ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব্য
★কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন★
কাব্যরূপ:–কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন– ২৬
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
।। নারায়ণাস্ত্রমোক্ষপর্বাধ্যায় ।।
২০। অশ্বত্থামার সংকল্প,
ধৃষ্টদ্যুম্ন সাত্যকির কলহ।
দ্রোণহীন কুরুসেনা হলো অতি ভীত ।
কত সেনা ত্যাজি রণ হলো পলাইত।।
ছাড়ি রণ দুর্যোধন কর্ণ শল্য কৃপ,
আইলেন শিবিরেতে সাথে কত নৃপ।।
অশ্বত্থামা যুদ্ধরত শিখণ্ডীর সনে।
ভগ্নসেনা হেরি তিনি কন দূর্যোধনে।।
“তব সেনা পলাইত কেন হে রাজন।
রণে হত মহারথ আজি কোন জন”।।
দুর্যোধন-মুখে বাক্য না হয় চয়ন।
হৃদি দীর্ণ অশ্রু পূর্ণ হইল নয়ন।।
হেরি হেন কৃপাচার্য আসেন তখন।
দ্রোণ-মৃত্যুর সে কথা করিতে বর্ণন।।
অশ্বত্থামা ক্রুদ্ধ অতি শুনি বিবরণ।
অতি ক্রোধে শ্বাস বায়ু করেন মোচন।।
বারবার অশ্রু তাঁর করিয়া মার্জন,
উপস্থিত কুরুগণে সবে তিনি কন।।
“পাণ্ডব অধর্ম কীর্তি করিনু শ্রবণ।
নিরস্ত্র পিতারে তারা করিল হনন।।
ধর্মধ্বজী যুধিষ্ঠির অতীব অনার্য।
মিথ্যা ভাষণে করিল মহাপাপ কার্য।।
অন্যায় সমরে পিতা হইলেন হত।
তাই মরণে তাঁহার অতি মর্মাহত।।
হীন কার্য ধৃষ্টদ্যুম্ন করিল দুরাত্মা।
অবিলম্বে পাবে ফল সেই পাপাত্মা।।
মিথ্যাবাদী যুধিষ্ঠিরে করিব হনন।
রণভূমি রক্ত তার করিবে শোষণ।।
নাশিতে পাণ্ডবে কার্য করে যাব হেন।
পিতৃঋণ মুক্ত তাহে হতে পারি যেন।।
মোর আছে অস্ত্র এক অতীব ভীষণ।
নাহি জানে সেই অস্ত্র পাণ্ডু-পুত্রগণ।।
পিতার সেবায় তুষ্ট নারায়ণ প্রাণ।
করিলেন পিতৃদেবে সেই অস্ত্র দান।।
সেই অস্ত্র শত্রু নাশে হয়না বিরত।
করিলে প্রয়োগ তারে নাশে অবিরত।।
অস্ত্র ত্যাজি যেইজন হয় বশীভূত,
সেই অস্ত্র হ’তে ত্রাণ তাহার নিশ্চিত।।
নারায়ণাস্ত্র আজিকে করিব ক্ষেপন।
মহাপাপী ধৃষ্টদ্যুম্নে করিতে হনন”।।
হেন অশ্বত্থামা-পণ করিয়া শ্রবণ,
হইল আশ্বস্ত সব কুরুসেনাগণ।।
নিনাদিল শঙ্খ ভেরি বিদীর্ণ আকাশ।
অশ্বত্থামা সেই অস্ত্র করেন প্রকাশ।।
সগর্জনে প্রবাহিত পবন তখন।
বিক্ষুব্ধ সাগর তাহে কম্পিত ভুবন।।
স্রোতস্বিনী ঊর্ধগামী মলিন তপন।
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});
পাণ্ডবগণ গণিল প্রমাদ তখন।।
যুধিষ্ঠির উচাটন এ হেন শ্রবণে।
ব্যাকুল চিত্তে তখন কহেন অর্জুনে।।
“হয়েছিল মুহ্যমান আচার্য নিধনে।
আনন্দিত কুরুকুল এক্ষণে কেমনে।।
তুমুল নিনাদ হেন কহ কেন হয়।
করিয়া শ্রবণ তাহা মনে ধরে ভয়”।।
কহিলেন ধনঞ্জয় রাজা যুধিষ্ঠিরে,
“অশ্বত্থামা-পণে রব কৌরব শিবিরে।।
পিতৃ কেশ আকর্ষণে ক্ষুব্ধ পুত্র তাঁর,
লইল শপথ আজি ঘাতক হত্যার।।
ধর্মজ্ঞ আপনি তবু কন মিথ্যা কথা।
লভিবারে রাজ্য কেন অসত্য অযথা।।
হইল অকীর্তি তব সে মিথ্যা বচনে।
অকীর্তি রামের যথা বালীরে নিধনে।।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির অতি সত্যবাদী।
এই বিশ্বাসে ছিলেন দ্রোণ আশাবাদী।।
অস্ত্র ত্যাগী গুরুদেবে করায়ে নিধন,
হয়েছে অধর্ম তব নাহিক শোধন।।
ধৃষ্টদ্যুম্নে অশ্বত্থামা করিবে বিনাশ।
ধৃষ্টদ্যুম্নে রক্ষিবারে করিব প্রয়াস।।
জীবন-সূর্য মোদের পশ্চিম গগনে।
তথাপি করিনু পাপ অধর্মাচরণে।।
পিতৃতুল্য গুরুদেব স্নেহ পরায়ণ।
অল্প কাল রাজ্য লোভে করানু নিধন।।
মহাপাপ নাই ত্রাণ আচার্য হনন।
নাহি চাহি রাজ্যপাট হে মধুসূদন” !!
