ধারাবাহিক পৌরাণিক কাব্য
★কুরুক্ষেত্রে আঠারো দিন★
কাব্যরূপ:–কৃষ্ণপদ ঘোষ।
উপস্থাপন– ৩৪
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
১৫। যুধিষ্ঠিরের কটূ বাক্য ।
পথি মধ্যে আসে দেখে ভীম বৃকোদর,
শুধালেন পার্থ তাঁরে রাজার খবর।।
উত্তরে পার্থে তখন ভীমসেন কন,
“ধর্মরাজ শিবিরেতে করিয়া শয়ন।।
ক্ষত বিক্ষত রাজন তাই ত্যাজি রণ,
শিবিরেতে ত্বরা তিনি করেন গমন।।
হয়তো বা বাঁচিবেন এই যাত্রা প্রাণে।
তারপর পুন তিনি রণিবেন রণে”।।
শুনি কন ভীমসেনে পার্থ উচাটন,
“শিবিরেতে ত্বরা তুমি করহ গমন”।।
“তুমি যাও তার কাছে করিনু মিনতি,
নচেৎ কহিবে সবে আমি ভীরু অতি।।
গদাঘাতে শত্রুকুলে করিব হনন,”
নিবেদিল ভীমসেন অর্জুনে তখন।।
“সংশপ্তকে না বধিয়া কেমনেতে গমি।
করিব নিধন আজি তাহাদের আমি।।
তাই বলি শোন আমি রণিব এ রণ”।
ধনঞ্জয় ভীমসেনে কহেন তখন।।
কহিলেন ভীমসেন, “শোন ধনঞ্জয়,
সংশপ্তকে বধিব নাহি কোন ভয়।।
যাও ভাই তুমি তাই রাজন সকাশে।
ছাড় ভার মম ‘পরে কৌরব বিনাশে”।।
করেন পালন পার্থ ভীমের বচন।
অতঃপর সত্ত্বর করেন গমন।।
•
একাকী শিবিরে তাঁর করিয়া শয়ন,
যুধিষ্ঠির নানা স্মৃতি করেন বয়ন।।
হেনকালে উপস্থিত কৃষ্ণার্জুন তথা।
বন্দনা করিয়া তাঁরে কন নানা কথা।।
কর্ণ হত হলো বুঝি আজিকার রণে,
এই ভাবি যুধিষ্ঠির কন সম্ভাষণে।।
প্রীত আমি আজি অতি দোঁহে দরশনে।
কর্ণ হত নিশ্চয়ই আজিকার রণে।।
মম সনে কর্ণ যুদ্ধ করিয়াছে ঘোর।
কিন্তু আমি কভু তাহে নহিক কাতর।।
কর্ণ করে ধৃষ্টদ্যুম্নে অতীব লাঞ্ছিত।
সম্মুখে তাহার আমি হই পরাভূত।।
শোনাইল কর্ণ মোরে নিঠুর বচন।
সেই কর্ণ কি আজিকে হইল নিধন ?
