুলো অনুভূতির ব্যাপার গো বন্ধু,
বাইরের প্রমাণেতে যায় না তো দেখা,
মানুষ তো শ্রেষ্ঠ — চিন্তা-চেতনা দিয়ে,
তাই তার পড়াশুনা আর বই লেখা !
তাই সে নিজেই বলে একা-একা জোরে,
অহিংসা হলো সেরা পথ, ধর্ম,
এর মানে মানুষ কেবল নয় মানুষের জন্য,
বরং এর মানে সব জীব মিলে এক পরিবার,
পৃথিবীটা মিলে এক সংসার !
অন্য জীবকে যদি হত্যাই করো তুমি,
হত্যার ইচ্ছে তো জন্মালো তবে,
সেই ইচ্ছে টা দিয়ে নানা ভাবে মারবে মানুষ,
জীবনের সত্যে তা প্রমাণিত হচ্ছে, হবে!
বলো, বন্ধু, কবে তুমি ঠিক মতো
সমস্ত প্রাণীকুলের বন্ধু হবে !
অন্য প্রাণীটাকে হত্যাই করে
যদি ভাবো সুখ ও বিলাস,
একটু নীরব থেকে ভাবো বন্ধু,
দেখবে একা একাই বের হবে তোমারই তো
দীর্ঘশ্বাস!
ভেবে দেখো, এখুনি খাচ্ছ যে-প্রাণীর মৃত অংশ,
একটু আগেই সে ভালোবেসেছিলো তোমাকে,
কিংবা তোমার মতো কাউকে সে বিশ্বাস ক’রে
দিয়েছিলো ভালোবাসা হৃদয় ভ’রে,
সে এখন তোমারই তো খাবার পাতে!
মানুষের জন্য নাকি মানুষ করে শোক,
আমি বলি এই সত্য বিশ্বাস করে—
যারা আহাম্মক !
নির্মম হৃদয়ের কোনোদিন কারো জন্য
হতেই পারেনা তো কোনো দুঃখ-বোধ !
যেটা হয় — যত টুকু হয় — পুরোটাই মুহূর্তের আবেগ
বা নির্মেদ নাটক,
এর নাম সামাজিকতা,
চলতে থাকা একটা কোনো ধরা বাঁধা ছক !
বিবর্তনের পথে মানুষ প্রজাতি যদি শ্রেষ্ঠ,
সব জীবজগৎকে বাঁচাতে
সে হবে সচেষ্ট,
তুমি যদি তাই হও, তুমি শ্রেষ্ঠ !
শ্রেষ্ঠ হওয়ার স্বাদ থেকে কেন তুমি দূরে থাকবে,
বুকে তো তোমার আছে কত ভালোবাসা,
কেন তবে হিংস্রতাকেই ধরে রাখবে?
মানুষ উন্নত কিসে?
অমৃতে, নাকি বিষে?
প্রশ্ন করো নিজে,
তখন দু-চোখ যাবে ভিজে,
বেরিয়ে আসবে ঘন দীর্ঘশ্বাস,
হঠাৎ আকুল হয়ে উঠবে কেঁদে, —
এতদিন করেছি —- কী সর্বনাশ !