ক্রোধান্বিত ভীমসেন কহেন অর্জুনে।
“বনবাসী মুনি ন্যায় কহিছ এক্ষণে।।
দুর্যোধন কুরুগণ অধর্ম করিয়া,
আমাদের ধর্মরাজ্য লইল হরিয়া।।
পাঞ্চালীর কেশ তারা করে আকর্ষণ।
ত্রয়োদশ বর্ষ বনে দিল নির্বাসন।।
হেন দুষ্কর্মের ক্ষমা কভু নাই আর।
তবু তুমি ক্ষতস্থানে কেন দাও ক্ষার।।
চারি ভ্রাতা হও যুদ্ধে তোমরা বিরত।
অশ্বত্থামায় করিব একা আমি হত”।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন কহিলেন তখন অর্জুনে।
“বিপ্র-ক্রিয়া কিবা দ্রোণ করেন জীবনে।।
কভু নাহি করিলেন যজন যাজন।
শিষ্যে অধ্যাপন দান কিম্বা অধ্যয়ন।।
ধর্ম ত্যাজি ক্ষত্রবৃত্তি করিয়া গ্রহণ।
অলৌকিক অস্ত্র দ্বারা করেন নিধন।।
ধর্মহীন কর্ম করে নীচ যে ব্রাহ্মণ।
উচিত কার্য হয়েছে করিয়া হনন।।
যজ্ঞাগ্নি হইতে সৃষ্টি হইয়াছি আমি।
দ্রোণের ঘাতক রূপে জ্ঞাত অন্তর্যামী।।
বধিয়া ভীষ্মে অধর্ম যদি নাহি হয়।
দ্রোণ হত্যাও অধর্ম কদাপিও নয়।।
জ্যেষ্ঠ পাণ্ডব কভুও মিথ্যাবাদী নন।
সঠিক কার্য ইহাই করিয়া হনন”।।
অর্জুন কহেন, “কিবা কহিব অধিক।
গুরুঘাতী শিষ্যে ধিক ক্ষত্রধর্মে ধিক”।।
কহিলেন ধৃষ্টদ্যুম্নে সাত্যকি তখন।
“গুরুঘাতী মহাপাপী হইলে এখন।।
গুরুঘাতী হয়ে তুমি তবুও নির্ভয়।
বিদীর্ণ মস্তক তব কেন নাহি হয়।।
গুরু নাশ করে হবে নরকে গমন।
সপ্তপুরুষে করিলে নরকে পতন”।।
হেন সাত্যকি-বচন করিয়া শ্রবণ,
ধৃষ্টদ্যুম্ন সাত্যকিরে কহেন তখন।।
“অতি নিন্দনীয় তব আপাদমস্তক।
তথাপি নিন্দা আমায় কর আহম্মক।।
ভূরিশ্রবা হত্যা কথা করহ স্মরণ।
ছিন্নবাহু তবু তারে করিলে হনন।।
করিল নিষেধ যত মহারথগণ।
তথাপি করিলে তাঁর মস্তক ছেদন।।
এরূপে করিলে কার্য অতীব অধর্ম।
করিয়াছ তুমি তাই মহাপাপ কর্ম”।।
হেন কটু তিরস্কার করিয়া শ্রবণ,
কহিলেন ধৃষ্টদ্যুম্নে সাত্যকি তখন।।
“কথা আর কহিবার ভাষা মোর নাই।
বধযোগ্য তুমি আজ করি হত্যা তাই”।।
এতেক কহি সাত্যকি গদা লয়ে হাতে,
ধৃষ্টদ্যুম্নে বধিবারে ধায় গদাঘাতে।।
কেশব-ইঙ্গিতে ভীম করেন বিরত।
ক্রোধবশে দুইজন গর্জে অবিরত।।
কেশব ও যুধিষ্ঠির দোঁহের প্রয়াসে,
হইলেন শান্ত তাঁরা অতীব আয়াসে।।
★
( চলবে )
https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-2139129812952104 (adsbygoogle = window.adsbygoogle || []).push({});