ভীমের প্রভাবে আমি আজও জীবিত।
পরাভূত হ’য়ে আমি রয়েছি জীবন্মৃত।।
ত্রয়োদশ বর্ষ মোর কাটিল অরণ্যে।
বিনিদ্র রজনী ছিল কর্ণের কারণে।।
দিবাভাগে ছিল মোর নাহি কোন সুখ।
সদাই ভাসিত চোখে কর্ণ দুরমুখ।।
সেই কর্ণ মোরে মুক্তি প্রদাইল রণে।
কিবা প্রয়োজন রাজ্য ঘৃণিত জীবনে।।
ভীষ্ম দ্রোণ করিল না কভুও লাঞ্ছনা।
সূতপুত্র মোরে দিল কত না যাতনা।।
বিনাশিলে কর্ণে তুমি কিবা সে প্রকারে।
ধনঞ্জয় কহ তুমি তাহা সবিস্তারে।।
কর্ণ বধিবে তোমারে শুধু এই আশে,
দুর্যোধন আজও সে কর্ণে ভালোবাসে।।
কর্ণ হেতু যাজ্ঞসেনী হইল লাঞ্ছিত।
সে দুরাত্মা রণক্ষেত্রে কেমনে শায়িত।।
অর্জুন কন, শুনুন, তবে মহারাজ,
কি কারণে আগমন কবো আমি আজ।।
সংশপ্তক সাথে রণ করিবার কালে,
উপস্থিত অশ্বত্থামা তাহাদের দলে।।
বাণ ছিল আট গাড়ি তাহাদের পাশে।
নিক্ষেপিল তাহা সব আমারে বিনাশে।।
তথাপি রক্তাক্ত দেহ সেও মোর বাণে।
হইল বাধ্য তখন কর্ণের শরণে।।
আইল কর্ণ লইয়া পঞ্চদশ রথী।
নষ্ট করি আমি সব রথাশ্ব সারথি।।
আপনি আহত রণে করিয়া শ্রবণ,
আইলাম ত্বরা হেথা লাগি দরশন।।
কর্ণ-ভার্গবাস্ত্র তার অদ্ভুত দক্ষতা।
আক্রমণ সহিবার নাহিক ক্ষমতা।।
রণস্থলে কর্ণ সনে হইব মিলিত।
মম বাণে কর্ণ আজ হইবেক হত।।
নচেৎ নরকে মম হয় যেন গতি।
আশীর্বাদ আপনার আছে মম প্রতি।।
কর্ণ আছে বেঁচে রণে হ’য়ে অবগত,
যুধিষ্ঠির হইলেন অতি রাগান্বিত।।
ক্রোধান্বিত হ’য়ে তিনি কহেন তখন,
ত্যাজি রণ অকারণ কেন পলায়ন ?
পলাইল তব সেনা রণে ভঙ্গ দিয়া।
রণক্ষেত্রে কেহ নাই দেখ তুমি গিয়া।।
অপারক হলে তুমি কর্ণের নিধনে ।
সেই ভার দিয়ে এলে তুমি ভীমসেনে।।
অপমানিত পাণ্ডব তোমার কারণে।
মাতৃগর্ভ হলো হেয় তোমায় ধারণে।।
অনেক আশা মোদের ছিল তোমা ‘পরে।
করিলে নিরাশ মোরে তুমি চিরতরে।।
অতি পুষ্পশালী বৃক্ষ যেমতি নিষ্ফল,
তুমিও সেমতি আজি হইলে বিফল।।
বৃষ্টি প্রতীক্ষায় ভূমে উপ্ত বীজ যথা,
তব অপেক্ষায় বৃথা কালক্ষেপ তথা।।
সব আশা ছিল যত যাইল বিফলে।
নিমজ্জিত নরকেতে হইনু সকলে।।
জনমের কালে তব হইল দৈব্যবাণী,
ইন্দ্রতুল্য এই শিশু সর্ব গুণে গুণী।।
বুঝিনু এখন আমি মিথ্যা সব কথা।
দেবগণ কহিলেন অসত্য অযথা।।
কর্ণ-ভয়ে ভীত তুমি নাহি ছিল জানা।
জানিলে যাইতে যুদ্ধে করিতাম মানা।।
শব্দহীন রথে কৃষ্ণ সারথি যাহার,
রণ ত্যাজি পলায়ন অশোভন তার।।
কৃষ্ণে দিয়া ধনু তুমি হইলে সারথি,
বধিত কর্ণে কেশব সহজেই অতি।।
করিতে নারিলে আজ কর্ণে তুমি জয়।
এই গাণ্ডীব তোমার জন্য কভু নয়।।
গর্ভচ্যূত হতে যদি সেও ছিল শ্রেয়।
রণ ত্যাজি পলায়নে হইতে না হেয়।।
তোমারে অর্জুন কিবা কহিব অধিক।
তোমায় আর গাণ্ডীবে দিই শত ধিক।।
★
( চলবে )
Everything is very open with a clear description of the issues. It was really informative. Your website is useful. Thanks for sharing!